সুলতানি আমলের কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও তাদের গ্রন্থাদির বর্ণনা

সুলতানি আমলে ভারতীয় সাহিত্য: লেখক, গ্রন্থ ও ভাষার এক বিশদ চিত্র

ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে সুলতানি আমল (১২০৬-১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের পত্তন ঘটে এবং এর ফলে একটি নতুন সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন তৈরি হয়। ফারসি ও আরবি ভাষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ভাষাগুলি যেমন বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, তেলুগু ও কন্নড় সাহিত্যের বিকাশও নতুন মাত্রা পায়। এই যুগ ছিল ভাষার বৈচিত্র্য, সাহিত্যিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিভিন্ন ধারার সৃষ্টির এক স্বর্ণযুগ।

১. প্রেক্ষাপট ও ভাষার বৈচিত্র্য

সুলতানি আমলে ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক বিশাল পরিবর্তন আসে। মুসলিম শাসকদের মাতৃভাষা ছিল ফারসি, এবং ধর্মীয় ভাষা ছিল আরবি। এই দুটি ভাষা দ্রুতই রাজভাষা, প্রশাসন ও উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই সময়ে, ভারতে প্রচলিত স্থানীয় ভাষাগুলি, বিশেষ করে সংস্কৃত এবং বিভিন্ন লোকভাষা, নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখে নতুন রূপে বিকশিত হতে শুরু করে।

  • ফারসি: রাজদরবার, প্রশাসন, ইতিহাস রচনা, কাব্য ও সূফী সাহিত্যের প্রধান ভাষা ছিল। এটি জ্ঞান ও সংস্কৃতির বাহক হিসেবে কাজ করত।
  • আরবি: মূলত ধর্মীয় গ্রন্থ, আইনশাস্ত্র, দর্শন ও বিজ্ঞানের চর্চায় ব্যবহৃত হত। কোরআন ও হাদিসের পঠন-পাঠনের জন্য এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
  • আঞ্চলিক বা লোকভাষা: বাংলা, হিন্দি (ব্রজভাষা, অবধি), পাঞ্জাবি, মারাঠি, গুজরাটি, তেলুগুকন্নড় ইত্যাদি ভাষাগুলি সাধারণ মানুষের মধ্যে সাহিত্য ও ভক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে বিকশিত হয়। বিশেষ করে ভক্তি আন্দোলন ও সূফীবাদের প্রভাবে এই ভাষাগুলিতে নতুন ধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক কাব্য রচিত হতে শুরু করে। সংস্কৃত ভাষা ধর্মীয় ও শাস্ত্রীয় আলোচনার ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল, তবে লোকভাষাগুলির গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে।

২. ফারসি সাহিত্য: রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও ঐতিহাসিক রচনা

সুলতানি আমলে ফারসি ছিল রাজদরবারের প্রধান ভাষা। সুলতান ও অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতায় ফারসি সাহিত্যে এক বিশাল পরিবর্তন আসে। ইতিহাস, কাব্য, সূফী দর্শন এবং অভিধান রচনায় ফারসি ভাষার অবদান অনস্বীকার্য।

উল্লেখযোগ্য ফারসি লেখক ও গ্রন্থসমূহ:

১. আমির খসরু (Amir Khusrau): (১২৫৩-১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ)

  • পরিচিতি: ভারতীয় ফারসি সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের অন্যতম। তিনি "ভারতের তোতা" (Tuti-e-Hind) নামে পরিচিত। তিনি ফারসি ও হিন্দাবি (আদি হিন্দি) উভয় ভাষাতেই লিখতেন। সঙ্গীত, কাব্য ও প্রহেলিকা রচনায় তাঁর অবদান অসীম। তিনি দিল্লিতে প্রায় সাতজন সুলতানের শাসনকাল প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

* উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  • *খাজাইন-উল-ফুতুহ (Khazain-ul-Futuh):* আলাউদ্দিন খলজির সামরিক অভিযানগুলির বর্ণনা।
  • *তুঘলক নামা (Tughlaq Nama):* গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সিংহাসন আরোহণ সংক্রান্ত ইতিহাস।
  • *নুহ সিপহর (Nuh Sipihr):* ভারতের ভূগোল, সংস্কৃতি, ভাষা ও প্রাণিজগতের বর্ণনা।
  • *দেওয়াল রানি খিজির খাঁ (Dewal Rani Khizr Khan):* গুজরাটের রাজকন্যা দেওয়াল রানি ও সুলতান আলাউদ্দিন খলজির পুত্র খিজির খানের প্রেমকাহিনী।
  • *আশিকাহ (Ashiqah):* একটি রোম্যান্টিক মহাকাব্য।
  • *লাইলা মজনু (Laila Majnun), শিরিন ও খসরু (Shirin o Khusrau):* ফারসি সাহিত্যের চিরায়ত প্রেমকাহিনী অবলম্বনে রচিত কাব্য।
  • *মিফতাহ-উল-ফুতুহ (Miftah-ul-Futuh):* জালালউদ্দিন খলজির সামরিক সফলতার বর্ণনা।
  • *গুরাতু'ল কামাল (Ghurrat-ul-Kamal):* তাঁর কাব্যের একটি সংকলন (দিওয়ান)।
২. জিয়াউদ্দিন বারানি (Ziauddin Barani): (প্রায় ১২৮৫-১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দ)
  • পরিচিতি: প্রখ্যাত ঐতিহাসিক। তিনি মহম্মদ বিন তুঘলক ও ফিরোজ শাহ তুঘলকের দরবারে উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন।

* উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  • *তারিখ-ই-ফিরোজশাহী (Tarikh-i-Firoz Shahi):* গিয়াসউদ্দিন বলবন থেকে ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনকালের প্রথম ছয় বছরের বিস্তারিত ইতিহাস।
  • *ফাতাওয়া-ই-জাহান্দারি (Fatawa-i-Jahandari):* মুসলিম শাসকদের জন্য আদর্শ রাষ্ট্রনীতি ও প্রশাসনের নীতিমালা সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ।
৩. মিনহাজ-উস-সিরাজ জুজানি (Minhaj-us-Siraj Juzjani): (দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দী)
  • পরিচিতি: প্রাথমিক সুলতানি যুগের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক। তিনি দিল্লীর সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদের প্রধান কাজি ছিলেন।

* উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  • *তবকাত-ই-নাসিরি (Tabaqat-i-Nasiri):* বিশ্বের সাধারণ ইতিহাস, যা আদম (আ.) থেকে শুরু করে ১২৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লির সুলতানদের ইতিহাস পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি প্রাথমিক সুলতানি যুগের একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উৎস।
৪. ইসামী (Isami): (চতুর্দশ শতাব্দী)
  • পরিচিতি: দাক্ষিণাত্যের বাহমনি সুলতানদের দরবারের ঐতিহাসিক।

* উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  • *ফুতুহ-উস-সালাতিন (Futuh-us-Salatin):* গজনভিদের সময় থেকে মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকাল পর্যন্ত ভারতীয় মুসলিম শাসকদের ইতিহাস।
৫. শামস-ই-সিরাজ আফিফ (Shams-i-Siraj Afif): (চতুর্দশ শতাব্দী)
  • পরিচিতি: ফিরোজ শাহ তুঘলকের সমসাময়িক ঐতিহাসিক।

* উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  • *তারিখ-ই-ফিরোজশাহী (Tarikh-i-Firoz Shahi):* বারানির গ্রন্থের ধারাবাহিকতা, যা ফিরোজ শাহ তুঘলকের বিস্তারিত রাজত্বকাল বর্ণনা করে।
৬. ইয়াহিয়া ইবনে আহমদ সিরহিন্দি (Yahya ibn Ahmad Sirhindi): (পঞ্চদশ শতাব্দী)

  •  পরিচিতি: সায়িদ বংশের সময়কার ঐতিহাসিক।

* উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  • *তারিখ-ই-মুবারক শাহী (Tarikh-i-Mubarak Shahi):* মহম্মদ ঘোরির ভারত বিজয়ের সময় থেকে সায়িদ শাসক মুবারক শাহের রাজত্বকালের ইতিহাস।

* অন্যান্য ফারসি সাহিত্য:

  • সূফী সাধকদের মাফুলাত (মৌখিক উপদেশাবলী) ও মালফুজাত (সংলাপের সংকলন) ফারসি ভাষায় রচিত হত। যেমন, শেখ নিজামুদ্দিন আউলিয়ার *ফাওয়াইদ-উল-ফুয়াদ*।

