ভূমিকা: গান্ধিজির ভারতে আগমন ও প্রাথমিক সত্যাগ্রহ (Gandhi's Arrival in India & Early Satyagrahas)
* গান্ধিজির আগমন: মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ১৯১৫ সালের ৯ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে আসেন। এই দিনটি প্রতি বছর প্রবাসী ভারতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।
* রাজনৈতিক গুরু: ভারতে এসে তিনি গোপাল কৃষ্ণ গোখলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁর রাজনৈতিক পরামর্শ গ্রহণ করেন। গোখলে তাঁকে এক বছর ভারত ঘুরে জনগণের পরিস্থিতি বোঝার পরামর্শ দেন।
* সত্যাগ্রহের ধারণা: দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তিনি অহিংস সত্যাগ্রহের ধারণা গড়ে তুলেছিলেন।
* ভারতে প্রথম সত্যাগ্রহগুলি:
* চম্পারণ সত্যাগ্রহ (১৯১৭): বিহারের চম্পারণের নীলচাষীদের ওপর ইংরেজদের "তিন কাঠিয়া" প্রথা (জমির ৩/২০ অংশে নীল চাষ বাধ্যতামূলক) এবং অতিরিক্ত করের বিরুদ্ধে এই ছিল গান্ধিজির ভারতের প্রথম সত্যাগ্রহ। এটি ছিল তাঁর প্রথম আইন অমান্য আন্দোলন।
* খেদা সত্যাগ্রহ (১৯১৮): গুজরাটের খেদা জেলায় ফসল নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সরকার ভূমি রাজস্ব মকুব না করায় কৃষকদের সমর্থনে তিনি এই সত্যাগ্রহ শুরু করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম অসহযোগ আন্দোলন।
* আহমেদাবাদ মিল ধর্মঘট (১৯১৮): আহমেদাবাদে বস্ত্রশিল্প শ্রমিকদের প্লেগ বোনাস নিয়ে মালিকদের সঙ্গে বিরোধের জেরে গান্ধিজি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম অনশন ধর্মঘট।
১. অসহযোগ আন্দোলন (Non-Cooperation Movement: 1920-1922)
* প্রেক্ষাপট (Background/Causes):
* রাওলাট আইন (১৯১৯): প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতীয়দের আশা পূরণ না হওয়ায় এবং বিপ্লবী কার্যকলাপ দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার বিচারপতি রাওলাটের নেতৃত্বে "রাওলাট আইন" পাশ করে। এই আইন অনুযায়ী, বিনা পরোয়ানায় যে কাউকে গ্রেফতার ও বিনা বিচারে আটকে রাখা যেত। এটি "কালো আইন" নামে পরিচিত ছিল। এর প্রতিবাদে গান্ধিজি দেশব্যাপী সত্যাগ্রহের ডাক দেন।
* জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড (১৯১৯): রাওলাট আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে এক শান্তিপূর্ণ জনসভায় জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়, যেখানে বহু নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনা ভারতীয়দের মনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
* খিলাফত আন্দোলন (Khilafat Movement): তুরস্কের সুলতান ও খলিফার সম্মান রক্ষার দাবিতে ভারতে মহম্মদ আলি ও শওকত আলির নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন শুরু হয়। গান্ধিজি হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
* স্বরাজ প্রাপ্তি: জাতীয় কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য ছিল স্বরাজ অর্জন।
* সূচনা (Beginning):
* ১৯২০ সালের কলকাতা অধিবেশন: লালা লাজপত রাইয়ের সভাপতিত্বে কংগ্রেসের বিশেষ কলকাতা অধিবেশনে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
* ১৯২০ সালের নাগপুর অধিবেশন: সি.আর. দাশ (চিত্তরঞ্জন দাশ)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে অসহযোগ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
* কর্মসূচি (Programme): অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে দুটি দিক ছিল:
* নৈতিবাচক কর্মসূচি:
* সরকারের দেওয়া খেতাব ও উপাধি বর্জন (যেমন, গান্ধিজি কাইজার-ই-হিন্দ উপাধি ত্যাগ করেন)।
* সরকারি স্কুল, কলেজ ও আদালত বর্জন।
* বিদেশি পণ্য বর্জন, সরকারি নির্বাচন ও সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে বিরত থাকা।
* ইতিবাচক কর্মসূচি:
* জাতীয় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন, কাশী বিদ্যাপীঠ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, জাতীয় কলেজ) স্থাপন।
* স্বদেশী দ্রব্য ও খাদি বস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি।
* চরকা ও তাঁতের ব্যাপক প্রচলন।
* হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ।
* গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েত ও সালিশি আদালত গঠন।
* বিস্তার ও নেতৃত্ব (Spread & Leadership):
* গান্ধিজি, চিত্তরঞ্জন দাশ, মোতিলাল নেহরু, লালা লাজপত রাই, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, আবুল কালাম আজাদ, জওহরলাল নেহরু প্রমুখ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
* এই আন্দোলন জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র, শিক্ষক, আইনজীবী, শ্রমিক, কৃষক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এতে যোগ দেয়।
* প্রত্যাহার ও পরিণতি (Withdrawal & Outcome):
* চৌরিচৌরার ঘটনা (Chauri Chaura Incident - 1922): ১৯২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামে উত্তেজিত জনতা একটি থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে ২২ জন পুলিশ কর্মচারী নিহত হন।
