ঔপনিবেশিক শাসনে কোচিন চীনের চাল শিল্প | Rice Industry in Cochin-China during the Colonial Rule - itihas pathshala

★★★★★
Rice Industry in Cochin-China during the Colonial Rule. ঔপনিবেশিক শাসনে কোচিন চীনের চাল শিল্প... itihas pathshala\n\n
Rice Industry in Cochin-China during the Colonial Rule. 

ঔপনিবেশিক শাসনে কোচিন চীনের চাল শিল্প...

ভিয়েতনামে ফরাসী শাসনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবদান ভিয়েনামকে ধান উৎপাদক দেশে পরিনত করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল রপ্তানীকারক দেশের স্থান ভিয়েতনাম লাভ করেছিল। এবং ১৯৩১ থেকে দেশের সামগ্রিক রপ্তানীর ৬৫ শতাংশ স্থান গ্রহন করেছে চাল। ফরাসী শাসনকালে সমগ্র কৃষি জমির ৫/৬ অংশ ধান চাষ শুরু হয়। ১৮৭০ থেকে ১৯৩০ সময়কালে ভিয়েতনামের ধান উৎপাদন পাঁচ গুন বৃদ্ধি পায় এবং দেশের জনসংখ্যার তিনের চার অংশ কোনো না কোন ভাবে জীবিকার জন্য এই ফসলের উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।

ধান উৎপাদক দুই প্রধান ক্ষেত্র হল উত্তরের টংকিং-এর সোংকেই (লোহিত নদীর) নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চল এবং দক্ষিনে কোচিন-চীন অঞ্চলের মেকং নদীর উপত্যকা। যতটা চাল রপ্তানি করা হত তার ৯০ শতাংশই কোচিন চীন থেকে হত। এখানে জনসংখ্যা ছিল কম। তাই এখানে উদ্বৃত্ত বেশী হত।

ফরাসী শাসন শুরুর আগে এখানে জলসেচ ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয় নি। জমি অনেক থাকলেও তা চাষযোগ্য ছিল না। বৃষ্টিপাত কম, তাপমাত্রা বেশী, অনিয়মিত মৌসুমী বায়ু, প্রতি বছর মেকং নদীতে বন্যা হত। এই জন্য কোচিন-চীনে বেশী চাষাবাদ হয় নি। ফরাসী আমলে এই সব কিছুর পরিবর্তন হয়। মেকং নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য তারা অনেক ব্রাঞ্চ তৈরী করল এবং খাল খনন করা হল। তারা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে চেয়েছিল। সেই জন্য তারা ক্যানেল তৈরী করল। কারন যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল জলপথ। শুধু ক্যানেল নয় রাস্তা ও রেলপথও ছিল । তবে এদের গতি ছিল মন্থর। তাই ক্যানেলকেই বেশী গুরুত্ব দেওয়া হল। ফলে কৃষি ক্ষেত্র উজ্জীবিত হল। ফরাসী সরকার আধুনিক জ্ঞানের সাহায্যে অনাবাদী জমিকে আবাদী জমিতে পরিনত করল। এবং এটা সম্ভব হয়েছিল পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য।

উৎপাদনের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সূচিত হলেও তখনও অবধি জলসেচ ব্যবস্থা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল্য। কারন ক্যানেলগুলি ছিল বড় মাপের। ফলে দেশের অভ্যন্তরে পৌঁছাতে পারে নি। ছোট ও মাঝারি মাপের কোন যোগসূত্র ছিল না। ফরাসী সরকার ভেবেছিল জমিদাররা ছোট ও মাঝারি মাপের ক্যানেল তৈরী করবে। কিন্তু তারা তা করে নি। কারন তারা অনেকেই ছিল ফাটকাবাজ, চাষের উন্নতির জন্য খরচ করতে চায় নি। সে কারনে কোচিন-চীনের ধান উৎপাদন ক্ষেত্রের একটা বড় অংশে জলসেচ ব্যবস্থা চাহিদা অনুযায়ী ছিল না। অবশ্য তা সত্ত্বেও কোচিন চীন অঞ্চল দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রধান চাল সরবরাহ কেন্দ্রে পরিনত হয়েছিল। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ অঞ্চলে ধান উৎপাদন শুরু হয়েছিল।

প্রায় একই সময়কালে কোচিন-চীনের মতো নিম্ন বার্মাতে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল, দুই স্থানের কৃষি পরিস্থিতিও ছিল একই রকমের। কিন্তু নিম্ন বার্মাতে বৃটিশরা ছোট জমির মালিকদের এক স্বাধীন শ্রেনী হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। অন্যদিকে কোচিন-চীনে ফরাসীরা জমির মালিকদের সমৃদ্ধ শ্রেনী হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল যারা নিজেরা কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকবে না, অপর ব্যক্তিকে কৃষির অধিকার দেবে। এর ফলে এই অঞ্চলে বড় বড় ধান উৎপাদক এস্টেট গড়ে উঠেছিল। অবশ্য যে সব অঞ্চলে ভিয়েতনামবাসীরা থাকত সে অঞ্চলে আপেক্ষাকৃত ছোট জমির মালিকদের অস্তিত্ব ছিল। সামগ্রিকভাবে কোচিন চীনের প্রকৃত ধানা উৎপাদকদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল সেই কৃষকরাই যারা অপরের জমিতে অর্থের বিনিময়ে কৃষিকার্য করতো। ব-দ্বীপ অঞ্চলের কৃষক জনসংখ্যার প্রায় দুইয়ের তিন অংশ ছিল এইরূপ কৃষক এবং তারা জমি তাড়া হিসাবে উৎপাদনের ৪০ শতাংশ মালিককে দিত।

