শিবাজীর শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা কর।

শিবাজীর শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা কর।

শিবাজী কেবলমাত্র বিজেতা ছিলেন না, সাম্রাজ্যের সংগঠকও ছিলেন। তাঁর শাসনব্যবস্থা সমকালীন অন্যান্য শাসনব্যবস্থা অপেক্ষা উন্নত ছিল। শিবাজীর শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধান ঐতিহাসিক উপাদানগুলি হল:

  • (১) অমাত্য রামচন্দ্র পন্থের রচনাগুলি
  • (২) শিবাজীর সভাসদ কৃষ্ণাজি অনন্তের শিবাজীর জীবনী ও শাসন ব্যবস্থার বিবরণ
  • (৩) পণ্ডিত · হনুমন্তরাও এর রচনা
  • (৪) সমকালীন ইওরোপীয় পর্যাটকদের বিবরণ
  • (৫) পেশবা দরবারের দলিল পত্রাদি
যদিও শিবাজী ছিলেন স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং যদিও তিনিই ছিলেন সকল ক্ষমতার উৎস, তবুও তিনি তাঁর শাসনব্যবস্থাকে ন্যায় নীতি ও জনকল্যাণের আদর্শের ওপর স্থাপন করেন। আহমদনগরের বিখ্যাত সংস্কারক মালিক অম্বরের শাসনব্যবস্থা থেকে শিবাজী বহু শিক্ষা নেন। তাছাড়া মুঘল শাসনব্যবস্থার নজীরও তাঁর সম্মুখে ছিল। শিবাজী আপন প্রতিভার দ্বারা প্রচলিত শাসনব্যবস্থাগুলির ত্রুটি দূর করে তাঁর প্রবর্তিত শাসন প্রণালীকে অধিক কার্যকরী করেন।

শিবাজীর শাসনব্যবস্থার কয়েকটি মৌলিক দিকের কথা ঐতিহাসিক সরদেশাই উল্লেখ করেছেন। এই দিকগুলি হল :

  • (ক) তিনি মুঘল জাগীর প্রথার দুর্বলতা লক্ষ্য করেন। এজন্য তিনি কর্মচারীদের বেতনের পরিবর্তে জাগীর দান নিষিদ্ধ করেন।
  • (খ) তিনি যে অষ্ট প্রধান বা ৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে দপ্তর ভাগ করেন, তা ছিল তাঁর নিজস্ব উদ্ভাবন।
  • (গ) তিনি সেনাদল। যে আচরণ বিধি চালু করেন তাতেও তাঁর মৌলিকত্বের ছাপ দেখা যায়।
  • (ঘ) চৌথ আদায় ছিল তাঁর একটি বিশেষ উদ্ভাবন। এই প্রথার দ্বারা তিনি অর্থ সঙ্কট দূর করেন।
  • (ঙ) শিবাজী তাঁর দুর্গগুলিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করেন। তাঁর দুর্গ গঠন ও তার পরিচালনা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল।

রাজার সর্বময় ক্ষমতা
শিবাজী সিংহাসনকে সর্বময় ক্ষমতার আধারে পরিণত করেন। শিবাজী তাঁর রাজকীয় ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে চারটি উপাধি নেন। তার মধ্যে তাঁর ‘ছত্রপতি' উপাধিটি সমধিক খ্যাত। তবে তিনি জানতেন যে, কাজ চালাবার জন্যে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। এজন্য তিনি অষ্ট প্রধান বা আটজন মন্ত্রী নিয়োগ করেন। এই মন্ত্রীসভা তাঁকে পরামর্শ দিত। তবে তা গ্রহণ অথবা বর্জন করা রাজার ইচ্ছাধীন ছিল। রাজা ইচ্ছা করলে কোন মন্ত্রীর একক পরামর্শ নিতে পারতেন। তবে আটজন প্রধান বা মন্ত্রীর মধ্যে প্রধান মন্ত্রী বা পেশবা বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা ভোগ করতেন।

