দিল্লি সুলতানি ছিল একটি সামরিক ও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র। এর প্রশাসনিক কাঠামো ছিল মূলত ইসলামিক আইন (শরিয়ত), পারসিক ঐতিহ্য এবং স্থানীয় ভারতীয় রীতিনীতির সংমিশ্রণ। সুলতানি শাসনের গোড়ার দিকে এর কাঠামো অপেক্ষাকৃত শিথিল থাকলেও, পরবর্তীকালে ইলতুৎমিশ, আলাউদ্দিন খলজি, গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এবং ফিরোজ শাহ তুঘলকের মতো শক্তিশালী সুলতানদের আমলে তা সুসংহত ও জটিল রূপ ধারণ করে।
### ১. কেন্দ্রীয় প্রশাসন (Central Administration)
দিল্লি সুলতানি ব্যবস্থার কেন্দ্রে ছিলেন স্বয়ং সুলতান (Sultan), যিনি ছিলেন সর্বময় কর্তা। তিনিই ছিলেন বিচার বিভাগ, সামরিক বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ এবং ধর্মীয় বিভাগের প্রধান। তাঁর ক্ষমতা ছিল নিরঙ্কুশ, তবে উলেমা এবং অভিজাতদের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হতেন। সুলতানের পদটি বংশানুক্রমিক ছিল না, যোগ্যতা ও শক্তির ওপর নির্ভর করত।
সুলতানের উপাধি:
* সুলতান-ই-আজম (Sultan-i-Azam): মহান সুলতান (যেমন: ইলতুৎমিশ)
* জিল্লে ইলাহি (Zill-i Ilahi): ঈশ্বরের ছায়া (যেমন: গিয়াসউদ্দিন বলবন)
* আমির-উল-মুমিনিন (Amir-ul-Mu'minin): বিশ্বাসীদের নেতা (কিছু ক্ষেত্রে)
সুলতানকে শাসনকার্যে সহায়তা করার জন্য একটি মন্ত্রিপরিষদ ছিল, যাকে মজলিস-ই-খলওয়াত (Majlis-i-Khalwat) বা সলাহ-উ-খলওয়াত (Salah-u-Khalwat) বলা হত। এই মন্ত্রিপরিষদের প্রধান সদস্যরা ছিলেন:
1. উজির (Wazir) / দিওয়ান-ই-উজিরাত (Diwan-i-Wizarat):
* সুলতানি প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ।
* তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থ বিভাগের প্রধান।
* ভূমি রাজস্ব, আর্থিক বাজেট এবং সাধারণ প্রশাসনের তদারকি করতেন।
* যুদ্ধ ও শান্তি সংক্রান্ত বিষয়েও সুলতানকে পরামর্শ দিতেন।
* মুশরিফ-ই-মুমালিক (Mushrif-i-Mumalik): প্রধান হিসাবরক্ষক।
* মুস্তাউফি-ই-মুমালিক (Mustaufi-i-Mumalik): মহানির্মাপক (Auditor-General)।
2. আরিজ-ই-মুমালিক (Ariz-i-Mumalik) / দিওয়ান-ই-আর্জ (Diwan-i-Arz):
* সামরিক বিভাগের প্রধান।
* সেনাবাহিনী নিয়োগ, বেতন প্রদান, অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ সরবরাহ, সেনাবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ এবং যুদ্ধের সময় সামরিক অভিযানের ব্যবস্থা করতেন।
* আলাউদ্দিন খলজি এবং বলবনের সময়ে এই পদটির গুরুত্ব বাড়ে।
3. সদর-উস-সুদুর (Sadr-us-Sudur):
* ধর্মীয় বিভাগের প্রধান।
* শরিয়ত আইন অনুযায়ী ধর্মীয় অনুদান (ওয়াকফ), বৃত্তি, মাদ্রাসা পরিচালনা এবং ধর্মীয় উপাসনা সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করতেন।
* অনেক সময় কাজি-উল-কুজ্জাত-এর পদটিও তিনিই সামলাতেন।
4. কাজি-উল-কুজ্জাত (Qazi-ul-Quzat):
* প্রধান বিচারপতি।
* কেন্দ্রীয় বিচার ব্যবস্থার প্রধান হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর অধীনে বিভিন্ন স্তরের কাজিরা কাজ করতেন।
5. দিওয়ান-ই-রিসালত (Diwan-i-Risalat):
* ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই বিভাগের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক আছে।
