Dog 🐶 2048 Brainstorming Game চরৈবেতি - বাংলা ব্লগ Bangla Age Calculator

সুলতানা রাজিয়া কে ছিলেন? তাঁর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল? - দিল্লি সুলতানি

তাঁর পুরো নাম 'জালালাত-উদ-দীন-রাজিয়া' ছিল। সংস্কৃত শিলালিপিতে তাকে জন্মালদ্দীন বলা হয়েছে।
১২৩৬ খ্রি: তিনি দিল্লির সিংহাসনে বসেন৷

জন্ম

1205 খ্রিষ্টাব্দ বাদায়ুনে 

উপাধি 

উমদত-উল-নিসবা

শাসন কাল

১২৩৬ থেকে ১২৪০ খ্রি:

রাজিয়ার পরিচিতি

তাঁর পুরো নাম 'জালালাত-উদ-দীন-রাজিয়া' ছিল। সংস্কৃত শিলালিপিতে তাকে জন্মালদ্দীন বলা হয়েছে। তিনি ছিলেন দিল্লী সুলতানির প্রথম ও শেষ মুসলিম মহিলা শাসিকা। মুদ্রাগুলিতে সুলতান রাজিয়াত আল দুনিয়া ওয়াল দিন বিনতে আল সুলতান' খোদাই করে জারি করা হয়েছিল। রাজিয়া তাঁর মা তুর্কমান খাতুনের (কুতুব বেগম) সঙ্গে কুশকে ফিরোজীতে থাকতেন। গোয়ালিয়র আক্রমণ উপলক্ষে ইলতুৎমিশ রাজিয়াকে দিল্লীর দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। ইলতুৎমিশ অভিযান থেকে ফিরে আসার পর নিজের ছেলেদেরকে অগ্রাধিকার না দিয়ে তাঁকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন এবং মুদ্রাতে (টঙ্কাতে) তার নমের পাশে রাজিয়ার নাম অঙ্কিত করেন। ইলতুৎমিশ নিজে এটি করার কারণ মুশরিফ উল মামালিক তাজ-উল-মুলক মহম্মদ দাবির'কে রাজিয়ার নামে উত্তরাধিকারের মনোনয়ন পত্র তৈরি করার আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, "আমার ছেলেরা বিলাসে মগ্ন এবং কেউ শাসন করতে সক্ষম নয়। তাঁরা এই রাজ্য শাসন করতে পারবে না। আমার মৃত্যুর পর আপনারা জানতে পারবেন যে রাজিয়ার মতো আর কেউ শাসন করতে পারবে না।" প্রঃ কে.এ. নিজামীর মতে, "রাজিয়ার সুলতানা হওয়া একটি চুক্তি ছিল কারণ তিনি দিল্লীর নাগরিকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে আমি যদি আপনাদের প্রত্যাশা না পূরণ করতে পারি, তাহলে আমাকে পদ থেকে সরিয়ে দেবেন।" একই সময়ে, দিল্লী সুলতানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দিল্লীর সাধারন মানুষ সুলতান নির্মাণে অংশ নিয়েছিল। মিনহাজের মতে, “লখনৌতি থেকে দেবল পর্যন্ত সমস্ত মালিক এবং আমীররা তাঁর কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিল।" ফিরিস্তা লিখেছেন, "তিনি শুদ্ধ উচ্চারন দ্বারা কোরান পাঠ করতেন এবং তাঁর পিতার জীবনকাল থেকে শাসন কার্য পরিচালনা করতেন।"

