মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন: অশোকের ধম্ম (The rise and fall of the Maurya Empire: Ashoka’s Dhamma)

ইতিহাস সিলেবাসের "মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন: অশোকের ধম্ম" বিষয়ের উপর বিস্তারিত নোটগুলি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য ...

মৌর্য সাম্রাজ্য ছিল প্রাচীন ভারতের প্রথম সুসংগঠিত ও সুবিশাল সাম্রাজ্য। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে এর উত্থান ঘটে এবং এটি ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য এনেছিল। এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং এর সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক ছিলেন সম্রাট অশোক, যিনি তাঁর 'ধম্ম' নীতির জন্য পরিচিত।


#### ২. মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান (Rise of the Mauryan Empire)

ক. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (Chandragupta Maurya):

* প্রতিষ্ঠাতা ও সময়কাল: খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনকাল ছিল ৩২২-২৯৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

* গুরু ও সহায়তাকারী: তাঁর রাজনৈতিক গুরু ও প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন চাণক্য (যিনি কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত নামেও পরিচিত)। চাণক্যের লেখা 'অর্থশাস্ত্র' মৌর্য শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

* নন্দ বংশের পতন: চন্দ্রগুপ্ত চাণক্যের সাহায্যে মগধের তৎকালীন নন্দ বংশের শেষ শাসক ধননন্দকে পরাজিত ও উৎখাত করে মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

* সাম্রাজ্য বিস্তার:

    * তিনি পাঞ্জাব ও সিন্ধু অঞ্চল আলেকজান্ডারের উত্তরাধিকারীদের (গ্রিক সত্রপ) কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেন।

    * তিনি গ্রিক শাসক সেলুকাস নিকেটরকে (আলেকজান্ডারের সেনাপতি) আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পরাজিত করেন। এর ফলে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে সেলুকাস তার কন্যা হেলেনা কে চন্দ্রগুপ্তের সাথে বিবাহ দেন, এবং এর বিনিময়ে চন্দ্রগুপ্ত তাকে ৫০০ হাতি উপহার দেন। এছাড়া সেলুকাস সিন্ধু নদের পশ্চিমের চারটি প্রদেশ (আরাকোসিয়া, এরিয়া, গেদ্রোসিয়া ও পারোপানিসাডাই) মৌর্যদের হাতে তুলে দেন।

    * সেলুকাস তাঁর দূত মেগাস্থিনিসকে চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় পাঠান, যিনি 'ইন্দিকা' নামক গ্রন্থ রচনা করেন।

    * চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্য পশ্চিমে আফগানিস্তান, পূর্বে বাংলা, উত্তরে কাশ্মীর এবং দক্ষিণে কর্ণাটকের কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।


খ. মৌর্য শাসন ব্যবস্থার উৎস (Sources of Mauryan Administration):

* অর্থশাস্ত্র (Arthashastra): কৌটিল্য রচিত এই গ্রন্থটি মৌর্য যুগের রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সামরিক ব্যবস্থা এবং সামাজিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়।

* ইন্দিকা (Indica): মেগাস্থিনিস রচিত এই গ্রন্থে মৌর্যকালীন সমাজ, অর্থনীতি, নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যদিও এর মূল অংশগুলি বিলুপ্ত, পরবর্তী গ্রিক লেখকদের রচনা থেকে এর কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

* পুরাণ: বিভিন্ন পুরাণ গ্রন্থে মৌর্য রাজাদের তালিকা এবং কিছু ঘটনা উল্লেখ আছে।

* বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্য: মহাবংশ, দীপবংশ, দিব্যাবদান, পরিশিষ্টপর্বন ইত্যাদি গ্রন্থগুলি মৌর্য শাসকদের, বিশেষত অশোকের ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে তথ্য দেয়।

* শিলালিপি ও স্তম্ভলিপি: সম্রাট অশোকের অসংখ্য শিলালিপি ও স্তম্ভলিপি মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি, অশোকের ধম্ম নীতি ও প্রশাসনের বিষয়ে প্রাথমিক উৎস হিসেবে কাজ করে।