* কারো কারো মতে, এটি বৈদেশিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রদূতের বিষয় দেখাশোনা করত।
* অন্যদের মতে, এটি জনগণের অভিযোগ গ্রহণ এবং ধর্মীয় বিষয়ে সুলতানকে পরামর্শ দিত।
6. দিওয়ান-ই-ইনশা (Diwan-i-Insha):
* রাজকীয় চিঠিপত্র, ফরমান, ঘোষণা ইত্যাদি লেখার দায়িত্বে ছিলেন।
* এটি রাজকীয় সচিবালয় হিসেবে কাজ করত।
7. বরিদ-ই-মুমালিক (Barid-i-Mumalik):
* কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান।
* বিভিন্ন অঞ্চলে সুলতানের নিযুক্ত গুপ্তচরদের (বরিদ) মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতেন এবং সরাসরি সুলতানকে রিপোর্ট দিতেন।
8. ওয়াকিল-ই-দর (Vakil-i-Dar):
* রাজকীয় প্রাসাদ এবং সভাগৃহের দায়িত্বে ছিলেন।
* রাজকীয় কর্মচারী ও দাসদের দেখভাল করতেন।
9. মুহতাসিব (Muhtasib):
* জনগণের নৈতিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করতেন এবং শরিয়ত আইন অনুযায়ী অন্যায় কাজ দমন করতেন।
### ২. প্রাদেশিক প্রশাসন (Provincial Administration)
সুলতানি সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করা হয়েছিল, যা ইকতা নামে পরিচিত ছিল।
* ইকতা (Iqta):
* এটি ছিল সুলতানি ব্যবস্থার প্রধান প্রশাসনিক বিভাগ।
* ইলতুৎমিশের সময় এর বিস্তার ঘটে।
* ইকতা ছিল এক ধরনের ভূ-খণ্ড, যা সুলতানের বিশ্বস্ত সামরিক কমান্ডার বা অভিজাতদের বেতন বা সেবার বিনিময়ে দেওয়া হত।
* ইকতার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে মুক্তা (Muqta), ওয়ালি (Wali) বা নায়ব সুলতান (Naib Sultan) বলা হত।
* মুক্তাদের কাজ ছিল তাদের ইকতা থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করা, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সুলতানের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য সরবরাহ করা।
* জালাল উদ্দিন খলজি অনেক ইকতাকে খালিসা (Khalisa) জমিতে রূপান্তরিত করেন, অর্থাৎ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে নিয়ে আসেন।
* শিখ (Shiq):
* প্রদেশগুলি আরও ছোট প্রশাসনিক ইউনিট 'শিখ'-এ বিভক্ত ছিল।
* শিখের প্রধান ছিলেন শিখদার (Shiqdar)। তাঁর প্রধান কাজ ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং ভূমি রাজস্ব সংগ্রহে সহায়তা করা।
* পরগনা (Pargana):
* কয়েকটি গ্রামের সমষ্টিকে 'পরগনা' বলা হত।
* পরগনার প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন আমিল (Amil) বা আমিন (Amin), যিনি ভূমি রাজস্ব সংগ্রহ করতেন।
* কানুনগো (Qanungo): ভূমি রেকর্ডের হিসাব রাখতেন।
* কারকুন (Karkun): পারগনার হিসাবরক্ষক।
* গ্রাম (Village):
* গ্রাম ছিল প্রশাসনের ক্ষুদ্রতম ইউনিট এবং এটি মূলত স্বায়ত্তশাসিত ছিল।
* গ্রামের প্রধানরা ছিলেন মুকাদ্দাম (Muqaddam) (গ্রাম প্রধান) এবং চৌধুরী (Chaudhuri) (রাজস্ব প্রধান)।
* পাটওয়ারী (Patwari): গ্রামের ভূমি রেকর্ড ও হিসাব রাখতেন।
* গ্রামের অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পরিচালিত হত।
### ৩. সামরিক প্রশাসন (Military Administration)
দিল্লি সুলতানি ছিল একটি সামরিক শক্তি নির্ভর রাষ্ট্র। সুলতানের সামরিক বাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত ছিল:
* সুলতানের নিজস্ব সেনা (Hashm-i-Qalb): এটি ছিল সুলতানের ব্যক্তিগত বাহিনী বা স্থায়ী সেনাবাহিনী, যা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকত। এই বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত বেতন পেত।
* ইকতাদারদের সেনা: ইকতাদাররা সুলতানের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য সরবরাহ করতে বাধ্য ছিলেন।
সামরিক সংস্কার:
* আলাউদ্দিন খলজি:
* প্রথম সুলতান যিনি একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন।
* তিনি সৈন্যদের নগদ বেতন দেওয়ার প্রবর্তন করেন।
* দাগ (Dag): ঘোড়ার গায়ে দাগানোর প্রথা চালু করেন, যাতে ঘোড়া পরিবর্তন করা না যায়।
* চেহরা (Chehra): সৈন্যদের বিস্তারিত বিবরণ (বর্ণনাপত্র) রাখার প্রথা চালু করেন, যাতে ভুয়া লোক নিয়োগ না হয়।
* ফিরোজ শাহ তুঘলক: তাঁর সময়ে সামরিক ব্যবস্থা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ তিনি সৈন্যদের পদ বংশানুক্রমিক করে দেন এবং সামরিক শৃঙ্খলা কিছুটা শিথিল হয়।
### ৪. রাজস্ব প্রশাসন (Revenue Administration)
দিল্লি সুলতানির আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব।
* আয়ের উৎস:
* খরাজ (Kharaj): মুসলিম কৃষক ব্যতীত অ-মুসলিম কৃষকদের কাছ থেকে আদায় করা ভূমি রাজস্ব। এটি আয়ের প্রধান উৎস ছিল।
* জিজিয়া (Jizya): অ-মুসলিম প্রজাদের উপর ধার্য মাথা পিছু কর, যা তাদের মুসলিম রাষ্ট্রে সুরক্ষার বিনিময়ে নেওয়া হত। নারী, শিশু, দরিদ্র ও অক্ষম ব্যক্তিরা এই কর থেকে অব্যাহতি পেত।
* যাকাত (Zakat): মুসলিমদের উপর ধার্য এক প্রকার ধর্মীয় কর, যা ইসলামিক বিধান অনুযায়ী আদায় করা হত এবং দরিদ্রদের সাহায্যার্থে ব্যবহৃত হত।
* খামস (Khams): যুদ্ধলব্ধ সম্পত্তির (লুণ্ঠিত ধন) এক পঞ্চমাংশ সুলতানের প্রাপ্য ছিল (চার পঞ্চমাংশ সৈন্যদের)। আলাউদ্দিন খলজি এই অনুপাত উল্টে দেন (চার পঞ্চমাংশ সুলতানের, এক পঞ্চমাংশ সৈন্যদের)।
* অন্যান্য উৎস: আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক, বাণিজ্য কর, লবণ কর, জল কর (ফিরোজ শাহ তুঘলকের সময়ে হক-ই-শরব) ইত্যাদি।
* ভূমি রাজস্বের প্রকারভেদ:
* বটই (Batai): উৎপাদিত শস্যের ভাগ (যেমন: ১/৩ বা ১/২)।
* নসক (Nasaq): পূর্ববর্তী ফলনের ভিত্তিতে আনুমানিক কর।
* জাবতি (Zabti): ভূমি পরিমাপের ভিত্তিতে কর (আলাউদ্দিন খলজির সময়)।
* রাজস্ব সংক্রান্ত সংস্কার:
* আলাউদ্দিন খলজি:
* ভূমি পরিমাপের ভিত্তিতে (বিঘা) রাজস্ব আদায়ের প্রথা চালু করেন।
* উৎপাদিত ফসলের ৫০% রাজস্ব হিসেবে আদায় করতেন, যা ছিল সর্বাধিক।
* দিওয়ান-ই-মুস্তাখারাজ (Diwan-i-Mustakharaj): বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য একটি নতুন বিভাগ তৈরি করেন।
* গিয়াসউদ্দিন তুঘলক: রাজস্ব হার কিছুটা কমান এবং কৃষকদের ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করেন।
* মুহাম্মদ বিন তুঘলক:
* দিওয়ান-ই-কোহি (Diwan-i-Kohi): কৃষি উন্নয়নের জন্য একটি নতুন কৃষি বিভাগ স্থাপন করেন।
* দোয়াব অঞ্চলে রাজস্ব বৃদ্ধি করেন, যা দুর্ভিক্ষ ও বিদ্রোহের কারণ হয়।
* ফিরোজ শাহ তুঘলক:
