প্রাচীন ভারতের নগরসমূহ সাধারণ আলোচনা।

প্রাচীন ভারতের নগরসমূহ 

(The Cities of India)

ভারতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য জানতে হলে তার বন্দরগুলির সঙ্গে তার ঐতিহাসিক নগরগুলির পরিচয় পাওয়া দরকার। প্রাচীন যুগ হতে বিখ্যাত নগরগুলি নদী বা বাণিজ্যপথের ধারে গড়ে ওঠে। বিভিন্ন তীর্থস্থানে ভারতের প্রাচীন নগর স্থাপিত হয়। মধ্যযুগে ইওরোপে খ্রীষ্টীয় গীর্জা এবং শাসনকেন্দ্র বা নদী বা পুলের ধারে ইওরোপের শহর গড়ে ওঠে। ভারতের ক্ষেত্রে কিছুটা একই প্রকার ঘটনা ঘটে।

উত্তর ভারতের প্রাচীন নগরসমূহ

  • (১) প্রাচীন নগরগুলির মধ্যে প্রাগৈতিহাসিক মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার নাম উল্লেখ্য। মহেঞ্জোদারো নগর সিন্ধুনদের তীরে অবস্থিত ছিল। এই নগরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কালিবাঙ্গান, রূপার, লোথাল প্রভৃতি স্থানে প্রাক ঐতিহাসিক নগরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
  • (২) মহাকাব্যের যুগে হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ নগরের কথা জানা যায়। এই নগরগুলি দিল্লীর উপকণ্ঠে অবস্থিত ছিল।
  • (৩) খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকে উত্তর ভারতে কয়েকটি নগরের কথা জানা যায়। এদের মধ্যে রাজগৃহ বর্তমান রাজগীর; চম্পা; কোশল প্রভৃতির নাম উল্লেখ্য।
  • (৪) ক্রমে উত্তর ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরী রূপে পাটলিপুত্রের উদ্ভব হয়। গঙ্গা ও শোন নদের সঙ্গম স্থলে এই নগর অবস্থিত ছিল। পাটলিপুত্রের বিবরণ গ্রীক ঐতিহাসিক মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা গ্রন্থে বিশদভাবে পাওয়া যায়। আধুনিক পাটনার ১৮ কিঃ মিঃ দূরে পাটলিপুত্র অবস্থিত ছিল।
  • (৫) মধ্যপ্রদেশের সাঁচী ছিল এক বিখ্যাত নগর। গাঙ্গেয় উপত্যকা হতে উজ্জয়িনী আসার পথে সাচী অবস্থিত ছিল। সাঁচীর সঙ্গে দক্ষিণের প্রতিষ্ঠান নগরের স্থলপথে যোগ ছিল।
  • (৬) উত্তর-পশ্চিম ভারতে তক্ষশিলা ছিল এক বিখ্যাত নগর। শিলা তক্ষণ করে এই শহর তৈরি হয়। এজন্যই এর নাম হয় তক্ষশিলা। তক্ষশিলায় একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এই শহর ছিল হিমালয়ের গিরিপথে মধ্য এশিয়া হতে আগত বণিকদের সঙ্গে ভারতীয় বণিকদের মাল বিনিময়ের কেন্দ্র।
  • (৭) শাকল বা শিয়ালকোট ছিল পাঞ্জাবের অপর এক নগর। শাকল ছিল। ব্যাকট্রীয় গ্রীক রাজা মিলিন্দের রাজধানী।
  • (৮) পুস্কলাবতী ছিল গন্ধারের বিখ্যাত নগর।
  • (৯) পুরুষপুর বা পেশোয়ার ছিল সম্রাট কণিষ্কের রাজধানী।
  • (১০) উত্তরপ্রদেশের শ্রাবস্তী ছিল এক বিখ্যাত নগর। বহু শ্রেষ্ঠী ও ধনী ব্যক্তি এবং বিদ্বান এই নগরে বসবাস করতেন। গৌতম বুদ্ধ কিছুকাল এই নগরে অবস্থান করেন।
  • (১১) কাশী বা বারাণসী ছিল গঙ্গার দুই শাখা বরুণা ও অসির সঙ্গম স্থলে অবস্থিত। বারাণসী ছিল প্রধান তীর্থস্থান এবং সমৃদ্ধিশালী নগরী।
  • (১২) সারনাথ ছিল বারাণসীর নিকট অবস্থিত এক বৌদ্ধ-বিহার। এই স্থানে বুদ্ধ প্রথম ধর্মচক্র আবর্তন করেন।
  • (১৩) মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত উজ্জয়িনী খুবই বিখ্যাত নগরী ছিল। উজ্জয়িনী শিপ্রা বা বেত্রবতী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। উজ্জয়িনী ছিল বাণিজ্য ও সংস্কৃতির বিখ্যাত কেন্দ্র।
  • (১৪) বিদিশা বা আধুনিক ভিলসা ছিল মধ্যপ্রদেশের অন্যতম বিখ্যাত নগর ও বাণিজ্য কেন্দ্র। শুঙ্গ বংশীয় রাজারা এখানে বসবাস করতেন। গ্রীক বা যবন রাষ্ট্রদূত হেলিওডোরাস বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করার পর এই স্থানে একটি গরুড় স্তম্ভ তৈরি করেন।
  • (১৫) তাম্রলিপ্তি ছিল বঙ্গদেশে অবস্থিত বিখ্যাত বন্দর নগরী।
  • (১৬) গিরিনগর বা গার্ণার ছিল সৌরাষ্ট্রে শক রাজাদের বিখ্যাত রাজধানী। মহাক্ষত্রপ রুদ্রদামনের শিলালিপি এখানে পাওয়া গেছে।
  • (১৭) দ্বারকা ছিল সৌরাষ্ট্রের বিখ্যাত তীর্থ এবং বন্দর।
  • (১৮) বলভী ছিল গুজরাটের এক নগরী।
  • (১৯) ভৃগুকচ্ছ ছিল গুজরাটের বিখ্যাত বন্দর ও নগর।

দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন নগরসমূহ

দাক্ষিণাত্যের প্রধান শহরগুলির কথা এর পর বলা হচ্ছে। - 

  • (১) প্রতিষ্ঠান বা পৈঠান ছিল মহারাষ্ট্রের এক বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র।
  • (২) নাসিক মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত নগর ও তীর্থস্থান। সাতবাহন রাজাদের শিলালিপি এখানে পাওয়া গেছে।
  • (৩) বেঙ্গী অন্ধ্রপ্রদেশে গোদাবরীর তীরে অবস্থিত বিখ্যাত বাণিজ্য, শাসন ও সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল।
  • (৪) বাতাপি মহারাষ্ট্রের চালুক্য রাজাদের রাজধানী ছিল।
  • (৫) কাঞ্চি, তামিলনাড়ুতে অবস্থিত ছিল। এটি ছিল পল্লব রাজাদের বিখ্যাত নগর ও রাজধানী।
  • (৬) মহাবলীপুরম ছিল তামিলনাড়ুতে অবস্থিত পল্লব বন্দর। এখানে পল্লব শিল্পভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ পরিচয় বিখ্যাত রথের আকৃতি পাথরের মন্দির আছে।
  • (৭) তাঞ্জোর হল চোল রাজাদের বিখ্যাত রাজধানী। এখানে বিখ্যাত রাজরাজেশ্বর মন্দির অবস্থিত। তাঞ্জোর হল তামিলনাড়ুর এক প্রাচীন নগর।
  • (৮) কাবেরীপত্তনম হল এক প্রাচীন বন্দর।

Next Post Previous Post