বৈদিক সভ্যতা (The Vedic Civilization)

ইতিহাস সিলেবাসের "বৈদিক সভ্যতা" অংশের জন্য বিস্তারিত নোটস তথ্য, ঘটনা এবং তাদের তাৎপর্যের উপর আলোকপাত করে তৈরি করা হয়েছে।

সিন্ধু সভ্যতার পতনের পর ভারতীয় উপমহাদেশে যে নতুন সভ্যতা বিকাশ লাভ করে, তা বৈদিক সভ্যতা নামে পরিচিত। এই সভ্যতার প্রধান স্রষ্টা ছিলেন 'আর্য' নামক এক জনগোষ্ঠী। আর্য শব্দের অর্থ ‘শ্রেষ্ঠ’ বা ‘অভিজাত’। এই সভ্যতা মূলত বৈদিক সাহিত্য, বিশেষ করে বেদের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এটি ছিল একটি গ্রামীণ সভ্যতা।


সময়কাল:

ঐতিহাসিকদের মতে, বৈদিক সভ্যতার সময়কাল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দীর্ঘ সময়কালকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:

১. আদি বৈদিক যুগ বা ঋগ্বৈদিক যুগ: ১৫০০ - ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ

২. পরবর্তী বৈদিক যুগ: ১০০০ - ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ


বৈদিক যুগের উৎস:

বৈদিক সভ্যতা সম্পর্কে জানতে প্রধান উৎসগুলি হলো:

* বেদ (Vedas): আর্যদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম ও জীবনযাত্রার প্রধান উৎস। এটি 'শ্রুতি' সাহিত্য নামেও পরিচিত, অর্থাৎ যা শুনে মনে রাখা হয়েছে। বেদের চারটি ভাগ রয়েছে:

    1. ঋগ্বেদ: আর্যদের প্রাচীনতম ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ। এতে ১০টি মণ্ডলে ১০২৮টি সূক্ত (স্তোত্র) আছে। এটি দেবদেবীর স্তুতিতে রচিত।

    2. সামবেদ: এতে ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলি সুর করে গান গাওয়ার রীতি বর্ণিত। ভারতীয় সঙ্গীতের মূল উৎস হিসেবে এটি বিবেচিত।

    3. যজুর্বেদ: যজ্ঞ ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পদ্ধতি ও মন্ত্র এতে বর্ণিত। এটি গদ্য ও পদ্য উভয় রূপেই রচিত।

    4. অথর্ববেদ: এতে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান, জাদুবিদ্যা, রোগ নিরাময়, ওষধিবিদ্যা এবং জীবন ধারণের বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে।

* ব্রাহ্মণ (Brahmanas): বেদের ব্যাখ্যা এবং যজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ বিষয়ক গ্রন্থ। প্রতিটি বেদেরই নিজস্ব ব্রাহ্মণ গ্রন্থ রয়েছে (যেমন: ঋগ্বেদের ঐতরেয় ও কৌষিতকী ব্রাহ্মণ)।

* আরণ্যক (Aranyakas): আরণ্যকগুলি বন বা অরণ্যে পঠিত হতো। এতে যজ্ঞের দার্শনিক ব্যাখ্যা এবং অরণ্যচারী সাধকদের ধ্যান ও জ্ঞানচর্চার বিষয়বস্তু রয়েছে।

* উপনিষদ (Upanishads): বেদের শেষ অংশ এবং বৈদিক দর্শনের সারসংক্ষেপ। এতে আত্মা, ব্রহ্ম, কর্মফল, মোক্ষ, সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি গভীর দার্শনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উপনিষদকে 'বেদান্ত' (বেদের অন্ত) বলা হয়। মোট ১০৮টি উপনিষদের কথা জানা যায়।


বৈদিক সভ্যতা ২০০ টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর


### ১. আদি বৈদিক যুগ বা ঋগ্বৈদিক যুগ (আনুমানিক ১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)


ক. ভৌগোলিক বিস্তার:

* এই যুগে আর্যরা মূলত সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে (আফগানিস্তান, পাঞ্জাব এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশ) বসবাস করত। সপ্তসিন্ধু বলতে সিন্ধু নদ ও তার পাঁচটি উপনদী (বিতস্তা/ঝিলাম, চন্দ্রভাগা/চেনাব, ইরাবতী/রাভি, শতদ্রু/সুতলেজ, বিপাশা/বিয়াস) এবং সরস্বতী নদীকে বোঝানো হয়েছে।

* ঋগ্বেদে হিমালয় পর্বতের উল্লেখ পাওয়া যায়।


খ. রাজনৈতিক জীবন:

* জন (Jana): আর্যদের ক্ষুদ্রতম রাজনৈতিক ও সামাজিক একক ছিল 'পরিবার' বা 'কুল'। কয়েকটি কুল নিয়ে গঠিত হতো 'গ্রাম', যার প্রধান ছিলেন 'গ্রামণী'। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হতো 'বিশ' (clan), যার প্রধান ছিলেন 'বিশপতি'। কয়েকটি বিশ নিয়ে গঠিত হতো 'জন' (tribe), যার প্রধান ছিলেন 'রাজা' বা 'গোপ'।

* রাজা: এই যুগে রাজা বংশানুক্রমিক ছিলেন না। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হতেন এবং মূলত তাদের রক্ষক (জনগণ্যস্য রক্ষিতা) ও নেতা হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর ক্ষমতা সীমিত ছিল।

* সভা (Sabha): প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরিষদ। এটি বিচারকার্য ও রাজার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করত।

* সমিতি (Samiti): সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি সভা। রাজা সমিতির পরামর্শ মেনে চলতেন।

* বিদথ (Vidhatha): এটি আর্যদের প্রাচীনতম জনসভা ছিল। যুদ্ধলুণ্ঠন বণ্টন, ধর্মীয় ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্র ছিল।

* গণ (Gana): সম্ভবত সেনাবাহিনীর অংশ বা একটি উপজাতি পরিষদ।

* বলি (Bali): রাজা জনগণের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় প্রদত্ত উপহার (কর নয়) গ্রহণ করতেন, যা 'বলি' নামে পরিচিত ছিল।


গ. সমাজ জীবন:

* পরিবার: সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক। যৌথ পরিবার প্রথা প্রচলিত ছিল।

* বর্ণপ্রথা: এই যুগে বর্ণপ্রথা কর্মভিত্তিক ছিল, জন্মভিত্তিক ছিল না। সমাজে তেমন কঠোর ভেদাভেদ ছিল না। আর্যদের মধ্যে শ্বেতবর্ণ এবং অনার্যদের মধ্যে কৃষ্ণবর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়। চার প্রকার বর্ণের উল্লেখ ছিল:

    * ব্রাহ্মণ (পুরোহিত)

    * ক্ষত্রিয় (যোদ্ধা)

    * বৈশ্য (ব্যবসায়ী, পশুপালক, কৃষক)

    * শূদ্র (সেবাদানকারী)

* নারীর অবস্থান: সমাজে নারীদের উচ্চ সম্মান ছিল। তাঁরা পতি নির্বাচনের অধিকার পেতেন। লোপামুদ্রা, ঘোষা, বিশ্ববারা, অপালা প্রমুখ বিদুষী নারী ঋগ্বেদের মন্ত্র রচনা করেছিলেন। সভা ও সমিতিতে নারীদের অংশগ্রহণের অনুমতি ছিল। বিধবা বিবাহ ও নিয়োগ প্রথা (সন্তানহীন বিধবার স্বামীর ছোট ভাইয়ের সাথে বিবাহ) প্রচলিত ছিল। সতীদাহ প্রথা ছিল না।

* আশ্রম প্রথা: এই যুগে আশ্রম প্রথা (ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস) প্রচলিত ছিল না।


ঘ. অর্থনৈতিক জীবন:

* প্রধান জীবিকা: পশুপালন ছিল আর্যদের প্রধান জীবিকা। গরু (অঘ্ন্যা - যাকে মারা উচিত নয়) ছিল প্রধান সম্পদ এবং সম্পদের পরিমাপক। ঘোড়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী।

* কৃষি: কৃষি ছিল গৌণ জীবিকা। যব ছিল প্রধান কৃষিপণ্য।

* ব্যবসা-বাণিজ্য: অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রচলিত ছিল। বিনিময় প্রথা (Barter System) দ্বারা লেনদেন হতো। 'নিষ্ক' নামক সোনার অলংকার বা মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

* শিল্প: কাঠ, চামড়া, বুনন, মৃৎশিল্পের কারিগর ছিল।


ঙ. ধর্মীয় জীবন:

* দেবদেবী: আর্যরা প্রকৃতির উপাসনা করত। সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি, বায়ু, ইন্দ্র, বরুণ, উষা, অশ্বিন, রুদ্র, পৃথিবী, অদিতি প্রমুখ প্রাকৃতিক শক্তিকেই তারা দেবতা রূপে পূজা করত।

    * ইন্দ্র (পুরন্দর): ঋগ্বৈদিক যুগের প্রধান দেবতা, যুদ্ধ ও বৃষ্টির দেবতা।

    * অগ্নি: মানুষ ও দেবতার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী (মধ্যস্থতাকারী) দেবতা।

    * বরুণ: জল, ঋত (নিয়ম), ও নৈতিকতার দেবতা।

* পূজা পদ্ধতি: যাগযজ্ঞ ছিল সরল। মন্ত্র পাঠ ও স্তুতি দ্বারা দেবদেবীকে তুষ্ট করা হতো। মূর্তি পূজা ও মন্দির নির্মাণ প্রচলিত ছিল না।