* আন্দোলন প্রত্যাহার: অহিংসা ছিল গান্ধিজির আন্দোলনের মূল ভিত্তি। চৌরিচৌরার ঘটনার মাধ্যমে অহিংসার নীতি লঙ্ঘিত হওয়ায় গান্ধিজি মর্মাহত হন এবং ১৯২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
* গুরুত্ব (Significance):
* এটি ছিল ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম ব্যাপকভিত্তিক গণ আন্দোলন।
* আন্দোলনটি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
* এই আন্দোলন গান্ধিজিকে সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং জনমানসে তাঁর বিপুল প্রভাব বিস্তার করে।
* জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটায় এবং ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি দুর্বল করে দেয়।
২. আইন অমান্য আন্দোলন (Civil Disobedience Movement: 1930-1934)
* প্রেক্ষাপট (Background/Causes):
* সাইমন কমিশন (১৯২৭): ব্রিটিশ সরকার ভারতের শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য জন সাইমনের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে। এই কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয় ("সাইমন গো ব্যাক" স্লোগান)।
* নেহরু রিপোর্ট (১৯২৮): সাইমন কমিশনের প্রতিবাদে মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে একটি কমিটি ভারতের জন্য একটি সংবিধান রচনার চেষ্টা করে যা "নেহরু রিপোর্ট" নামে পরিচিত। এতে ভারতকে স্বায়ত্তশাসনের (Dominion Status) মর্যাদা দেওয়ার দাবি করা হয়।
* লাহোর কংগ্রেস (১৯২৯): জওহরলাল নেহরুর সভাপতিত্বে লাহোর কংগ্রেস অধিবেশনে "পূর্ণ স্বরাজ" (Complete Independence) প্রস্তাব গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত হয় যে, ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতে প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে।
* গান্ধিজির এগারো দফা দাবি: ১৯৩০ সালের গোড়ার দিকে গান্ধিজি লর্ড আরউইনের কাছে লবণের উপর কর বাতিল সহ ১১ দফা দাবি পেশ করেন, কিন্তু ভাইসরয় তা প্রত্যাখ্যান করেন।
* সূচনা (Beginning):
* ডান্ডি অভিযান (Dandi March): গান্ধিজি লবণ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৩০ সালের ১২ মার্চ গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে ৭৯ জন অনুগামীকে নিয়ে ডান্ডির উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন।
* ১৯৩০ সালের ৬ এপ্রিল তিনি ডান্ডি সমুদ্রতটে প্রতীকীভাবে লবণ তৈরি করে লবণ আইন ভঙ্গ করেন। এর মধ্য দিয়ে সারা ভারতে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়।
* কর্মসূচি (Programme):
* লবণ আইন ভঙ্গ করা (আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু)।
* সরকারি কর ও রাজস্ব প্রদান বন্ধ করা।
* বিদেশি পণ্য বর্জন এবং সরকারি মদ ও আফিমের দোকানে পিকেটিং।
* সরকারি স্কুল, কলেজ ও সরকারি চাকরি বর্জন।
* বন আইন অমান্য করা (মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে)।
* অহিংসা ও সত্যাগ্রহের নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা।
* বিস্তার ও নেতৃত্ব (Spread & Leadership):
* আন্দোলন দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন অঞ্চলে এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দেখা যায়:
* তামিলনাড়ু: সি. রাজাগোপালাচারী ডান্ডি মার্চের অনুকরণে বেদারণ্যম পর্যন্ত লবণ যাত্রা করেন।
* উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ: খান আব্দুল গফফর খান (যিনি "সীমান্ত গান্ধী" নামে পরিচিত) "খুদাই খিদমতগার" বা "লাল কুর্তা বাহিনী" গঠন করে অহিংস উপায়ে আন্দোলন পরিচালনা করেন।
* বাংলা: বাংলার বিভিন্ন স্থানে (যেমন কাঁথি, তমলুক, নোয়াখালী) লবণ সত্যাগ্রহ শুরু হয়। সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনও এই সময়কার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবী কার্যকলাপ।
* মহারাষ্ট্র: ধারাসানা লবণ সত্যাগ্রহে সরোজিনী নাইডু নেতৃত্ব দেন।
* এই আন্দোলনে নারী ও ছাত্রদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
* ফলাফল ও প্রত্যাহার (Outcome & Withdrawal):
* গান্ধী-আরউইন চুক্তি (Gandhi-Irwin Pact - ১৯৩১ সালের ৫ মার্চ): আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার উদ্যোগী হয়। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ভাইসরয় লর্ড আরউইন এবং কংগ্রেসের পক্ষে মহাত্মা গান্ধির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কংগ্রেস আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবে এবং দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে। সরকার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেবে এবং লবণ তৈরির অনুমতি দেবে।
* দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক (Second Round Table Conference - ১৯৩১): চুক্তি অনুযায়ী গান্ধিজি লন্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন, কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও ভারতের সাংবিধানিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ায় বৈঠক ব্যর্থ হয়।
* আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৩২-১৯৩৪): বৈঠক থেকে ফিরে এসে গান্ধিজি ১৯৩২ সালে পুনরায় আন্দোলন শুরু করেন। তবে ব্যাপক দমন-পীড়ন, ধরপাকড় ও সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত, ১৯৩৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।
* গুরুত্ব (Significance):
* এই আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জনের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রমাণ ছিল।
* এর ফলে সারা বিশ্বের কাছে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের শক্তি স্পষ্ট হয়।
* নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের এটি একটি মাইলফলক ছিল।
৩. ভারত ছাড়ো আন্দোলন (Quit India Movement: 1942)
* প্রেক্ষাপট (Background/Causes):
* দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯): ব্রিটিশ সরকার ভারতের সম্মতি ছাড়াই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতকে জড়িত করে, যা ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
* ক্রিপস মিশন (১৯৪২): যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতের সমর্থন আদায়ের জন্য ব্রিটিশ সরকার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে একটি মিশন ভারতে পাঠায়। ক্রিপস মিশন ভারতকে "ডমিনিয়ন স্টেটাস" এর প্রস্তাব দিলেও তা ছিল অস্পষ্ট এবং যুদ্ধের পরে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কংগ্রেস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, গান্ধিজি একে "ফেল পড়া ব্যাঙ্কের উপর ভবিষ্যতের চেক" (Post-dated cheque on a failing bank) বলে অভিহিত করেন।
* জাপানি আগ্রাসনের ভয়: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের দ্রুত অগ্রগতি এবং ভারতের পূর্ব সীমান্তে তাদের আক্রমণের আশঙ্কা ভারতীয়দের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে।
* জনগণের অসন্তোষ: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট, এবং যুদ্ধকালীন ব্রিটিশ নীতি জনজীবনে চরম অসন্তোষের জন্ম দেয়।
* সূচনা (Beginning):
* ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট বোম্বাইয়ের গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে "ভারত ছাড়ো" প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই প্রস্তাবের মূল স্থপতি ছিলেন জওহরলাল নেহরু।
* গান্ধিজি এই অধিবেশনে তাঁর বিখ্যাত স্লোগান "করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে" (Do or Die / করব অথবা মরব) দেন, যা জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে।
* অপারেশন জিরো আওয়ার: ৯ আগস্ট ভোরবেলা ব্রিটিশ সরকার "অপারেশন জিরো আওয়ার" এর মাধ্যমে গান্ধিজি সহ প্রায় সমস্ত শীর্ষ কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার করে।
* কর্মসূচি ও চরিত্র (Programme & Character):
* শীর্ষ নেতৃত্ব গ্রেফতার হওয়ায় আন্দোলন ছিল মূলত স্বতঃস্ফূর্ত গণবিদ্রোহ। এটি জনগণের দ্বারা পরিচালিত হয়।
* আন্দোলনে অহিংসার কথা বলা হলেও বহু স্থানে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। রেললাইন, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন তার, পোস্ট অফিস, পুলিশ থানা, সরকারি ভবন ধ্বংস করা হয়।
* ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, মহিলা ও যুবকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল।
* অনেক স্থানে স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে ওঠে এবং সমান্তরাল সরকার গঠিত হয়:
* বালিয়া (উত্তরপ্রদেশ): চিত্তু পান্ডের নেতৃত্বে একটি স্বল্পকালীন সমান্তরাল সরকার গঠিত হয়।
* তমলুক (বাংলা): সতীশ চন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে 'জাতীয় সরকার' গঠিত হয়, যার নিজস্ব বিদ্যুৎ বাহিনী ছিল। এই সরকার দীর্ঘস্থায়ী ছিল।
* সাতারা (মহারাষ্ট্র): নানা পাতিলের নেতৃত্বে 'প্রতি সরকার' গঠিত হয়, যা ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
* ফলাফল ও গুরুত্ব (Outcome & Significance):
* ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলনকে চরম দমন-পীড়নের মাধ্যমে মোকাবিলা করে। হাজার হাজার মানুষ নিহত ও আহত হয়, লাখ লাখ মানুষ গ্রেফতার হয়।
* যদিও ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলন সাময়িকভাবে দমন করতে সক্ষম হয়, এটি ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়।
* এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে ভারতে ব্রিটিশ শাসন আর বেশিদিন টিকতে পারবে না। এটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী গণবিদ্রোহ।
* এই আন্দোলনের পরেই ব্রিটিশ সরকার ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে।
উপসংহার (Conclusion):
গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ, আইন অমান্য এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের তিনটি প্রধান স্তম্ভ ছিল। তাঁর অহিংস সত্যাগ্রহের নীতি সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং এই আন্দোলনগুলিই শেষ পর্যন্ত ভারতকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আন্দোলনগুলির মাধ্যমে ভারতবাসীর মধ্যে এক নতুন রাজনৈতিক চেতনা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়, যা স্বাধীনতার পথকে সুগম করে তোলে।