দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকা: উপনিবেশমুক্তিকরণ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন

ইতিহাস সিলেবাসের প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকার উপনিবেশমুক্তিকরণ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিষয়ক বিস্তারিত নোট দেওয়া হলো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকা: ১৯৪৯ সালের চীনা বিপ্লব, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও উপনিবেশমুক্তিকরণ, আফ্রিকার পরিবর্তন (মিশর ও দক্ষিণ আফ্রিকা, বর্ণবৈষম্যের অবসান)|| Asia and Africa after World War II: Chinese Revolution of 1949, Nationalist movements and decolonization in South and South East Asia, Changes in Africa (Egypt and South Africa, End of Apartheid)


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) অবসানের পর বিশ্বে এক নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। একদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির দুর্বলতা, অন্যদিকে এশিয়া ও আফ্রিকার পরাধীন দেশগুলিতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী চেতনা উপনিবেশমুক্তিকরণের পথ প্রশস্ত করে। ঠান্ডা যুদ্ধ (Cold War) পরিস্থিতিও এই প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছিল।


### ১. ১৯৪৯ সালের চীনা বিপ্লব (Chinese Revolution of 1949)

* পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের বিরুদ্ধে চিয়াং কাই-শেক-এর কুওমিনতাং (জাতীয়তাবাদী) সরকার এবং মাও জে দং-এর কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে অস্থায়ী ঐক্য স্থাপিত হয়েছিল। জাপানের আত্মসমর্পণের পর এই ঐক্য ভেঙে যায় এবং ১৯৪৬ সাল থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে পুরোদমে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

* মূল কারণ:

    * কুওমিনতাং সরকারের দুর্বলতা: ব্যাপক দুর্নীতি, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং জনগণের অসন্তোষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সামরিক ও আর্থিক সাহায্য সত্ত্বেও সরকারের জনসমর্থন ছিল না।

    * কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা: মাও জে দং-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা ভূমিহীন কৃষকদের ভূমি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। গণমুক্তি ফৌজ (People's Liberation Army - PLA) সুসংগঠিত ছিল।

    * সোভিয়েত সমর্থন: সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি সাহায্য না করলেও কমিউনিস্টদের পক্ষে নৈতিক সমর্থন ছিল।

* গৃহযুদ্ধ ও ফলাফল: কমিউনিস্ট গণমুক্তি ফৌজ একের পর এক কুওমিনতাং দুর্গ দখল করে। ১৯৪৮-৪৯ সালের মধ্যে কুওমিনতাং বাহিনী প্রায় সম্পূর্ণ পরাস্ত হয়।

* প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর মাও জে দং বেইজিং-এর তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (People's Republic of China - PRC) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন। চিয়াং কাই-শেক তার অনুগামীদের নিয়ে তাইওয়ানে (ফরমোজা) পালিয়ে যান এবং সেখানে প্রজাতন্ত্রী চীন (Republic of China - ROC) প্রতিষ্ঠা করেন।

* গুরুত্ব:

    * এশিয়ায় সমাজতন্ত্রের বিস্তার হয়।

    * ঠান্ডা যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে।

    * জাতিসংঘে চীনের আসন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয় (১৯৭১ সাল পর্যন্ত তাইওয়ান মূল চীনের প্রতিনিধিত্ব করে)।

    * পরবর্তীকালে কোরীয় যুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে চীনের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।


### ২. দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও উপনিবেশমুক্তিকরণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এশিয়া ও আফ্রিকার উপনিবেশগুলিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে তীব্র করে তোলে। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং স্থানীয় জাতীয়তাবাদী দলগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।


#### ক. দক্ষিণ এশিয়া:

* ভারত ও পাকিস্তান:

    * ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা: ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকা বৃহত্তম উপনিবেশ ছিল ভারত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশদের পক্ষে ভারতকে শাসন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

    * মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (Mountbatten Plan): ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন এই পরিকল্পনার ভিত্তিতে ভারত বিভাজনের সিদ্ধান্ত হয়।

    * ভারতীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ (Indian Independence Act, 1947): এই আইনের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন ডোমিনিয়ন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মহম্মদ আলি জিন্নাহ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হন।

    * গুরুত্ব: বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্ম, কিন্তু দেশভাগের ফলে ব্যাপক দাঙ্গা ও শরণার্থী সমস্যা তৈরি হয়।


* শ্রীলঙ্কা (তৎকালীন সিলন):

