সংক্ষেপে ঋক্ বৈদিক যুগের আর্যদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিচয় দাও৷

আর্যদের ভারতে বসতি স্থাপন ও তার বিস্তার সম্পর্কে বৈদিক সাহিত্যে নানা তথ্য পাওয়া যায়৷ ঋক বৈদিক যুগের আর্যদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন কেমন ছিল তা সংক্ষেপে নিম্মে আলোচনা করা হল -

সামাজিক জীবন

১. পারিবারিক কাঠামো

আর্য পারিবারিক প্রথা ছিল বৈদিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ৷ সমাজে একান্নবর্তী পরিবারের প্রাধান্য ছিল৷ এই পরিবার গুলি ছিল পিতৃতান্ত্রিক৷ পিতা বা বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন পরিবারের কর্তা৷ তাই তাকে গৃহপতি বলা হত৷

২. নারীদের স্থান

বৈদিক আর্য সমাজে পুত্র সন্তানের জন্ম বেশি কাম্য হলেও কন্যা সন্তানের লালন পালনে কোন ত্রুটি ছিল না৷ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এযুগের নারীরা অনেকটা এগি়য়ে ছিলেন৷ খনা, অপলা, ঘষা, সমতা, লোপামুদ্রা প্রমুখ নারীরা জ্ঞান গরিমায় খ্যাতি লাভ করেন৷

৩. জাতিভেদ ও বর্ণাশ্রম প্রথা

আর্যরা ভারতে যখন প্রবেশ করে ছিল, তখন তারা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল, যথা -
  1. যোদ্ধা বা রাজন্য
  2. ব্রাহ্মণ বা পুরোহিত
  3. সাধারণ আর্য
ভারতীয় বৈদিক সমাজে জাতিভেদ প্রথার বিশেষ প্রচলন ছিল না বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হয়৷ এই সময় ভারতবাসীরা দেহের বর্ণানুযায়ী দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল৷ যথা
  • (i) শ্বেতকায় আর্য
  • (ii) কৃষ্ণকায় অনার্য
ঋকবেদে 'বর্ণ' শব্দটির উল্লেখ দেখা গেলেও, তখন পর্যন্ত জাতি অর্থে এই শব্দ ব্যবহার করা হত না৷ বৈদিক সমাজের চারটি বর্ণ সম্পর্কে পুরুষসুক্তে বলা হয়েছে,
ব্রহ্মার মুখ হইতে ব্রাহ্মণ; বাহু হইতে ক্ষত্রিয়; উরুদেশ হইতে বৈশ্য এবং পদযুগল হইতে শুদ্রের উদ্ভব৷

৪. পরিধেয় ও অলঙ্কার

আর্যরা সূতী ও পশমের বস্ত্র ব্যবহার করত৷ পুরুষরা নিম্মাঙ্গে ধুতি ও উর্ধবাঙ্গে উত্তরীয় ধারন করত৷ নারীরা দুই প্রস্থ পোষাক ছাড়া নীবি বা কোমরবন্ধনী ব্যবহার করত৷ এছাড়া নারীরা সোনা ও রূপার অলঙ্কার এবং দামি পাথরের অলঙ্কার ব্যবহার করত৷

৫. সঙ্গীত ও নৃত্য

বৈদিক আর্যরা তাদের অবসর সময়ে পাশাখেলা, রথের দৌড় ও সঙ্গীতের চর্চায় কাটাত৷ পাশাখেলার দ্বারা জুয়াখেলার প্রচলন হয়৷ বহু লোক জুয়াখেলায় সর্বসান্ত হয়ে যেত৷ বাঁশী, বীণা ও ঢোলক সহ তারা নৃত্যগীত করত৷

অর্থনৈতিক জীবন

১. কৃষি ও ভূমি বন্টন ব্যবস্থা

বৈদিক যুগের অর্থনীতির প্রধান অবলম্বন ছিল কৃষি ও পশুপালন ৷ প্রথম দিকে পশুপালন ছিল আর্যদের প্রধান জীবিকা৷ পরবর্তী সময়ে আর্যদের কৃষি কাজে মনোনিবেশ করতে হয়েছিল৷ বৈদিক যুগে প্রধান কৃষিজাত পন্যগুলো ছিল - ধান, গম ও যব৷
কৃষিকাজে তারা লোহার লাঙ্গল ব্যবহার করত৷ একে বলা হত "শীর"৷

২. পশুপালন

এটি ছিল বৈদিক আর্যদের প্রধান জীবিকা৷ বৈদিক যুগে গৃহ পালিত পশুদের মধ্যে প্রধান ছিল গাভি, ষাঁড়, বলদ, ভেড়া ও ছাগল৷ বৈদিক যুগে গোধন ছিল সম্পদের মাপকাঠি ৷ কোন দ্রব্যের মূল্য গোরুর দামের উপর স্থির করা হত৷

৩. শিল্প ও বানিজ্য

বৈদিক সমাজে প্রধান শিল্প ছিল সুতির বস্ত্রবয়ন৷ বস্ত্রবয়ন ছাড়াও এই সময় কারিগরি শিল্প গড়ে উঠেছিল৷ এদের মধ্যে রথ ও যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ শিল্প ছিল প্রধান৷ এছাড়াও সূত্রধর, চর্মকার, কুম্ভকার প্রভৃতির কাজও লোকে করত৷ ঋকবেদে পাণি নামে এক শ্রেণীর লোকের কথা জানা যায় যারা ব্যবসা বানিজ্য করত৷ বৈদিক যুগে সাধারনত বৈশ্য শ্রেণী এই কাজ করত৷ স্থলপথে ও জলপথে এই ব্যবসা বানিজ্য চলত৷ তবে মুদ্রার প্রচলন বেশি ছিল না৷ নিষ্ক ও মনা নামে মুদ্রার প্রচলনের কথা জানা যায়৷ 
Next Post Previous Post