অষ্ট প্রধান
অষ্ট প্রধানের নাম এ বিবরণ নিন্মে আলোচিত :―

  • (১) পেশবা ছিলেন মন্ত্রীসভার প্রধান। তিনি সমগ্র শাসনের তদারকি করতেন। রাজার অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতেন। অন্য মন্ত্রীদের মধ্যে মতভেদ দূর করতেন। রাজার চিঠিপত্রের নীচে দস্তখত ও শীল দিতেন।
  • (২) অমাত্য রাজ্যের আয়ব্যয়ের হিসেব রাখতেন। তিনি ছিলেন অর্থমন্ত্রী।
  • (৩) মন্ত্রী বা ওয়াকিয়ানবীস রাজার দেনন্দিন কার্য তালিকা রচনা করতেন, দরবারের ঘটনা নথিবদ্ধ করতেন এবং রাজার দেহের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতেন।
  • (৪) সচিব বা সর্ণাবিস রাজার চিঠিপত্র রচনা ও পাঠাবার ব্যবস্থা করতেন এবং যাতে রাজার আদেশ জাল না হয় এজন্য আদেশনামার প্রথম পঙক্তি নিজ হাতে লিখতেন। পরগণার রাজস্বের হিসাব পরীক্ষা ছিল তাঁর অন্যতম কাজ।
  • (৫) সুমন্ত বা দবীর ছিলেন বিদেশ মন্ত্রী। তিনি যুদ্ধ বা সন্ধির ব্যাপারে রাজাকে পরামর্শ দিতেন। অন্য রাজ্য সম্পর্কে খবর যোগাড় করতেন। রাষ্ট্রদূত নিয়োগে সুপারিশ করতেন।
  • (৬) সেনাপতি বা সর-ই-নৌবৎ ছিলেন সেনাধ্যক্ষ। সেনা নিয়োগ, সামরিক শিক্ষাদান, শৃঙ্খলা স্থাপন, সরবরাহ ব্যবস্থা গঠন ছিল তাঁর দায়িত্ব।
  • (৭) পত্তিতরাও বা দণ্ডাধ্যক্ষ ধর্মীয় বিষয়, দাতব্য দপ্তরের পরিচালনা করতেন।
  • (৮) ন্যায়াধীশ ছিলেন প্রধান বিচারক।

অন্যান্য কর্মচারী
অষ্ট প্রধানের মধ্যে সেনাপতি ছাড়া আর সকলেই ব্রাহ্মণ ছিলেন। তবে ব্রাহ্মণ হলেও পন্ডিতরাও, ন্যায়াধীশ ছাড়া আর সকলকে দরকার হলে যুদ্ধ করতে হত। অষ্ট প্রধানদের প্রধানরা তাঁদের নিজ নিজ দপ্তরের অধীনস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করতে পারতেন না। ছত্রপতিই সকল কর্মচারীকে নিয়োগ করতেন। ওপরের আট মন্ত্রী ছাড়া চিীস বা মুন্সী সরকারি দপ্তরের দলিলপত্র, চিঠি লেখার কাজ করতেন। দেওয়ান, মজুমদার, ফড়নীস, সুবনীস, পটনীস প্রভৃতি বহু অধস্তন কর্মচারী বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করতেন। শিবাজী জাগীর প্রথা লোপ করেন এবং কর্মচারীদের নগদ বেতন দানের প্রথা চালু করেন। প্রধানমন্ত্রী বা পেশবার বেতন ছিল বছরে ১৫ হাজার হূণ বা মাসে ৪৩৭৫ টাকা। অন্যান্য মন্ত্রীদের বেতন ছিল মাসে ১০ হাজার হূণ। তাঁর আমলে পেশবা বা অষ্ট প্রধানের পদ বংশানুক্রমিক ছিল না। শিবাজী তাঁর সরকারি কাজে মারাঠী ভাষাকেই গুরুত্ব দেন। ফার্সী ভাষা তিনি অন্য সরকারের সঙ্গে চিঠিপত্র লেখার সময় ব্যবহার করতেন। তিনি রাজকার্য পরিচালনার জন্যে রাজ-ব্যবহার-কোষ নামে এক গ্রন্থ রচনা করেন। রঘুনাথ পণ্ডিত হনুমন্তরাও এই গ্রন্থটি রচনা করেন। এটি ছিল শাসনকার্য পরিচালনার জন্যে নির্দ্দেশ বিধি বা ম্যানুয়াল (Manual)।