    * ১৯৪৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি শান্তিপূর্ণভাবে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ডোমিনিয়ন মর্যাদা নিয়ে স্বাধীন হয়।

    * প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ডি. এস. সেনানায়েকের নেতৃত্বে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (UNP)।


* মায়ানমার (তৎকালীন বার্মা):

    * ব্রিটিশ শাসন থেকে ১৯৪৭ সালের ৪ঠা জানুয়ারি স্বাধীনতা লাভ করে।

    * জাতীয়তাবাদী নেতা অং সান-এর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য, যদিও স্বাধীনতার পূর্বে তিনি নিহত হন।


#### খ. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া:

* ইন্দোনেশিয়া:

    * ঔপনিবেশিক শক্তি: ওলন্দাজ (নেদারল্যান্ডস)।

    * জাতীয়তাবাদী নেতা: সুকর্ণো (Sukarno)। তিনি ১৯৪৫ সালের ১৭ই আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, যদিও ওলন্দাজরা তা মানতে চায়নি।

    * সংগ্রাম: ওলন্দাজদের বিরুদ্ধে সুকর্ণোর নেতৃত্বে চার বছর ধরে তীব্র সশস্ত্র সংগ্রাম চলে (ওলন্দাজ "পুলিশ অ্যাকশন")।

    * স্বাধীনতা: ১৯৪৯ সালের ২৭শে ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডস ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।

    * গুরুত্ব: সুকর্ণো পরবর্তীতে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (NAM) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা হন।


* ভিয়েতনাম:

    * ঔপনিবেশিক শক্তি: ফরাসি (ফরাসি ইন্দোচীন)।

    * জাতীয়তাবাদী নেতা: হো চি মিন (Ho Chi Minh) এবং তার ভিয়েত মিন (Viet Minh) লিগ।

    * সংগ্রাম: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের দখল থেকে মুক্তির পর হো চি মিন ১৯৪৫ সালে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু ফরাসিরা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ভিয়েত মিন-এর সঙ্গে দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়।

    * দিয়েন বিয়েন ফু (Dien Bien Phu) যুদ্ধ (১৯৫৪): এই যুদ্ধে ফরাসিদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।

    * জেনেভা চুক্তি (১৯৫৪): এই চুক্তির মাধ্যমে ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে ভাগ করা হয় এবং ফরাসি শাসন শেষ হয়। পরবর্তীতে এটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের জন্ম দেয়।

    * গুরুত্ব: ঠান্ডা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছিল ভিয়েতনাম।


* মালয়েশিয়া (তৎকালীন মালয়):

    * ঔপনিবেশিক শক্তি: ব্রিটিশ।

    * স্বাধীনতা: ১৯৫৭ সালের ৩১শে আগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মালয় ফেডারেশন স্বাধীন হয়। এরপর ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়া গঠন করা হয়, যার মধ্যে সিঙ্গাপুর (১৯৬৫ সালে বিচ্ছিন্ন হয়), সাবাহ এবং সারাওয়াক অন্তর্ভুক্ত ছিল।

    * মালয়ান ইমার্জেন্সি: স্বাধীনতার পূর্বে কমিউনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত বিদ্রোহ (১৯৪৮-৬০) দমন ব্রিটিশদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।


* ফিলিপাইন:

    * ঔপনিবেশিক শক্তি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৮৯৮ সাল থেকে)।

    * স্বাধীনতা: ১৯৪৬ সালের ৪ঠা জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। এটি ছিল মার্কিন উপনিবেশমুক্তিকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।


### ৩. আফ্রিকার পরিবর্তন (Changes in Africa)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়াতে উপনিবেশমুক্তিকরণের ঢেউ আফ্রিকা মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।


#### ক. মিশর (Egypt):

* পটভূমি: ১৯২২ সালে ব্রিটিশরা মিশরকে নামমাত্র স্বাধীনতা দিলেও, সুয়েজ খাল এবং সামরিক বিষয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল। রাজা ফারুকের নেতৃত্বে দেশ ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অস্থির।

* মিশরীয় বিপ্লব (১৯৫২): ১৯৫২ সালের ২৩শে জুলাই জামাল আবদেল নাসের (Gamal Abdel Nasser) এবং আনোয়ার সাদাত-এর নেতৃত্বে 'মুক্ত অফিসার' (Free Officers) নামে একটি গোপন সামরিক সংগঠন রাজা ফারুকের শাসনের অবসান ঘটায়। ১৯৫৩ সালে রাজতন্ত্র বাতিল করে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।