রাজিয়ার শাসন ব্যবস্থা

রাজিয়ার শাসনাকালে তুর্ক নূরুদ্দিন (নূর তুর্ক) এর নেতৃত্বে কিরামিত (কারামাখিস) এবং আহমদিয়া সম্প্রদায় মসজিদে বিদ্রোহ করে যা দমন করা হয়েছিল। নিজামুদ্দিন আউলিয়া নূর তুর্ক সম্পর্কে বলেছেন যে, “তিনি প্রতিদিন তার জীবন একটি তামার মুদ্রায় কাটাতেন যা তাঁকে তাঁর মুক্ত দাসরা প্রদান করত। নূর তুর্ক বৃষ্টির পানির চেয়েও অধিক বিশুদ্ধ ছিল।" 1238 খ্রিস্টাব্দে, গজনী ও বামিয়ানের খাবারিজম-সুবেদার মালিক হাসান কার্লঙ্গ মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে রাজিয়ার সাহায্য চেয়েছিলেন কিন্তু রাজিয়া তাকে বরন' থেকে প্রাপ্ত আয় প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু সামরিক বাহিনী দিতে প্রত্যাখ্যান করে তিনি তার রাজ্যকে মোঙ্গল আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলেন।

রাজিয়া খাজা মুহজাবউদ্দিনকে নিজামউলমুলক উপাধি দিয়ে উজির, মালিক সইফুদ্দিন আইবক বাহতুকে কুতলুগ খান উপাধি দিয়ে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন কিন্তু শীঘ্রই তাঁর মৃত্যুর পরই মালিক কুতুবউদ্দিন হাসান ঘোরীকে নায়েব-ই-লস্কর এবং মালিক ইজউদ্দিন কবির খান আয়াজকে লাহোরের সুবেদারি দেন। হাবিবুল্লাহ মহাশয়ের মতে, নায়েব-ই-লস্করের পদটি রাজিয়া শুরু করেছিলেন।

রাজিয়ার অভিযান

রাজিয়া 'রণবম্বর'-এ প্রথম অভিযান করেছিলেন, এরপর গোয়ালিয়র আক্রমণ করেছিলেন। যদিও উভয় অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। রাজিয়ার সময় থেকে রাজতন্ত্র ও চালিসার (চল্লিশ চক্র) সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। রাজিয়া তুর্কি দাস সর্দারদের একচেটিয়া শাসনের অবসান ঘটাতে একজন আবিসীনিয় মালিক জামালউদ্দিন ইয়াকুতকে আমীর-ই-আঙ্গুরের পদ দেন। এই পদে ইয়াকুতের নিয়োগ তুর্কি কর্তৃপক্ষকে অসন্তুষ্ট করেছিল কারণ তিনি একজন আবিসীনিয় হাবাসি ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে রাজিয়া তুর্কী আমীরদের মতোই অ-তুর্কী আমীরদেরও একটি দল গঠন করতে চেয়েছিলেন। ইয়াকুতের নিয়োগ ছিল তার এই নীতিরই অংশ যার বিরুদ্ধে তুর্কি আমীররা বিরোধীতা করেছিল। মিনহাজ বলেননি, কিন্তু পরবর্তী সময়ের ঐতিহাসিকরা দুজনের মধ্যে একটি অনুচিত প্রেমের অভিযোগ করেছেন।

ইবনবতুতার মতে আবিসীনিয়দের প্রতি তাঁর দৃষ্টি ছিল অপরাধাত্মক। ফিরিস্তার মতে, "যখন রাজিয়া অশ্বচালনা করতেন, তখন ইয়াকুত তাকে বাহুতে তুলে ঘোড়ায় বসিয়ে দিতেন।" ইসামি পরামর্শ দেন যে রাজিয়ার সিংহাসনে বসার পরিবর্তে চরকা সামলানো উচিৎ।

