ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা কি? ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি?

canton-commerce-practices-explained

 ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা

চিনের সাথে পাশ্চাত্য দেশসমূহের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্যান্টন বন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। ১৭৫৯ খ্রিঃ থেকে কেবলমাত্র ক্যান্টন বন্দরকেই বিদেশী বণিকদের জন্য চিন উন্মুক্ত করে। ক্যান্টন বন্দরের মাধ্যমে ইংরেজ, ফরাসী, পর্তুগীজ ও ওলন্দাজ প্রভৃতি বণিকেরা বাণিজ্য করত। ১৮৪২ খ্রিঃ প্রথম অহিফেন যুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত ক্যান্টন পদ্ধতির মাধ্যমে ইউরোপীয় বণিকদের সাথে চিনের বাণিজ্য চলত।


ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • (১) এই ব্যবসার একদিকে ছিল ব্রিটেন ও অন্যান্য বিদেশী রাষ্ট্র; অন্যদিকে ছিল চিনা বণিকদের সংগঠন 'কো-হং'।
  • (২) ক্যান্টন প্রথায় ব্যবসায়ীদের চিনা দরবারে কোনো নজরানা পাঠাতে হত না। তবে তারা সেখানে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারত না।
  • (৩) ক্যান্টনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হত 'হং' নামক একটি বণিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে যারা ক্যান্টনের শুল্ক কমিশনারের (হোপ্পো) নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলেন। হং-রাই আমদানী- রপ্তানীর জন্য অন্য দ্রব্যের তালিকা প্রস্তুত করত।
  • (৪) ক্যান্টন বাণিজ্য পরিচালনার জন্য চিন সরকার কো-হং নামে একটি বণিক সংস্থা গঠন করে। প্রত্যেক বিদেশী বণিককে একজন চিনা বণিককে জামিনদার হিসাবে রাখতে হত। এই জামিনদারদের মাধ্যমে তারা পণ্য দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারত।
  • (৫) পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে ক্যান্টন বাণিজ্য গড়ে ওঠে নি। চিনা বণিকদের লক্ষ্য ছিল যতদূর সম্ভব শুল্ক আদায় করা। এই লাভের অর্থ সম্রাট না পেলেও ক্যান্টনে নিযুক্ত কর্মচারীরা এর সুফল ভোগ করতেন।
  • (৬) ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর একপাক্ষিকতা। যেহেতু ইউরোপীয় বণিকরা চিনা পণ্যদ্রব্য ক্রয় করার জন্য বেশী আগ্রহী ছিল তাই তারা মনে করত তাদের নির্ধারিত দাম, শুল্ক ও শর্ত মেনেই বিদেশী বণিকদের ব্যবসা করতে হবে।
  • (৭) প্রথমদিকে ক্যান্টন বাণিজ্যের ভারসাম্য ছিল চিনের দিকে। কিন্তু পরবর্তীকালে আফিম ব্যবসা প্রকট হয়ে উঠলে ক্যান্টন বাণিজ্যের ভারসাম্য বিদেশী বিশেষতঃ ইংরেজদের অনুকূলে চলে যায়।


প্রথমদিকে বিদেশী বণিকরা বাধ্য হয়ে ক্যান্টনের বাণিজ্যের শর্তাবলী মেনে চলত। কিন্তু আফিম ব্যবসার সূত্রে তারা ক্যান্টন বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে এই প্রথার অবসানের জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথম অহিফেন যুদ্ধে চিনের পরাজয়ের পর ক্যান্টন বাণিজ্যের অবসান ঘটে।

Next Post Previous Post