৩. আরবি সাহিত্য: ধর্মীয় ও জ্ঞানমূলক রচনা

আরবি মূলত ধর্মীয় বিদ্যা, আইনশাস্ত্র, দর্শন ও বিজ্ঞানের ভাষা ছিল। ভারতে আরবি সাহিত্যের মূল ধারা ছিল কোরআনের ব্যাখ্যা, হাদিস সংগ্রহ, ফিকাহ (ইসলামী আইনশাস্ত্র) এবং ব্যাকরণ।

উল্লেখযোগ্য আরবি গ্রন্থ ও লেখক:

১. ইবন বতুতা (Ibn Battuta): (১৩০৪-১৩৬৯ খ্রিস্টাব্দ)
  • পরিচিতি: মরক্কোর পর্যটক ও পরিব্রাজক। তিনি মহম্মদ বিন তুঘলকের সময় ভারতে এসেছিলেন এবং কয়েক বছর কাটিয়েছিলেন। তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত সুলতানি আমলের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।

* উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:

  • *কিতাব আল-রিহলা (Kitab al-Rihla):* তাঁর বিশ্ব ভ্রমণের বিস্তারিত বর্ণনা, যা "রিহলা" নামেই বেশি পরিচিত।

* ২. অন্যান্য ধর্মীয় পণ্ডিতগণ:

  • অনেক আরবি পণ্ডিত ভারতে এসে মাদ্রাসা ও খানকাহগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা ও গ্রন্থ রচনায় অংশ নিয়েছিলেন, যদিও তাঁদের কাজগুলো সাধারণ মানুষের কাছে ততটা পরিচিত নয়। ফিকাহ ও হাদিসের উপর অনেক ভাষ্য ও নতুন গ্রন্থ রচিত হয়েছিল।

৪. আঞ্চলিক ও লোকভাষা সাহিত্য: ভক্তি ও মঙ্গলকাব্যের বিকাশ

সুলতানি আমলে আঞ্চলিক ভাষাগুলির মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। ভক্তি আন্দোলন ও সূফীবাদের প্রভাবে সাধারণ মানুষের ভাষায় সাহিত্য রচিত হতে শুরু করে। এর ফলে স্থানীয় ভাষাগুলি আরও সমৃদ্ধ হয়।

* ক. বাংলা সাহিত্য:

  • সুলতানি আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে, বিশেষ করে ইলিয়াস শাহী ও হুসাইন শাহী রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায়।

উল্লেখযোগ্য বাংলা লেখক ও গ্রন্থ:

  • ১. জয়দেব (Jayadeva): (খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী, সুলতানি আমলের পূর্ববর্তী হলেও তাঁর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী) গীতগোবিন্দ (Gita Govinda): সংস্কৃত ভাষায় রচিত হলেও এর প্রভাব বাংলা বৈষ্ণব পদাবলীর উপর গভীর ছিল।
  • ২. কৃত্তিবাস ওঝা (Krittibas Ojha): (পঞ্চদশ শতাব্দী) শ্রীরাম পাঁচালী (Sree Ram Panchali): রামায়ণের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ। এর মাধ্যমে রামায়ণ সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়।
  • ৩. মালাধর বসু (Maladhar Basu): (পঞ্চদশ শতাব্দী) শ্রীকৃষ্ণবিজয় (Sree Krishna Bijay): ভাগবত পুরাণ অবলম্বনে রচিত। সুলতান রুকনুদ্দিন বরবক শাহ তাকে 'গুণরাজ খান' উপাধি প্রদান করেন।
  • ৪. চণ্ডীদাস (Chandi Das): (আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দী) বৈষ্ণব পদাবলীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে বহু গান ও কবিতা রচনা করেছেন।
  • ৫. কবীন্দ্র পরমেশ্বর (Kavindra Parameswar): (ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগ) পরাগল খানের পৃষ্ঠপোষকতায় মহাভারত অনুবাদ করেন। পরাগলী মহাভারত (Paragali Mahabharat)।
  • ৬. শ্রীকর নন্দী (Shrikar Nandi): (ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগ) ছুটি খানের পৃষ্ঠপোষকতায় মহাভারত অনুবাদ করেন। ছুটি খাঁয়ের মহাভারত (Chuti Khaner Mahabharat)।
  • ৭. বিজয় গুপ্ত (Bijay Gupta): (পঞ্চদশ শতাব্দী) মনসামঙ্গল (Manasamangal): মঙ্গলকাব্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যা দেবী মনসার মাহাত্ম্য প্রচার করে।
  • খ. হিন্দি সাহিত্য (ব্রজভাষা, অবধি, রাজস্থানি):
  • ভক্তি আন্দোলন হিন্দি সাহিত্যের বিকাশে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। নির্গুণ ও সগুণ উভয় ধারার কবিরা সাধারণ মানুষের ভাষায় ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার বাণী প্রচার করেন।

