ঠান্ডা লড়াই-এর পরিণতি কী হয়েছিল?

★★★★★
ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান রাশিয়ার ভীতি কমিয়ে মার্কিন প্রভাব হ্রাস করে। চীন-মার্কিন সম্পর্ক স্থাপনের ফলে নতুন বিশ্ব রাজনীতির সূচনা হয়।

ঠান্ডা লড়াই-এর পরিণতি

আমরা জানি ঠান্ডা লড়াই ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। তবে এই লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। যুদ্ধোত্তর দুর্বলতা এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কা কাটিয়ে ওঠার পর ফ্রান্সের পক্ষে দ্য গলের নেতৃত্বে ইউরো কেন্দ্রিক স্বাতন্ত্র্যের ওপর বেশি করে জোর দেওয়া হতে থাকে। রাশিয়া ভীতি বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিন প্রভাবকে অনেকাংশে ক্ষুণ্ণ করে। ষাটের দশক থেকেই পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক সংহতি শুরু করে। এই সময় পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক মিত্রতা স্থাপনে সচেষ্ট হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল সুয়েজ সংকট যা ইউরোপে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। আবার পরবর্তীকালে বার্লিন ও কিউবা সংকট নতুন করে

The end of the cold war ushered in a new era

পাশ্চাত্য শক্তিবর্গকে ঠান্ডা যুদ্ধে জড়িয়ে দেয়। পঞ্চাশের দশকে অস্ট্রিয়ার নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত চুক্তি, ২১তম কমিউনিস্ট সম্মেলনের পর রুশ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সহাবস্থানের প্রতিযোগিতার আহ্বান, চীন-সোভিয়েত বিরোধ ক্রমশ ঠান্ডা যুদ্ধকে দমিয়ে দেয়। মস্কো-পিকিংয়ের নতুন ঠান্ডা লড়াই বিশ্বরাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা সংযোগ করে। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শগত সংগ্রামে রাশিয়ার নেতৃত্বের ক্রমহ্রাসমান আগ্রহ আমেরিকাকে নতুন সুযোগ এনে দেয়। অ্যাঙ্গোলা, আফগানিস্থান, নিকারাগুয়া এবং অংশত কাম্পুচিয়ায় রাশিয়া-মার্কিন-চীনের অদৃশ্য সংঘর্ষ চলে। এরই পাশাপাশি কিসিঞ্জার দৌত্যের ফলশ্রুতি হিসাবে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভূতপূর্ব বন্ধন স্থাপনের ফলে রুশ-মার্কিন-চীন ত্রিকোণ সম্পর্কের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ ক্রমশ মিলিয়ে যায়। রাশিয়ার নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধ বেশিদিন চালানো অসম্ভব। ফলে মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে তারা সরে আসে। একাধিক রাষ্ট্রের বিবাদমান কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হল। পূর্ব-পশ্চিমী রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে। সোভিয়েত দেশে ও অর্থনীতিতে উদারীকরণ এবং প্রতিযোগিতামূলক দলীয় রাজনীতির সূত্রপাত হল। ঠান্ডা লড়াই প্রায় একতরফাভাবেই শেষ হল এবং সোভিয়েত দেশও খন্ড বিখন্ড হয়ে CIS-এর জন্য হয়।


Short Questions:

1. ঠাণ্ডা লড়াই কী ছিল?

ঠাণ্ডা লড়াই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা এবং প্রতিযোগিতার সময়কাল।


 2. ঠাণ্ডা লড়াই কখন শুরু হয়েছিল?

ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯৪৭ সালে।


 3. ঠাণ্ডা লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কেন?

যুদ্ধোত্তর দুর্বলতা, রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কা কাটিয়ে ওঠা এবং পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক সংহতি ঠাণ্ডা লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয়নি।


 4. ঠাণ্ডা লড়াইয়ের শেষ হওয়ার প্রধান কারণগুলো কী ছিল?

ঠাণ্ডা লড়াইয়ের শেষ হওয়ার প্রধান কারণগুলো ছিল চীন-সোভিয়েত বিরোধ, রাশিয়ার আগ্রহ হ্রাস, চীন-মার্কিন মিত্রতা, এবং সোভিয়েত অর্থনীতি ও রাজনীতির উদারীকরণ।


 5. সুয়েজ সংকট কীভাবে ঠাণ্ডা লড়াইকে প্রভাবিত করেছিল?

সুয়েজ সংকট ইউরোপের উপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে এবং পাশ্চাত্য শক্তিবর্গকে ঠাণ্ডা যুদ্ধে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলে।


 6. কিসিঞ্জার দৌত্য কী ছিল এবং এর ফলাফল কী হয়েছিল?

কিসিঞ্জার দৌত্য ছিল মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির একটি উদ্যোগ, যার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হয়, ফলে রুশ-মার্কিন-চীন ত্রিকোণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং ঠাণ্ডা যুদ্ধ কমে আসে।


 7. সোভিয়েত নেতৃত্ব কেন মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসে?

সোভিয়েত নেতৃত্ব বুঝতে পারে যে, পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের সঙ্গে ঠাণ্ডা যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালানো অসম্ভব, তাই তারা মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসে।


 8. ঠাণ্ডা লড়াইয়ের শেষের পর সোভিয়েত দেশে কী পরিবর্তন আসে?

ঠাণ্ডা লড়াইয়ের শেষে সোভিয়েত দেশে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে উদারীকরণ শুরু হয়, এবং প্রতিযোগিতামূলক দলীয় রাজনীতির সূত্রপাত ঘটে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়ে CIS-এর জন্ম হয়।

Tags:
Next Post Previous Post

You May Also Like

Editor
ইতিহাস পাঠশালা

যা কিছু প্রাচীন, যা কিছু অতীত তাই হল ইতিহাস৷ ইতিহাস পাঠশালা হল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত, উত্তরধর্মী, প্রবন্ধ মূলক পাঠ সহায়ক একটি ব্লগ৷ মূলত ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরাই এই ব্লগের প্রধান লক্ষ্য৷