১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পটভূমি আলোচনা কর।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পটভূমি আলোচনা কর।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পটভূমি  আলোচনা করতে গিয়ে যে বিষয় গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল জাতীয়তাবাদের প্রসার, আন্দোলনের তীব্রতা, বিপ্লবী কার্যকলাপ, সাইমন কমিশনের প্রতিক্রিয়া, গোলটেবিল বৈঠক এবং শ্বেতপত্র।

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের→ ভারত শাসন আইন
ভারত সচিব→ স্যার স্যামুয়েল হোর
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ→ হাউস অব কমন্স

ভারত সচিব স্যার স্যামুয়েল হোর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স-এ ভারতের সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়ক একটি বিল উত্থাপন করেন। প্রবল বিতর্ক ও কিছু সংশোধনের পর রাজকীয় সম্মতি লাভ করে বিলটি ২ আগস্ট আইনে পরিণত হয়। এই আইনটি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পটভূমি

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন প্রবর্তনের পটভূমি ছিল নিম্নরূপ—

জাতীয়তাবাদের প্রসার
১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মানসিকতার যথেষ্ট প্রসার ঘটে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অগ্রগতিতে ব্রিটিশ সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে। সরকার এই জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করে এদেশে ব্রিটিশ শাসনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার। উপায় খুঁজতে থাকে। তারা মনে করে যে, নতুন কোনো সংস্কার আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে এই জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করা সম্ভব।

আন্দোলনের তীব্রতা
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন দল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়। গান্ধিজির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) সহ বিভিন্ন আন্দোলন অত্যন্ত তীব্র হয়ে ওঠে।

বিপ্লবী কার্যকলাপ
১৯৩০-এর দশকে দেশে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ভগত সিং বটুকেশ্বর দত্ত, রাজগুরু, বসন্ত বিশ্বাস, বাঘা যতীন-সহ বিভিন্ন বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

সাইমন কমিশনের প্রতিক্রিয়া
ভারতীয়রা স্বায়ত্বশাসন। লাভের উপযুক্ত কিনা তা বিচার করতে সাইমন কমিশন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই কমিশনের রিপোর্টে শাসন পরিচালনা, আইন রচনা প্রভৃতি বিষয়ে ভারতীয়দের যোগ্যতা নিয়ে খুবই অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়। এতে ভারতীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

গোলটেবিল বৈঠক
সাইমন কমিশনের ভিত্তিতে সরকার প্রথম গোলটেবিল (১৯৩০ খ্রি.) দ্বিতীয় গোলটেবিল (১৯৩১ খ্রি.) ও তৃতীয় গোলটেবিল (১৯৩২ খ্রি.) বৈঠকে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সে রিপোর্টের ভারতে সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন আলাপ- আলোচনা চালায়।

শ্বেতপত্র
সাইমন কমিশনের রিপোর্ট ও তিনটি গোলটেবিল বৈঠকে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর সরকার ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবসমূহ' শিরোনামে একটি ‘শ্বেতপত্র' (White Paper) প্রকাশ করে। এসব প্রস্তাব এবং যৌথ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারত শাসন আইন' (Govt. of India Act, 1935 ) পাস করে।

Faq প্রশ্ন→

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সচীব কে ছিলেন?

স্যার স্যামুয়েল হোর

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক কবে অনুষ্টিত হয়েছিল?

১ম - ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে, ২য় - ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে, ৩য় - ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে

Next Post Previous Post