* মৃত্যুর পর জীবন: এই যুগে পরকালের ধারণা ছিল অস্পষ্ট।


### ২. পরবর্তী বৈদিক যুগ (আনুমানিক ১০০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

ক. ভৌগোলিক বিস্তার:

* আর্যরা সপ্তসিন্ধু অঞ্চল থেকে পূর্ব দিকে গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চলে (গঙ্গানদী উপত্যকা) বিস্তৃত হয়।

* কুরু, পাঞ্চাল, কাশী, কোশল, বিদেহ, মগধ, অঙ্গ - এই সমস্ত অঞ্চলে আর্য জনবসতি গড়ে ওঠে।

* লোহার ব্যবহারের ফলে গভীর অরণ্য পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন ও কৃষিকাজ সহজ হয়।


খ. রাজনৈতিক জীবন:

* জনপদ ও মহাজনপদ: ক্ষুদ্র 'জন' গুলি একত্রিত হয়ে 'জনপদ' (যেমন: কুরু, পাঞ্চাল) এবং পরে 'মহাজনপদ' (যেমন: ষোড়শ মহাজনপদ) গড়ে ওঠে।

* রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি: রাজার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। রাজতন্ত্র বংশানুক্রমিক হয়।

* উপাধি: রাজারা বিভিন্ন রাজকীয় যজ্ঞ (রাজসূয়, অশ্বমেধ, বাজপেয়) সম্পন্ন করে 'সম্রাট', 'রাজাধিরাজ', 'একরাট' ইত্যাদি উপাধি ধারণ করতেন।

* নিয়মিত কর ও সেনাবাহিনী: রাজারা নিয়মিত কর (যেমন: ভাগ, শুল্ক) আদায় করতেন। রাজার নিজস্ব স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠিত হয়।

* সভা-সমিতির ক্ষমতা হ্রাস: রাজা শক্তিশালী হওয়ায় সভা ও সমিতির ক্ষমতা হ্রাস পায়।


গ. সমাজ জীবন:

* বর্ণপ্রথা: বর্ণপ্রথা জন্মভিত্তিক ও অত্যন্ত কঠোর হয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রাধান্য বাড়ে। সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। শূদ্রদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়।

* আশ্রম প্রথা: জীবনকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে আশ্রম প্রথার (ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস) পূর্ণ বিকাশ ঘটে।

* গোত্র প্রথা: এই যুগে গোত্র প্রথার উদ্ভব হয়, যেখানে একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল।

* নারীর অবস্থান: সমাজে নারীর সম্মান ও স্বাধীনতা হ্রাস পায়। বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহের প্রচলন বাড়ে। শিক্ষা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ হয়। সতীদাহ প্রথা ও পণ প্রথার সূচনা দেখা যায়।

* নতুন আইন: স্মৃতিশাস্ত্র ও ধর্মসূত্রগুলি রচিত হয়, যা সমাজের নিয়ম-কানুন ও দণ্ডবিধির নির্দেশ দেয়।


ঘ. অর্থনৈতিক জীবন:

* কৃষি: লোহার লাঙ্গলের ব্যবহারের ফলে কৃষিকাজ প্রধান জীবিকায় পরিণত হয়। ধান, গম, যব ছিল প্রধান কৃষিপণ্য।

* শিল্প ও বাণিজ্য: বিভিন্ন কারিগর শ্রেণী (যেমন: সূত্রধর, কর্মকার, তন্তুবায়, কুম্ভকার) এবং বণিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়। নগর ও শহরের বিকাশ ঘটে।

* মুদ্রা: 'শতমান' (রৌপ্য মুদ্রা) ও 'কৃষ্ণালা' (স্বর্ণ মুদ্রা) নামক মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়।


ঙ. ধর্মীয় জীবন:

* দেবদেবী: পূর্বের প্রাকৃতিক দেবতারা গুরুত্ব হারান। ব্রহ্মা (সৃষ্টিকর্তা), বিষ্ণু (পালনকর্তা), শিব (ধ্বংসকর্তা) এই তিন প্রধান দেবতার পূজা শুরু হয়।

* যজ্ঞের জটিলতা: যাগযজ্ঞ অত্যন্ত জটিল, ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে। পুরোহিত শ্রেণীর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি চরমভাবে বৃদ্ধি পায়।

* দার্শনিক চিন্তা: উপনিষদের মাধ্যমে আত্মজ্ঞান, ব্রহ্ম, কর্মফল, পুনর্জন্ম, মোক্ষ ইত্যাদি গভীর দার্শনিক ধারণার বিকাশ ঘটে।

