ওয়ারেন হেস্টিং, লর্ড কর্নওয়ালিস, লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের সংস্কার ও ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট | অষ্টম শ্রেণির তৃতীয় অধ্যায় - পাঠটীকা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

★★★★★
বেন্টিঙ্কের সময় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর প্রভৃতি পদে আবার ভারতীয়দের নিয়োগ করা শুরু হয়।

ওয়ারেন হেস্টিংসের সংস্কার

ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলেই দেশীয় অভিজাতদের হাত থেকে বিচার ব্যবস্থাকে আলাদা করার প্রস্তাব ওঠে। পাশাপাশি ইউরোপীয়দের সরাসরি তদারকির মাধ্যমে যে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব তা নিয়েও আলোচনা চলতে থাকে। ফলে বিচার ব্যবস্থায় ব্রিটিশ কোম্পানির চূড়ান্ত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ শুরু হয়। মনে করা হতো এর মাধ্যমে সাধারণ ভারতীয়রা ক্রমেই কোম্পানি-শাসনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।

১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে নতুন বিচার ব্যবস্থা চালু করা হয়। প্রতি জেলাতে একটি দেওয়ানি ও একটি ফৌজদারি আদালত তৈরি করা হয়। তবে আইন-কানুনে মুঘল প্রভাব তখনও রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেওয়ানি আদালতগুলিতে প্রধান ছিলেন ইউরোপীয়রাই। পাশাপাশি দেশীয় আইন ব্যাখ্যা করার কাজ করতেন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ও মুসলিম মৌলবীরা। ফৌজদারি আদালতগুলিতে একজন করে কাজি ও মুফতি থাকতেন। যদিও সেগুলির দেখভালের চূড়ান্ত দায়িত্ব ইউরোপীয়দের হাতেই ছিল।

১৭৭৩ থেকে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় কয়েকটি পরিবর্তন ঘটে। তার পিছনে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস ও সুপ্রিম- কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যর এলিজা ইম্পে। ঐসব সংস্কারের মধ্যে দিয়ে বিচারব্যবস্থার চূড়ান্ত ইউরোপীয়করণ করা হয়েছিল। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে বলা হয়েছিল বিচার বিভাগের সমস্ত আদেশ লিখে রাখতে হবে। সমস্ত দেওয়ানি আদালতগুলিকে একই নিয়মের অধীনে আনার চেষ্টা হয়েছিল।

বিচারে সমতা আনার জন্য দরকার ছিল প্রচলিত আইনগুলির অভিন্ন ব্যাখ্যা। সেই উদ্দেশ্যে ( ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগে ১১ জন পণ্ডিত হিন্দু আইনগুলির একটি সারসংকলন তৈরি করেন। ঐ সংকলনটির ইংরেজি অনুবাদ করা হয়। তার ফলে দেশীয় আইনের ব্যাখ্যার জন্য ইউরোপীয় বিচারকদের ভারতীয় সহকারীদের উপরে বিশেষ নির্ভর করতে হতো না। মুসলমান আইনগুলিরও একটি সংকলন বানানো হয়।) এসবের মধ্যে দিয়ে ঔপনিবেশিক বিচার ব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে উঠেছিল।

লর্ড কর্নওয়ালিসের সংস্কার

১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস আইনগুলিকে সংহত করে কোড বা বিধিবন্ধ আইন চালু করেন। তার ফলে দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব আলাদা করা হয়। জেলা থেকে সদর পর্যন্ত আদালত ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়।
(i) নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের অধিকার স্বীকার করা হয়। তবে (ii) সমস্ত আদালতেই প্রধান বিচারপতি হতেন ইউরোপীয়রাই। লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার ব্যবস্থার সংস্কার বাস্তবে (iii) ঔপনিবেশিক বিচার কাঠামো থেকে ভারতীয়দের পুরোপুরি বাদ দিয়েছিল।

মুঘল আমলে বিচার ব্যবস্থা থেকে ব্রিটিশ আমলের বিচার ব্যবস্থার বদলগুলি সাধারণ ভারতীয়রা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। বিচার কাঠামোকে সংহত করার মাধ্যমে সেগুলি হয়ে উঠেছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

