Dog 🐶 2048 Brainstorming Game চরৈবেতি - বাংলা ব্লগ Bangla Age Calculator

এনজাস্ চুক্তি ও ওয়ারশ্ চুক্তি সম্পর্কে টীকা লেখো।

এনজাস্ চুক্তি ও ওয়ারশ্ চুক্তি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে সাম্যবাদের প্রভাব বিস্তার লাভ করে। এই সাম্যবাদের ফলস্বরূপ ইউরোপে নানা সামরিক জোট গঠন হতে থাকে। সামরিক জোট গঠনের উদ্দেশ ছিল ইউরোপকে সম্ভাব্য আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা। আমেরিকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি লক্ষ্য করে জাপানের সঙ্গে চুক্তি স্থাপন করে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড মনে করে এই চুক্তিতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থাৎ তাদের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি রাখতে।

সাম্যবাদ প্রতিহত ও রক্ষার জন্য গঠিত সামরিক জোটের ঐতিহাসিক বিবরণ

এনজাস্ চুক্তি সৃষ্টি হয় ১৯৫১ খ্রীঃ ৩০শে আগস্ট। রাশিয়া, কোরিয়া ও ভিয়েতনামে সাম্যবাদ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাম্যবাদের বিস্তৃতির সাথে সাথে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। এই কারণে তারা আমেরিকার দ্বারস্থ হয়ে ১৯৫১ খ্রীঃ এনজাস্ চুক্তি (Anzus Pact) স্বাক্ষর করে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আমেরিকা মিলিতভাবে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তিতে ঠিক করা হয় যে, কোনো শত্রু এই দেশগুলিকে আক্রমণ করলে একে অপরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। এই ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদকেও অবহিত করা হবে।


এনজাস্ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল সাম্যবাদকে প্রতিহত করার জন্য। আর ওয়ারশ্ চুক্তি স্বাক্ষর হয় সাম্যবাদকে রক্ষা করার জন্য। ১৯৫৫ খ্রীঃ ১৪ মে ওয়ারশ্ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পশ্চিমী শক্তিবর্গ আটকানোর জন্য রাশিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী, চেকোশ্লোভিয়া এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং পশ্চিমী-শক্তিবর্গের বিরুদ্ধে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়। এই শক্তিবর্গের সদর দপ্তর মস্কোতে স্থাপিত হয়। ঠান্ডা লড়াইয়ের পর থেকেই দেখা যায় এশিয়া ও আমেরিকা রাষ্ট্রদ্বয় চূড়ান্তভাবে পরস্পর বিরোদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই দুই পক্ষকে কেন্দ্র করে দুই শক্তিজোট গঠিত হয়েছে। আমেরিকা ও তার মিত্রবর্গ সাম্যবাদের আগ্রাসনকে রোধ করার জন্য নানা অজুহাত দেখাতে থাকে। এইসব কারণেই রাশিয়া তার মিত্রপক্ষকে নিয়ে ওয়ারশ্ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এখানে ঠিক হয় ওয়ারশ্ চুক্তি স্বাক্ষরকারী কোনো রাষ্ট্র পশ্চিমী শক্তিবর্গ দ্বারা আক্রান্ত হলে অন্যান্য রাষ্ট্র তাকে সাহায্য করবে। এই চুক্তির সম্মান রক্ষার দায়িত্ব সকল সদস্য- রাষ্ট্রগুলির। এখানে ঠিক হয় পশ্চিমী শক্তিবর্গ কর্তৃক কোনোরকম আক্রমণকে তারা সমবেতভাবে বাধাদান করবে। এছাড়া সদস্য রাষ্ট্রগুলি একে অপরের সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। এভাবে ওয়ারশ্ চুক্তি মার্কিনদের তথা পশ্চিমী শক্তিবর্গের মনে ভীতি সঞ্চার করে।


FAQ Facts:

প্রশ্ন ১: এনজাস্ চুক্তি কী এবং এটি কখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তর: এনজাস্ চুক্তি (ANZUS Pact) হলো একটি সামরিক চুক্তি যা ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে আগস্ট অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং আমেরিকার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল, তিনটি দেশ মিলিতভাবে একে অপরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কোনো শত্রু আক্রমণ করলে সমবেতভাবে প্রতিহত করা।


প্রশ্ন ২: এনজাস্ চুক্তি কেন স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদের বিস্তার এবং রাশিয়া, কোরিয়া ও ভিয়েতনামে সাম্যবাদের বৃদ্ধি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। এই কারণেই তারা আমেরিকার সহযোগিতা চেয়ে এনজাস্ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যাতে কোনো সাম্যবাদী আগ্রাসন প্রতিহত করা যায়।


প্রশ্ন ৩: ওয়ারশ্ চুক্তি কী এবং এটি কখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তর: ওয়ারশ্ চুক্তি (Warsaw Pact) হলো একটি সামরিক চুক্তি যা ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই মে রাশিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া সহ একাধিক পূর্ব ইউরোপীয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমী শক্তিবর্গের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং সাম্যবাদকে সমর্থন করা।


প্রশ্ন ৪: ওয়ারশ্ চুক্তি কেন স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর: ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পশ্চিমী শক্তিবর্গের বিপরীতে শক্তি বৃদ্ধি এবং সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলির ঐক্যবদ্ধতা নিশ্চিত করতে ওয়ারশ্ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি মূলত আমেরিকা এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে।


প্রশ্ন ৫: এনজাস্ চুক্তির মূল বিষয়বস্তু কী?

উত্তর: এনজাস্ চুক্তির মূল বিষয়বস্তু ছিল যে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এবং আমেরিকা একে অপরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং যদি কোনো শত্রু এই দেশগুলিকে আক্রমণ করে, তাহলে তারা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করবে। চুক্তির শর্তাবলীর মধ্যে ছিল নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করা এবং একে অপরকে সামরিক সহায়তা প্রদান।


প্রশ্ন ৬: ওয়ারশ্ চুক্তির মূল বিষয়বস্তু কী?

উত্তর: ওয়ারশ্ চুক্তির মূল বিষয়বস্তু ছিল, যদি চুক্তি স্বাক্ষরকারী কোনো রাষ্ট্র পশ্চিমী শক্তিবর্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাকে সাহায্য করবে। এছাড়া, এই চুক্তির মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একে অপরের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গীকার করে।


প্রশ্ন ৭: এই দুটি চুক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

উত্তর: এনজাস্ ও ওয়ারশ্ চুক্তি দুটি ঠান্ডা যুদ্ধের সময় বৈশ্বিক সামরিক এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এনজাস্ চুক্তি সাম্যবাদের বিস্তার রোধে এবং ওয়ারশ্ চুক্তি সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা ও ঐক্য রক্ষায় সহায়ক ছিল।

Tags:
Next Post Previous Post