* তীর্থযাত্রা ও মূর্তি পূজা: তীর্থযাত্রা এবং মূর্তি পূজার প্রচলন শুরু হয়।

* নতুন চিন্তা: এই যুগে ধর্মের বাড়াবাড়ি ও যজ্ঞের জটিলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে নতুন ধর্মীয় আন্দোলন, যেমন বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের পথ প্রশস্ত হয়।


### আদি বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক যুগের পার্থক্য (একনজরে)

বৈশিষ্ট্য আদি বৈদিক যুগ (১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পরবর্তী বৈদিক যুগ (১০০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
ভূগোল সপ্তসিন্ধু অঞ্চল (পাঞ্জাব ও সংলগ্ন এলাকা) গঙ্গা-যমুনা দোয়াব (পূর্ব দিকে বিস্তার)
রাজনৈতিক কাঠামো জন, রাজা সীমিত ক্ষমতা, নির্বাচিত, সভা-সমিতির গুরুত্ব জনপদ-মহাজনপদ, রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি, বংশানুক্রমিক, সভা-সমিতির ক্ষমতা হ্রাস, নিয়মিত কর ও সেনাবাহিনী
সমাজ কর্মভিত্তিক বর্ণপ্রথা, নারী উচ্চস্থান, পিতৃতান্ত্রিক পরিবার, আশ্রম প্রথা অনুপস্থিত জন্মভিত্তিক কঠোর বর্ণপ্রথা, নারীর স্থান অবনমিত, বাল্যবিবাহ, গোত্র প্রথা, আশ্রম প্রথার পূর্ণ বিকাশ
অর্থনীতি পশুপালন প্রধান, কৃষি গৌণ (যব), বিনিময় প্রথা, নিষ্ক (মুদ্রার মত) কৃষি প্রধান (ধান, গম), লোহার ব্যবহার, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার, শহর ও নগরের বিকাশ, শতমান, কৃষ্ণালা (মুদ্রা)
ধর্ম প্রকৃতির পূজা (ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণ), সরল যজ্ঞ, মূর্তি পূজা নেই ত্রিমূর্তি (ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব), জটিল ও ব্যয়বহুল যজ্ঞ, পুরোহিতদের প্রাধান্য, উপনিষদে দার্শনিক চিন্তা, মূর্তি পূজার সূচনা


### বৈদিক সভ্যতার তাৎপর্য ও গুরুত্ব:

বৈদিক সভ্যতা ভারতীয় ইতিহাসে এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। এর গুরুত্ব নিম্নরূপ:

* হিন্দু ধর্মের ভিত্তি: বর্তমান হিন্দু ধর্ম, তার বহু দেবদেবী, যাগযজ্ঞ, মন্ত্রোচ্চারণ, দার্শনিক চিন্তাধারা (যেমন: কর্মফল, মোক্ষ) বৈদিক যুগ থেকেই বিকশিত হয়েছে।

* সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য: বৈদিক সংস্কৃত ভাষা থেকে পরবর্তীকালে ধ্রুপদী সংস্কৃতের বিকাশ ঘটে, যা ভারতীয় সাহিত্য, বিজ্ঞান ও দর্শনের প্রধান বাহক ছিল। বেদ, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ ভারতীয় সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

* বর্ণাশ্রম প্রথা: যদিও পরবর্তী বৈদিক যুগের বর্ণপ্রথা কুফল নিয়ে এসেছিল, তবে এর সামাজিক কাঠামো (বর্ণ ও আশ্রম) ভারতীয় সমাজের এক মৌলিক ভিত্তি তৈরি করে।

* রাজনৈতিক বিবর্তন: বৈদিক যুগের 'জন' থেকে 'জনপদ' ও 'মহাজনপদ'-এর উদ্ভব পরবর্তীকালে শক্তিশালী সাম্রাজ্য গঠনে পথ খুলে দেয়। রাষ্ট্রের ধারণা এই যুগেই স্পষ্ট হতে শুরু করে।

* দার্শনিক অবদান: উপনিষদের দার্শনিক চিন্তা, ব্রহ্ম ও আত্মার একত্ব, জীবাত্মা ও পরমাত্মার সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলি ভারতের আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক চিন্তাধারাকে গভীরতা প্রদান করে।

* গ্রামীন জীবনধারা: এই সভ্যতার গ্রামীণ ভিত্তি এবং যৌথ পরিবারের ধারণা ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।


### গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (একনজরে):

* আর্যদের আদি বাসস্থান: মধ্য এশিয়া (ম্যাক্স মুলার), সুমেরু (বাল গঙ্গাধর তিলক), তিব্বত (দয়ানন্দ সরস্বতী)।

* বৈদিক যুগে নদীগুলির প্রাচীন নাম:

    * বিতস্তা - ঝিলাম

    * পুরুষণী - রাভি

    * শতদ্রু - সুতলেজ

    * বিপাশা - বিয়াস

    * চন্দ্রভাগা - চেনাব

    * সরস্বতী - নাদিওমা (পবিত্রতম নদী)