রেগুলেটিং অ্যাক্ট (১৭৭৩ খ্রি:) অনুযায়ী ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় একটি ইম্পিরিয়াল কোর্ট তৈরি করা হয়। সেখানে একজন প্রধান বিচারপতি ও তিনজন বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছিল। ঠিক করা হয়েছিল যে, কেবল ভারতে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদেরই বিচার করবে এই কোর্ট। কিন্তু, ক্রমশই সেই কোর্টের নানান কার্যকলাপকে ঘিরে ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে কোর্টের বিরোধিতা তৈরি হয়। কোর্ট প্রায়ই কোম্পানির তৈরি করা আদালতগুলির এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করতো। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে আইন করে ইম্পিরিয়াল তথা সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার ও ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। বলা হয় যে, 
  • ক) রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত কোনোও মামলা সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ারে পড়বে না।
  • খ) কোম্পানির গভর্নর ও গভর্নরের কাউন্সিলের কাজকর্মে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক সংখ্যা চারের বদলে তিনজন করা হয়। ১৮০১ ও ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে মাদ্রাজ ও বোম্বাইতেও একটি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়ফলে, গোটা ভারত জুড়ে তিনটি সুপ্রিম কোর্ট তৈরি হয়েছিল।

লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের সংস্কার

গভর্নর জেনারেল হিসাবে উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক চেয়েছিলেন প্রশাসনিক ব্যয় কমাতে। পাশাপাশি ভূমি-রাজস্ব নির্ধারণের বিষয়টিকেও বেন্টিঙ্ক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। 
  • ১) এলাহাবাদ ও বারাণসী অঞ্চলে ভূমি রাজস্ব বন্দোবস্ত গড়ে তোলার বিষয়ে তাঁর সময়েই উদ্যোগ নেওয়া হয়। 
  • ২) ঐসব অঞ্চলে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন বেন্টিঙ্ক।

বেন্টিঙ্কের সময় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর প্রভৃতি পদে আবার ভারতীয়দের নিয়োগ করা শুরু হয়। বেন্টিঙ্কের আমলে তৈরি হওয়া আইনে বলা হয়, 
  • ১) কোম্পানি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মাপকাঠির বদলে কেবল যোগ্যতা বিচার করবে। 
  • ২) উঁচুপদে নিয়োগ করলেও ভারতীয় কর্মচারীদের বেতন কম দেওয়া হতো। 

উত্তর ও মধ্য ভারতে সক্রিয় ঠগি দস্যুদের দমন করার জন্যেও কর্নেল স্লিম্যানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ বিভাগ তৈরি করেন বেন্টিঙ্ক। দ্রুতই স্লিম্যান ঠগি দস্যুদের দমন করেছিলেন।

ওয়ারেন হেস্টিং, লর্ড কর্নওয়ালিস, লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের সংস্কার ও ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট | অষ্টম শ্রেণির তৃতীয় অধ্যায় - পাঠটীকা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

১। কত সালে ব্রিটিশ কোম্পানী ভারতে নতুন বিচার ব্যবস্থা চালু করে?

১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে

২। দেওয়ানি আদালতের প্রধান কে ছিল?

ইউরোপীয়রা

৩। কবে দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন সূচিত হয়এবং কার দ্বারা?

১৭৭৩ - ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস

৪। কত সালে কোন আইন দ্বারা ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট গড়ে ওঠে?

১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং আইন দ্বারা কলকাতায়

৫। কবে মাদ্রাজ ও বোম্বাই এ সুপ্রিম কোর্ট গড়ে ওঠে?

✳️ ১৮০১ সালে - মাদ্রাজ
✳️ ১৮২৩ সালে - বোম্বাই

৬। সুপ্রিম কোর্টের প্রাধান বিচারপতি কে ছিলেন?

স্যার এলিজা ইম্পে

৭। ভারতীয় আইনের সংকলনের প্রথম উদ্যোগে কে গ্রহন করেন?

ওয়ারেন হেস্টিংস

৮। ভারতীয় আইন গুলির বিধিবন্ধ করেন কে কত সালে?

লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে

৯। কার আমলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে ভারতীয়রা সুযোগ পায়?

উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের




অষ্টম শ্রেণির ইতিহাসের (অন্যান্য অধ্যায়ে) প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো।

অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস। প্রথম অধ্যায় 👉 এখানে ক্লিক করো
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস। দ্বিতীয় অধ্যায় 👉 এখানে ক্লিক করো
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস। তৃতীয় অধ্যায় 👈 আরো জানতে 👉 এখানে ক্লিক করো
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস। চতুর্থ অধ্যায় 👉 এখানে ক্লিক করো
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস। পঞ্চম অধ্যায় 👉 এখানে ক্লিক করো
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস। ষষ্ঠ অধ্যায় 👉 এখানে ক্লিক করো
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস। সপ্তম অধ্যায় 👉 এখানে ক্লিক করো
Tags:
Next Post Previous Post

You May Also Like

Editor
ইতিহাস পাঠশালা

যা কিছু প্রাচীন, যা কিছু অতীত তাই হল ইতিহাস৷ ইতিহাস পাঠশালা হল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত, উত্তরধর্মী, প্রবন্ধ মূলক পাঠ সহায়ক একটি ব্লগ৷ মূলত ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরাই এই ব্লগের প্রধান লক্ষ্য৷