শাসন বিভাগ
শিবাজী তাঁর রাজ্যকে সুশাসনের জন্যে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। যে অঞ্চলে শিবাজীর প্রত্যক্ষ শাসন ছিল তার নাম ছিল স্বরাজ্য। এই স্বরাজ্যকে কয়েকটি ‘প্রান্ত' বা জেলায় বিভক্ত করা হয়। এই জেলা রা প্রান্তগুলিকে নিয়ে ৩টি প্রদেশ গড়া হয়। প্রতি প্রদেশের দায়িত্ব একজন দায়িত্বপূর্ণ শাসনকর্তার হাতে দেওয়া হয়। উত্তর শিবাজীর সাম্রাজ্যভুক্ত হলেও সেখানে প্রত্যক্ষ শাসন ছিল না। প্রাপ্ত বা জেলাগুলিকে তরফে বা প্রদেশে মোরোত্রিম্বক পিংলে, দক্ষিণে আন্নাজি দাত্তো, দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশে দত্তাজি পন্থকে শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয়। স্বরাজ্যের বাইরে কিছু অংশ পরগণায় ভাগ করা হত। কিছু সংখ্যক গ্রাম নিয়ে তরফ গড়া হত। প্রাপ্তের শাসনকর্তাকে বলা হত মামলতদার। তরফের শাসনকর্তার নাম ছিল হাবিলদার বা কারকুন। গ্রামগুলিতে দেশপাণ্ডে বা দেশমুখিয়া বা প্যাটেলরা শাসন করত। গ্রামসভা সাধারণতঃ গ্রামের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিত।সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা ছিল দেশপান্ডের দায়িত্ব।

ভূমি রাজস্ব
শিবাজী তাঁর স্বরাজ্যে রায়তওয়ারি ভূমি বন্দোবস্ত চালু করেন। তিনি আহমদনগরের মালিক তিনি অন্য সকল প্রকার কর রহিত করেন। এর জন্যে প্রায় ৪০ প্রকার স্থানীয় কর লোপ করা অম্বরের প্রবর্তিত প্রথা মোটামুটি অনুসরণ করেন। প্রতি গ্রামে জমি জরিপ করে জমির ফসলের হয়। তাদের দেয় করের পরিমাণ নির্দিষ্ট হওয়ায় কৃষকরা রাজস্ব কর্মচারীদের অত্যাচার হতে হার স্থির করা হত। এই ফসলের শতকরা ৩০ ভাগ শস্য অথবা তার মূল্য ছিল রাজকীয় কর। পরে এর হার বাড়িয়ে তিনি শতকরা ৪০ ভাগ করেন। তিনি অন্য সকল প্রকার কর রহিত করেন। এর জন্য প্রায় ৪০ প্রকার স্থানীয় কর লোপ করা হয়। তাদের দেয় করের পরিমাণ নির্দিষ্ট হওয়ায় কৃষকরা রাজস্ব কর্মচারীদের অত্যাচার হতে রক্ষা পায়। কৃষির উন্নতির জন্যে শিবাজী চেষ্টা করতেন। খরা ও শস্য হানি হলে তিনি তাকাবি ঋণ দিতেন। শিবাজী অন্য রাজ্য থেকে কৃষকদের এনে নিজ রাজ্যে বসত করাতেন এবং তাদের কৃষিকার্যের জন্যে অর্থ সাহায্য দিতেন।