    * সিন্ধু - সর্বাধিক উল্লিখিত নদী

* রাজা: গোপ বা জনগণ্যস্য রক্ষিতা।

* গো-হত্যা: অঘ্ন্যা (নিষেধ)।

* প্রধান জীবিকা: পশুপালন (আদি), কৃষি (পরবর্তী)।

* লোহার ব্যবহার: পরবর্তী বৈদিক যুগে 'শ্যাম আয়াস' বা 'কৃষ্ণ আয়াস' নামে পরিচিত ছিল।

* প্রধান ফসল: যব (আদি), ধান ও গম (পরবর্তী)।

* ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে: পুরুষসূক্তে চতুর্বর্ণের প্রথম উল্লেখ।

* উপনিষদ: ১০৮টি, এদের মধ্যে ছান্দোগ্য, বৃহদারণ্যক, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মুন্ডক, মাণ্ডুক্য, ঐতরেয়, তৈত্তিরীয়, ঈশ, শ্বেতাশ্বতর, কৌষিতকী উপনিষদ প্রধান।

* ছান্দোগ্য উপনিষদ: কৃষ্ণপুত্র দেবকীপুত্রের উল্লেখ আছে।

* সত্যমেব জয়তে: মুন্ডক উপনিষদ থেকে গৃহীত।

* ঋগ্বেদের মোট সূক্ত: ১০২৮টি।

* বেদ সংকলক: কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস।

FAQ Questions Answers 100

1. বৈদিক সভ্যতা কোন সময়ে বিকাশ লাভ করে?

আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।


2. বৈদিক যুগের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কি?

বেদ।


3. বেদের কয়টি ভাগ আছে?

চারটি - ঋক, সাম, যজু, অথর্ব।


4. ঋগ্বেদ কি সম্পর্কে আলোচনা করে?

স্তোত্র, প্রার্থনা ও দেবদেবীর গুণগান।


5. সামবেদ কি নিয়ে গঠিত?

সঙ্গীত ও স্তোত্র।


6. যজুর্বেদ কিসের নির্দেশিকা?

যজ্ঞ ও পূজার নিয়মাবলী।


7. অথর্ববেদ কি বিষয়ের উপর আলোকপাত করে?

মন্ত্র, জাদুবিদ্যা ও ঔষধ।


8. বৈদিক সমাজের প্রধান জীবিকা কি ছিল?

পশুপালন ও কৃষি।


9. আদি বৈদিক যুগে ব্যবহৃত প্রধান ধাতুটি কি ছিল?

তামা ও ব্রোঞ্জ।


10. পরবর্তী বৈদিক যুগে কোন ধাতুর ব্যবহার বৃদ্ধি পায়?

লোহা।


11. বৈদিক যুগের প্রধান দেবতার নাম কি?

ইন্দ্র, অগ্নি ও বরুণ।


12. বৈদিক সমাজে গোত্রের ভূমিকা কি ছিল?

বংশ ও পারিবারিক পরিচয়ের ভিত্তি।


13. বৈদিক যুগে 'রাজান' কাকে বলা হত?

উপজাতির প্রধান বা রাজাকে।


14. 'সভা' ও 'সমিতি' কি ছিল?

বৈদিক যুগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ জনসমাবেশ।


15. বৈদিক শিক্ষা ব্যবস্থা কি নামে পরিচিত ছিল?

গুরুকুল প্রথা।


16. বৈদিক সাহিত্যে উল্লেখিত নদীগুলির মধ্যে কোনটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ?

সিন্ধু ও সরস্বতী।


17. ঋগ্বৈদিক আর্যদের মূল বাসস্থান কোথায় ছিল বলে ধারণা করা হয়?

সপ্তসিন্ধু অঞ্চল।


18. বৈদিক ধর্মে যজ্ঞের গুরুত্ব কেমন ছিল?

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, দেবতাদের সন্তুষ্ট করার মাধ্যম।


19. উপনিষদ কি?

বৈদিক দর্শনের চূড়ান্ত অংশ, আধ্যাত্মিক জ্ঞান নিয়ে গঠিত।


20. আদি বৈদিক যুগে বর্ণপ্রথা কি রূপ নিয়েছিল?

মূলত কর্মভিত্তিক বিভাজন।


21. ঋগ্বেদে উল্লেখিত প্রিয় পশু কোনটি?

ঘোড়া ও গরু।


22. বৈদিক আর্যরা কোন ধরনের জীবনযাপন করত?

অর্ধ-যাযাবর ও গ্রামীণ জীবন।


23. বৈদিক যুগে বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম কি ছিল?

গবাদি পশু।


24. বৈদিক যুগে নারীদের সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল?

