ইতিহাসে সময় বা কালগণনার নিয়ম পদ্ধতি আলোচনা | প্রাচীন ভারতে প্রচলিত অব্দ

★★★★★
ইতিহাসে সময় বা কালগণনার নিয়ম পদ্ধতি আলোচনা | প্রাচীন ভারতে প্রচলিত অব্দ

ইতিহাসের বিষয়বস্তু, ঐতিহাসিক কালানুক্রম ঠিকমতো বোঝার জন্য পরিভাষা সম্বন্ধে ধারণা থাকা প্রয়োজন। যে-কোনো ঐতিহাসিক ঘটনাকে যুক্তিসম্মত এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত করার জন্য ঘটনা বা বিষয়বস্তুর সময়কাল উল্লেখ করা জরুরি। ইতিহাসের সময়কালভিত্তিকে বিভিন্ন পরিভাষা ঐতিহাসিক বিষয়কে সহজে বুঝতে সাহায্য করে। সুবিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ তথা গবেষক স্টুয়ার্ট পিগট-এর মতে, সময়কালের ধারণা ছাড়া ইতিহাসের গবেষণা কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকাণ্ড নিতান্তই অর্থহীন।


সময় বা কাল গণনার পরিভাষা সমূহ

খ্রিস্টপূর্বাব্দ : 

এটি খ্রিস্টীয় সাল ও তারিখের নিরিখে কোনো ঘটনা বা বিষয়কে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত একটি পরিভাষা। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক জিশুর জন্মের পূর্বের সময়কালকে বোঝানোর জন্য ইংরেজিতে B.C. (Before christ) ব্যবহৃত হয়। জিশুর জন্মের পূর্বের অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কালসীমার মধ্যে গ্রিস, রোম, ভারত-সহ বিশ্বের নানা প্রাচীন সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল। এই সময়কালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতেও বেশ কিছু শাসক বিশেষ বিশেষ সময়কালের উদ্ভব ঘটান। যেমন—খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে চালু হয় বিক্রমাব্দ।

খ্রিস্টাব্দ বা A.D.: 

জিশুখ্রিস্টের জন্মের পরবর্তীকালে যে সময়কাল গণনা প্রচলিত হয় তাকে বলা হয় খ্রিস্টাব্দ বা এ. ডি. (A.D.), অর্থাৎ Anno Domini। ঐতিহাসিক যুগের অধিকাংশ ঘটনাই এই সময়কালের মধ্যে পড়ে। ব্রিটেন-সহ পশ্চিমি দেশগুলি প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিকশিত সভ্যতাগুলি অপেক্ষা খ্রিস্টাব্দে বিকশিত সভ্যতাগুলি অনেক বেশি উন্নত ও ধারাবাহিক। এসময়কালে ভারতেও বেশ কিছু শাসক নিজেদের শাসনকালকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিশেষ বিশেষ সময়কালের উদ্ভব ঘটান। যেমন— কনিষ্কের আমলে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে চালু হয় শকাব্দ, চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে ৩২০ খ্রিস্টাব্দে চালু হয় গুপ্তাব্দ প্রভৃতি। মহানবি হজরত মহম্মদের (সা.) মদিনা গমনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে খলিফা হজরত ওমর (রা.) চালু করেন হিজরি সাল।


দশক:

ইতিহাসে ক্ষুদ্র পরিসরের সময়কাল বোঝানোর ক্ষেত্রে 'দশক' শব্দ ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দশ বছরের সময়কালকে এক দশক ধরা হয়। বিশেষ কিছু ঘটনা যা পরবর্তীকালে বিশেষ প্রভাব ফেলে সেগুলির পূর্বে দশক শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়। উদাহরণরূপে গত বিশ শতকের প্রথম দশকে মার্কিন আগ্রাসন বা বর্তমান একুশ শতকের প্রথম দশকে আরব বিশ্বের পরিবর্তন আধুনিক ইতিহাসের নির্দিষ্ট মোড় (turning point) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সাধারণ অর্থে দশক বলতে দশ বছরের সময়কালকে বোঝালেও মূলত দশক গণনার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট শতকের মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট দশ বছরকেও বোঝানো হয়। যেমন পাঁচ শতকের প্রথম দশক বলতে ৫০০ থেকে ৫১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে বোঝানো হয়।

