নারী প্রশ্ন এবং ভারতীয় সংস্কারকগণ (Women's Question and Indian Reformers)

ইতিহাস সিলেবাসের "নারী প্রশ্ন এবং ভারতীয় সংস্কারকগণ" টপিকের উপর বিস্তারিত নোট দেওয়া হলো।

১৯শ শতকে ভারতে নারী সমাজের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিধবাদের দুরবস্থা, শিক্ষার অভাব, কন্যাভ্রূণ হত্যা, পর্দা প্রথা ইত্যাদি বিভিন্ন কুপ্রথা ভারতীয় নারীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্রপাত এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ভারতীয় সমাজে যে নবজাগরণ ঘটে, তার ফলেই বহু সমাজ সংস্কারক নারীর এই দুর্দশা দূর করতে ব্রতী হন। তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীদের সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক দীর্ঘ আন্দোলন শুরু হয়।


১. প্রধান সামাজিক কুপ্রথা এবং সংস্কারমূলক প্রচেষ্টা:

ক) সতীদাহ প্রথা:

* পরিচয়: স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবাকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারার এক ভয়াবহ প্রথা। এটি মূলত উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।

* সংস্কারক ও প্রচেষ্টা:

    * রাজা রামমোহন রায়: তিনি সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি যুক্তি দেন যে, এই প্রথা হিন্দু শাস্ত্রসম্মত নয় এবং এটি অমানবিক। তিনি বিভিন্ন পুস্তিকা প্রকাশ করে এবং জনমত গঠন করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন।

    * উইলিয়াম কেরি: একজন খ্রিস্টান মিশনারি হিসেবে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং এর বিলুপ্তির দাবি জানান।

* আইন প্রণয়ন: রাজা রামমোহন রায়ের নিরলস প্রচেষ্টায় এবং তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক-এর উদ্যোগে ১৮২৯ সালের ১৭ নং রেগুলেশন দ্বারা সতীদাহ প্রথাকে আইনত নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়।

* গুরুত্ব: এটি ছিল আধুনিক ভারতের প্রথম সফল সামাজিক সংস্কার আন্দোলন এবং মানবিকতার এক বড় জয়।


খ) বিধবাবিবাহ প্রথা:

* পরিচয়: সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত হলেও বিধবাদের জীবন ছিল অত্যন্ত দুর্বিষহ। তাদের পুনর্বিবাহের অধিকার ছিল না, সমাজে তাদের একঘরে করে রাখা হত এবং নানা রকম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার হতে হত।

* সংস্কারক ও প্রচেষ্টা:

    * ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: বিধবাবিবাহ প্রচলনের জন্য তিনিই ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। তিনি পরাশর সংহিতা সহ বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র থেকে প্রমাণ দেন যে, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত। তিনি জনমত গঠন, সরকারের কাছে আবেদন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিধবাবিবাহের প্রচলন ঘটান। তিনি নিজের একমাত্র পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে এক বিধবার বিবাহ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

    * অন্যান্য: দক্ষিণ ভারতে বীরেশলিঙ্গম পান্তুলু, মহারাষ্ট্রে ডি.কে. কার্ভে এবং মধ্যপ্রদেশে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ও বিধবাবিবাহের জন্য কাজ করেন।

* আইন প্রণয়ন: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলস্বরূপ, লর্ড ডালহৌসি কর্তৃক বিধবা বিবাহ আইনের খসড়া তৈরি হলেও, লর্ড ক্যানিং-এর আমলে ১৮৫৬ সালের বিধবা বিবাহ আইন (Act XV of 1856) পাশ হয়। এই আইন দ্বারা বিধবাদের বিবাহ বৈধতা পায় এবং তাদের সন্তানরাও বৈধ বলে বিবেচিত হয়।

* গুরুত্ব: বিধবাদের সামাজিক মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে এই আইন অত্যন্ত সহায়ক হয়েছিল।


গ) বাল্যবিবাহ প্রথা:

* পরিচয়: অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিবাহ দেওয়ার প্রথা, যা মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে ব্যাহত করত এবং অকাল বৈধব্যের কারণ হত।

* সংস্কারক ও প্রচেষ্টা:

    * ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: তিনি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন এবং বহুবিবাহের মতোই এর কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন।

    * ব্রাহ্মসমাজ: কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজ বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলে।

    * আর্যসমাজ: দয়ানন্দ সরস্বতী বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করেন এবং শিক্ষার মাধ্যমে নারীর উন্নতির কথা বলেন।

