Dog 🐶 2048 Brainstorming Game চরৈবেতি - বাংলা ব্লগ Bangla Age Calculator

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কেন গঠিত হয়?

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কেন গঠিত হয়

উত্তর: লক্ষ্মীর ভাণ্ডার গঠিত হয়েছিল ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করে দেশীয় শিল্প ও কুটির শিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রী প্রচলনের মাধ্যমে স্বাদেশী আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে এবং নারী সমাজের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে।

ব্যাখ্যা: লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ১৯০৩ সালে সরলা দেবী চৌধুরানী (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নী) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল। এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল নিম্নরূপ:

১. স্বদেশী আন্দোলনকে শক্তিশালী করা: ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করে দেশীয় শিল্প ও পণ্যের প্রসারের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এই আন্দোলনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করত, যা শুধুমাত্র দেশীয় উৎপাদিত পণ্য বিক্রির কেন্দ্র হিসেবেই নয়, বরং জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসারেও সহায়ক ছিল।

২. অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন: এটি কেবল একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল না, বরং অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক ছিল। এখানে গ্রাম ও কুটির শিল্পে তৈরি বিভিন্ন পণ্য, যেমন - শাড়ি, হস্তশিল্প, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি বিক্রি করা হত। এর মাধ্যমে স্থানীয় উৎপাদকদের, বিশেষত মহিলাদের, জীবিকা অর্জনে সহায়তা করা হত এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা হত।

৩. নারী ক্ষমতায়ন: সরলা দেবী নারী সমাজের আত্মনির্ভরশীলতার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার মহিলাদের দ্বারা উৎপাদিত পণ্য বিক্রির একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছিল, যার ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে পারতেন এবং সমাজে তাঁদের ভূমিকা আরও সুদৃঢ় হত। এটি নারী শ্রমিক ও কারিগরদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।

৪. জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগানো: ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ ছিল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি গর্ব এবং বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর বার্তা দিত, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করত।সংক্ষেপে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ছিল স্বদেশী চেতনার এক মূর্ত প্রতীক, যা একই সাথে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, নারী ক্ষমতায়ন এবং জাতীয়তাবাদের বার্তা বহন করে তৎকালীন ভারতে এক নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছিল।