বক্সার যুদ্ধ বা ইংরেজদের সঙ্গে মির কাশিমের যুদ্ধের কারণগুলি লেখো।

★★★★★
বক্সারের যুদ্ধের সময় ইংরেজদের সাথে মীর কাশেমের বিরোধের জন্য অন্তর্নিহিত কারণগুলি আবিষ্কার করুন।
ইংরেজদের সাথে মীর কাশেমের যুদ্ধের কারণ

 ইংরেজদের সাথে মীর কাশেমের যুদ্ধের কারণ

বক্সার যুদ্ধ - ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে
নাম পদবি
বাংলার নবাব মির কাশিম নবাব
অযোধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলা নবাব
মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম সম্রাট
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেনাপতি
 
বক্সারের যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে। এই যুদ্ধ হয়েছিল বাংলার নবাব মির কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মিলিত বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পূর্ববর্তী নবাব মির জাফরকে সরিয়ে মির কাশিমকে বাংলার সিংহাসনে বসায়। কিন্তু সিংহাসনে আরোহণের পর মির কাশিম স্বাধীনভাবে রাজত্ব চালনা করতে চাইলে ইংরেজদের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে।

বক্সারের যুদ্ধের কারণ:

রাজনৈতিক কারণ:

  • 1. মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তর: সিংহাসনে আরোহণের পর মির কাশিম স্বাধীনভাবে রাজত্ব করার জন্য রাজধানী স্থানান্তরিত করেন মুঙ্গেরে। বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ ছিল ইংরেজ প্রভাবিত। তাই তিনি রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছিলেন।
  • 2. বৈধ ফরমান লাভ: মির কাশিম ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে অবৈধভাবে বাংলার সিংহাসন লাভ করেন। তিনি নিজেকে বৈধ নবাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের অঙ্গীকার করে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের ফরমান নিয়েছিলেন। এই ব্যবস্থা ইংরেজরা মেনে নিতে পারেনি।

সামরিক কারণ :

  • 1. ইউরোপীয় রণকৌশল গ্রহণ: নবাব মির কাশিম চিরাচরিত রণকৌশলের পরিবর্তে উন্নত ইউরোপীয় ধাঁচে সেনাবাহিনীকে মজবুত করতে চেয়েছিলেন। এর জন্য তিনি আর্মেনীয় গ্রেগরিকে প্রধান সেনাপতি, ফরাসি সমরুকে এবং আর্মেনীয় মার্কারকে সহসেনাপতি পদে নিযুক্ত করেছিলেন।
  • 2. আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাণের কারখানা প্রতিষ্ঠা: মির কাশিম উপলব্ধি করেছিলেন তার সেনাবাহিনীর অন্যতম দুর্বলতার কারণ- উন্নত আগ্নেয়াস্ত্রের অভাব। এই অসুবিধা দূর করার জন্য তিনি মুঙ্গেরে কামান, বন্দুক, গোলাবারুদের কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। বলা বাহুল্য মির কাশিমের এইসব কার্যকলাপ ইংরেজদের সহ্য হয়নি।

অর্থনৈতিক কারণ:

আর্থিক সমস্যা: 

  • 1. চুক্তিমতো নবাব বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার রাজস্ব ইংরেজদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণমুক্ত হন, 
  • 2. এরপর তিনি ১৩% ভূমিরাজস্ব এবং সেস ও আবওয়াব বৃদ্ধি করেন, 
  • 3. হিসাব পরীক্ষা করে অর্থ তছরূপকারী রাজস্বকর্মীদের জরিমানা করেন, 
  • 4. আলিবর্দি ও মির জাফরের পরিবারের সঞ্চিত অর্থ বাজেয়াপ্ত করেন, 
  • 5. জগৎ শেঠ পরিবারের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আদায় করেন। এর ফলে নবাবের আর্থিক সচ্ছলতা এলেও ইংরেজদের, সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়।

দেশীয় বণিকদের শুল্ক প্রত্যাহার: 

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়রের কাছ থেকে বিনাশুল্কে বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত ব্যাবসাতে এই ফরমানের অপব্যবহার করতে থাকে। এতে নবাব ও দেশীয় বণিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এমতাবস্থায় নবাব দেশীয় বণিকদের শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ইংরেজদের সঙ্গে তার বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এই সমস্ত ঘটনার মিলিত পরিণামেই ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ হয়।


Related Short Question:

 

 প্রশ্ন 1: বক্সারের যুদ্ধের পিছনে রাজনৈতিক কারণ কি ছিল?

 উ: মীর কাশেমের রাজধানী মঙ্গিরে স্থানান্তরিত করা এবং তার সিংহাসন অধিগ্রহণের ফলে মুর্শিদাবাদে ইংরেজদের প্রভাব বিরাজ করায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।  উপরন্তু, প্রতারণার মাধ্যমে তার সিংহাসন অধিগ্রহণের ফলে ব্রিটিশদের সাথে তাদের চুক্তির বিপরীতে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।

 প্রশ্ন 2: বক্সারের যুদ্ধের সামরিক কারণ কি ছিল?

 উ: মীর কাশেম তার সেনাবাহিনীর ইউরোপীয়-শৈলীর যুদ্ধ কৌশল উন্নত করা, প্রধান ইউরোপীয় কমান্ডারদের নিয়োগ এবং মংঘিরে কামান, বন্দুক এবং গোলাবারুদের মতো উন্নত অস্ত্রের সুবিধা স্থাপনের লক্ষ্য নিয়েছিলেন।  এই প্রচেষ্টা ব্রিটিশদের সাথে ভাল বসেনি।

 প্রশ্ন 3: বক্সারের যুদ্ধে অর্থনৈতিক কারণগুলি কীভাবে অবদান রেখেছিল?

 উ: বর্ধমান, মেদিনীপুর এবং চট্টগ্রামের মতো করমুক্ত অঞ্চলের উপর ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার কারণে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়।  মীর কাশেমের কঠোর অর্থনৈতিক নীতি, কর্মকর্তাদের উপর কর আরোপ, অভিজাতদের কাছ থেকে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং অত্যধিক রাজস্ব আহরণ ব্রিটিশদের সাথে সম্পর্ককে আরও খারাপ করে দেয়, যার ফলে সংঘাত শুরু হয়।
Tags:
Next Post Previous Post

You May Also Like

Editor
ইতিহাস পাঠশালা

যা কিছু প্রাচীন, যা কিছু অতীত তাই হল ইতিহাস৷ ইতিহাস পাঠশালা হল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত, উত্তরধর্মী, প্রবন্ধ মূলক পাঠ সহায়ক একটি ব্লগ৷ মূলত ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরাই এই ব্লগের প্রধান লক্ষ্য৷