চৌথ ও সরদেশমুখী
রাজস্ব বৃদ্ধির জন্যে চৌথ ও সরদেশমুখী নামে দুই প্রকার কর আদায় করা হত। প্রতিবেশী বিজাপুর ও মুঘলের রাজ্য থেকে এই কর সাধারণতঃ আদায় হত। চৌথ ছিল রাজস্বের এবং সরদেশমুখী রাজস্বের ১/১০ অংশ। রাণাড়ের মতে, অন্য কোন তৃতীয় শক্তির আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্যে প্রতিবেশী অঞ্চল হতে এই কর আদায় করা হত। এই কর ছিল “রক্ষা কর” (Protection Money)। সরদেশাইয়ের মতে, শত্রু বা বিজিত দেশ থেকে এই কর আদায় করা হত। সরদেশাই বলেন যে আগ্রার দরবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিবাজী বুঝতে পারেন যে মুঘল সাম্রাজ্য অন্তঃসারশূন্য হয়ে গেছে। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যে চৌথ আদায় দ্বারা এই সাম্রাজ্যকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। মারাঠী ঐতিহাসিকদের এই ব্যাখ্যা অন্যান্য ঐতিহাসিকরা মানেন না। স্যার জে.এন. সরকারের মতে, চৌর্থ ও সরদেশমুখী আদায় দিলে সেই অঞ্চল মারাঠা আক্রমণ ও লুট থেকে অব্যাহতি পেত। এটি ছিল এক ধরনের “নিষ্কৃতি কর”। যাই হোক, চৌথ ছিল সামরিক কর। এই কর আদায় করে শিবাজী তাঁর বাহিনীকে বাড়ান এবং নিয়মিত বেতন দেন। স্যার জে. এন. সরকার চৌথ ও সরদেশমুখী করকে তীব্র সমালোচনা করেছেন। যে অঞ্চলে মারাঠার কোন আইনগত অধিকার ছিল না এবং যে স্থানের প্রজাদের শাসনের দায়িত্ব মারাঠারা নিত না, সেই স্থানে নিপীড়ন করে প্রজাদের কাছে চৌথ আদায়ের ফলে মারাঠাদের সুনাম কলঙ্কিত হয়। মারাঠাদের “লুঠেরা” বলে লোকে মনে করতে থাকে। ভিনসেন্ট স্মিথের মতে, চৌথ ছিল এক প্রকার দস্যুকর (Robber Tax)। অপর দিকে এই করের সমর্থনে বলা হয় যে, মহারাষ্ট্র ছিল অনুর্বরা অঞ্চল। এর চারদিকে ছিল শত্রু। সুতরাং আত্মরক্ষার জন্যে সেনা ও দুর্গ রাখতে প্রচুর অর্থ লাগত। ঔরঙ্গজেব নিরস্তর মহারাষ্ট্রে আক্রমণ চালালে আত্মরক্ষার জন্যে সৈন্য রাখতে হয়। যেহেতু মহারাষ্ট্রের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয় সেহেতু মহারাষ্ট্র শত্রু দেশ হতে চৌথ আদায় করতে বাধ্য হয়। এছাড়া শিবাজী শুল্ক বা মহাতরফা এবং বিক্রয় শুল্ক বা জাকাত আদায় করতেন।

বিচার ব্যবস্থা
শিবাজীর বিচারব্যবস্থা তেমন সুষ্ঠু ছিল না। শিবাজী কোন বিচার বিভাগ বা স্থায়ী আদালত স্থাপন করেননি। গ্রামের বিচার পঞ্চায়েত সভাগুলি নিষ্পত্তি করত। ফৌজদারী মামলার বিচার গ্রাম প্রধান বা প্যাটেল করত। ন্যায়াধীশ আপীলের বিচার করতেন। হাজির মজলিশে আপীলের বিচার হত। শিবাজীর সামরিক সংগঠনে তাঁর প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।

