ব্রিটিশ রেসিডেন্স' ব্যবস্থা কী? রেসিডেন্টদের ভূমিকা বা কাজ কী ছিল?

রেসিডেন্স ব্যবস্থা

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মূলত একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হলেও ক্রমে তা একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তখন থেকেই রেসিডেন্স ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ভারতে কোম্পানির সাম্রাজ্য বিস্তারে রেসিডেন্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি
লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি


রেসিডেন্স ব্যবস্থা

রেসিডেন্ট বলতে বোঝায় প্রতিনিধি। ব্রিটিশ রেসিডেন্ট বা প্রতিনিধিরা যে স্থানে থাকতেন সেই স্থান বা বাসভবনকে বলা হত রেসিডেন্সি। কোম্পানি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলে বিভিন্ন দেশীয় শাসকদের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এইসব শাসকদের দরবারে একজন করে কোম্পানির প্রতিনিধি থাকতেন। এরাই হলেন রেসিডেন্ট। আর কোম্পানির স্বার্থরক্ষার জন্য গড়ে তোলা এই ব্যবস্থা ছিল ব্রিটিশ রেসিডেন্স ব্যবস্থা।


রেসিডেন্টদের কাজ

বক্সারের যুদ্ধের পর বিজয়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নবাবের দরবার মুর্শিদাবাদ ও অযোধ্যার নবাবের দরবার লখনউতে রেসিডেন্ট নিয়োগ করে। এই রাজ্যগুলিতে কোম্পানি ও ইংরেজদের সঙ্গে নবাবদের কাজকর্মের উপর নজরদারি চালাত এই রেসিডেন্টরা। ফলে স্বাধীনভাবে কাজ করা নবাবদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।


লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি চালু করলে রেসিডেন্সি ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। এই নীতি অনুযায়ী মিত্ররাজ্যে রেসিডেন্ট নিয়োগ বাধ্যতামূলক ছিল। ফলে হায়দরাবাদ, পেশোয়া এবং সিম্বিয়ার দরবারে রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয়।


এইসব রেসিডেন্টরা দেশীয় শাসকদের আর্থিক ও সামরিক শক্তি সম্বন্ধে কোম্পানিকে তথ্য সরবরাহ করত। প্রতিবেশী শাসক বা বিদেশি শক্তি (বিশেষত ফরাসি) সম্পর্কে খোঁজখবর নিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যটিকে সরাসরি দখল করা উচিত না কি পরোক্ষ শাসন বজায় রাখা উচিত তা নিয়ে কোম্পানিকে পরামর্শ দিত। বস্তুত রেসিডেন্টদের মাধ্যমেই ভারতের বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যে কোম্পানির প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সূত্র ধরেই লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির দ্বারা ভারতের বহু দেশীয় রাজ্য গ্রাস করেন।


ভারতে কোম্পানির প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার ছিল রেসিডেন্স ব্যবস্থা। দেশীয় শাসকদের খরচে পালিত এই রেসিডেন্টরাই দেশীয় রাজ্যগ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Next Post Previous Post