দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধের বর্ণনা দাও।

ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধ

বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ছিল পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। দক্ষিণ ভারতে কর্ণাটক রাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ ও বাণিজ্যিক প্রভুত্বের প্রশ্নে ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধ শুরু হয়।

প্রথম কর্ণটিক যুদ্ধ ১৭৪০
দ্বিতীয় কর্ণটিক যুদ্ধ ১৭৪৮
তৃতীয় কর্ণটিক যুদ্ধ ১৭৬০


ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধ গুলি হল

প্রথম কর্ণটিক যুদ্ধ

১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যুদ্ধ এবং কর্ণাটকের নবাব নিয়োগের প্রশ্নে ইংরেজ ও ফরাসিরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পন্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর দুপ্লে আনোয়ার উদ-দিনকে সেন্ট থোম-এর যুদ্ধে পরাজিত করে। চাঁদাসাহেবকে নবাব পদে অভিষিক্ত করেন (১৭৪৬ খ্রি.) এবং ইংরেজ ঘাঁটি মাদ্রাজ দখল করেন। ইউরোপে আই-লা-শ্যাপলের সন্ধিতে (১৭৪৮ খ্রি.) শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে ভারতেও ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দু বা প্রথম কর্ণাটক যুদ্ধের অবসান ঘটে।


দ্বিতীয় কর্ণাটক যুদ্ধ

১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে হায়দরাবাদের নিজাম। আসফ ঝা মারা গেলে তার পুত্র নাসির জত্ব এবং দৌহিত্র মুজাফ্ফর জঙ্-এর মধ্যে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কর্ণাটকের সিংহাসন নিয়ে আনোয়ার উদ-দিন ও চাঁদাসাহেবের মধ্যে দ্বন্দু বাধে। ফরাসি গভর্নর দুল্লে মুজাফ্ফর জঙ ও চাঁদাসাহেবকে। সমর্থন করেন। তিনি অম্বরের যুদ্ধে (১৭৪১ খ্রি.) আনোয়ার উদ-দিনকে পরাজিত ও নিহত করে চাঁদাসাহেবকে নিষ্কন্টক করেন। তারপর কুদাপ্পার নবাবের সাহায্যে নাসির জত্বকে হত্যা। করে হায়দরাবাদে মুজাফ্ফর জকে নিজাম করেন। ফরাসি সেনাপতি বুসি তার অভিভাবক নিযুক্ত হন।


এই অবস্থায় ইংরেজরা কর্ণাটকে চাঁদাসাহেবকে হত্যা করে মৃত আনোয়ার উদ-দিনের পুত্র মহম্মদ আলিকে রাজপদে প্রতিষ্ঠা করে। হায়দরাবাদে নাসির জঙ্-এর ভাই সালাবৎ জকে তারা সমর্থন জানায়। শেষে নতুন ফরাসি গভর্নর গডেতু এক সন্ধির দ্বারা শাস্তি প্রতিষ্ঠা করেন। (১৭৫৫ খ্রি.)। হায়দরাবাদে ফরাসি প্রাধান্য বজায় থাকে।


তৃতীয় কর্ণাটক যুদ্ধ

ইউরোপের সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের (১৭৫৬-৬৩ খ্রি.) সূত্র ধরে ভারতেও ইংরেজ ও ফরাসিরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বাংলার ফরাসি ঘাঁটি চন্দননগর ইংরেজরা দখল। করে। ফরাসি সেনাপতি বুসি ও লালি ইংরেজ খাঁটি মাদ্রাজ ও সেন্ট ডেভিড দুর্গ দখল করে। ইংরেজরা উত্তর সরকার উপকূল, পন্ডিচেরি দখল করে বন্দিবাসের যুদ্ধে ফরাসিদের পরাজিত করে (১৭৬০ খ্রি.)। প্যারিস চুক্তিতে ইউরোপে শাস্তি প্রতিষ্ঠা হলে ভারতেও যুদ্ধের অবসান ঘটে। স্থির হয় ফরাসি ঘাঁটিগুলি কেবল বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।


ভারতে ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে এই যুদ্ধ ফরাসিদের ভাগ্য নির্ধারণ করে। তাদের সমস্ত আশা ধুলিসাৎ হয়ে যায়।।

Next Post Previous Post