প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে ভিয়েতনামে টংকিং এবং আন্নামে প্রচুর ধান চাষ হত। টংকিং অঞ্চল বড় এস্টেটের পরিবর্তে ছোট জমি খন্ড যারা বিভাজিত ছিল। ১৯৩০ খ্রীঃ দেখা যায় এদের ৭০ শতাংশ অধিকার করে এক একরের কম মাপের জমি। এখানে চাষ নির্ভরশীল ছিল ক্যানেলগুলির উপর। কিন্তু নদীর বুকে পলি সঞ্চিত হবার কারনে প্রায় বন্যা দেখা দিত। প্রথমে বাধ ব্যবস্থা ধ্বংস করে নদীবাহিত পলি দ্বারা ব-আপকে উর্বর করে তোলার পরিকল্পনার কথা ভাবা হলেও শীঘ্র তা পরিত্যাগ করে বাঁধগুলির উচ্চতা বৃদ্ধি করে উন্নতমানের জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছিল। ১৯০৬-৩৮ এর মধ্যে অনেকগুলি ক্যানেল তৈরী করা হয়। এর ফলে নদীর জলকে দিন করা সম্ভব হয়। প্রায় ৪২,৭০০ একর জমি এই সময়ের মধ্যে জল সেচের আওতায় আনা হয়। তিনটি ক্যানেল ব্যবস্থা এই সময় চালু হয় -- 1) Kep Canel System (1906-1914), 2) Uinh Yen (1914 22), 5) Song Cau (1922-38)। সবকটি ক্যানেলই যুক্ত ছিল একটি জলাধারের সাথে। এইভাবে সনাতনী জলসেচ ব্যবস্থার পরিবর্তন করে টংকিং এ প্রায় ২৫,০০০ হেক্টর জমিকে জলসেচের আওতায় আনা হয়। আন্নামেও এই ধরনের প্রকল্প ছিল। ড্যাম ও ক্যানেল তৈরী করে প্রায় ৯০,০০০ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনা হয়।

ফরাসী ঔপনিবেশিক সরকারের এই সমস্ত পরিকল্পনার ফলে অনেক জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়। ফলে চাষের এলাকা বৃদ্ধি পায়। আধুনিক জলসেচ ব্যবস্থা চালু হলে কৃষকদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ছিল চাষ করা যাবে কি যাবে না তার অবসান হয়। এতদিন পর্যন্ত ইন্দোচীনে ছিল Single crop cultivation। এখন হল Double Crop Cultivation। এটা সম্ভব হয়েছিল জলসেচ ব্যবস্থার আধুনিকীকরনের ফলে।

এই সমস্ত ব্যবস্থার ফলে ইন্দো চায়নাতে মুনাফা বৃদ্ধি ঘটে নি। এবং সেখানে উৎপাদনশীলতার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নত সার, বীজ দরকার ছিল। কিন্তু তারা গোবাদি পশুর সার প্রয়োগ করে চাষাবাদ করত। তাদের কাছে অর্থ না থাকায় তারা রাসায়নিক সার কিনতে পারে নি। ধান গাছের অনেক রোগ হত তার হাত থেকেও রক্ষা করতে পারে নি ফরাসি সরকার। ইন্দো চায়নার কৃষকরা প্রচলিত বীজ ব্যবহার করত, আধুনিক বীজ ব্যবহার করেনি। যদিও ধান চাষের ক্ষেত্রে সরকার গবেষনার জন্য একটি Indo- China Rice Service প্রতিষ্ঠা করেছিল। এখানে ধানের বীজ নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা হত।

ধান থেকে চাল তৈরীর জন্য রাইস মিল গড়ে উঠেছিল। এগুলি গড়ে উঠেছিল মূলত Cholon অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। ১৯৩০ এর দশকে ২৭টি রাইস মিল ছিল। এখানে চীনাদের ভূমিকাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ধান চাষের ক্ষেত্রে ইন্দোচাইনার লোকেরা ভূমিকা পালন করত। উত্তরাংশে ধান উৎপাদনকারী কৃষকরা ছিল ক্ষুদ্র জমির মালিক, যাদের উৎপাদিত ধান নিজেদের খাদ্যের চাহিদা পূর্ণ করতেই ব্যর্থ হত। যদিও দক্ষিনাংশের মালিককে অর্থ দিয়ে কৃষিকার্যকারীদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো করার চেষ্টা ছিল তথাপি তাদের জীবনযাত্রার মান কোন ভাবেই উঁচু ছিল না এবং সারা জীবন তারা ঋনভারে থেকে মুক্ত হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে ভিয়েতনামের এই বিকাশ কৃষকদের নিঃস্ব করে তুলেছিল। উপকৃত হয়েছিল চাল রপ্তানী বানিজ্যে একচেটিয়া অধিকার স্থাপনকারী বনিক (যারা বেশির ভাগ ছিল চীনা) এবং জমিদাররা।

For more visit https://itihaspathshala.in
Tags:
Next Post Previous Post