১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রুটি গুলি আলোচনা কর।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রুটি গুলি আলোচনা কর।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রুটি গুলি আলোচনা করতে গিয়ে যে বিষয় গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল স্বায়ত্বশাসন বঞ্চনা, যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত, নামমাত্র ভোটাধিকার প্রদান এবং সাম্প্রদায়িক নির্বাচন।

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের→ ভারত শাসন আইন
জাতীয় কংগ্রেস মত→ সম্পূৰ্ণ হতাশাজনক
মুসলিম লিগের মত→ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ধ্বংসকারী

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রুটি

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি লক্ষ করা যায়, যেমন—

স্বায়ত্বশাসন বঞ্চনা
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ভারতীয়দের হাতে প্রকৃত স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হয়নি। কেন্দ্রে গভর্নর জেনারেল ও প্রদেশগুলিতে গভর্নরদের সীমাহীন ক্ষমতা স্বায়ত্বশাসনকে প্রহসনে পরিণত করে। ড. বিপান চন্দ্র বলেছেন যে, “এই নতুন ভারত শাসন আইন (১৯৩৫) ভারতের জাতীয়তাবাদী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।”

যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান
এই আইনে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হলেও তাতে দেশীয় রাজ্যগুলির যোগদান দেশীয় রাজন্যবর্গের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু হওয়ার আশঙ্কায় মুসলিমরা যুক্তরাষ্ট্র গঠনের বিরোধী ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত
এই আইনের দ্বারা কেন্দ্রের গভর্নর জেনারেলের আধিপত্য এবং বিভিন্ন প্রদেশে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। গভর্নর জেনারেলের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়। তাই আইনে যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলে বাস্তবে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। ফলে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ঐতিহাসিক রজনী পাম দত্ত বলেছেন যে, “প্রস্তাবিত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র ছিল একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত নামকরণ।”

নামমাত্র ভোটাধিকার প্রদান
এই আইনের দ্বারা ভোটাধিকারের সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ব্রিটিশ ভারতের মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ভোটদানের অধিকার পায়। এই ফলে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়।

সাম্প্রদায়িক নির্বাচন
এই আইনে মুসলিমদের জন্য সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্যও সাম্প্রদায়িক নির্বাচনের কথা বলা হয়।

পরিশেষে বলা যায়, নানারকম ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ এই আইনের সমালোচনা করে। এই আইনকে জাতীয় কংগ্রেস ‘সম্পূর্ণ হতাশাজনক' (Totally Disappointing) এবং মুসলিম লিগ 'গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ধ্বংসকারী' বলে অভিহিত করেন। জিন্না বলেন যে, “এই আইনটি ছিল সম্পূর্ণ পচনশীল, মুলত নিকৃষ্ট এবং সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।” কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু একে ‘দাসত্বের এক নতুন দলিল' (A New Charter of Slavery) বলে অভিহিত করেন। ইংল্যান্ডে শ্রমিক দলের নেতা এটলীও এই আইনের নিন্দা করে বলেন যে, “কংগ্রেসকে শাসনক্ষমতা থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যেই এই আইন তৈরি করা হয়েছে।”

Next Post Previous Post