সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সাথে কোন সুলতানের বিরোধ হয়েছিল?

Question: সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সাথে কোন সুলতানের বিরোধ হয়েছিল

উত্তর: গিয়াসউদ্দিন তুঘলক

ব্যাখ্যা: সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়া এবং দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মধ্যে বিরোধ হয়েছিল। এই বিরোধের মূলে ছিল নিজামুদ্দিন আউলিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তা এবং আধ্যাত্মিক প্রভাব, যা সুলতানের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতি চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়েছিল।

সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক যখন বাংলা অভিযান থেকে ফিরছিলেন, তখন তিনি নিজামুদ্দিন আউলিয়াকে নির্দেশ দেন যে তিনি দিল্লিতে পৌঁছানোর আগেই যেন নিজামুদ্দিন দিল্লি ছেড়ে চলে যান। সুলতান সাধকের বিপুল ভক্তসংখ্যা, তার দরবারে আসা বিশাল অঙ্কের অর্থ (ফুতুহাত) এবং তার ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। তিনি মনে করতেন যে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার এই আধ্যাত্মিক ক্ষমতা হয়তো তার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে খর্ব করতে পারে।

এই নির্দেশ শুনে নিজামুদ্দিন আউলিয়া বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন: "হানুজ দিল্লি দূর আস্ত" (Hunuz Dilli dur ast) অর্থাৎ "দিল্লি এখনও অনেক দূরে"। এর অর্থ ছিল যে সুলতান দিল্লিতে পৌঁছানোর আগেই কিছু একটা ঘটবে। আশ্চর্যজনকভাবে, সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক দিল্লিতে পৌঁছানোর আগেই তার পুত্র মুহাম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক নির্মিত একটি কাঠের মণ্ডপ ধসে পড়ে মারা যান। এই ঘটনাকে অনেকেই নিজামুদ্দিন আউলিয়ার উক্তির ফল হিসেবে দেখেন এবং এটি ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও রহস্যময় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত।

এই বিরোধ কেবল দুই ব্যক্তির মধ্যে ছিল না, বরং এটি ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রতীক। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক চেয়েছিলেন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে, কিন্তু নিজামুদ্দিন আউলিয়ার আধ্যাত্মিক প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে তা জনমানসে গভীর ছাপ ফেলেছিল এবং শেষ পর্যন্ত সুলতানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল।

Post a Comment