এ বিষয়ে ২০০ টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর 


#### ৩. বিন্দুসার (Bindusara)

* শাসনকাল: ২৯৮-২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

* পরিচয়: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পুত্র এবং অশোকের পিতা।

* উপাধি: গ্রিক লেখকদের কাছে তিনি 'অমিত্রোচেটেস' (Amitrochates) নামে পরিচিত ছিলেন, যার অর্থ 'শত্রু বিনাশকারী'।

* সাম্রাজ্য বিস্তার: তাঁর শাসনকালে সাম্রাজ্য স্থীতিশীল ছিল এবং দাক্ষিণাত্যের কিছু অংশ মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় বলে মনে করা হয়। তিব্বতীয় ঐতিহাসিক তারানাথ দাবি করেছেন যে বিন্দুসার ১৬টি রাজ্য জয় করেছিলেন।

* বৈদেশিক সম্পর্ক: সিরিয়ার অ্যান্টিওকাস প্রথম-এর দূত ডাইমাকাস এবং মিশরের টলেমি দ্বিতীয় ফিলাডেলফাসের দূত ডায়োনিসিয়াস তাঁর রাজসভা পরিদর্শন করেন।


#### ৪. সম্রাট অশোক (Emperor Ashoka)

ক. সিংহাসন আরোহণ ও প্রারম্ভিক জীবন (Accession to Throne & Early Life):

* সময়কাল: ২৭৩-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। (আনুষ্ঠানিক রাজ্যাভিষেক ২৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে)।

* উপাধি: তাঁর শিলালিপিতে তিনি 'দেবানাম্পিয় পিয়দাসী' (অর্থাৎ, দেবতাদের প্রিয় এবং সুদর্শন) উপাধিতে পরিচিত। মাস্কি ও গুর্জরা লেখতে প্রথম তাঁর নাম "অশোক" পাওয়া যায়।

* প্রারম্ভিক শাসন: যুবরাজ হিসেবে তিনি তক্ষশীলা ও উজ্জয়িনীর শাসনকর্তা ছিলেন। প্রারম্ভিক জীবনে তিনি একজন আক্রমণাত্মক ও সাম্রাজ্যবাদী শাসক ছিলেন বলে পরিচিত ছিলেন।

** অশোকের শিলা লেখ ও স্তম্ভ লেখ

খ. কলিঙ্গ যুদ্ধ ও হৃদয় পরিবর্তন (Kalinga War & Change of Heart):

* যুদ্ধ: খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ অব্দে (রাজ্যাভিষেকের ৮ বছর পর) অশোক কলিঙ্গ (বর্তমান ওড়িশা) আক্রমণ করেন।

* পরিণাম: এই যুদ্ধে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ নিহত এবং দেড় লক্ষ মানুষ বন্দী হয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা অশোককে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

* পরিবর্তন: এই যুদ্ধের পর অশোক সামরিক বিজয় (ভেরীঘোষ) পরিহার করে ধর্ম বিজয় (ধম্মঘোষ) নীতি গ্রহণ করেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন (উপগুপ্ত নামক বৌদ্ধ ভিক্ষুর প্রভাবে) এবং তাঁর বাকি জীবন মানবজাতির কল্যাণে উৎসর্গ করেন। এই ঘটনা ভারতীয় ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল।


গ. অশোকের ধম্ম (Ashoka's Dhamma):

* ধম্ম কী? অশোকের 'ধম্ম' কোনো বিশেষ ধর্ম ছিল না, বরং এটি ছিল একটি নৈতিক আচরণবিধি এবং সর্বজনীন জীবনদর্শন। এটি মূলত মানবীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সম্প্রীতি এবং নৈতিক উন্নতির উপর জোর দিত।

* ধম্মের মূলনীতি (Core Principles of Dhamma):

    1. অহিংসা (Ahimsa): সকল প্রকার জীবহত্যা, পশুবলি ও যুদ্ধের বিরোধিতা। প্রাণীদের প্রতি সদয় ব্যবহার।

    2. সহনশীলতা (Tolerance): সকল ধর্ম ও মতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা।

