ঔপনিবেশিক ভারতের ইতিহাসে "বঙ্গভঙ্গ" একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। এটি কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপ ছিল না, বরং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতির বিরুদ্ধে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জোয়ার আনয়ন করেছিল।
বঙ্গভঙ্গ: লর্ড কার্জনের নির্দেশে (১৯০৫)
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর, তৎকালীন ভারতের বড়োলাট লর্ড কার্জনের নির্দেশে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐতিহাসিক বাংলা প্রদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়:
- পূর্ববঙ্গ ও আসাম – যার রাজধানী করা হয় ঢাকা।
- পশ্চিমবঙ্গ – যার অন্তর্ভুক্ত হয় বিহার, ওড়িশা ও বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ।
কার্জনের যুক্তি ছিল প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলা ভাগ করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে এর অন্তরালে ছিল হিন্দু-মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরানোর ব্রিটিশ কূটনীতি। বঙ্গভঙ্গের ফলে জাতির মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সঞ্চার হয়, যার ফলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নতুন ধারা সূচিত হয়।
বঙ্গভঙ্গ রদ: লর্ড হার্ডিঞ্জের আমলে (১৯১১)
প্রচণ্ড জনমতের চাপে পড়ে অবশেষে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জের দিল্লি আগমনের সময়, তৎকালীন বড়োলাট লর্ড হার্ডিঞ্জ বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়।
উপসংহার
বঙ্গভঙ্গ ছিল ব্রিটিশ শাসনের ‘Divide and Rule’ নীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে এই বিভাজনের প্রতিবাদেই গড়ে উঠেছিল স্বদেশী আন্দোলন, যা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি রচনা করেছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনা প্রমাণ করে যে ঐক্যবদ্ধ জনমত ব্রিটিশ শাসনকেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারে।
Post a Comment