All MCQ

শের শাহের অভ্যুত্থান (Rise of Sher Shah)


দিল্লীর সুলতানির পতন আসন্ন হলে, ষোড়শ শতকে ভারতের রাজনৈতিক ভাগ্য কয়েকজন দুঃসাহসিক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, অভিযানকারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়৷ জাহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবর ছিলেন এই অভিযানকারীদের অন্যতম। তাঁর মৃত্যুর পর শের শাহের অভ্যুত্থান ঘটে। এই যুগে সাহসী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোকেরা তরবারি সম্বল করে ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। বাবর আফগানিস্থান হতে এসে যেমন তরবারির দ্বারা সাম্রাজ্য গড়েন; শের শাহ বিহারের সামান্য জাগীরদার থেকে তরবারির দ্বারা সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।

শের শাহের প্রথম জীবন

শের শাহের জন্ম হয় ১৪৮৬ খ্রীঃ। তাঁর জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ না থাকায় এ বিষয়ে বিতর্ক আছে। সম্ভবতঃ পাঞ্জাবের নারনুল পরগণায় তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম ছিল হাসান খাঁ শূর। হাসান খাঁ, জামাল খাঁ লোহানীর অধীনে চাকুরী নিয়ে বিহারের সাসারামের জাগীরদার নিযুক্ত হন। শের শাহের বাল্যকালের নাম ছিল ফরিদ। তিনি তাঁর পিতার প্রথমা পত্নীর সন্তান ছিলেন। কিন্তু হাসান খাঁ তার চতুর্থ পত্নীর প্রভাবে ফরিদকে অবহেলা করেন। এজন্য বাল্যকাল থেকে ফরিদ আত্মনির্ভরশীল ও উদ্যমী হয়েছিলেন। যৌবনে পা দিয়েই ফরিদ তাঁর ভাগ্য অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েন এবং জামাল খাঁ লোহানীর অধীনে চাকুরী নেন। জামাল খাঁর প্রভাবে তাঁর পিতার সঙ্গে শের খাঁ বা ফরিদের মিলন ঘটে এবং তিনি পিতার জাগীরের শাসনভার পান। এই জাগীর প্রায় ২১ বছর (১৪৯৭–১৫১৮ খ্রীঃ) দেখাশোনা করার সময় শের ভবিষ্যতে হিন্দুস্থানের শাসনকার্য সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু ফরিদের পক্ষে পিতৃগৃহে বেশীদিন থাকা সম্ভব ছিল না। তিনি বিমাতার অত্যাচারে পুনরায় সাসারাম ছেড়ে দক্ষিণ বিহারের অধিপতি বাহার খাঁ লোহানীর অধীনে চাকুরী নেন। এই সময় তিনি একা নিজ হাতে একটি বাঘ মারার ফলে তাঁর সাহসিকতার জন্যে শের খাঁ উপাধি পান। বাহার খাঁ তাঁকে সহকারী শাসনকর্তার পদ দেন।

বাবরের অধীনে চাকুরী গ্রহণ

বাহার খাঁর অধীনে শের খাঁ কিছুদিন কাজ করার পর তাঁর বিরুদ্ধে লোহানী আফগান সর্দারদের চক্রান্তে বিরক্ত হয়ে শের এই চাকুরী ছেড়ে দেন। এই সময় বাবর পানিপথের ও খানুয়ার যুদ্ধে জিতে রাজ্য বিস্তারে রত ছিলেন। মুঘল সামরিক শক্তির প্রতাপে চমৎকৃত হয়ে এবং ভবিষ্যতে লাভবান হওয়ার আশায় শের খা বাবরের অধীনে সামরিক বিভাগে চাকুরী নেন। তিনি বাবরকে চান্দেরী দুর্গ দখলে বিশেষ সাহায্য করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী শের খাঁ বুঝতে পারেন যে, মুঘল শিবিরে কোন আফগান উচ্চাকাঙ্ক্ষীর ভবিষ্যৎ নেই। ইতিমধ্যে তিনি মুঘল শক্তির রণকৌশল ভালভাবে বুঝে নেন। 

জালাল খাঁর অধীনে চাকুরী গ্রহন

শের খাঁ বাবরের চাকুরী ছেড়ে পুনরায় বিহারে ফিরে আসেন এবং লোহানী সুলতানের অধীনে চাকুরী নেন। এই সময় বাহার খাঁ লোহানীর মৃত্যু হওয়ায় তাঁর নাবালক পুত্র জালাল খাঁই ছিলেন বৈধ সুলতান। মৃত বাহার খাঁর বিধবা দুদু শের খাঁকে নায়েব নিযুক্ত করেন। শের খাঁ এই নাবালকের অভিভাবক হিসেবে প্রায় সকল ক্ষমতা নিজ হাতে নেন। তিনি এই সময় চূনার দুর্গের অধিপতি তাজ খাঁর বিধবা পত্নী লাড় মালিকাকে বিবাহ করে চূনার দুর্গের অধিকার পান। এই সময় তিনি গাজিপুরের জাগিরদারের বিধবা পত্নী গৌহর গোসাঁইকে বিবাহ করে মাখজানের মতে ৩০০ মণ সোনা পান। সম্ভবতঃ এই বর্ণনায় অতিশয়োক্তি আছে। তবে শের খাঁ যে প্রচুর ধনরত্ন পান তাতে সন্দেহ নেই। এই সময় লোদী বংশের আফগান সুলতান মহম্মদ লোদী হুমায়ূনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, আফগান বংশীয় শের শাহ তাঁর পক্ষ নেন। দাদরার যুদ্ধে (১৫৩১ খ্রীঃ) শের শাহ মহম্মদ লোদীর পক্ষ ত্যাগ করেন। এর ফলে মহম্মদ লোদীর বাহিনী ধ্বংস হয়। শের শাহের ক্ষমতার কেন্দ্র চূনার দুর্গ কিছুকাল হুমায়ূন অবরোধ করার পর গুজরাট যুদ্ধের জন্যে অবরোধ ত্যাগ করলে শের শাহের মর্যাদা অনেক বাড়ে।

সুরজগড়ের যুদ্ধ ও বিহারের আধিপত্য

শের খাঁর এই ক্ষমতা বৃদ্ধিতে লোহানী সর্দারেরা ঈর্ষান্বিত হন। তাঁরা গোপনে নিজেদের শক্তি সংহত করেন। বাংলার সুলতান মাহমুদ শাহ, শের খাঁর শক্তি বৃদ্ধিতে আশঙ্কিত ছিলেন। তিনিও  এই জোটে যোগ দিয়ে শের খাঁকে আক্রমণ করেন। ১৫৩৪ খ্রীঃ সুরজগড়ের বা কিউলের যুদ্ধে শের খাঁ তাঁর বিরোধী শক্তিকে ধ্বংস করে কার্যত বিহারের আধিপত্য পান। বাংলার দরজাও তাঁর কাছে খুলে যায়। যুদ্ধের সূচনা সুরজগড়ের যুদ্ধকে ডঃ কে. কে. দত্ত, শের শাহের জীবনে যুগ-সন্ধিক্ষণ (Turning point) বলে অভিহিত করেছেন। ডঃ কে. আর কানুনগোর মতে “সুরজগড়ের যুদ্ধে জয়লাভ না করলে, সাসারামের অখ্যাত জাগীরদারের এই পুত্র সম্ভবতঃ তাঁর নগন্য অজ্ঞাত জীবনের আড়াল হতে সিংহাসনের দাবীদার রূপে আবির্ভূত হতে পারতেন না”। (But for the victory of Surajgarh, the son of a non-descript jagirdar of Sasaram would perhaps never have emerged from his obscurity in quest of a crown.)' এই যুদ্ধ জয়ের ফলে সাসারামের ক্ষুদ্র জাগীরদার হিন্দুস্থানের অধিপতি হওয়ার জন্যে প্রথম পদক্ষেপ করেন।

শের শাহের রাজ্য বিস্তার

বাবরের সঙ্গে ইব্রাহিম লোদীর প্রথম পানিপথের যুদ্ধ (১৫২৬ খ্রীঃ) এবং পূর্ব ভারতে আফগান শক্তির সঙ্গে ঘর্থরার যুদ্ধকে (১৫২৯ খ্রীঃ) মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের প্রথম পর্যায় বলে গণ্য করা যায়। বাবরের পুত্র হুমায়ূনের সঙ্গে শের শাহের ও বাহাদুর শাহের সঙ্ঘর্ষকে মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের দ্বিতীয় পর্যায় বলা যায়। শের শাহের বংশধরদের সঙ্গে হুমায়ূন ও আকবরের যুদ্ধকে মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের তৃতীয় পর্যায় বলা যায়।

শের শাহের বাংলা অভিযান 

সুরজগড়ের যুদ্ধের (১৫৩৪ খ্রীঃ) পর শের খাঁ তাঁর দূরদৃষ্টির দ্বারা বুঝতে পারেন যে, দিল্লীর সম্রাট হুমায়ূন তাঁর শক্তিবৃদ্ধিকে সহ্য করবেন না। এর আগে ১৫৩১ খ্রীঃ চুনার আক্রমণ দ্বারা হুমায়ূন তার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। শের খাঁ দেখেন যে পশ্চিমে দিল্লী  ১৫৩৫ খ্রীঃ সম্রাট ও পূর্বে বাংলার সুলতান মাহমুদ শাহ তাকে দুদিক থেকে ঘিরে বাংলা অধিকার রেখেছেন। তিনি one by one policy বা একের পর এক নীতি নিয়ে অগ্রে বাংলার মাহমুদ শাহকে ধ্বংস করার সঙ্কল্প নেন, যাতে হুমায়ূনের আক্রমণের সময় তাঁর হাত পরিস্কার থাকে। বিহার ও বাংলা তাঁর অধীনে যুক্ত করতে পারলে তিনি তাঁর আত্মরক্ষার পরিধিক্ষেত্র ( room for defence) বাড়াতে পারবেন। হুমায়ুনের আক্রমণের সময় মাহমুদ শাহ তাঁর পৃষ্ঠদেশে ছুরিকাঘাত করতে পারবেন না। হুমায়ূনের সঙ্গে শক্তি পরীক্ষার আগেই একের পর এক (One by One) রণকৌশল নিয়ে শের খাঁ ১৫৩৫ খ্রীঃ বাংলা আক্রমণ করেন। মাহমুদ শাহ ১৩ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ও কিউল হতে সকরিগলি ঘাট পর্যন্ত স্থান শের শাহকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু, শের শাহের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলার সিংহাসন অধিকার। সুতরাং ১৫৩৭ খ্রীঃ শের খাঁ পুনরায় বাংলার রাজধানী গৌড় আক্রমণ করেন।

শের শাহের রণকৌশল ও হুমায়ূনের বিচ্ছিন্ন হওয়া

শের খার শক্তি বৃদ্ধি মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে আদপেই নিরাপদ নয় একথা হুমায়ূন বুঝতে পারেন। সুতরাং শের শাহ গৌড় অবরোধে ব্যস্ত থাকার সুযোগে হুমায়ূন বিহারে শের খাঁর ঘাঁটি চূনার দুর্গ অবরোধ করেন। হুমায়ূন চূনার অবরোধে অযথা কালক্ষেপ করেন। এই সুযোগে শের খাঁ গৌড় লুঠপাট করেন। ১৫৩৮ খ্রীঃ বাংলায় তাঁর সুলতান রূপে তাঁর অভিষেক সম্পন্ন করেন। তিনি সুলতান ফরিদ-উদ-দুনিয়া-ওয়াদিন-আবুল মুজাফ্ফর শের শাহ উপাধি নেন। চূনার দুর্গ অধিকারের পর হুমায়ূন বাংলা আক্রমণ করেন। শের শাহ অপূর্ব রণকৌশল দ্বারা হুমায়ূনকে বিপদগ্রস্থ করেন। তিনি হুমায়ূনের বাংলা আক্রমণের মোকাবিলা না করে, গৌড় ত্যাগ করেন। তিনি হুমায়ূনের পাশ কাটিয়ে বিহারে চলে আসেন। তিনি তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে রোটাস, জৌনপুর ও কনৌজ অধিকার করে আগ্রায় মুঘল শাসনকে বিপন্ন করেন। হুমায়ূনের আগ্রায় ফিরে আসার পথ তিনি রুদ্ধ করেন। মাছ জল হতে ডাঙায় পড়লে যেমন অবস্থা হয়, তেমন রাজধানী আগ্রা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলায় পড়ে থেকে হুমায়ূন দুর্বল হয়ে পড়েন। 

চৌসার জয় ও গুরুত্ব 

হুমায়ূন নিজের বিপদ বুঝতে পেরে দিল্লীর দিকে দ্রুত ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিহারের বক্সারের কাছে গঙ্গাতীরে চৌসা গ্রামে শের খাঁ তাঁর পথ আটকান। চৌসার যুদ্ধে (১৫৩৯ খ্রীঃ) শের শাহের বিক্রমে মুঘল বাহিনী বিধ্বস্ত হয়। হুমায়ূন কোন রকমে গঙ্গা পার হয়ে প্রাণ বাঁচান। চৌসার যুদ্ধ ছিল, শের শাহের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর ফলে তিনি কনৌজ হতে বাংলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের আধিপত্য পান। তিনি এর পর শের শাহ সুলতান-ই-আদিল খেতাব ধরেন। ডঃ কে. আর কানুনগোর মতে, চৌসার জয়ের ফলে জৌনপুরের শর্কি বংশের রাজ্যসহ বিহার ও বাংলা তাঁর অধিকারে চলে আসে। তিনি দিল্লীর সম্রাটের সমকক্ষ ক্ষমতার অধিকারী হন। এরপর তাঁর লক্ষ্য হয়, দিল্লীর সিংহাসন দখল।


বিলগ্রামের জয় ও হুমায়ুনের ভারত ত্যাগ

হুমায়ূন আগ্রায় ফিরে এসে পুনরায় সৈন্য সংগঠন করেন এবং ১৫৪০ খ্রীঃ শের শাহের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আক্রমণ হানেন। কিন্তু কনৌজের কাছে বিলগ্রামের যুদ্ধে শের শাহ সম্পূর্ণভাবে হুমায়ূনকে বিধ্বস্ত করেন। হুমায়ূনের কামান বাহিনী, ধনরত্ন ও রসদপত্র শের শাহ অধিকার করেন। বহু মুঘল সেনা নিহত হয়। সংখ্যাগুরু মুঘল হুমায়ূনের ভারত ত্যাগ বাহিনী প্রাণ ভয়ে পালায়। স্যার জে. এন. সরকারের মতে, “এই যুদ্ধকে যুদ্ধ না বলে ভীতি ও আতঙ্কগ্রস্থ বাহিনীর অসহায় পলায়ন বলা উচিত, যা মুঘল মহিমাকে অবর্ণনীয় অসম্মানের পাকে ডুবিয়ে দেয়”। পরাজিত হুমায়ূন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান। তিনি আশ্রয় পাওয়ার জন্যে নানা স্থানে চেষ্টা করলেও, শের শাহের আক্রমণের ভয়ে কেহ তাঁকে আশ্রয় দেননি। এমনকি তাঁর ভ্রাতা কামরান তাঁর এই বিপদের দিনে তাঁকে লাহোরে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেন। হুমায়ূনের পিছু নিয়ে শের শাহ লাহোর চলে আসেন। ইতিমধ্যে তাঁর সেনাপতি ব্রহ্মজিৎ গৌর আগ্রা এবং সেনাপতি নাসির খান দিল্লী দখল করেন। শের শাহ পাঞ্জাব থেকে হুমায়ূনের অন্য ভ্রাতাদের হঠিয়ে দেন। হুমায়ূন শেষ পর্যন্ত পারস্যে চলে যান। শের শাহের জীবিতকালে তাঁর পক্ষে আর ভারতে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি।

