লর্ড ওয়েলেসলির আমলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার কীভাবে হয়েছিল?

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ইতিহাসে বড়োলাট লর্ড ওয়েলেসলির শাসনকাল (১৭৯৮-১৮০৫ খ্রি.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার বলেছেন, লর্ড ওয়েলেসলির রাজত্বকালে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে এক নবযুগের সূচনা হয়েছিল।

লর্ড ওয়েলেসলির ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে ওয়েলেসলির উদ্দেশ্য

সুশাসন প্রতিষ্ঠা: লর্ড ওয়েলেসলি মনে করতেন, ইংরেজদের সভ্যতা ও শাসনব্যবস্থা হল শ্রেষ্ঠ এবং ভারতীয় রাজারা অত্যাচারী ও নীতিহীন। তাই ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

ভারতে ব্রিটিশ পণ্যসামগ্রীর বাজার প্রতিষ্ঠা: ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার করে ব্রিটিশ পণ্যসামগ্রী বিক্রির বাজার তৈরি করতে চেয়েছিলেন।

ফরাসি আধিপত্যের বিনাশ: এ ছাড়া ভারতবর্ষ থেকে ফরাসি আধিপত্যের সমূলে বিনাশ ঘটানোও ওয়েলেসলির অন্যতম লক্ষ্য ছিল।


ওয়েলেসলির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি

লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য তিনটি নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যথা-

  • ① যুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্য জয়
  • ② ছলনার মাধ্যমে রাজ্য জয়
  • ③ অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মাধ্যমে রাজ্য জয়


১। যুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্যজয় নীতি

চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ: লর্ড ওয়েলেসলি যুদ্ধনীতি অনুসরণ করে মহীশূর সাম্রাজ্য দখল করেন। তিনি মহীশূরের অধিপতি টিপু সুলতানকে অধীনতামূলক মিত্রতায় স্বাক্ষর করতে বললে টিপু সুলতান তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সূচনা হয়। যুদ্ধে টিপু সুলতান পরাজিত ও নিহত হন। মহীশূরে ইংরেজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ: মারাঠা দলপতি সিম্বিয়া ও ভোঁসলে ইংরেজ মিত্ররাজ্য হায়দরাবাদ আক্রমণ করলে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে সিন্ধিয়া ও ভোঁসলে পরাজিত হয়ে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নেয়। ফলে মারাঠা সাম্রাজ্যের এক বিস্তৃত অঞ্চলের উপর ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।


২। ছলনার মাধ্যমে রাজ্য জয়

লর্ড ওয়েলেসলি ছলনার আশ্রয় নিয়ে তিনটি রাজ্য দখল করেন। সেগুলি হল- তাঞ্জোর, সুরাট ও কর্ণাটক।


৩। অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মাধ্যমে রাজ্য জয়

লর্ড ওয়েলেসলি ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন। এই নীতি অনুযায়ী-

  • ① কোনো দেশীয় রাজ্য ইংরেজদের সঙ্গে মিত্রতায় আবদ্ধ হলে সেই রাজ্যের নিরাপত্তার ভার ব্রিটিশরা নেবে
  • ② ওই রাজ্যটিতে একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট থাকবেন
  • ③ রাজ্যটির নিজস্ব সৈন্যবাহিনী ভেঙে দিতে হবে। এই নীতি প্রয়োগ করে তিনি অনেক দেশীয় রাজ্য গ্রাস করেন। এই রাজ্যগুলি হল- হায়দরাবাদ (১৭৯৮ খ্রি.), অযোধ্যা এবং (১৮০১ খ্রি.), সিন্ধিয়া ও ভোঁসলের (১৮০২ খ্রি.) রাজ্য প্রভৃতি।


এইভাবে লর্ড ওয়েলেসলি কূটনীতির দ্বারা ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উপর ব্রিটিশ শাসন কায়েম করেছিলেন।

Next Post Previous Post