* কৃষকদের সেচের সুবিধার জন্য খাল খনন করেন।
* হক-ই-শরব (Haq-i-Sharb): জল কর ধার্য করেন।
* অতিরিক্ত ও অনৈসলামিক করগুলি বাতিল করেন।
### ৫. বিচার ও পুলিশ প্রশাসন (Judicial & Police Administration)
* বিচার ব্যবস্থা:
* সুলতান ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারক। তিনি সপ্তাহে দুইবার দিওয়ান-ই-মাজালিম (Diwan-i-Mazalim) নামে একটি আদালতে বসতেন জনগণের অভিযোগ শুনতে।
* কাজি-উল-কুজ্জাত (Qazi-ul-Quzat): প্রধান বিচারপতি এবং শরিয়ত আইন অনুযায়ী বিচার করতেন।
* বিভিন্ন শহর ও প্রদেশে কাজিরা নিযুক্ত ছিলেন।
* মির-ই-আদল (Mir-i-Adl): প্রধান কাজিকে সহায়তা করতেন এবং বিচার প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলেন।
* সাধারণত মুসলিমদের জন্য শরিয়ত আইন এবং হিন্দুদের জন্য তাদের নিজস্ব সামাজিক রীতিনীতি ও পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
* পুলিশ প্রশাসন:
* শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন কোতোয়াল (Kotwal)।
* জেলা পর্যায়ে শিখদার (Shiqdar) আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন।
* গ্রাম পর্যায়ে মুকাদ্দাম এবং চৌধুরী এই দায়িত্ব পালন করতেন।
* বরিদ (Barid) বা গুপ্তচররা অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করত।
### ৬. মুদ্রা ব্যবস্থা (Currency System)
* ইলতুৎমিশ: দিল্লি সুলতানির প্রথম সুলতান যিনি আরবি হরফে মুদ্রা চালু করেন।
* টঙ্কা (Tanka): রৌপ্য মুদ্রা।
* জিতল (Jital): তামার মুদ্রা।
* এই মুদ্রাগুলিই সুলতানি আমলের প্রধান মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হত।
### উপসংহার:
দিল্লি সুলতানির প্রশাসনিক কাঠামো ছিল মূলত পারস্য ও মধ্য এশীয় ইসলামিক মডেলের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা, যা ভারতের স্থানীয় অবস্থার সঙ্গে অভিযোজিত হয়েছিল। এটি একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার চেষ্টা করলেও, ইকতা প্রথা এবং আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের কারণে সম্পূর্ণ কেন্দ্রীকরণ সম্ভব ছিল না। এই কাঠামো পরবর্তী মুঘল প্রশাসনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং ভারতের প্রশাসনিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছিল। আলাউদ্দিন খলজি ও মুহাম্মদ বিন তুঘলকের মতো সুলতানরা প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কার এনেছিলেন, যা সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছিল।
FAQ Questions Answers 100
1. দিল্লি সুলতানির শাসনব্যবস্থার প্রধান কে ছিলেন?
সুলতান
2. সুলতানি আমলে রাজস্ব বিভাগের প্রধানকে কী বলা হত?
দিওয়ান-ই-উজারাত
3. সামরিক বিভাগের প্রধানকে কী বলা হত?
আরিজ-ই-মামালিক
4. বিচার বিভাগের প্রধান কে ছিলেন?
কাজি-উল-কুজ্জাত
5. দিল্লি সুলতানির প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের কী বলা হত?
ইকতাদার বা ওয়ালি
6. ইকতা প্রথার প্রবর্তন কে করেন?
ইলতুৎমিশ
7. সুলতানি আমলে গুপ্তচর বিভাগের নাম কী ছিল?
বারিদ
8. ডাক ব্যবস্থার প্রধানকে কী বলা হত?
বারিদ-ই-মামালিক
9. ধর্মীয় ও দাতব্য বিভাগের প্রধানকে কী বলা হত?
