পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধ এবং বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা (Battles of Plassey and Buxer and the establishment of the Company’s rule in Bengal)

ইতিহাস সিলেবাসের জন্য "পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধ এবং বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা" বিষয়ে বিস্তারিত নোট দেওয়া হলো।

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতে আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান ঘটে। বাংলা ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম সমৃদ্ধশালী প্রদেশ এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই সমৃদ্ধির কারণে ইউরোপীয় বাণিজ্যিক শক্তিগুলির, বিশেষ করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির, বিশেষ নজর ছিল বাংলার উপর। পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধ ছিল বাংলায় এবং বৃহত্তর অর্থে ভারতে কোম্পানির রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মূল সোপান।


### ১. পলাশীর যুদ্ধ (Battle of Plassey)

ক. প্রেক্ষাপট (Background/Causes):

পলাশীর যুদ্ধ ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিবাদের চূড়ান্ত পরিণতি। এর প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপ:


* ফররুখশিয়ারের ফরমানের অপব্যবহার: ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফররুখশিয়ার প্রদত্ত ফরমান অনুযায়ী, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। কিন্তু কোম্পানি এই দস্তক (বাণিজ্য ছাড়পত্র)-এর ব্যাপক অপব্যবহার করত এবং তাদের কর্মচারীরাও ব্যক্তিগত বাণিজ্যে এর সুবিধা নিত, যা বাংলার নবাবদের বিপুল রাজস্ব ক্ষতি করত।

* দুর্গ নির্মাণ: নবাবের অনুমতি ছাড়াই কোম্পানি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সংস্কার ও চন্দননগরে ফরাসিরা দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা উভয়কেই দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করতে নির্দেশ দিলে ফরাসিরা তা মানলেও ব্রিটিশরা কর্ণপাত করেনি।

* কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় দান: ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস নবাবের কোষাগার থেকে অর্থ নিয়ে ইংরেজদের কাছে আশ্রয় নেন। নবাব তাকে ফেরত দিতে বললে ইংরেজরা প্রত্যাখ্যান করে।

* অন্ধকূপ হত্যা (Black Hole Tragedy): ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব কলকাতা আক্রমণ করে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করেন এবং ১৪৬ জন ইংরেজ বন্দিকে একটি ছোট ঘরে আটকে রাখেন। পরদিন সকালে মাত্র ২৩ জন জীবিত ছিলেন বলে হলওয়েল নামক এক ইংরেজ দাবি করেন। যদিও এই ঘটনাটির সত্যতা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে, তবে ইংরেজরা এটিকে নবাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসাবে ব্যবহার করে।

* রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র: নবাবের বিরুদ্ধে তাঁর সভাসদদের একাংশ (যেমন - মীরজাফর, জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ, ইয়ার লতিফ খান) ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। রবার্ট ক্লাইভ এই ষড়যন্ত্রের সুযোগ নিয়ে মীরজাফরকে বাংলার নবাব করার প্রতিশ্রুতি দেন।


খ. সংঘর্ষ (The Conflict):

* তারিখ: ২৩ জুন, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ।

* স্থান: ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকানন, মুর্শিদাবাদ (বর্তমান নদিয়া জেলা)।

* পক্ষসমূহ:

    * নবাব সিরাজউদ্দৌলা (নেতৃত্বে ছিলেন)।

    * ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (নেতৃত্বে ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ)।

* যুদ্ধের গতিপথ:

    * যুদ্ধ শুরুর আগেই রবার্ট ক্লাইভ নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফরকে নবাব করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের দলে টানেন।

    * নবাবের বাহিনীর মধ্যে মীরজাফর, রায় দুর্লভ, ইয়ার লতিফ খান প্রমুখের অধীনস্থ সৈন্যরা নিষ্ক্রিয় থাকে।

    * নবাবের অনুগত মীরমদন ও মোহনলাল বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করলেও মীরমদনের মৃত্যু নবাবের মনোবল ভেঙে দেয়।

    * মীরজাফরের পরামর্শে নবাব যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে প্রাসাদে ফিরে যান।

    * এরপর নবাবের সৈন্যদের বিশৃঙ্খল অবস্থায় ইংরেজ বাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই যুদ্ধ শেষ হয়।


গ. ফলাফল (Outcome):

* নবাব সিরাজউদ্দৌলার শোচনীয় পরাজয় ঘটে। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে পালিয়ে যান এবং পরে মীরজাফরের পুত্র মিরনের নির্দেশে মহম্মদ বেগ তাকে হত্যা করেন।

