বাংলায় কীর্তনের প্রবক্তা কে ছিলেন?

শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৪) ছিলেন মধ্যযুগের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী বাঙালি ধর্মীয় নেতা এবং দার্শনিক। তিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলির মধ্যে একটি হলো 'কীর্তন' নামক ভক্তিমূলক সঙ্গীতের ব্যাপক প্রচলন।

সংজ্ঞা:

কীর্তন হলো ভগবানের নাম, গুণ ও লীলা স্মরণ করে সম্মিলিতভাবে গান করা এবং নৃত্য করা। এটি এক প্রকার ভক্তিমূলক সঙ্গীত যা ভক্তির প্রকাশ ঘটায়।

প্রচলন:

শ্রীচৈতন্যদেব বিশ্বাস করতেন যে কলিযুগে (বর্তমান যুগ) ভগবানের নাম সংকীর্তনই মোক্ষ লাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে হরিনাম সংকীর্তনে অংশ নিতেন। তাঁর হাত ধরেই কীর্তন বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে।

ভক্তি আন্দোলন:

কীর্তন ছিল তাঁর প্রবর্তিত ভক্তি আন্দোলনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করা। কীর্তনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সহজেই এই আন্দোলনে যুক্ত হতে পেরেছিল।

সাংস্কৃতিক প্রভাব:

শ্রীচৈতন্যদেবের কীর্তন প্রচলনের ফলে বাংলার সঙ্গীত ও সংস্কৃতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। কীর্তন শুধু ধর্মীয় আচারই ছিল না, এটি বাংলার লোকসঙ্গীত ও সাহিত্যকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আজও বাংলা এবং ওড়িশায় কীর্তন একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রথা।

সামাজিক প্রভাব:

শ্রীচৈতন্যদেব সংকীর্তনের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে একত্রিত করেছিলেন। তাঁর আন্দোলনে কোনো ভেদাভেদ ছিল না, যা সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ছিল একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।

সংক্ষেপে বলা যায়, শ্রীচৈতন্যদেব কেবল কীর্তনের প্রবক্তা ছিলেন না, তিনি কীর্তনকে একটি গণ-আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছিলেন যা বাংলার ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।