সদর-উস-সুদুর
10. সুলতানি আমলে নগরীর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে কী বলা হত?
কোতোয়াল
11. গ্রাম শাসনের দায়িত্বে কে ছিলেন?
মুকাদ্দাম বা চৌধুরী
12. কৃষি বিভাগের প্রধানকে কী বলা হত?
দিওয়ান-ই-কোহি
13. দিওয়ান-ই-কোহি কে স্থাপন করেন?
মহম্মদ বিন তুঘলক
14. সুলতানের ব্যক্তিগত সচিবের পদবী কী ছিল?
ওয়াকিল-ই-দার
15. সুলতানি আমলে বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার নাম কী ছিল?
শাহানা-ই-মান্ডি
16. শাহানা-ই-মান্ডি কে প্রবর্তন করেন?
আলাউদ্দিন খলজি
17. সুলতানি আমলে প্রাদেশিক ভাগকে কী বলা হত?
ইকতা বা সুবা
18. সুলতানের প্রধান পরামর্শদাতাদের পরিষদকে কী বলা হত?
মজলিস-ই-খলওয়াত
19. খলজি বংশের সময় সামরিক বিভাগকে কী বলা হত?
দিওয়ান-ই-আর্জ
20. ভূমি রাজস্বের হার নির্ধারণকারী কর্মকর্তাকে কী বলা হত?
মুস্তাউফি-ই-মামালিক
21. সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার কে ছিলেন?
সুলতান স্বয়ং
22. সুলতানি শাসন ব্যবস্থায় আইন কীসের উপর ভিত্তি করে ছিল?
শরিয়ত
23. বিচার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর কী ছিল?
গ্রাম পঞ্চায়েত
24. কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ পদ কী ছিল?
ওয়াজির
25. ওয়াজির কোন বিভাগের প্রধান ছিলেন?
রাজস্ব বিভাগ
26. সামরিক বিভাগে সৈন্যদের বেতন কে প্রদান করতেন?
আরিজ-ই-মামালিক
27. সুলতানি মুদ্রাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক কে ছিলেন?
দিওয়ান-ই-ইস্তিহাক
28. সুলতানি আমলে প্রাদেশিক সামরিক বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন?
মুকতা
29. সুলতানি আমলে বিচার প্রক্রিয়ায় কে আপিল শুনতেন?
সুলতান
30. সুলতানি প্রশাসনের কোন পদটি আদালতের সঙ্গে যুক্ত ছিল?
আমির-ই-হাজিব
31. সুলতানি আমলে রাজ্যের হিসাব নিরীক্ষককে কী বলা হত?
মুশরিব-ই-মামালিক
32. সুলতানি আমলে প্রধান প্রকৌশলীকে কী বলা হত?
মীর-ই-ইমারত
33. সুলতানি আমলে রাজ্যের আয়-ব্যয় কে দেখতেন?
দিওয়ান-ই-ইস্তিহাক
34. রাজকীয় কারখানার তত্ত্বাবধায়ককে কী বলা হত?
মীর-ই-কারখানা
35. সুলতানি আমলে প্রধান কোষাধ্যক্ষকে কী বলা হত?
খাজিন
36. সুলতানি আমলে ঘোড়ার বাহিনীর প্রধানকে কী বলা হত?
আমির-ই-আখুর
37. সুলতানি আমলে হাতির বাহিনীর প্রধানকে কী বলা হত?
শাহনা-ই-পিল
38. সুলতানি আমলে স্থানীয় বিচারককে কী বলা হত?
কাজি-ই-ফৌজদারি
39. সুলতানি আমলে শহরের পুলিশ প্রধান কে ছিলেন?
কোতোয়াল
40. সুলতানি আমলে দিওয়ান-ই-ইনশা কোন বিভাগের দায়িত্বে ছিল?
রাজকীয় চিঠিপত্র ও যোগাযোগ
41. সুলতানি আমলে দিওয়ান-ই-রিসালত কোন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিল?
ধর্মীয় বিষয় ও বিদেশ
42. সুলতানি আমলে দিওয়ান-ই-খাইরাত কে প্রতিষ্ঠা করেন?
ফিরোজ শাহ তুঘলক
43. দিওয়ান-ই-খাইরাত কীসের জন্য ছিল?