তুলনামূলকভাবে স্বাধীন ও সম্মানিত।


25. 'বেদান্ত' বলতে কি বোঝায়?

উপনিষদ এবং বৈদিক দর্শনের চূড়ান্ত রূপ।


26. বৈদিক যুগে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের দেবতা কে ছিলেন?

ইন্দ্র।


27. বৈদিক যুগে আগুনের দেবতা কে ছিলেন?

অগ্নি।


28. বৈদিক যুগে জলের দেবতা কে ছিলেন?

বরুণ।


29. বৈদিক যুগে জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী কে ছিলেন?

সরস্বতী।


30. 'গায়ত্রী মন্ত্র' কোন বেদে পাওয়া যায়?

ঋগ্বেদে।


31. বৈদিক সাহিত্যকে কয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়?

চারটি - সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ।


32. 'ব্রাহ্মণ' গ্রন্থগুলি কি নিয়ে আলোচনা করে?

বৈদিক যজ্ঞের রীতিনীতি ও ব্যাখ্যা।


33. 'আরণ্যক' গ্রন্থগুলি কোথায় রচিত হয়েছিল?

বনে বা অরণ্যে।


34. বৈদিক সমাজে যৌথ পরিবারের গুরুত্ব কেমন ছিল?

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।


35. বৈদিক যুগের মানুষের প্রধান খাদ্য কি ছিল?

যব, গম, দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য।


36. ঋগ্বৈদিক সমাজে কি বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল?

না, এর প্রচলন ছিল না।


37. পরবর্তী বৈদিক যুগে কোন ধরনের কৃষি কাজ প্রাধান্য পায়?

ধান ও গমের চাষ।


38. বৈদিক যুগে প্রচলিত বিবাহ পদ্ধতির নাম কি?

ব্রহ্ম বিবাহ, দৈব বিবাহ ইত্যাদি।


39. বৈদিক যুগে কি সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল?

না, এর কোন স্পষ্ট প্রমাণ নেই।


40. 'পুরন্দর' কার উপাধি ছিল?

ইন্দ্রের, দুর্ভেদ্য নগরী ধ্বংসকারী।


41. বৈদিক যুগে পোশাক কি দিয়ে তৈরি হত?

পশমের লোম বা তুলো দিয়ে।


42. বৈদিক ঋষিদের মধ্যে কয়েকজনের নাম বলুন।

বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, অত্রি।


43. পরবর্তী বৈদিক যুগে বর্ণপ্রথার মূল ভিত্তি কি হয়?

জন্ম।


44. 'গবেষণা' শব্দটি বৈদিক যুগে কি অর্থে ব্যবহৃত হত?

গরুর অনুসন্ধান।


45. বৈদিক যুগে 'গ্রামণী' কে ছিলেন?

গ্রামের প্রধান।


46. বৈদিক সভ্যতার সময়কালকে কয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়?

দুটি - আদি বৈদিক (ঋগ্বৈদিক) ও পরবর্তী বৈদিক।


47. বৈদিক যুগে কি কোন বৃহৎ নগর ছিল?

না, এটি মূলত গ্রামীণ সভ্যতা ছিল।


48. বৈদিক যুগের মুদ্রা কি নামে পরিচিত ছিল?

নিষ্ক (মূল্যবান অলঙ্কার বা পরিমাপ)।


49. বৈদিক সাহিত্যে বর্ণিত স্বর্গ ও নরকের ধারণা কেমন ছিল?

কর্মফল অনুযায়ী পুণ্যাত্মারা স্বর্গে ও পাপীরা নরকে যেত।


50. বৈদিক যুগে কি মূর্তি পূজা প্রচলিত ছিল?

না, প্রধানত প্রকৃতির শক্তির পূজা হত।


51. বৈদিক যুগে কারিগরি শিল্প কেমন ছিল?

বৈদিক যুগে কাঠ, মাটি ও ধাতুর কারিগরি শিল্প উন্নত ছিল।


52. বৈদিক যুগে দাসপ্রথা কি বিদ্যমান ছিল?

হ্যাঁ, সীমিত আকারে দাসপ্রথা বিদ্যমান ছিল, তবে তা ঋণের কারণে বা যুদ্ধের বন্দীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল।


53. বৈদিক যুগে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের নাম কি?

দুন্দুভি, বীণা, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হত।


54. বৈদিক যুগে পশুপালনের গুরুত্ব কতটুকু ছিল?

পশুপালন, বিশেষত গো-পালন, বৈদিক অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছিল।


55. বৈদিক যুগে কি ঋণের প্রচলন ছিল?

হ্যাঁ, ঋণ আদান-প্রদানের প্রচলন ছিল।


56. বৈদিক যুগে বাণিজ্য পথগুলি কেমন ছিল?