    3. সত্যবাদিতা (Truthfulness): সত্য কথা বলা।

    4. নৈতিকতা ও সদাচার (Morality & Good Conduct): গুরুজন, ব্রাহ্মণ, শ্রমণ, দাস ও ভৃত্যদের প্রতি সদ্ব্যবহার, পিতা-মাতার প্রতি বাধ্যতা।

    5. দানশীলতা (Charity): দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি দানশীলতা।

    6. আত্মনিয়ন্ত্রণ (Self-control): রাগ, হিংসা, গর্ব, ঈর্ষা ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকা।

    7. সামাজিক দায়বদ্ধতা (Social Responsibility): জনকল্যাণমূলক কাজ যেমন – রাস্তা নির্মাণ, কূপ খনন, বিশ্রামাগার স্থাপন।

* ধম্ম প্রচারের পদ্ধতি (Methods of Dhamma Propagation):

    1. শিলালিপি ও স্তম্ভলিপি (Rock and Pillar Edicts): সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শিলা ও স্তম্ভের গায়ে ধম্মের নীতিগুলি খোদাই করা হয়। এই লিপিগুলি ব্রাহ্মী, খরোষ্ঠী ও আরামাইক লিপিতে লেখা হয়েছিল।

    2. ধম্ম মহামাত্র (Dhamma Mahamattas): অশোক 'ধম্ম মহামাত্র' নামক এক শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ করেন, যাদের কাজ ছিল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ধম্মের নীতি প্রচার করা এবং জনগণের মধ্যে নৈতিকতা ও সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করা।

    3. ধর্মযাত্রা (Dhamma Yatras): তিনি নিজেও বিভিন্ন স্থানে ধর্মযাত্রা করে জনগণের মধ্যে ধম্মের বাণী প্রচার করেন।

    4. বৌদ্ধধর্মের প্রসারে সহায়তা: তিনি বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেন এবং মঠ ও স্তূপ নির্মাণে সহায়তা করেন। তাঁর পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে সিংহলে (শ্রীলঙ্কা) বৌদ্ধধর্ম প্রচারে পাঠান।

    5. তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি (Third Buddhist Council): পাটলিপুত্রে অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয় (২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে), যেখানে বৌদ্ধধর্মের বিভেদ দূর করার চেষ্টা করা হয়।


ঘ. ধম্মের গুরুত্ব ও প্রভাব (Significance and Impact of Dhamma):

* রাজার ভূমিকার পরিবর্তন: ধম্মের মাধ্যমে অশোক সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পরিবর্তে নৈতিক ও জনকল্যাণমুখী শাসনের মডেল স্থাপন করেন।

* সামাজিক সংহতি: এটি সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও নৈতিকতার পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

* বৌদ্ধধর্মের বিশ্বায়ন: অশোকের প্রচেষ্টায় বৌদ্ধধর্ম কেবল ভারতের বাইরে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

* মানবতাবাদী শাসন: এটি ছিল প্রাচীন বিশ্বে মানবতাবাদী ও অহিংস শাসনের এক বিরল উদাহরণ।


ঙ. ধম্মের সীমাবদ্ধতা/সমালোচনা (Limitations/Criticisms of Dhamma):

* কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, অশোকের ধম্মের অতিরিক্ত অহিংসা নীতি মৌর্য সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত করেছিল।

* এটি ব্রাহ্মণদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল, কারণ এটি বৈদিক যজ্ঞ ও পশুবলির বিরোধিতা করেছিল।

* কিছু ক্ষেত্রে, ধম্মের প্রয়োগে প্রশাসনিক জটিলতা ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।


#### ৫. পরবর্তী মৌর্য শাসক ও সাম্রাজ্যের পতন (Later Mauryan Rulers and Decline of the Empire)

ক. দুর্বল উত্তরাধিকারী (Weak Successors):

* অশোকের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা (কুণাল, দশরথ, সম্প্রাতি, শালিশুক, দেববর্মণ, শতধন্বন, বৃহদ্রথ) সাম্রাজ্যকে সুসংহত রাখতে পারেননি। তাঁদের দুর্বলতা কেন্দ্রীয় শাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


খ. মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ (Causes for the Decline of Mauryan Empire):

* অশোকের অহিংস নীতি: কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, অশোকের অহিংস নীতি সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে তোলে, যা সাম্রাজ্যকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়।

* কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা: বিশাল সাম্রাজ্যকে একক কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে রাখা কঠিন ছিল। অশোকের মৃত্যুর পর এই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যায়।

* প্রাদেশিক বিদ্রোহ: তক্ষশীলার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে বিদ্রোহ দেখা যায়, যা কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতা প্রমাণ করে।

* আর্থিক সংকট: বিশাল সামরিক বাহিনী, সুসংগঠিত প্রশাসন এবং জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হতো, যা সাম্রাজ্যের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করে।

* ব্রাহ্মণদের বিরোধিতা: অশোকের বৌদ্ধধর্মের প্রতি পক্ষপাত এবং যজ্ঞ ও পশুবলি নিষিদ্ধ করার নীতি কিছু রক্ষণশীল ব্রাহ্মণদের বিরোধিতা সৃষ্টি করে।

* দুর্বল উত্তরাধিকারীদের শাসন: অশোকের পরবর্তী শাসকরা ছিলেন অদক্ষ ও দুর্বল, যা সাম্রাজ্যের পতনকে অনিবার্য করে তোলে।

* বৈদেশিক আক্রমণ: সাম্রাজ্যের শেষ দিকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে গ্রিকদের (ইন্দো-গ্রিক) আক্রমণ শুরু হয়।

* শেষ শাসক: মৌর্য সাম্রাজ্যের শেষ শাসক ছিলেন বৃহদ্রথ, যাকে খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫ অব্দে তাঁর সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ হত্যা করে শুঙ্গ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।


#### ৬. মৌর্য সাম্রাজ্যের অবদান ও গুরুত্ব (Contribution and Significance of Mauryan Empire)

* রাজনৈতিক ঐক্য: মৌর্য সাম্রাজ্যই প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।

* সুসংগঠিত শাসনব্যবস্থা: চাণক্যের অর্থশাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে এক সুসংগঠিত এবং কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

* শিল্পকলা ও স্থাপত্য: অশোকের সময় শিল্পকলা ও স্থাপত্যের প্রভূত উন্নতি ঘটে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল স্তম্ভ, স্তূপ (সাঁচি স্তূপ), গুহা (লোমাস ঋষি গুহা) এবং শিলালিপি।

* ধম্মের আদর্শ: অশোকের ধম্ম মানবতাবাদী ও নৈতিক শাসনের এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করে, যা পরবর্তী ভারতীয় চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলে।

* বৌদ্ধধর্মের বিশ্বায়ন: মৌর্য সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্ম ভারত ছাড়িয়ে এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।


#### ৭. উপসংহার (Conclusion)

মৌর্য সাম্রাজ্য, বিশেষত চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং অশোকের অধীনে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ ছিল। এর রাজনৈতিক সংহতি, সুসংগঠিত প্রশাসন এবং অশোকের ধম্মের আদর্শ শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে। যদিও সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল, এর অবদান ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী ছিল।


FAQ Questions Answers

1. মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য

2. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কাকে পরাজিত করে মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন?

ধননন্দ

3. মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?

পাটলিপুত্র

4. কৌটিল্যের অপর নাম কী?

চাণক্য বা বিষ্ণুগুপ্ত

5. অর্থশাস্ত্র কে রচনা করেন?

কৌটিল্য

6. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের উত্তরসূরি কে ছিলেন?

বিন্দুসার

7. অশোক সিংহাসনে বসার আগে কোন প্রদেশের শাসক ছিলেন?

উজ্জয়িনী

8. কলিঙ্গ যুদ্ধ কত খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত হয়?

২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে

9. কলিঙ্গ যুদ্ধের পর কোন সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন?

অশোক

10. অশোকের ধম্মের মূল ভিত্তি কী ছিল?

সহনশীলতা, অহিংসা ও নৈতিকতা

11. ধম্ম মহাপাত্রদের প্রধান কাজ কী ছিল?

ধম্মের নীতি প্রচার করা

12. অশোকের অধিকাংশ শিলালিপি কোন লিপিতে লেখা?

ব্রাহ্মী লিপি

13. মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ কী ছিল?