দান ও জনহিতকর কাজ
44. দাসদের দেখাশোনার জন্য কোন বিভাগ ছিল?
দিওয়ান-ই-বন্দগান
45. দিওয়ান-ই-বন্দগান কে স্থাপন করেন?
ফিরোজ শাহ তুঘলক
46. সুলতানি প্রশাসনের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ইউনিট কী ছিল?
গ্রাম
47. সুলতানি আমলে গ্রামের প্রধান রাজস্ব সংগ্রাহককে কী বলা হত?
পাটোয়ারী
48. সামরিক বাহিনীর বেতন হিসেবে ভূমি প্রদানের প্রথাকে কী বলা হত?
ইকতা
49. দিল্লির সুলতানি শাসন কত সময় ধরে স্থায়ী ছিল?
১২০৬-১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ
50. কোন সুলতান ইকতা প্রথা বিলুপ্ত করার চেষ্টা করেন?
আলাউদ্দিন খলজি
51. সুলতানি আমলে রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতা কার হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল?
সুলতান
52. সুলতানি ব্যবস্থায় সুলতানকে পরামর্শ প্রদানকারী প্রধান পরিষদ কোনটি ছিল?
মজলিস-ই-খাস
53. দিল্লি সুলতানির বিচারিক কার্যক্রমে আপিলের সর্বোচ্চ স্তরকে কী বলা হত?
মজলিস-ই-মাজালিম
54. কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে সুলতান কর্তৃক গঠিত বিশেষ বিভাগ কোনটি ছিল?
দিওয়ান-ই-কোহি
55. সুলতানি আমলে সরকারি চিঠিপত্র ও রাজকীয় ফরমান প্রস্তুতকারী বিভাগ কোনটি?
দিওয়ান-ই-ইনশা
56. বিদেশী দূতদের অভ্যর্থনা ও কূটনৈতিক বিষয়াবলী দেখাশোনা করত কোন বিভাগ?
দিওয়ান-ই-রিসালত
57. সুলতানি সামরিক বাহিনীতে নগদ বেতন প্রথার প্রবর্তক কে ছিলেন?
আলাউদ্দিন খলজি
58. সুলতানি আমলে ওয়াজিরের মূল দায়িত্ব কী ছিল?
রাজ্যের আর্থিক ও সাধারণ প্রশাসন পরিচালনা
59. সামরিক বিভাগে সৈন্যদের নাম ও পরিচয় নথিভুক্তির প্রক্রিয়াকে কী বলা হত?
চেহারা
60. সুলতানি বিচার ব্যবস্থায় শরিয়ত আইন প্রয়োগে নিযুক্ত ব্যক্তি কে ছিলেন?
কাজি
61. ধর্মীয় বিষয়ে সুলতানকে পরামর্শদাতা এবং ধর্মীয় অনুদানের দায়িত্বে কে ছিলেন?
সদর-উস-সুদুর
62. সুলতানি আমলে সামরিক কর্মকর্তাদের ভূমি অনুদানকে কী বলা হত?
ইকতা
63. সুলতানের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বাহিনীর কমান্ডারকে কী বলা হত?
সর-ই-জান্দার
64. দিল্লি সুলতানির সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষাকারী কর্মকর্তাকে কী বলা হত?
মুস্তাফি-ই-মামালিক
65. সুলতানি আমলে বাজার দর নিয়ন্ত্রণের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখা
66. সুলতানি গুপ্তচরদের প্রধান কাজ কী ছিল?
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ খবর সুলতানকে জানানো
67. রাজকীয় অশ্বশালার তত্ত্বাবধায়ককে কী বলা হত?
আমির-ই-আখুর
68. রাজকীয় হস্তিবাহিনীর তত্ত্বাবধায়ককে কী বলা হত?
শাহনা-ই-পিল
69. শহরের আইন-শৃঙ্খলা ও নাগরিক প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে কী বলা হত?
কোতোয়াল
70. মুসলিম আইন ব্যাখ্যায় পারদর্শী ব্যক্তিকে কী বলা হত?
মুফতি
71. সুলতানি আমলে কৃষি জমির পরিমাপ নির্ধারণের পদ্ধতিকে কী বলা হত?
মাসাহাত
72. সুলতান কর্তৃক প্রদত্ত করমুক্ত ভূমি অনুদানকে কী বলা হত?