সামরিক ব্যবস্থা
শিবাজীর সেনাদলে অশ্বারোহীরা পাগা বা বার্গী এবং শিলাদার এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। গোড়ায় শিবাজীর 'কোন বেতনভোগী স্থায়ী সেনা ছিল না। রাজ্যের পরিধি বাড়ার ফলে তিনি স্থায়ী সেনাদল গড়ার দরকার বোঝেন। অশ্বারোহী সেনার সংখ্যা ছিল। ৪০-৪৫ হাজার। বার্গীর বা পাগাদের নিয়মিত বেতন ও ঘোড়া সরকার থেকে দেওয়া হত। শিলাদারদের ঘোড়া ও অস্ত্র নিজেদের যোগাড় করতে হত। শিলাদাররা যুদ্ধের সময় বেতন পেত। শিলাদার ছিল অনিয়মিত বাহিনী। শিবাজীর এক লক্ষ পদাতিক সেনা ছিল। সভাসদ ভাস্করের মতে, শিবাজীর ১২৬০টি হাতি এবং ২০০টি রণতরী ও কিছু কামান ছিল। শিবাজী তাঁর অশ্বারোহী সেনাদের সংগঠনের জন্যে ২৫ জন অশ্বারোহীর ওপর এক জন হাবিলদার, ৫ জন হাবিলদারের ওপর এক জামালদার; ১০ জন জামালদারের ওপর এক হাজারি; হাজারির ওপর এক পাঁচ হাজারি এবং সকল পাঁচ হাজারীর ওপর সরণবৎ নিয়োগ করেন। পদাতিক সেনাদেরও সংগঠিত করা হয়। ৯ জন পদাতিকের ওপর এক নায়েক; ৫ নায়েকের ওপর এক হাবিলদার; তিন হাবিলদারের ওপর এক জামালদার, দশ জামালদারের ওপর এক হাজারি এবং ৭ হাজারির ওপর ছিল সরণবৎ। শিবাজী একটি ক্ষুদ্র নৌবাহিনী গঠন করেন। এই নৌবাহিনীর সাহায্যে তিনি উপকূল রক্ষা করতেন এবং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন।

শিবাজীর সেনাদলে হিন্দু ছাড়া, আফগান ও আরবীয় সেনা ছিল। বিজাপুর রাজ্যের পতন হলে বিজাপুরের বহু মুসলিম সেনা শিবাজীর অধীনে চাকুরী নেয়। শিবাজী সেনাদলে কঠোর শৃঙ্খলা রাখতেন এবং সেনাদের নিয়মিত কুচ-কাওয়াজ করাতেন। সেনাদলে নিয়োগের সময় পুরাতন কোন সেনা সুপারিশ না করলে নতুন প্রার্থীকে নেওয়া হত না। শিবাজী সেনাদের নগদ বেতন দিতেন। পদাতিক সেনার জামালদার পদাধিকারী বছরে ৫০০ হূণ অর্থাৎ ৫০০×৫=২৫০০ টাকা পেত। সেনাদের নারী, মন্দির, মসজিদের ওপর হস্তক্ষেপ করতে কঠোর নিষেধ ছিল।

দূর্গ নির্মাণ
শিবাজীর ২৪০–২৮০টি দুর্গ ছিল। আত্মরক্ষার জন্যে তিনি দুর্গগুলিকে বিশেষভাবে ব্যবহার করেন। দুর্গে হাবিলদার, সবনীশ ও সর-ই-নৌবত এই তিন প্রধান কর্মচারী ছিল। সবনীশ ছিল ব্রাহ্মণবংশীয়, অপর দুই জন মারাঠা। হাবিলদার দুর্গের দরওয়াজা রক্ষা, দুর্গ রক্ষীদের নিয়ন্ত্রণ, দুর্গের নিরাপত্তার দিকটি দেখত। সর-ই-নৌবত রাত্রিকালে দুর্গের পাহারার তদারকি করত। সবনীশ দুর্গে শান্তিরক্ষা, খাদ্য সরবরাহ, নিকটস্থ গ্রাম থেকে খাজনা আদায়ের কাজ দেখত।

Next Post Previous Post