    * হরবিলাস সারদা: তিনি বাল্যবিবাহ বিরোধী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন।

* আইন প্রণয়ন:

    * ১৮৭২ সালের ৩ নং আইন (বিশেষ বিবাহ আইন / ব্রাহ্ম বিবাহ আইন): কেশবচন্দ্র সেনের উদ্যোগে এই আইনটি পাশ হয়। এই আইনে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়, বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং অসবর্ণ বিবাহকে আইনত স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই আইনে বিবাহের ন্যূনতম বয়স মেয়েদের ১৪ এবং ছেলেদের ১৮ বছর ধার্য করা হয়।

    * ১৯২৯ সালের সারদা আইন (Child Marriage Restraint Act): হরবিলাস সারদার প্রচেষ্টায় এই আইনটি পাশ হয়। এই আইনে মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর এবং ছেলেদের ১৮ বছর ধার্য করা হয়। পরবর্তীকালে স্বাধীনতার পর এই বয়স আরও বাড়ানো হয় (মেয়েদের ১৮, ছেলেদের ২১)।

* গুরুত্ব: এটি নারীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এবং শিক্ষার প্রসারে সহায়ক হয়েছিল।


ঘ) বহুবিবাহ প্রথা:

* পরিচয়: একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী রাখার প্রথা, যা নারীর প্রতি চরম অবিচার ছিল।

* সংস্কারক ও প্রচেষ্টা:

    * ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: তিনি বহুবিবাহের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। 'বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার' নামে দু'টি পুস্তিকা প্রকাশ করে এর কুফল সম্পর্কে যুক্তি দেন এবং সরকারের কাছে আইন প্রণয়নের আবেদন জানান।

    * ব্রাহ্মসমাজ: বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।

* আইন প্রণয়ন: ১৮৭২ সালের ব্রাহ্ম বিবাহ আইনে পরোক্ষভাবে বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনে হিন্দু পুরুষদের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়।

* গুরুত্ব: নারীর প্রতি সম্মান ও পারিবারিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।


ঙ) কন্যাভ্রূণ হত্যা ও পর্দা প্রথা:

* কন্যাভ্রূণ হত্যা: বিশেষত রাজপুত ও কিছু উচ্চবর্গীয় সমাজে কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই তাকে হত্যা করার প্রথা প্রচলিত ছিল। ব্রিটিশ সরকার ১৮২৯ সালের ১৭ নং রেগুলেশন এবং পরে ১৮৭০ সালের আইন দ্বারা এটি নিষিদ্ধ করে।

* পর্দা প্রথা: মুসলিম ও কিছু হিন্দু সমাজে নারীদের মধ্যে কঠোর পর্দা প্রথা প্রচলিত ছিল, যা তাদের সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণে বাধা দিত। বহু সংস্কারক এবং বিশেষত মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এই প্রথার বিরোধিতা করেন এবং নারী মুক্তির কথা বলেন।


২. নারী শিক্ষা বিস্তার:

নারীর সার্বিক উন্নতির জন্য শিক্ষা ছিল অপরিহার্য। বহু সংস্কারক নারী শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন:


* রাজা রামমোহন রায়: তিনি নারী শিক্ষার সরাসরি কথা না বললেও আধুনিক শিক্ষার প্রসারে তাঁর ভূমিকা নারী শিক্ষার পথ খুলে দিয়েছিল।

* ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বেথুন স্কুল (১৮৪৯ সালে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত) এর সম্পাদক ছিলেন এবং নিজের উদ্যোগে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন স্থানে (মূলত হুগলি, বর্ধমান, মেদিনীপুর) ৩৫টিরও বেশি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

* ডিরোজিও ও ইয়ং বেঙ্গল: নারী শিক্ষার সমর্থক ছিলেন।

* ব্রাহ্মসমাজ: নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বামাবোধিনী পত্রিকা (উমেশচন্দ্র দত্ত কর্তৃক প্রকাশিত) নারী জাগরণ ও নারী শিক্ষার প্রচারে সহায়ক হয়েছিল। এই পত্রিকা নারী সমাজের সুখ-দুঃখ, সমস্যা ও সমাধানের কথা তুলে ধরত।

* জ্যোতিবা ফুলে ও সাবিত্রীবাই ফুলে: মহারাষ্ট্রে নিম্নবর্গীয় ও নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৮৪৮ সালে পুনেতে তাঁরা প্রথম বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