ইনাম
73. দিল্লি সুলতানির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বিভাগের নাম কী ছিল?
দিওয়ান-ই-উজিরাত
74. ওয়াজিরের অনুপস্থিতিতে তার কার্যাবলী সম্পাদনকারীকে কী বলা হত?
নাইব ওয়াজির
75. সুলতানি আমলে গ্রাম পর্যায়ের স্থানীয় বিচারকের ভূমিকা কে পালন করতেন?
কাজি-ই-মুফতি
76. সুলতানি প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের কী উপাধি ছিল?
ওয়ালি বা ইকতাদার
77. সামরিক সৈন্যদের ঘোড়ার গায়ে দাগ দেওয়ার পদ্ধতিকে কী বলা হত?
দাগ
78. সুলতানি আমলে অমুসলিম প্রজাদের কাছ থেকে আদায়কৃত করের নাম কী ছিল?
জিজিয়া
79. মুসলিম প্রজাদের উপর ধার্য করা বাধ্যতামূলক ধর্মীয় করের নাম কী ছিল?
যাকাত
80. কৃষকদের কৃষি কাজের জন্য দেওয়া সরকারি ঋণকে কী বলা হত?
তকাভি ঋণ
81. সুলতানের ব্যক্তিগত পরিসেবা ও দরবার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে কে ছিলেন?
আমির-ই-হাজিব
82. দাসদের দেখাশোনা ও কল্যাণের জন্য সুলতানি আমলে কোন বিভাগ ছিল?
দিওয়ান-ই-বন্দগান
83. দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য জনকল্যাণমূলক বিভাগটি কী নামে পরিচিত ছিল?
দিওয়ান-ই-খাইরাত
84. সুলতানি আমলে প্রধান স্থাপত্য ও নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধায়ক কে ছিলেন?
মীর-ই-ইমারত
85. দিল্লি সুলতানির বিচার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন প্রশাসনিক স্তর কোনটি ছিল?
গ্রাম সভা
86. সুলতানি আমলে বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা নৈতিক পুলিশকে কী বলা হত?
মুহতাসিব
87. সুলতানি সামরিক বাহিনীর প্রধান অস্ত্রাগারের তত্ত্বাবধায়ক কে ছিলেন?
মীর-ই-আতর
88. সুলতানি আমলে প্রাদেশিক সামরিক বাহিনীর কমান্ডারকে কী বলা হত?
সিবাহসালার
89. ভূমি জরিপের মাধ্যমে রাজস্ব নির্ধারণের পদ্ধতিকে কী বলা হত?
জাবত
90. গ্রামের আইন-শৃঙ্খলা ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে কী বলা হত?
চৌধুরী
91. সুলতানি বিচার ব্যবস্থায় ফতোয়া প্রদানকারীকে কী বলা হত?
মুফতি
92. ইকতা প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে সুলতান কী উদ্দেশ্য সাধন করতে চেয়েছিলেন?
সামরিক ব্যয়ভার কমানো ও সৈন্যদলকে সুসংগঠিত করা
93. গ্রামের ভূমি রাজস্ব আদায়কারী স্থানীয় সরকারি কর্মচারীকে কী বলা হত?
পাটোয়ারী
94. রাজকীয় প্রশাসনিক চিঠিপত্রের খসড়া প্রস্তুত করার দায়িত্ব কার ছিল?
দবির-ই-খাস
95. দিল্লি সুলতানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয়কে কী বলা হত?
দিওয়ান-ই-উজিরাত
96. সুলতানি বিচার ব্যবস্থায় ইসলামিক আইন প্রয়োগের জন্য কোন নিয়মাবলী অনুসরণ করা হত?
ফিকাহ
97. সুলতানি আমলে রাজকীয় খামার ও কৃষি সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক কে ছিলেন?
আমির-ই-কোহি
98. রাজ্যের সরকারি বার্তা ও খবরাখবর বহনকারী গুপ্তচরদের কী বলা হত?
বরিদ
99. সুলতানি আমলে প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মূল ভিত্তি কী ছিল?
ইকতা প্রথা
100. সুলতানি প্রশাসনের প্রধান সামরিক বিভাগকে কী বলা হত?
দিওয়ান-ই-আর্জ