শতক: 

দশটি দশক অর্থাৎ একশো বছর মিলে ইতিহাসে একটি শতক গঠিত হয়। এক-একটি শতকে এক-একটি বিশেষ বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইতিহাসে স্থান করে নেয়। যেমন উনিশ শতক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের শতক হিসেবে চিহ্নিত। আবার বিশ শতক জ্ঞান-বিজ্ঞানের শতক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দ্বারা উনিশ শতকের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটে। শতক গণনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে নির্দিষ্ট শতকের উচ্চারণ করা হয় তার আগের সংখ্যা দিয়ে লেখা শুরু করতে হয়। যেমন সাত শতক বলতে শুরু করতে হবে ৭ -এর আগের সংখ্যা ৬ দিয়ে। অর্থাৎ ৬০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয় সাত শতকের যাত্রাকাল।

সহস্রাব্দ : 

ইতিহাসে দীর্ঘ পরিসরে ঘটে যাওয়া ঘটনার সময়কাল বোঝানোর জন্য সহস্রাব্দ বা মিলেনিয়াম শব্দ ব্যাবহার করা হয়। প্রাগৈতিহাসিক সময়কালের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বা বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতাগুলির সময়কাল বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ সহস্রাব্দ ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে কার্বন-১৪ পরীক্ষা পদ্ধতির দ্বারা দীর্ঘ পরিসরের সময়কাল বের করা হয়। কয়েক হাজার বছরের ব্যবধানে বিকশিত হতে থাকা প্রাচীন প্রস্তর, মধ্য প্রস্তর এবং নব্য প্রস্তর যুগের সময়কালের নিরিখে ঘটনা বোঝানোর ক্ষেত্রে সহস্রাব্দের ব্যবহার হয়। আসলে যুগের অগ্রগতির ধারায় বিকশিত হতে থাকা মানবসভ্যতা ও মানবজীবনের পরিবর্তন ইতিহাসে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সহস্রাব্দের প্রয়োজন রয়েছে।



বিক্রমাব্দ: 

খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ আপে বিক্রমাণের সূচনা হয়। রাজা বিক্রমাদিত্য (মতভেদে রাজা অজেস) এর প্রবর্তন করেন।

শকাব্দ: 

৭৮ খ্রিস্টাব্দে শকাব্দের সূচনা হয়। কূষাণ রাজ

লক্ষ্মণাব্দ: 

লক্ষ্মণাব্দের সূচনা হয় ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে। বাংলার সেন রাজা লক্ষ্মণ সেন এটি সূচনা করেন।

কলচুরি অব্দ : 

২৪৮ খ্রিস্টাব্দে কলচুরি অব্দের প্রবর্তন হয়। ত্রৈকূটক রাজবংশ এর সূচনা করে।

গুপ্তাব্দ : 

গুপ্তাব্দের সূচনা হয় ৩২০ খ্রিস্টাব্দে। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত গুপ্তাব্দের প্রবর্তন করেন।

হর্ষাব্দ : 

৬০৬ খ্রিস্টাব্দে হর্ষাব্দের সূচনা হয়। রাজা হর্ষবর্ধন এর প্রচলন করেন।

Tags:
Next Post Previous Post

You May Also Like

Editor
ইতিহাস পাঠশালা

যা কিছু প্রাচীন, যা কিছু অতীত তাই হল ইতিহাস৷ ইতিহাস পাঠশালা হল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত, উত্তরধর্মী, প্রবন্ধ মূলক পাঠ সহায়ক একটি ব্লগ৷ মূলত ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরাই এই ব্লগের প্রধান লক্ষ্য৷