অশোকের পর দুর্বল উত্তরাধিকারী

14. মৌর্য সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট কে ছিলেন?

বৃহদ্রথ

15. অশোক কত বছর রাজত্ব করেন?

প্রায় ৩৭ বছর

16. মৌর্য যুগে বিচার বিভাগের প্রধান কে ছিলেন?

রাজা বা সম্রাট

17. অশোক বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে কাকে শ্রীলঙ্কায় পাঠান?

মহেন্দ্র ও সংঘমিত্রা

18. মৌর্য যুগে কোন কর কৃষকদের উপর আরোপিত ছিল?

ভাগ (উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ বা এক-ষষ্ঠাংশ)

19. কোন বিদেশী পর্যটক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে ভারত সফর করেন?

মেগাস্থিনিস

20. মেগাস্থিনিসের রচিত গ্রন্থের নাম কী?

ইন্ডিকা

21. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কোন গ্রিক শাসকের সাথে চুক্তি করেছিলেন?

সেলুকাস নিকেটর

22. বিন্দুসারকে গ্রিকরা কী নামে চিনতো?

অ্যামিত্রোচেটস (শত্রু বিনাশকারী)

23. অশোকের শিলালিপিতে তাকে কী নামে অভিহিত করা হয়েছে?

দেবনামপ্রিয় প্রিয়দশী

24. অশোকের শিলালিপি প্রথম পাঠোদ্ধার করেন কে?

জেমস প্রিন্সেপ

25. মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেমন ছিল?

কেন্দ্রীভূত

26. মৌর্য যুগে কর সংগ্রহের দায়িত্বে কে ছিলেন?

সমাহর্তা

27. অশোকের ধম্মে কোন ধারণার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল?

অহিংসা ও সহনশীলতা

28. অশোকের শিলালিপিগুলি প্রধানত কোথায় পাওয়া যায়?

ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে

29. মৌর্য সাম্রাজ্যে গুপ্তচর বিভাগের প্রধানকে কী বলা হত?

মহাপসর্প

30. মৌর্য যুগে প্রধানত কোন ধাতু দিয়ে মুদ্রা তৈরি হত?

রূপা ও তামা

31. অশোকের ধম্মচক্র প্রতীক কিসের প্রতিনিধিত্ব করে?

ধর্ম ও ন্যায়ের শাসন

32. কোন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী অশোককে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করেন?

উপগুপ্ত

33. মৌর্য স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ কী?

স্তূপ ও স্তম্ভ

34. মৌর্য যুগে সামরিক বাহিনীর প্রধানকে কী বলা হত?

সেনাপতি

35. মৌর্য সাম্রাজ্যের অর্থনীতি কীসের উপর নির্ভরশীল ছিল?

কৃষি

36. অশোকের সিংহশীর্ষ স্তম্ভটি বর্তমানে কোথায় অবস্থিত?

সারনাথ

37. মৌর্য যুগে বৈদেশিক বাণিজ্যের তত্ত্বাবধান কে করত?

পান্যাধ্যক্ষ

38. মৌর্য সাম্রাজ্যের আনুমানিক সময়কাল কত ছিল?

৩২২-১৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ

39. অশোকের কোন শিলালিপিগুলি ভারতের উত্তর-পশ্চিমে খরোষ্ঠী লিপিতে পাওয়া গেছে?

শাহবাজগড়ি ও মানসেরা

40. অশোকের কোন শিলালিপিতে কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতার বর্ণনা আছে?

ত্রয়োদশ প্রধান শিলালিপি

41. মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় মগধে কোন রাজবংশ শাসন করছিল?

নন্দ রাজবংশ।

42. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তাঁর জীবনের শেষ দিকে কোন ধর্ম গ্রহণ করেন?

জৈন ধর্ম।

43. বিন্দুসারের রাজত্বকালে বিদ্রোহ দমনের জন্য অশোককে কোথায় পাঠানো হয়েছিল?

তক্ষশীলা।

44. অশোকের শিলালিপিগুলো প্রধানত কোন ভাষায় লেখা?

প্রাকৃত।

45. ধম্মের প্রসারে অশোক কোন নীতি অবলম্বন করেন?

অহিংসা ও সহিষ্ণুতা।

46. অশোকের ধম্ম প্রচারের জন্য ব্যবহৃত প্রধান মাধ্যম কী ছিল?

শিলালিপি ও স্তম্ভলিপি।

47. মৌর্য সাম্রাজ্যে গ্রামের প্রধানকে কী বলা হত?

গ্রামীণ।

48. মৌর্য যুগে রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস কী ছিল?

ভূমি রাজস্ব।

49. অশোকের শিলালিপিগুলো থেকে তাঁর শাসননীতি সম্পর্কে কী জানা যায়?

প্রজাদের প্রতি কল্যাণমূলক মনোভাব।

50. মৌর্য সাম্রাজ্যের সময়কালকে ভারতীয় ইতিহাসের কোন যুগের অংশ হিসেবে ধরা হয়?

প্রাচীন যুগ।

51. মৌর্য যুগে কৃষিক্ষেত্রে সেচের জন্য কী ব্যবহার করা হত?

খাল ও কূপ।

52. মৌর্য সাম্রাজ্যে বৈদেশিক আক্রমণ থেকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কার ছিল?

সেনাপতি ও সীমান্তরক্ষী।

53. মৌর্য যুগে শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র কোনটি ছিল?

তক্ষশীলা।

54. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সামরিক উপদেষ্টা কে ছিলেন?

চাণক্য বা কৌটিল্য।

55. মৌর্য সাম্রাজ্যে বিচার ব্যবস্থা কিসের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হত?

ধর্মসূত্র ও প্রচলিত আইন।

56. অশোকের শিলালিপিগুলিতে কোন জীবিকার মানুষের উল্লেখ পাওয়া যায়?

কৃষক, ব্যবসায়ী ও কারিগর।

57. মৌর্য সাম্রাজ্যে পণ্য বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম কী ছিল?

মুদ্রা ও বিনিময় প্রথা।

58. ধম্মের মাধ্যমে অশোক প্রজাদের মধ্যে কী ধরনের নৈতিকতা জাগাতে চেয়েছিলেন?

সহাবস্থান, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সহানুভূতি।

59. মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর কোন রাজবংশ মগধে ক্ষমতা দখল করে?

শুঙ্গ রাজবংশ।

60. অশোকের কোন শিলালিপিতে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বার্তা আছে?

দ্বাদশ প্রধান শিলালিপি।

61. মৌর্য প্রশাসনের ক্ষুদ্রতম একক কী ছিল?

গ্রাম

62. অশোকের শিলালিপিগুলো থেকে তাঁর কোন ধরনের নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়?

জনকল্যাণমূলক ও নৈতিক নীতি

63. মৌর্য যুগে রাজকীয় বিচারালয়কে কী বলা হত?

ধর্মস্থীয়

64. অশোকের ধম্মের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

সমাজে নৈতিকতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা

65. মৌর্য সাম্রাজ্যে কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত ফসলের কত অংশ কর হিসাবে নেওয়া হত?

এক-চতুর্থাংশ বা এক-ষষ্ঠাংশ

66. অশোকের শিলালিপিগুলো কিসের উপর খোদাই করা হত?

পাথর ও স্তম্ভ

67. মৌর্য যুগে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার ছিল?

রাজকর্মচারীদের

68. অশোকের রাজত্বকালে নির্মিত বিখ্যাত স্তূপটির নাম কী?

সাঁচি স্তূপ

69. মৌর্য সাম্রাজ্যে বস্ত্র শিল্পের কেন্দ্র কোনটি ছিল?

বারাণসী

70. অশোকের শিলালিপিগুলো লেখার প্রধান কারণ কী ছিল?

ধম্মের নীতি প্রচার

71. মৌর্য সাম্রাজ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষকে কী বলা হত?

সংঘ

72. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রাসাদ কিসের তৈরি ছিল বলে জানা যায়?

কাঠ

73. মৌর্য যুগে মুদ্রা তৈরি হত মূলত কোন রূপক দিয়ে?

ময়ূর ও পর্বত

74. অশোকের শিলালিপিতে কোন প্রাণীর বলিদানে নিষেধাজ্ঞা ছিল?

বিভিন্ন প্রাণী

75. মৌর্য সাম্রাজ্যে কৃষি ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধান কে করত?

সীতাধ্যক্ষ

76. মৌর্য যুগে ওজন ও পরিমাপ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে কে ছিলেন?

পোতভাধ্যক্ষ

77. অশোকের কোন শিলালিপিতে 'ধম্মমঙ্গলের' কথা উল্লেখ আছে?

দ্বাদশ শিলালিপি

78. মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ভারতে কোন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়?

শুঙ্গ সাম্রাজ্য

79. মৌর্য যুগে শিল্পীদের প্রধানত কিসের উপর কাজ করতে দেখা যেত?

পাথর খোদাই ও ভাস্কর্য

80. অশোকের কোন স্তম্ভের পাদদেশে সিংহ, ঘোড়া, ষাঁড় ও হাতির চিত্র দেখা যায়?

সারনাথ স্তম্ভের সিংহশীর্ষ

81. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার প্রথম জীবনে কোন শক্তিশালী বাহিনীকে সংগঠিত করেন?

একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী।

82. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় কোন গুরু পথপ্রদর্শন করেন?

চাণক্য।

83. মৌর্য সাম্রাজ্যে রাজকীয় আদেশের প্রচারের জন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করা হত?

শিলালিপি ও স্তম্ভলিপি।

84. অশোকের ধম্ম প্রসারের জন্য তিনি কোন নতুন প্রশাসনিক পদ তৈরি করেন?

ধম্ম মহাপাত্র।

85. কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোকের যুদ্ধনীতিতে কী মৌলিক পরিবর্তন আসে?

তিনি দিগ্বিজয় নীতি ত্যাগ করে ধম্মবিজয় নীতি গ্রহণ করেন।

86. অশোকের শিলালিপিগুলি মূলত কোন ভাষায় রচিত হয়েছিল?

প্রাকৃত ভাষা।

87. মৌর্য যুগে কৃষকদের উপর আরোপিত একটি বিশেষ করের নাম কী ছিল যা তাদের উৎপাদিত ফসলের অংশ ছিল?

ভাগ ও বালি।

88. মৌর্য প্রশাসনের প্রধান আমলারা কী নামে পরিচিত ছিলেন?

অমাত্য।

89. অশোকের ধম্মের একটি সামাজিক নীতি কী ছিল যা পরিবারে সম্পর্ক জোরদার করতে উৎসাহিত করত?

পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা।

90. মৌর্য সাম্রাজ্যে বাণিজ্য ও শিল্পকলার জন্য পরিচিত প্রধান নগরী কোনটি ছিল?

পাটলিপুত্র।

91. মৌর্য সাম্রাজ্যে গুপ্তচরদের কী নামে ডাকা হত?

গুড়পুরুষ।

92. মৌর্য যুগে রাজপরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার জন্য কোন বিশেষ বাহিনী নিযুক্ত ছিল?

অঙ্গরক্ষী বাহিনী।

93. অশোকের ধম্মে দাস ও ভৃত্যদের প্রতি কেমন আচরণ করার কথা বলা হয়েছে?

সদয় আচরণ করার কথা বলা হয়েছে।

94. মৌর্য যুগে নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপত্যের নাম কী?

স্তূপ।

95. মৌর্য সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

বিশাল পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনী।

96. অশোকের স্তম্ভগুলির মাথায় প্রায়শই কোন পশুর মূর্তি দেখা যেত?

সিংহ।

97. মৌর্য সাম্রাজ্যের আয় বৃদ্ধির জন্য বণিকদের উপর কী ধরনের শুল্ক ধার্য করা হত?

বাণিজ্যিক শুল্ক।

98. মৌর্য সাম্রাজ্যে বৈদেশিক দূতদের থাকার জন্য কোন ব্যবস্থা ছিল?

রাজকীয় অতিথিশালা।

99. অশোকের বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পর তিনি কোন স্থানে বৌদ্ধ মঠ স্থাপন করেন?

লুম্বিনীতে।

100. মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রের প্রধান পরিবর্তন কী ছিল?

আঞ্চলিক শক্তির উত্থান।