শের শাহের রাজ্য জয়

বিলগ্রামের যুদ্ধ জয়ের পর শের শাহ দিল্লী, আগ্রা প্রভৃতি দখল করে দিল্লীকে নিজ রাজধানীতে পরিণত করেন। এর পর তিনি সিন্ধু ও ঝিলামের মধ্যবর্তী অঞ্চলে গন্ধার উপজাতির বিরুদ্ধে অভিযান চালান। গক্কাররা মুঘলের অনুগত ছিল। গক্কার অঞ্চলে তিনি দ্বিতীয় রোটাস নামে এক দুর্ভেদ্য দুর্গ নির্মাণ করেন। গক্কার বিদ্রোহ সম্পূর্ণ দমন করার আগেই শের শাহকে বাংলায় ছুটে যেতে হয়। বাংলার শাসনকর্তা খিজির খাঁ বিদ্রোহ ঘোষণা করায় তিনি তাঁকে পদচ্যুত করেন। তিনি বাংলাকে ১৯টি সরকারে ভাগ করে প্রতি সরকার শিকদারের শাসনে রাখেন। ১৯ জন শিকদারের ওপরে আমীর-ই-বাংলা নামে এক কর্মচারীকে নিয়োগ করা হয়। প্রতি শিকদার ফৌজদারী মামলার বিচার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার পান। তাঁদের অধীনে সৈন্যদল রাখা হয়। প্রতি সরকারে দেওয়ানী মামলার বিচারের জন্যে মুন্সেফ নিযুক্ত করা হয়। সরকারগুলিকে পরগণায় ভাগ করা হয়। তিনি তার বিশ্বাসভাজন কাজী ফজিলৎকে আমিন-ই-বাংলা বা বাংলার প্রধান শাসনকর্তার পদে নিয়োগ করেন। শের শাহ বাংলায় সামরিক শাসনের স্থলে অসামরিক শাসন প্রবর্তন করেন।

সিন্ধু, মূলতান, মালব ও রাজপুতানা জয়

অতঃপর তিনি সিন্ধু, মূলতান ও পাঞ্জাব জয় করেন। পশ্চিম ভারতে রাজপুত শক্তি খানুয়ার পরাজয়ের পর নতুন করে শক্তি লাভ করছিল। শের শাহ রাজপুতদের দমন করার কাজে হাত দেন। তিনি প্রথমে মালব আক্রমণ করেন। মাণ্ডু, উজ্জয়িনী ও রনথম্ভোর অধিকারের পর তিনি গোয়ালিয়র জয় করেন। মালব সম্পূর্ণভাবে তাঁর পদানত হয়। এর পর শের শাহ রায়সিন অধিকার করেন। রাজপুত রাজাদের মধ্যে মারওয়াড়ের অধিপতি মালদেব খুবই শক্তিশালী ছিলেন। তিনি শের শাহকে প্রবল বিক্রমে বাধা দিয়ে পরাস্ত হন। আজমীর থেকে আবু পাহাড় পর্যন্ত অঞ্চল শের শাহের প্রদানত হয়। অতঃপর তিনি মেবার জয় করেন। বিখ্যাত চিতোর দুর্গ তাঁর অধিকারে আসে। এই জয়ের ফলে সমগ্র রাজস্থান শের শাহের বশ্যতা স্বীকার করে।

কালিঞ্জর আক্রমণ ও শের শাহের মৃত্যু

রাজপুতানা জয়ের পর শের শাহ বুন্দেলখণ্ডে কালিঞ্জর দুর্গ অধিকারের চেষ্টা করেন। এই দুর্গের অধিপতি কিরাত সিং তাঁকে এক বছর ধরে বাধা দেন। কালিঞ্জর দুর্গের অবরোধ চালাবার সময় একটি বারুদের নল ফেটে শের শাহের ২২শে মে, ১৫৪৫ খ্রীঃ মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে শের শাহের সাম্রাজ্য সীমা ছিল কাশ্মীর, গুজরাট ও আসাম ব্যতীত সমগ্র উত্তর ভারত। তাঁর সাম্রাজ্যের পশ্চিমে ছিল সিন্ধু নদ, উত্তর-পশ্চিমে গরুর দেশ, উত্তরে হিমালয়, পূর্বে আসাম ও দক্ষিণে বিন্ধ্যপর্বত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url