জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় সেফটি ভাল্ব তত্ত্ব আলোচনা কর।

★★★★★
মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্ত তাঁর \"India Today\" তে জাতীয় কংগ্রেসকে সেফটিভাল্ব বলে অভিহিত করেছেন।
জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় সেফটি ভাল্ব তত্ত্ব আলোচনা কর।

১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসে এক যুগান্তরকারী ঘটনা। ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার তার "History of Freedom Movement in India" গ্রন্থে বলেছেন যে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা ভারতীয় রাজনৈতিক জীবনে এক নবযুগের সূচনা করে। জাতীয় কংগ্রেসের উৎপত্তি সম্পর্কে পট্টভি সিতারামাইয়া মন্তব্য করেছেন, 
"It is shrounded in mystery as to who originated the idea of All India Congress."
এপ্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতটি হল সেফটি ভাল্ব তত্ত্ব।

অনেকেই অবসর প্রাপ্ত ইংরেজ কর্মচারী হিউম কে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করেন। হিউম মনে করতেন, দেশের নিন্ম শ্রেণীর মানুষ যেকোনো সময় বিদ্রোহ করতে পারে। এই বিদ্রোহ থেকে শিক্ষিত সম্প্রদায় কে দূরে রাখতে এবং তাদের মতামত কে নিয়মতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দরকার। যা বিদ্রোহকে বিস্ফরিত না করে নিয়মতান্ত্রিক পথে চালনা করতে পারবে। অর্থাৎ যা ইংরেজ সরকারের সেফটি ভাল্ব হিসাবে কাজ করবে। এ বিষয়ে তাকে সাহায্য করেন বড়লাট ডাফরিন।


মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্ত তাঁর "India Today" তে জাতীয় কংগ্রেসকে সেফটিভাল্ব বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে গণবিদ্রোহের হাত থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কে রক্ষার উদ্দেশ্যে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয়। সি. এফ. অ্যান্ডুজ, গিরিজা মুখার্জী প্রমুখের মতে, দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায় যাতে কৃষকদের সাথে মিলিত হয়ে গণবিদ্রোহ সৃষ্টি না করে তাই ছিল হিউম্যান লক্ষ্য। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে "ইয়াং ইন্ডিয়া" গ্রন্থে লালা লাজপত রায় মন্তব্য করেছেন যে, ভারতের রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন অপেক্ষায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কে বিপদ থেকে রক্ষা করাই ছিল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য।

তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় সেফটিভাল্ব তত্ত্ব ও হিউম ডাফরিন ষড়যন্ত্রকে অগ্রাহ্য করেছেন বেশ কিছু ঐতিহাসিকরা। ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার, ডক্টর অমলেশ ত্রিপাঠী, ডক্টর অনিল শীল, ডক্টর সমিত সরকার, ডক্টর বিপান চন্দ্র এই মতকে অগ্রাহ্য করে বলেছেন যে,

প্রথমত,
হিউম ছিলেন সিমলায়, আর স্বরাষ্ট্র দপ্তর ছিল দিল্লিতে। ফলে গোপন নথিপত্র দেখা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
দ্বিতীয়ত,
লালা লাজপত রায় প্রশ্ন তুলেছিলেন যে ভারতের অবস্থা যদি ভয়ংকর হয়ে থাকে তাহলে তা প্রতিরোধের জন্য তিনি অবসর গ্রহণের এত পরে কেন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করলেন?
তৃতীয়ত,
ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠী বলেন, হিউম ও ডফরিন এর ব্যক্তিগত চিঠিপত্র থেকে প্রমাণিত হয় যে তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। এমনকি ডাফরিন কোনদিনই চাননি যে জাতীয় কংগ্রেসের মত একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা হোক।
ডক্টর সুমিত সরকার বলেন যে, কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে হিউমের ভূমিকা কে স্বীকার করে সেফটিভাল তথ্যকে মাত্রা অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আসলে ভারতীয় নেতৃমন্ডলী পূর্ব থেকেই এই সর্বভারতীয় জাতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। তার মতে, 
"Hume only took advantage of an already created atmosphere." 
যেহেতু নিয়ম ছিল একজন ইংরেজ কর্মচারী তাই তার নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা খুবই সহজ ছিল। ভারতীয়রা হিউম কে ব্যবহার করেছিল মাত্র।

Tags:
Next Post Previous Post

You May Also Like

Editor
ইতিহাস পাঠশালা

যা কিছু প্রাচীন, যা কিছু অতীত তাই হল ইতিহাস৷ ইতিহাস পাঠশালা হল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত, উত্তরধর্মী, প্রবন্ধ মূলক পাঠ সহায়ক একটি ব্লগ৷ মূলত ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরাই এই ব্লগের প্রধান লক্ষ্য৷