Dog 🐶 2048 Brainstorming Game চরৈবেতি - বাংলা ব্লগ Bangla Age Calculator

অলিন্দ যুদ্ধ কী?

Question: অলিন্দ যুদ্ধ কী?

উত্তর: ১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত কর্তৃক কারা বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল এন.এস. সিম্পসনকে হত্যার ঘটনা এবং এর পরবর্তী সশস্ত্র সংগ্রামকে "অলিন্দ যুদ্ধ" বলা হয়।

ব্যাখ্যা: "অলিন্দ যুদ্ধ" ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দুঃসাহসিক অধ্যায়। ১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর, বাংলার তিন তরুণ বিপ্লবী – বিনয় কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত – কলকাতার তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসনের কেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিংয়ে (বর্তমানে মহাকরণ) ঢুকে কারা বিভাগের অত্যাচারী ইন্সপেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট কর্নেল এন.এস. সিম্পসনকে হত্যা করেন। এই ঘটনা এবং এর পরবর্তী সশস্ত্র সংগ্রামই "অলিন্দ যুদ্ধ" নামে পরিচিত।

পটভূমি: ব্রিটিশ শাসনামলে, বিশেষত ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে, বাংলায় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড তুঙ্গে উঠেছিল। জেলগুলিতে রাজনৈতিক বন্দীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হতো। ইন্সপেক্টর জেনারেল এন.এস. সিম্পসন এই অত্যাচারের মূল হোতাদের একজন ছিলেন। বিপ্লবীরা এই অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের হৃদয়ে আঘাত হানতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' নামক বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা এই অভিযানের পরিকল্পনা করেন। সিম্পসনকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিনয়, বাদল ও দীনেশকে।

ঘটনা: ১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর, বিনয়, বাদল ও দীনেশ ইউরোপীয় পোশাকে সেজে পিস্তল নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন। তারা সরাসরি সিম্পসনের চেম্বারে গিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করেন। সিম্পসনের মৃত্যুর পর, তারা আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ আধিকারিককে লক্ষ্য করে গুলি চালান। এরপর ব্রিটিশ পুলিশ আধিকারিকরা তাদের ঘিরে ফেলে। শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ। বাংলার এই তিন বীর বিপ্লবী সামান্য পিস্তল নিয়ে ব্রিটিশদের আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অলিন্দে (বারান্দায়) এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বলে এটি "অলিন্দ যুদ্ধ" নামে পরিচিতি লাভ করে।

পরবর্তী ঘটনা ও পরিণতি: অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই করার পর, যখন বিপ্লবীরা বুঝতে পারেন যে তাদের পক্ষে পালানো সম্ভব নয়, তখন তারা নিজেদের জীবন বিসর্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন যাতে ব্রিটিশরা তাদের জীবিত ধরতে না পারে। বাদল গুপ্ত ঘটনাস্থলেই পটাশিয়াম সায়ানাইড সেবন করে আত্মহত্যা করেন। বিনয় বসু নিজেকে গুলি করেন এবং কিছু দিন পর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। দীনেশ গুপ্তকেও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়। বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয় এবং ১৯৩১ সালের ৭ই জুলাই তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

গুরুত্ব: অলিন্দ যুদ্ধ ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গৌরবময় অধ্যায়। এটি শুধুমাত্র একজন অত্যাচারী ব্রিটিশ কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ড ছিল না, বরং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি বিপ্লবীদের অদম্য সাহস, আত্মত্যাগ এবং প্রতিবাদের এক শক্তিশালী প্রতীক ছিল। এই ঘটনা সমগ্র ভারতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং আরও অনেক তরুণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে। বিনয়, বাদল ও দীনেশ আজও বাঙালি এবং ভারতীয়দের হৃদয়ে বীর বিপ্লবী হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ার (বর্তমানে বি.বি.ডি. বাগ) তাদের নামানুসারে রাখা হয়েছে, যা তাদের আত্মত্যাগের এক চিরন্তন স্মারক।