নীল বিদ্রোহ কি? নীল বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা কর।

📍 নীল বিদ্রোহ কি? 📍

১৮৫৯-৬৩ খ্রিস্টাব্দে অলাভ জনক নীল চাষকে কেন্দ্র করে বাংলার নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীল চাষিদের যে স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান লক্ষ্য করা যায় তা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। কৃষ্ণনগরের চৌগাছা গ্রামে বিদ্রোহ শুরু হলেও পরবর্তীকালে নদীয়া, যশোহর, পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি অঞ্চল সহ বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
নীল বিদ্রোহের প্রকৃতি

নীল বিদ্রোহের প্রকৃতি

ঔপনিবেশিক শাসনে ব্রিটিস বিরোধী যে কটি কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল নীলকরদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নীল বিদ্রোহ। 

নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য

অন্যান্য কৃষক বিদ্রোহ অপেক্ষায় এই বিদ্রোহের কি়ছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এগুলি হল :-
  • ১. নীল বিদ্রোহ ব্রিটিস, জমিদার, মহাজন বিরোধী ছিল না; ছিল নীলকরদের বিরোধী।
  • ২. নীল বিদ্রোহে কৃষকরা অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দেয়। তারা জানিয়ে দেয় তারা আর নীল চাষ করবে না। অর্থাৎ গান্ধীজীর বহু পূর্বেই তারা যেন ঘোষনা করেছিল "করেঙ্গে মরেঙ্গে"।
  • ৩. অন্যান্য কৃষক বিদ্রোহের তুলনায় নীল বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিস সরকার ততটা কঠোর নিয়ন্ত্রন করেনি।
  • ৪. নীল বিদ্রোহের সূত্র ধরে বাংলার কৃষকরা ভারতের ইতিহাসে প্রথম ধর্মঘটের নজীর সৃষ্টি করেছিল। এল. নটরাজন এর মতে, গান্ধীজীর বহু পূর্বেই বাংলার কৃষকরা হরতালকে অস্ত্র হিসাবে প্রয়োগ করেছিল।

নেতৃত্বদান

নীল বিদ্রোহ কাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল তা নিয়ে মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। নেতৃত্ব প্রসঙ্গে ড: চিত্তব্রত পালিতের মতে, কৃষকরা নীল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়নি এবং নীল বিদ্রোহ আদৌ স্বতস্ফুর্ত ছিল না। তাঁর মতে, ভূস্বামী জমিদার শ্রেণীর এই বিদ্রোহ সম্পর্কে আগ্রহ ছিল এবং তারাই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিল।

আবার অন্য এক শ্রেণীর ঐতিহাসিক ড: পালিতের মতের বিরোধীতা করে বলেন, কৃষক থেকে জমিদার সকলেই নীল বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল। অনেকক্ষেত্রে কৃষকরাই জমিদারদের উদ্বুদ্ধ করেছিল।

ড: বিনয় চৌধুরীর মতে, জমিদাররা নীলচাষ পছন্দ করতনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও অল্প কয়েকজন জমিদার বিদ্রোহে অংশ নি়য়েছিল। এপ্রসঙ্গে ড: চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, "Only a small number of such Zaminders actually participated in the movement."

ড: প্রমথ রঞ্জন সেনগুপ্তের মতে, নীল বিদ্রোহের জন্য কোনো চক্রান্তকারীর উপর দোষ চাপান যায় না। এর জন্য নীলচাষের গলদ পূর্ন অবস্থাই দায়ি ছিল এবং কৃষকরা এর প্রতিবাদে প্রতিবাদ করেছিল।

ড: সুপ্রকাশ রায়ের মতে, নীল বিদ্রোহে কোনো অখন্ড নেতৃত্বের সন্ধান মেলে না। তাঁর মতে, মধ্যবিত্ত শ্রেণী বিদ্রোহীদের পাশে এসে দাঁড়ালেও তা ছিল নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। বরং সামগ্রিকভাবে এই শ্রেণী বিদ্রোহের বিরোধীতা করেছিল।

উপরোক্ত ঐতিহাসিকদের এই ধরনের পরস্পর বিরোধী মতবাদ সাধারন পাঠককে বিভ্রান্ত করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জমিদার ও কৃষক উভয়ই নিজেদের স্বার্থে নীলকরদের বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু উভয়ের স্বার্থ এক ছিল না। এক কথায় এটি ছিল একটি গণআন্দোলন, যাতে সমগ্র দেশবাসী যুক্ত ছিল।

নীল বিদ্রোহের কয়েকজন নেতার নাম কি?

নীল বিদ্রোহের কয়েকজন নেতা হলেন— বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাস, মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাদের মোল্লা, বৈদ্যনাথ সর্দার, রামরতন রায়, পাঁচু শেখ প্রমুখ।

নীল বিদ্রোহের সমর্থনে কোন্ কোন্ পত্রিকা প্রচার চালায়?

১। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে অক্ষয়কুমার দত্তের 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকা। ২। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট' পত্রিকা। ৩। সমাচার দর্পণ। ৪। সমাচার চন্দ্রিকা।

Next Post Previous Post