মূলত স্থলপথ ও নদীপথ ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য পরিচালিত হত।


57. বৈদিক সাহিত্যে উল্লেখিত বনভূমির নাম কি?

'আরণ্যক' নামক গ্রন্থগুলিতে বনভূমি ও সেখানে সাধনার বর্ণনা আছে।


58. বৈদিক যুগে মৃতের সৎকার কিভাবে করা হত?

সাধারণত মৃতদেহ দাহ করা হত, তবে কিছু ক্ষেত্রে সমাধিস্থ করার প্রচলনও ছিল।


59. বৈদিক যুগে চিকিৎসা পদ্ধতির নাম কি?

আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতির মূল ভিত্তি বৈদিক যুগেই স্থাপিত হয়েছিল।


60. বৈদিক যুগের প্রধান নদী সরস্বতীর বর্তমান অবস্থান কোথায়?

ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় এর অধিকাংশ লুপ্ত বলে মনে করা হয়, তবে এর অস্তিত্ব ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক।


61. বৈদিক যুগে শিক্ষার মাধ্যম কি ছিল?

বৈদিক যুগে মৌখিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করা হত।


62. বৈদিক যুগে ঋষিরা কোথায় বাস করতেন?

ঋষিরা সাধারণত আশ্রম বা বনভূমিতে বাস করতেন।


63. বৈদিক যুগে যজ্ঞে কি ধরনের পশুবলি দেওয়া হত?

অশ্ব, ছাগল ও ভেড়া যজ্ঞে বলিদানের জন্য ব্যবহৃত হত।


64. বৈদিক যুগে কি সুদের কারবার ছিল?

হ্যাঁ, সুদের প্রচলন ছিল এবং 'কুসীদিন' নামে মহাজনরা পরিচিত ছিল।


65. বৈদিক যুগে ব্যবহৃত প্রধান শস্যের নাম কি?

যব (বার্লি) ছিল প্রধান শস্য।


66. বৈদিক যুগে কি যুদ্ধ প্রচলিত ছিল?

হ্যাঁ, জমি ও গবাদি পশুর জন্য আন্তঃগোষ্ঠী যুদ্ধ প্রচলিত ছিল।


67. বৈদিক যুগে যুদ্ধের অস্ত্র কি ছিল?

তীর, ধনুক, বর্শা, কুঠার ও তরবারি প্রধান অস্ত্র ছিল।


68. বৈদিক যুগে কি আইন ব্যবস্থা ছিল?

বিচার ব্যবস্থা ছিল যা 'ধর্ম' ও 'ন্যায়' নীতির উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হত।


69. বৈদিক যুগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কি মন্ত্র পাঠ করা হত?

বিভিন্ন দেবদেবীর স্তুতিতে বৈদিক মন্ত্রগুলি পাঠ করা হত।


70. বৈদিক যুগে কি শিল্পকলা বিদ্যমান ছিল?

হ্যাঁ, মৃৎশিল্প, বস্ত্রশিল্প ও অলঙ্কার তৈরিতে শিল্পকলা দেখা যেত।


71. বৈদিক সমাজে কারিগরদের কি বলা হত?

কারিগরদের 'তক্ষণ', 'রথকার', 'কর্মর' ইত্যাদি নামে ডাকা হত।


72. বৈদিক যুগে 'বলি' বলতে কি বোঝানো হত?

'বলি' ছিল জনগণের দ্বারা রাজাকে প্রদত্ত স্বেচ্ছামূলক কর বা উপহার।


73. বৈদিক যুগে রাজতন্ত্রের স্বরূপ কেমন ছিল?

রাজতন্ত্র ছিল নির্বাচিত এবং প্রধানত গোষ্ঠীপতি বা জনপতির দ্বারা পরিচালিত।


74. বৈদিক সাহিত্যে উল্লেখিত প্রধান খাদ্যশস্যের নাম কি?

যব, গম ও ধানের উল্লেখ পাওয়া যায়।


75. বৈদিক যুগে ব্যবহৃত পরিমাপের একক কি ছিল?

দৈর্ঘ্যের জন্য 'যব', 'অঙ্গুল' এবং ওজনের জন্য 'শতমান' ব্যবহৃত হত।


76. বৈদিক যুগে কি কৃষিজমি ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল?

প্রাথমিকভাবে জমি গোষ্ঠীগত সম্পত্তি ছিল, পরে ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণা তৈরি হয়।


77. বৈদিক সমাজে পুরোহিতের ভূমিকা কি ছিল?

পুরোহিতরা যজ্ঞ পরিচালনা, ধর্মীয় শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন।


78. বৈদিক যুগে গবাদি পশুর গুরুত্ব কেমন ছিল?

গবাদি পশু ছিল সম্পদ ও মর্যাদার প্রতীক।


79. বৈদিক যুগে কি পেশাভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ ছিল?