* মীরজাফরকে বাংলার নতুন নবাব হিসাবে সিংহাসনে বসানো হয়, যিনি ছিলেন কার্যত কোম্পানির একজন পুতুল শাসক।

* ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ, ২৪ পরগনার জমিদারি এবং দস্তক ব্যবহারের বৈধ অধিকার লাভ করে।

* বাংলায় ব্রিটিশদের রাজনৈতিক আধিপত্যের সূচনা হয়।


ঘ. গুরুত্ব (Significance):

* ঐতিহাসিক মোড়: পলাশীর যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করে।

* রাজনৈতিক আধিপত্য: এই যুদ্ধের ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি বাণিজ্যিক শক্তি থেকে বাংলায় একটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।

* অর্থনৈতিক শোষণ: বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনের পথ খুলে যায়। কোম্পানির কর্মচারীরা অবাধে ব্যক্তিগত বাণিজ্য চালিয়ে প্রচুর ধনসম্পদ অর্জন করে, যা বাংলার অর্থনীতির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

* বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক: এই যুদ্ধ মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে।


### ২. বক্সারের যুদ্ধ (Battle of Buxar)

ক. প্রেক্ষাপট (Background/Causes):

পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার নবাব মীরজাফর কোম্পানির ক্রমবর্ধমান দাবি মেটাতে ব্যর্থ হলে কোম্পানি তাকে সরিয়ে মীর কাসিমকে নবাব করে। কিন্তু মীর কাসিম ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা শাসক, যা কোম্পানির সঙ্গে তাঁর সংঘাতের জন্ম দেয়।


* মীর কাসিমের স্বাধীনচেতা নীতি: মীর কাসিম নবাব হয়েই মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গেরে (মংগের) রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং নিজের সেনাবাহিনীকে আধুনিকীকরণ করার চেষ্টা করেন। তিনি কোম্পানির কর্মচারীদের দস্তকের অপব্যবহার বন্ধ করতে সচেষ্ট হন।

* শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের বিরোধ: দেশীয় বণিকদের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদে মীর কাসিম অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সমস্ত প্রকার শুল্ক তুলে দেন। এর ফলে ইংরেজ ব্যবসায়ীরা দেশীয় বণিকদের উপর যে অন্যায্য বাণিজ্যিক সুবিধা ভোগ করত, তা বন্ধ হয়ে যায়। এটি ছিল ইংরেজদের সবচেয়ে বড় ক্ষোভের কারণ।

* কোম্পানির হস্তক্ষেপ: মীর কাসিম প্রশাসনিক ও আর্থিক সংস্কার করে বাংলার নবাব হিসাবে নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, যা কোম্পানির স্বার্থের পরিপন্থী ছিল।

* ত্রি-শক্তির জোট: কোম্পানির সঙ্গে বিরোধ শুরু হলে মীর কাসিম ১৭৬৩ সালে পাটনা থেকে পালিয়ে অযোধ্যার নবাব শুজাউদ্দৌলা এবং মুঘল সম্রাট শাহ আলম দ্বিতীয়ের সঙ্গে জোট বাঁধেন। এই তিন শক্তি সম্মিলিতভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।


খ. সংঘর্ষ (The Conflict):

* তারিখ: ২২ অক্টোবর, ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দ।

* স্থান: বক্সার প্রান্তরে (বর্তমান বিহারে)।

* পক্ষসমূহ:

    * সম্মিলিত বাহিনী: মীর কাসিম (বাংলার পদচ্যুত নবাব), শুজাউদ্দৌলা (অযোধ্যার নবাব), শাহ আলম দ্বিতীয় (মুঘল সম্রাট)।

    * ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (নেতৃত্বে ছিলেন মেজর হেক্টর মুনরো)।

* যুদ্ধের গতিপথ:

    * বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর সামরিক কৌশল ও শৃঙ্খলা ছিল অনেক উন্নত।

    * সম্মিলিত বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল।

    * মেজর হেক্টর মুনরোর নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী সম্মিলিত বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে।


গ. ফলাফল (Outcome):

* সম্মিলিত বাহিনীর বিশাল পরাজয় ঘটে। মীর কাসিম যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে অজ্ঞাত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

* মুঘল সম্রাট শাহ আলম দ্বিতীয় এবং অযোধ্যার নবাব শুজাউদ্দৌলা ইংরেজদের হাতে বন্দি হন।

* মীরজাফরকে আবার বাংলার নবাব করা হয় (কিছুদিনের জন্য)।

* এই যুদ্ধের ফলে এলাহাবাদের চুক্তি (১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ) স্বাক্ষরিত হয়, যা বক্সার যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল।


ঘ. গুরুত্ব (Significance):

* সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ: পলাশীর যুদ্ধ ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফল, কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল একটি সরাসরি সামরিক সংঘাত। এই যুদ্ধে ব্রিটিশরা ভারতের তিনটি প্রধান শক্তির সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে তাদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে।

* দেওয়ানি লাভ: ১৭৬৫ সালের এলাহাবাদের চুক্তির মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট শাহ আলম দ্বিতীয়ের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি (রাজস্ব আদায়ের অধিকার) লাভ করে। এটি ছিল কোম্পানির ক্ষমতার চূড়ান্ত ধাপ।

* বাস্তব ক্ষমতার উৎস: দেওয়ানি লাভের মাধ্যমে কোম্পানি বাংলার অর্থনীতির উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। নবাবের হাতে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা (নিজামত) রইল, যা ছিল দায়বদ্ধতাহীন। কোম্পানিই হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃত শাসক।

* সাম্রাজ্যবাদের চূড়ান্ত ধাপ: বক্সার যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং পরবর্তীকালে অন্যান্য অঞ্চলে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়।


### ৩. বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা: দেওয়ানি ও দ্বৈত শাসন পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।


ক. দেওয়ানি লাভ (Acquisition of Diwani):

* বক্সার যুদ্ধের পর রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে মুঘল সম্রাট শাহ আলম দ্বিতীয়ের সাথে এলাহাবাদের চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

* এই চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানি বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা নজরানার বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে।

* এর ফলস্বরূপ, বাংলার নবাবের ক্ষমতা খর্ব হয় এবং তিনি শুধুমাত্র প্রশাসনিক দায়িত্ব (নিজামত) পালনের জন্য নিযুক্ত হন।


খ. দ্বৈত শাসন (Dual Government):

* ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ক্লাইভ বাংলায় এক নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, যা "দ্বৈত শাসন" নামে পরিচিত।

* বৈশিষ্ট্য:

    * দেওয়ানি ক্ষমতা (রাজস্ব আদায়): কোম্পানির হাতে। কোম্পানি রাজস্ব আদায়ের জন্য মহম্মদ রেজা খান (বাংলার জন্য) এবং সিতাব রায় (বিহারের জন্য) নামক দুজন নায়েব দেওয়ান নিয়োগ করে।

    * নিজামত ক্ষমতা (প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা): নবাবের হাতে। কিন্তু নবাবের কার্যত কোনো ক্ষমতা ছিল না, তিনি ছিলেন নামমাত্র শাসক।

* ফলাফল ও তাৎপর্য:

    * ক্ষমতাহীনতা ও দায়িত্বহীনতা: কোম্পানি ক্ষমতা ভোগ করলেও জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। অপরদিকে, নবাবের উপর দায়িত্ব থাকলেও ক্ষমতা ছিল না।

    * অর্থনৈতিক শোষণ: দ্বৈত শাসনকালে বাংলায় চরম অর্থনৈতিক শোষণ শুরু হয়। কোম্পানি অবাধে রাজস্ব আদায় করে তা নিজেদের দেশে পাঠাতে থাকে।

    * কুশাসন ও বিশৃঙ্খলা: সুশাসনের অভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। কৃষকদের উপর চরম শোষণ চলে।

    * ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (Great Famine of 1770/১১৭৬ বঙ্গাব্দ): দ্বৈত শাসনের অব্যবস্থা এবং কোম্পানির শোষণমূলক নীতির ফলেই ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা ১১৭৬ সন) বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যা ইতিহাসে "ছিয়াত্তরের মন্বন্তর" নামে পরিচিত। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মারা যায়।

    * ব্রিটিশ শাসন সুদৃঢ়করণ: দ্বৈত শাসনের মাধ্যমে কোম্পানি বাংলায় তাদের শাসনকে আরও সুদৃঢ় করে এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করে।


গ. কোম্পানির শাসনের ভিত্তি স্থাপন:

পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে কোম্পানি বাংলার রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। দেওয়ানি লাভ ও দ্বৈত শাসন সেই নিয়ন্ত্রণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। এটি শুধুমাত্র বাংলার শাসন ক্ষমতা দখলের ঘটনা ছিল না, বরং সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা এবং বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।


### উপসংহার (Conclusion):

পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সংঘাত, যা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভাগ্য এবং ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। এই যুদ্ধগুলির মাধ্যমে ব্রিটিশরা শুধুমাত্র বাণিজ্যিক শক্তি থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় না, বরং বাংলা থেকে শুরু করে সমগ্র ভারতে তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে। এই ঘটনাগুলি পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।