* সুয়েজ সংকট (১৯৫৬):

    * কারণ: ১৯৫৬ সালের জুলাই মাসে নাসের সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দেন, যা ব্রিটিশ ও ফরাসি মালিকানাধীন ছিল। এর জবাবে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইসরায়েল মিশর আক্রমণ করে।

    * ফলাফল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের চাপে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরায়েল পিছু হটে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নাসেরের সম্মান বৃদ্ধি করে এবং আরব জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে তাকে তুলে ধরে।

    * গুরুত্ব: সুয়েজ সংকট উপনিবেশবাদের পতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত ছিল। এটি আরব দেশগুলির মধ্যে নাসেরের প্রভাবকে দৃঢ় করে এবং প্যান-আরববাদকে (Pan-Arabism) উৎসাহিত করে।


#### খ. দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa):

* বর্ণবৈষম্য নীতি (Apartheid Policy):

    * সময়কাল: ১৯৪৮ সালে ন্যাশনাল পার্টি (National Party) ক্ষমতায় আসার পর আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ণবৈষম্য আইন (Apartheid) চালু করে।

    * নীতি: এই নীতির মাধ্যমে জাতিগত বিভাজনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় এবং মিশ্র জাতির মানুষকে শ্বেতাঙ্গদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়। তাদের ভোটাধিকার, সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চলাচলের স্বাধীনতা সীমিত করে দেওয়া হয়।

    * উদ্দেশ্য: শ্বেতাঙ্গদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখা।


* বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলন (Anti-Apartheid Movement):

    * নেতৃত্ব: আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (African National Congress - ANC) এই আন্দোলনের প্রধান চালিকা শক্তি ছিল। নেলসন ম্যান্ডেলা (Nelson Mandela), অলিভার ট্যাম্বো (Oliver Tambo), ওয়াল্টার সিসুলু (Walter Sisulu) এবং ডেসমন্ড টুটু (Desmond Tutu) সহ অনেক নেতা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

    * গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:

        * শার্পভিল গণহত্যা (Sharpeville Massacre - ১৯৬০): শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হন। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং ANC সহ বর্ণবৈষম্য বিরোধী সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়।

        * নেলসন ম্যান্ডেলার কারাবাস (১৯৬৪-১৯৯০): ম্যান্ডেলাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ২৭ বছর কারাবন্দী ছিলেন এবং বিশ্বব্যাপী বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

        * সোয়েটো বিদ্রোহ (Soweto Uprising - ১৯৭৬): আফ্রিকান ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের প্রতিবাদ সহিংস রূপ নেয়।

        * আন্তর্জাতিক চাপ: জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দক্ষিণ আফ্রিকার উপর অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।


* বর্ণবৈষম্যের অবসান (End of Apartheid):

    * পটভূমি: ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক চাপ এবং দেশের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার কারণে ন্যাশনাল পার্টির সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

    * উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ:

        * এফ. ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক (F.W. de Klerk): ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ডি ক্লার্ক বর্ণবৈষম্য আইন বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

        * নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তি (১৯৯০): ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ম্যান্ডেলাকে কারামুক্ত করা হয়।

        * গণতান্ত্রিক নির্বাচন (১৯৯৪): ১৯৯৪ সালের ২৭শে এপ্রিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম সর্বজনীন গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গরাও ভোট দিতে পারে। এই নির্বাচনে নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে ANC জয়লাভ করে।

        * নেলসন ম্যান্ডেলার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া: ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হন।

        * ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন (TRC): আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুর নেতৃত্বে এই কমিশন গঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল বর্ণবৈষম্য যুগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলি প্রকাশ করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

* গুরুত্ব: দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের অবসান বিশ্বের ইতিহাসে জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক মহান বিজয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এটি মানবাধিকারের জয় এবং শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের এক প্রতীক।


উপসংহার:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী দশকগুলিতে এশিয়া ও আফ্রিকায় উপনিবেশবাদের অবসান ঘটে। এই উপনিবেশমুক্তিকরণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ নিজস্ব পথে হেঁটেছিল – কোথাও সশস্ত্র সংগ্রাম, কোথাও শান্তিপূর্ণ আলোচনা। নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রগুলি জাতি-গঠন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ঠান্ডা যুদ্ধের মেরুকৃত বিশ্বে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণের মতো নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এই পরিবর্তনগুলি বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজ ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছিল।