অশোক কেন কলিঙ্গ আক্রমণ করেন? কলিঙ্গ যুদ্ধের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অশোক তাঁর রাজ্যাভিষেকের অষ্টম বছরে অর্থাৎ ২৬১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে কলিঙ্গ আক্রমণ করেন।
অশোকের কলিঙ্গ আক্রমণ
কলিঙ্গ আক্রমণের প্রধান কারণগুলি ছিল:
- 1. সমগ্র ভারতবর্ষে মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তার: অশোক চেয়েছিলেন তাঁর সাম্রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করতে, এবং কলিঙ্গ ছিল একটি শক্তিশালী এবং স্বাধীন রাজ্য যা মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীন হতে অস্বীকার করছিল।
- 2. মৌর্যবিরোধী ষড়যন্ত্র: কলিঙ্গ চোল এবং পান্ড্যদের সাথে মিলিত হয়ে মৌর্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। এটি অশোকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল কলিঙ্গকে আক্রমণ করার।
- 3. কলিঙ্গের সামরিক শক্তিবৃদ্ধি: কলিঙ্গের সামরিক শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল, যা মৌর্য সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
- 4. দক্ষিণ ভারতে কলিঙ্গের নিয়ন্ত্রণ: কলিঙ্গ দক্ষিণ ভারতের জলপথ ও স্থলপথ নিয়ন্ত্রণ করছিল, যা মৌর্য সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক এবং সামরিক সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কলিঙ্গ যুদ্ধের গুরুত্ব
কলিঙ্গ যুদ্ধের প্রভাব মৌর্য সাম্রাজ্য এবং বিশেষত অশোকের উপর সুদূরপ্রসারী ছিল। এর ফলাফলগুলো ছিল:
- 1. ধর্মান্তর: কলিঙ্গ যুদ্ধে অজস্র রক্তপাত দেখে অশোক ব্যথিত হন এবং শৈবধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি অহিংসা এবং শান্তির নীতিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেন।
- 2. যুদ্ধবিজয় নীতির পরিবর্তন: অশোক যুদ্ধবিজয়ের নীতি ত্যাগ করে ধর্মবিজয় নীতি গ্রহণ করেন, অর্থাৎ ধর্ম প্রচার এবং মানবকল্যাণ তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে।
- 3. সাম্রাজ্যবাদী নীতির পরিসমাপ্তি: কলিঙ্গ যুদ্ধের পর মগধের সাম্রাজ্যবাদী নীতির অবসান ঘটে। অশোক আর কোনো সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্যোগ নেননি।
- 4. সামাজিক প্রগতি: মগধের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হয়, যেখানে সাম্য, মৈত্রী, এবং সামাজিক প্রগতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- 5. জনকল্যাণ: অশোক জনকল্যাণকে রাষ্ট্রের আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ শুরু করেন, যেমন হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ, রাস্তা ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি।
অশোকের কলিঙ্গ আক্রমণ এবং তার পরবর্তী পরিবর্তনগুলি শুধু মৌর্য সাম্রাজ্যকেই নয়, সমগ্র ভারতীয় ইতিহাসকেই গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
Tags: #Ancient