রাজিয়ার ব্যাক্তিগত জীবন

রাজিয়া মহিলাদের পোশাক ছেড়ে পুরুষদের কাপড় কাবা (কুর্তা) এবং কুলাহ (পাগড়ি) পরতে শুরু করেন। ভারতীয় পরম্পরা অনুসারে রাজিয়া রাজকীয় ছত্র (Royal umbrella) রাখা প্রবর্তন করেছিলেন। ইসামির মতে, “যে সিংহাসনে তিনি মহিলা দেহরক্ষীর সাথে বসতেন সেটি এবং তার দরবারীদের মধ্যে একটি পর্দা রাখতেন। মিনহাজ রাজিয়ার গুনের প্রশংসা করেছেন, তাঁর মতে, “তিনি ছিলেন রাজ্যের কল্যাণ সাধনকারী একজন মহান যোদ্ধা। তার সম্রাটদের মতো উপযুক্ত সমস্ত গুণাবলীই ছিল।" কিন্তু তিনি আরও বলেন যে "যখন তিনি নারী হয়ে জন্মগ্রহন করেছেন তখন এই গুণগুলি তার কী কাজে লাগে। তার নারীত্বই ছিল তার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা।" কিন্তু আমাদের লক্ষ্য করতে হবে যে, রাজিয়ার মধ্যে একজন শাসকের গুণের অভাব ছিল না। তাঁর পতনের মূল কারণ ছিল তুর্কি আমীরদের উচ্চাভিলাষী আকাঙ্ক্ষা কারন রাজিয়ার সুলতানা হওয়ায় তাদের কোন অবদান ছিল না। হাবিবুল্লার বক্তব্য সঠিক, তিনি বলেছেন - রাজিয়ার পতন ছিল তুর্কি সামরিক অভিজাতদের বিজয়।" দ্বিতীয়ত এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে এই তুর্কি আমীররা দিল্লীতে রাজিয়াকে অপদস্থ করতে পারতো না। কারণ রাজিয়ার দিল্লীর জনসাধারণের সমর্থন ছিল, তাই তাঁরা তাঁকে বিদ্রোহের মাধ্যমে দিল্লি থেকে বের করে আনেন। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান নেতা ছিলেন ইখতিয়ারউদ্দিন আইডিগিন, যাকে রাজিয়া আমীর হাজিব বানিয়েছিলেন। আলতুনিয়া এবং কবির খান ছিলেন অন্য গুরুত্বপূর্ণ ষড়যন্ত্রকারী। রাজিয়ার পতনের পেছনে আইডিগিন এবং আলতুনিয়ার প্রধান যোগদান ছিল। তিনি আলতুনিয়াকে ভাতিন্ডার সুবেদার করেছিলেন।

রাজিয়ার শাসন আমলে বিদ্রোহ

প্রথম বিদ্রোহ করে লাহোরের ইকতাদার কবির খান, যাকে বলা হয় হাজার মর্দা। দ্বিতীয় বিদ্রোহ করে ভাতিন্ডার সুবেদার আলতুনিয়া। তিনি ইয়াকুতকে হত্যা করে রাজিয়াকে 'তাবারহিন্দ' দুর্গে বন্দি বানিয়েছিলেন। অন্যদিকে দিল্লীতে বাহরাম শাহকে শাসক করা হয়েছিল। বাহরাম শাহ নায়েব-ই-মামালিকাত নামে একটি নতুন পদ সৃষ্টি করেন। এই পদে প্রথম ব্যক্তি যিনি নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি হলেন আইতিগিন, যিনি এই সময়ে বিদ্রোহীদের নেতা ছিলেন। রাজিয়া যখন এই ঘটনা জানতে পারেন তখন তাঁর মেয়েলি গুণের সুযোগ নিয়ে সে তার বাল্যবন্ধু আলতুনিয়াকে বিবাহ করেন। তাঁরা দিল্লী দখল করার জন্য অভিযান চালায় কিন্তু দুজনেই দিল্লীর সংগঠিত সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। 1240 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ডাকাতরা কৈখলে রাজিয়া ও আলতুনিয়াকে হত্যা করে। মিনহাজের মতে, "এভাবেই 3 বছর, 6 মাস এবং 6 দিন রাজত্বকারী রাজিয়ার অবসান ঘটে।"
Tags:
Next Post Previous Post