হ্যাঁ, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারটি পেশাভিত্তিক শ্রেণী ছিল।


80. বৈদিক যুগে ঋতুচক্রের ধারণা কেমন ছিল?

ঋতুচক্রের ধারণা ছিল এবং কৃষি ও যজ্ঞের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।


81. বৈদিক যুগে কি জ্যোতির্বিজ্ঞানের জ্ঞান ছিল?

হ্যাঁ, গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান ছিল।


82. বৈদিক যুগে দিন ও রাত কিভাবে পরিমাপ করা হত?

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ভিত্তিতে এবং ছায়ার পরিমাপ দ্বারা দিন ও রাত নির্ণয় করা হত।


83. বৈদিক যুগে ব্যবহৃত প্রধান যানবাহনের নাম কি?

রথ ও পশুর পিঠে চলা ছিল প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা।


84. বৈদিক যুগে কি গণিত চর্চা করা হত?

হ্যাঁ, যজ্ঞবেদী নির্মাণের জন্য জ্যামিতি ও গণিতের জ্ঞান ব্যবহৃত হত।


85. বৈদিক যুগে কি ভৌগোলিক জ্ঞান ছিল?

হ্যাঁ, হিমালয়, সিন্ধু নদ ও সপ্তসিন্ধু অঞ্চলের ভৌগোলিক জ্ঞান ছিল।


86. বৈদিক সমাজে কি বৈশ্যদের বিশেষ ভূমিকা ছিল?

হ্যাঁ, বৈশ্যরা কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্যের মাধ্যমে সমাজের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।


87. বৈদিক সমাজে বিনোদন কেমন ছিল?

নাচ, গান, পাশা খেলা ও রথ দৌড় বিনোদনের মাধ্যম ছিল।


88. বৈদিক যুগে কি খেলাধুলা প্রচলিত ছিল?

রথ দৌড়, কুস্তি ও পাশা খেলা প্রচলিত ছিল।


89. বৈদিক যুগে বিবাহের উদ্দেশ্য কি ছিল?

বংশবৃদ্ধি, সামাজিক স্থায়িত্ব ও পারিবারিক বন্ধন ছিল বিবাহের প্রধান উদ্দেশ্য।


90. বৈদিক যুগে কি দাসপ্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল?

না, পরবর্তী বৈদিক যুগে দাসপ্রথা আরও সুসংগঠিত হয়, তবে এর প্রকৃতি ভিন্ন ছিল।


91. বৈদিক সমাজে কোন ধরনের বিচার ব্যবস্থা ছিল?

গ্রাম্য সভা ও রাজকীয় বিচার দ্বারা বিরোধ নিষ্পত্তি করা হত।


92. বৈদিক যুগে জলসেচের ব্যবস্থা কেমন ছিল?

প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত ও নদীর জলই প্রধানত কৃষি কাজে ব্যবহৃত হত, বৃহৎ জলসেচ ব্যবস্থা ছিল না।


93. বৈদিক যুগে কি গো-হত্যার নিষেধাজ্ঞা ছিল?

ঋগ্বৈদিক যুগে গো-হত্যা নিষিদ্ধ ছিল না, তবে গরু অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ পশু হিসেবে বিবেচিত হত।


94. বৈদিক যুগে কি খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি ছিল?

শস্য শুকিয়ে ও সংরক্ষণ করে রাখার প্রচলন ছিল।


95. বৈদিক সমাজে নৈতিকতার মানদণ্ড কি ছিল?

সত্যবাদিতা, সততা, আতিথেয়তা ও ধর্মীয় অনুশাসন নৈতিকতার মূল মানদণ্ড ছিল।


96. বৈদিক যুগে কি চিকিৎসাশাস্ত্রে শল্যচিকিৎসা প্রচলিত ছিল?

সীমিত আকারে শল্যচিকিৎসার ধারণা ছিল, তবে ভেষজ চিকিৎসাই প্রধান ছিল।


97. বৈদিক সাহিত্যে উল্লেখিত হিমালয়ের বর্ণনা কেমন?

হিমালয়কে একটি বিশাল ও পবিত্র পর্বতশ্রেণী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।


98. বৈদিক যুগে কি পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করা হত?

হ্যাঁ, পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠদের বিশেষ সম্মান ও কর্তৃত্ব ছিল।


99. বৈদিক যুগে কি নারী ঋষিরা ছিলেন?

হ্যাঁ, গার্গী, মৈত্রেয়ী ও লোপামুদ্রার মতো বিদুষী নারী ঋষিদের উল্লেখ পাওয়া যায়।


100. বৈদিক যুগে কি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূজা করা হত?

হ্যাঁ, প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে দেবত্ব আরোপ করে তাদের পূজা করা হত, যেমন বজ্র (ইন্দ্র) বা ঝড় (মরুতগণ)।