* দয়ানন্দ সরস্বতী (আর্যসমাজ): তিনি নারী শিক্ষার ঘোর সমর্থক ছিলেন এবং বেদের যুগে নারীদের উন্নত অবস্থানের কথা প্রচার করতেন। আর্যসমাজের তত্ত্বাবধানে বহু ডি.এ.ভি. (দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক) স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়।

* বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন: মুসলিম নারী শিক্ষার প্রসারে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। ১৯১১ সালে তিনি কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর লেখনী (যেমন – 'সুলতানার স্বপ্ন', 'অবরোধবাসিনী') মুসলিম নারী সমাজের অবরোধ-বন্দি জীবনের কষাঘাত তুলে ধরে।

* ডি.কে. কার্ভে: মহারাষ্ট্রে নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান অসাধারণ। তিনি পুনেতে ১৯১৬ সালে ভারতের প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় (Lady Hardinge Medical College for Women/SNDT Women's University-এর পূর্বসূরী) প্রতিষ্ঠা করেন।

* অ্যানি বেসান্ত: থিওসফিক্যাল সোসাইটির মাধ্যমে তিনি ভারতীয় নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।


৩. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারক ও তাদের অবদান:

* ব্রাহ্মসমাজ: দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ ব্রাহ্ম নেতারা বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিধবাদের দুরবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং নারী শিক্ষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা নেন।

* আর্যসমাজ: দয়ানন্দ সরস্বতী বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরোধিতা করেন এবং বিধবাবিবাহ ও নারী শিক্ষার সমর্থন করেন। তিনি 'বেদের যুগে নারীদের সম্মান ছিল' এই ধারণা প্রচার করেন।

* স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশন: স্বামী বিবেকানন্দ নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধার কথা বলেন এবং তাদের অবস্থার উন্নয়নে শিক্ষা ও আত্মিক বিকাশের উপর জোর দেন। তিনি নারী শক্তির জাগরণের কথা বলেন।

* রামাবাই রানাডে ও পান্ডিতা রমাবাঈ সরস্বতী: এঁরা দুজন ছিলেন মহারাষ্ট্রের নারী সংস্কার আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ। রামাবাই রানাডে 'সেবা সদন' প্রতিষ্ঠা করেন এবং পান্ডিতা রমাবাঈ 'আর্য মহিলা সমাজ' ও 'শারদা সদন' প্রতিষ্ঠা করে বিধবা ও অসহায় নারীদের আশ্রয় ও শিক্ষা প্রদান করেন।

* স্বর্ণকুমারী দেবী (রবীন্দ্রনাথের দিদি): তিনি 'ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল' (১৯১০) প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল ভারতে নারী সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম প্রথম।

* সরলা দেবী চৌধুরানী: স্বর্ণকুমারী দেবীর মেয়ে, ইনিও নারী জাগরণে সক্রিয় ছিলেন।

* নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী: বাংলার প্রথম মুসলিম নারী শিক্ষাব্রতী যিনি মেয়েদের জন্য স্কুল স্থাপন করেন।


৪. সংস্কারের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ:

* শহরাঞ্চলকেন্দ্রিকতা: এই সংস্কার আন্দোলনগুলি মূলত শহরাঞ্চল এবং উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামীণ ভারতে এর প্রভাব ছিল সীমিত।

* রক্ষণশীলতার বিরোধিতা: সমাজের গোঁড়া ও রক্ষণশীল অংশ সংস্কারকদের তীব্র বিরোধিতা করেছিল।

* ব্রিটিশ সরকারের দ্বিচারিতা: ব্রিটিশ সরকার প্রথম দিকে ভারতীয় সমাজের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে অনিচ্ছুক ছিল। পরবর্তীকালে কিছু আইন প্রণয়ন করলেও, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের শাসন দৃঢ় করা, সমাজ সংস্কার নয়।

* পুরুষতান্ত্রিক সমাজের গভীরতা: বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব ছিল না।


উপসংহার:

১৯শ ও ২০শ শতকের গোড়ার দিকের এই সমাজ সংস্কার আন্দোলনগুলি ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে। সতীদাহ বিলুপ্তি, বিধবাবিবাহ আইন, বাল্যবিবাহের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং নারী শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। যদিও এই আন্দোলনগুলির কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, তবুও তারা নারীমুক্তির পথ প্রশস্ত করেছিল এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এই সংস্কারকরা শুধুমাত্র আইন প্রণয়নেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং একটি মানবিক ও প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সমান মর্যাদা ও সুযোগ পাবে।