ইউরোপীয় শক্তি সমবায়ের ব্যর্থতার কারণগুলি লেখ?

★★★★★
রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক স্বার্থপরতা, আদর্শগত বিরোধ, ও ইংল্যান্ডের অসহযোগিতা এবং নেপোলিয়নের পতন সহ বিভিন্ন কারণে শক্তি সমবায় ব্যর্থ হয়।

ভিয়েনা সম্মেলন পরবর্তী ইউরোপের শান্তি বজায় রাখতে, ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত বন্দোবস্ত গুলিকে স্থায়িত্বদান করতে এবং ফ্রান্সকে বিপ্লব পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ইউরোপের বৃহৎ শক্তিবর্গ যথাক্রমে অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও প্রাশিয়া ১৮১৫ সালের নভেম্বরে (চতুঃশক্তির চুক্তি) একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। যা শক্তি সমবায় নামে পরিচিত। এই শক্তি সমবায়ের আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র 10 বছর।

ইউরোপীয় শক্তি সমবায়ের ব্যর্থতার কারণ

শক্তি সমবায় ব্যর্থতার কারণ

পারস্পরিক স্বার্থপরতা: ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক স্বার্থপরতা ও উদ্দেশ্যের বিভিন্নতা এবং সন্দেহ কখনোই তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে দেয়নি। অধিবেশনের শুরু থেকেই সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মত পার্থক্য দেখা যায় যা শক্তি সমবায়ের পতন ডেকে নিয়ে এসেছিল।


আদর্শগত বিরোধ:

কেবল পারস্পরিক স্বার্থপরতায় নয়, সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আদর্শগত বিরোধ এর পতনের অন্যতম কারণ ছিল। ইংল্যান্ড ফ্রান্স গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী হলেও রাশিয়া, অস্ট্রিয়া প্রাশিয়া ছিল রক্ষণশীল স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ইংল্যান্ডের পক্ষে স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। ফলে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আদর্শগত বিরোধ দেখা যায়।


ইংল্যান্ডের অসহযোগিতা:

ইংল্যান্ডের অসহযোগিতা শক্তি সমবায়ের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল। অন্যান্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার নীতি ইংল্যান্ডের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই ইংল্যান্ডের নবনিযুক্ত বিদেশ মন্ত্রী ক্যানিং শক্তি সমবায়ের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং শক্তি সমবায় ত্যাগ করেন।


রাশিয়ার অনাবস্থা:

পূর্বাঞ্চলীয় সমস্যা কে কেন্দ্র করে রাশিয়া ক্ষুদ্ধ হয় এবং শক্তি সমবায় ত্যাগ করে বেরিয়ে আসে। রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি সমবায় ত্যাগ একে দুর্বল করে দেয়। যা শক্তি সমবায়ের পতনকে অনেকটাই ত্বরান্বিত করেছিল।


নেপোলিয়নের ভীতি দূর:

তীব্র নেপোলিয়নের ভৃতি ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল এবং তারই ফলস্বরূপ শক্তি সমবায় গঠন হয়েছিল। কিন্তু নেপোলিয়ানের পতনের পর এই ভীতি দূর হলে রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক স্বার্থ সংঘাত প্রকট হয়ে ওঠে। এর ফল স্বরূপ এই শক্তিসমবায়ের পতন ঘটে।


পরিশেষে বলা যায় জুলাই বিপ্লবের ফলে ইউরোপে গণতন্ত্রের ভাব দ্বারা প্রসারিত হলে মেটারনিক এর পক্ষে তা দমন করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের বন্যা, মেটারনিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলে শক্তি সমবায়ের প্রধান নিয়ন্ত্রকের পতন ঘটে। যা শক্তি সমবায়ের পতন ডেকে নিয়ে এসেছিল।

Tags:
Next Post Previous Post

You May Also Like

Editor
ইতিহাস পাঠশালা

যা কিছু প্রাচীন, যা কিছু অতীত তাই হল ইতিহাস৷ ইতিহাস পাঠশালা হল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত, উত্তরধর্মী, প্রবন্ধ মূলক পাঠ সহায়ক একটি ব্লগ৷ মূলত ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরাই এই ব্লগের প্রধান লক্ষ্য৷