বাগদাদ চুক্তিবাদ (CENTO) কী? কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল? এই চুক্তি সম্পর্কে টীকা লেখ।

★★★★★
বাগদাদ চুক্তি ইরাক ও তুরস্কের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এটি পশ্চিমা শক্তির প্রভাব প্রতিফলিত করে এবং CENTO নামে পরিচিত ছিল।
বাগদাদ চুক্তিবাদ

বাগদাদ চুক্তি: ইতিহাস, প্রেক্ষাপট ও প্রভাব

বাগদাদ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে ইরাক ও তুরস্কের মধ্যে। বর্তমানে ইরাক পাশ্চাত্য জগতের কাছে নিন্দনীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা ও ব্রিটেন মিলিতভাবে সাদ্দাম হুসেনকে গ্রেপ্তার করে ইরাকে তাদের মনোনীত সরকার গঠন করেছে, এটা হল বর্তমান চিত্র। কিন্তু আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তখন ইরাক ছিল পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের এক অন্যতম মিত্র রাষ্ট্র। এই কারণেই তুরস্ক ও ইরাকের মধ্যে সম্পাদিত বাগদাদ চুক্তিতে কিছুকালের মধ্যে ব্রিটেন যোগদান করেছিল। তারপরেই পাকিস্তান এতে যোগদান করে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে এই সময় সম্পর্ক খারাপ থাকায় আফগানিস্তান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। ইরান এই সংস্থায় যোগদান করলেও তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমেরিকা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি কারণ আরবদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে সাম্যবাদের বিকাশের সঙ্গে পশ্চিমী শক্তিবর্গ, চেষ্টা করেছিল তা দমন করার, তার জন্য তারা নানা সামরিক সংস্থা গঠন করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জগতে আরব জাতির মুক্তি সংগ্রাম তীব্র আকার ধারণ করে। আবার প্যালেস্তাইনকে কেন্দ্র করে আরব ও ইজরায়েলের সংঘর্ষ শুরু হয়। মিশর ও সুদানের নানা স্থানে বিপ্লব শুরু হয় ফলে এশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন হয়। এই সময় রাশিয়াকে দমন করার জন্য পশ্চিমী শক্তিবর্গ নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়। পাকিস্তানের কাছ থেকে তারা সহযোগিতা লাভ করে। তাই ১৯৫৫ সালে ব্রিটেন, ইরাক, ইরান, তুরস্ক ও পাকিস্তান-বাগদাদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। আর এই সংস্থা বা চুক্তি আরবদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। এই কারণে আমেরিকা সরাসরি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজী হয়নি। কারণ এতে আরবদের দৃষ্টিতে তারা শত্রু হিসাবে গণ্য হত। তাই আরবরা এই সংস্থার সমালোচনা করে। অন্যদিকে এই সংস্থা পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করায় ভারত মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়। এই সংস্থা CENTO নামে পরিচিত হয়। তবে এই সংস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, কারণ পাকিস্তান বেশিদিন এই সংস্থায় থাকেনি, তারা এই সংস্থা ত্যাগ করেছিল। আমরা আগেও জেনেছি ইরান খুবই দুর্বল ছিল। তাই তাদের পক্ষেও এই সংস্থায় টিকে থাকা সম্ভব হয় নি। এই চুক্তিতে যার নাম আগে ছিল সেই ইরাক এই সংস্থা ত্যাগ করায় এর অবসান নিশ্চিত হয়ে যায় কারণ ইরাকে সরকার পরিবর্তিত হয়। এভাবে CENTO সংস্থার অবসান হয়।

1. বাগদাদ চুক্তি কী?

উত্তর: বাগদাদ চুক্তি হল একটি সামরিক সংস্থা যা ১৯৫৫ সালে ইরাক ও তুরস্কের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরে ব্রিটেন, পাকিস্তান ও ইরান এতে যোগ দেয়। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে সাম্যবাদ দমন এবং পশ্চিমা প্রভাব বজায় রাখা।

 2. বাগদাদ চুক্তি কখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তর: বাগদাদ চুক্তি ১৯৫৫ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

 3. বাগদাদ চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে সাম্যবাদের বিস্তার রোধ করা এবং পশ্চিমা সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখা।

4. কোন কোন দেশ বাগদাদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল?

উত্তর: ইরাক, তুরস্ক, ব্রিটেন, পাকিস্তান ও ইরান বাগদাদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।

5. কেন আমেরিকা বাগদাদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি?

উত্তর: আমেরিকা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি কারণ তারা আশঙ্কা করেছিল যে এটি আরবদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ করবে এবং আরবদের দৃষ্টিতে তাদের শত্রু হিসাবে গণ্য করবে।

6. কেন CENTO নামে পরিচিত ছিল?

উত্তর: বাগদাদ চুক্তি পরে "Central Treaty Organization" (CENTO) নামে পরিচিত হয়।

 7. কেন বাগদাদ চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি?

উত্তর: চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কারণ পাকিস্তান ও ইরাক সংস্থা ত্যাগ করে এবং ইরানের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে চুক্তি কার্যকরভাবে টিকে থাকতে পারেনি।

 8. ইরাক কেন বাগদাদ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে?

উত্তর: ইরাকে সরকার পরিবর্তনের ফলে তারা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে, যা CENTO এর অবসানকে নিশ্চিত করে।

 9. চুক্তির ফলে কোন দেশগুলি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

উত্তর: আরব দেশগুলি এই চুক্তির সমালোচনা করে এবং ভারতও পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টায় ক্ষুব্ধ হয়।

 10. বাগদাদ চুক্তির প্রভাব কী ছিল?

উত্তর: বাগদাদ চুক্তি সাম্যবাদ দমনে কিছু সময়ের জন্য কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর সদস্য দেশগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে টিকে থাকতে পারেনি।
Tags:
Next Post Previous Post

You May Also Like

Editor
ইতিহাস পাঠশালা

যা কিছু প্রাচীন, যা কিছু অতীত তাই হল ইতিহাস৷ ইতিহাস পাঠশালা হল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত, উত্তরধর্মী, প্রবন্ধ মূলক পাঠ সহায়ক একটি ব্লগ৷ মূলত ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরাই এই ব্লগের প্রধান লক্ষ্য৷