* উল্লেখযোগ্য লেখক ও গ্রন্থ:

  • ১. কবীর (Kabir) পঞ্চদশ শতাব্দী: নির্গুণ ভক্তিধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক কবি। তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রবক্তা ছিলেন এবং তাঁর দোঁহা (দ্বিপদী) গুলি সহজ-সরল ভাষায় গভীর দার্শনিক তত্ত্ব প্রকাশ করত। তাঁর বাণীগুলি বীজক (Bijak), কবীর গ্রন্থাবলী (Kabir Granthavali), গুরু গ্রন্থ সাহেব (Guru Granth Sahib)-এ সংকলিত হয়েছে।
  • ২. গুরু নানক দেব (Guru Nanak Dev): (১৪৬৯-১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ) শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্গুণ ভক্তিধারার গুরুত্বপূর্ণ সাধক। তাঁর বাণীগুলি পাঞ্জাবি ও ব্রজভাষায় রচিত। তাঁর বাণী ও শ্লোকগুলি গুরু গ্রন্থ সাহেব (Guru Granth Sahib)-এর অন্তর্ভুক্ত।
  • ৩. নামদেব (Namdev), রবিদাস (Ravidas): তাঁরাও ভক্তি আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সাধক ছিলেন এবং তাঁদের রচনাগুলি মারাঠি ও হিন্দিতে ভক্তিভাব প্রচার করত।
  • ৪. আমির খসরু (Amir Khusrau): (পূর্বে ফারসি বিভাগে উল্লেখ করা হয়েছে) ফারসি ভাষার পাশাপাশি তিনি হিন্দাবিতেও প্রহেলিকা, লোকগান ও কৌতুক রচনা করে হিন্দি সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি "খারি বোলি" (আধুনিক হিন্দির পূর্বসূরি) এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

* গ. অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা:

  • মারাঠি: ভক্তি আন্দোলনের প্রভাবে নামদেব, জ্ঞানেশ্বর (জ্ঞানেশ্বরী) প্রমুখ সাধক মারাঠি সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
  • গুজরাটি: নরসিংহ মেহতা প্রমুখ সাধক গুজরাটি ভক্তি সাহিত্যের জন্ম দেন।
  • দাক্ষিণাত্যের ভাষা (তেলুগু, কন্নড়): বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধীনে এই ভাষাগুলিতেও সাহিত্যচর্চা অব্যাহত ছিল, যদিও সুলতানি দিল্লীর সরাসরি প্রভাব ততটা ছিল না।

উপসংহার

সুলতানি আমল ছিল ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগসন্ধিক্ষণ। এই সময়ে ফারসি, আরবি এবং স্থানীয় ভাষাগুলির মধ্যে এক অসাধারণ মিথস্ক্রিয়া ঘটে। রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং ভক্তি ও সূফী আন্দোলনের জোয়ারে সাহিত্যের নতুন নতুন শাখা ও রূপের উন্মোচন হয়। ইতিহাস, কাব্য, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন এবং লোকগাথার মাধ্যমে এই সময়ের লেখকগণ ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমাজের এক বিচিত্র চিত্র তুলে ধরেছেন। এই যুগ শুধু সাহিত্যিক বিবর্তনের সাক্ষী নয়, বরং এটি ভাষা ও সংস্কৃতির এক সার্থক সংমিশ্রণেরও প্রতীক, যা পরবর্তীকালের ভারতীয় সাহিত্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। সুলতানি আমলের সাহিত্যিক উত্তরাধিকার আজও ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিদ্যমান।