All MCQ

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠা সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কি? মারাঠাদের পতনের কারণ আলোচনা কর।

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠা সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কি?

মারাঠা সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি হল— 
  • 📍১। মারাঠা রাজাগুলির মধ্যে অন্ত,
  • 📍২। হোলকার, নানা ফড়নবিশ, সিন্ধিয়া প্রমুখের মৃত্যুর পর যোগ্য নেতার অভাব, 
  • 📍৩। মারাঠা রাষ্ট্র গঠনের আদর্শের অভাব,
  • 📍৪। পেশোয়া পদ নিয়ে মারাঠা নেতৃমণ্ডলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, 
  • 📍৫। পর্বতসঙ্কুল ও অনুর্বর মহারাষ্ট্রের দুর্বল কৰি অর্থনীতি,
  • 📍৬। মারাঠা জনগণের মধ্যে সামাজিক অবক্ষয়,
  • 📍৭। মারাঠা রাষ্ট্রের সামরিক দুর্বলতা,
  • 📍৮। ইংরেজদের উন্নত কুটনীতি ও গুপ্তচর ব্যবস্থা।
মারাঠাদের পতনের কারণ আলোচনা কর।

১৭৬১ খ্রীঃ পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পর মারাঠা শক্তির পুনরুত্থান শুরু হয়। উত্তর ও দক্ষিন ভারতের এক বিশাল অংশে মারাঠা প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনকি স্বয়ং মোঘল সম্রাটও তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেন। ইংরেজদের আর্বিভাব মারাঠা অগ্রগতি প্রতিহত হয় এবং ইংরেজদের আক্রমনের ফলেই তাদের পতন ঘটে। ঐতিহাসিক গ্রান্ড ডাফ বলেন যে, মারাঠাদের বিরুদ্ধে ইংরেজদের দ্রুত জয় এবং মারাঠাদের দ্রুত পতন ছিল বিস্ময়কর।

মারাঠাদের পতনের কারণ

মারাঠা রাজ্যের অন্তর্দ্বন্দ্ব
মারাঠা বংশ গুলি - হোলকার, ভোঁসলে, সিন্ধিয়া, গাইকোয়াড প্রভৃতি আইনগত পেশোয়ার কর্তৃত্বাধীনে হয়ে তারা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকায় শাসন পরিচালনা কঠিন হয়ে পরে।

পরিকল্পিত শীসন ব্যবস্থার অভাব
মারাঠা শক্তির দুর্বলতা ও পতনের অন্যতম কারণ ছিল মারাঠা রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক ত্রুটি মারাঠা সাম্রাজের প্রশাসন কখনই শক্তিশালী ছিল না। জায়গির প্রথার উদ্ভবের ফলে সাম্রাজ্যের ঐক্য বিনষ্ট হয়, যা মারাঠা সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে।

মারাঠা নায়কদের ব্যর্থতা
জি. এস. সরদেশাই প্রমুখ ঐতিহাসিক মারাঠা সাম্রাজের পতনের জন্য পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও দৌলতরায় সিন্ধিয়াকে দায়ী করেছেন। এছাড়াও প্রথম বাজিরাও হিন্দুপাদ পাদশাহী আদর্শ পরিত্যাগ করে প্রচুর ভুল করেছেন, ফলে অন্যান্য জাতি ও ধর্মের মানুষ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় সেনাবাহিনীর জাতীয় ঐক্য লঙ্ঘন হয়।

আদর্শের অভাব
স্যার যদুনাথ সরকারের মতে মারাঠা রাষ্ট্রের পশ্চাতে কোনো আদর্শবাদ ছিল না। 
  • ১। মারাঠা প্রশাসন ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত।
  • ২। মারাঠা রাজন্যবর্গ হিন্দু রাজন্যবর্গের উপর আক্রমন।
  • ৩। কর আদায় প্রভৃতি করতে থাকে।
  • ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে কোনো হিন্দু রাজার সাহায্য পায়নি।

অর্থনৈতিক দুর্বলতা
মহারাষ্ট্র ছিল অনুর্বর অঞ্চল। মারাঠা নেতৃমন্ডলী শিল্প বানিজ্য উন্নতি ঘটিয়ে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো চেষ্টাই করেনি। আবার বিশাল সেনাবাহিনীর বেতন দেওয়া ছিল কঠিন সমস্যা। এই অর্থনৈতিক দুর্বলতা মারাঠা সাম্রাজ্যের পতনের পথকে প্রসস্ত করে।

সামরিক দুর্বলতা
মারাঠা রাষ্ট্রের সামরিক ভিত্তিও ছিল দুর্বল। এমনকি মারাঠা সামরিক ব্যবস্থা ও রণকৌশল ছিল।ভ্রান্তিপূর্ণ অশ্বারোহী সেনার পরিবর্তে মারাঠা নায়করা মারাঠা ভারতীয় রণকৌশল ত্যাগ করে পদাতিক সেনা ও ইউরোপীয় কায়দা়য় গোলন্দাজ বাহিনীর ওপর গুরুত্ব দেয়। যা মারাঠা পতনের অন্যতম কারণ।

বর্ণপ্রথা
মারাঠা রাষ্ট্রের সামাজিক সংহতির পথে প্রধান বাধা ছিল বর্ণপ্রথা। ব্রাহ্মনদের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব করা হতো বলে পেশোয়া সরকারকে অনেকে "ব্রাহ্মণরাজ" বলে অভিহিত করেছেন।

ইংরেজদের উন্নত কূটনীতি ও গুপ্তচর ব্যবস্থা
কূটনীতি ও গুপ্তচর বৃত্তির দিক থেকেও ইংরেজরা মারাঠাদের থেকে বেশি উন্নত ছিল। ইংরেজরা মারাঠা নেতৃবৃন্দদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সংঘর্ষ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ সংবাদ রাখত। যার ফলে মারাঠাদের ওপর আধিপত্য স্থাপন করা অত্যন্ত সহজ হয়েছিল।

পরিশেষে বলা যায়, মারাঠা সাম্রাজ্যের নানা অবক্ষয় তার পতনকে ডেকে আনে। এছাড়া জনসাধারনের মধ্যে প্রগতিশীল মূল্যবোধের অভাব মারাঠা শক্তির পতনের অন্যতম কারণ ছিল।
Next Post Previous Post