১. ভূমিকা (Introduction)
* সময়কাল: ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দ – ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দ (প্রায় তিন শতাব্দী)।
* অবস্থান: দক্ষিণ ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির তুঙ্গভদ্রা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ছিল।
* গুরুত্ব: মধ্যযুগে দক্ষিণ ভারতে ইসলামি শক্তির বিস্তার রোধে বিজয়নগর সাম্রাজ্য একটি শক্তিশালী হিন্দু রাজ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দাক্ষিণাত্যের হিন্দু সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও শিল্পকলার এক সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল ছিল।
### ২. প্রতিষ্ঠা (Establishment)
* প্রতিষ্ঠাতা: হরিহর (হাক্কা) ও বুক্কা (বুক্কা) নামক দুই ভাই (সঙ্গম রাজবংশের)।
* প্রতিষ্ঠাকাল: ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দ।
* রাজধানী: প্রথমদিকে অ্যানেগোন্ডি (Anegondi), পরে হাম্পি (Hampi)।
* প্রেক্ষাপট: মহম্মদ বিন তুঘলকের দাক্ষিণাত্য নীতি এবং বাহমনী সুলতানির আক্রমণের মুখে দক্ষিণ ভারতের হিন্দু রাজ্যগুলির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ এই সাম্রাজ্যের উত্থান হয়।
* গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব: হরিহর ও বুক্কাকে আধ্যাত্মিক গুরু বিদ্যারণ্য (সায়নাচার্যের ভাই মাধবাচার্য) বিজয়নগর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত ও সহায়তা করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
### ৩. রাজবংশসমূহ (Dynasties)
বিজয়নগর সাম্রাজ্যে মোট চারটি রাজবংশ রাজত্ব করেছিল:
#### ক) সঙ্গম রাজবংশ (Sangama Dynasty) – (১৩৩৬-১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দ)
* প্রতিষ্ঠাতা: হরিহর ও বুক্কা।
* গুরুত্বপূর্ণ শাসকগণ:
* হরিহর প্রথম (১৩৩৬-১৩৫৬): সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন।
* বুক্কা প্রথম (১৩৫৬-১৩৭৭): সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান এবং বাহমনী সুলতানিদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
* দেবারায় প্রথম (১৪০৬-১৪২২): সেচ ব্যবস্থা উন্নত করেন এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। ইতালীয় পর্যটক নিকোলো কন্টি তাঁর রাজত্বকালে বিজয়নগর পরিদর্শন করেন।
* দেবারায় দ্বিতীয় (প্রৌঢ়দেবরায়) (১৪২২-১৪৪৬): সঙ্গম বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি "ইম্মাদিদেবরায়" বা "গজবেটকর" (হাতি শিকারী) উপাধি গ্রহণ করেন। পারসিক পর্যটক আবদুর রাজ্জাক তাঁর রাজত্বকালে বিজয়নগর পরিভ্রমণ করেন এবং সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির বিবরণ দেন।
#### খ) সালুভ রাজবংশ (Saluva Dynasty) – (১৪৮৫-১৫০৫ খ্রিস্টাব্দ)
* প্রতিষ্ঠাতা: সালুভ নরসিংহ।
* গুরুত্ব: সঙ্গম রাজবংশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সালুভ নরসিংহ ক্ষমতা দখল করেন এবং সাম্রাজ্যকে বাহমনী ও অন্যান্য বাহ্যিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করে সাময়িকভাবে এর পতন রোধ করেন। এই ঘটনা ইতিহাসে "প্রথম বলাহর" (First Usurpation) নামে পরিচিত।
#### গ) তুলুভ রাজবংশ (Tuluva Dynasty) – (১৫০৫-১৫৭০ খ্রিস্টাব্দ)
* প্রতিষ্ঠাতা: বীর নরসিংহ (সালুভ বংশের শেষ শাসককে সরিয়ে)।
* শ্রেষ্ঠ শাসক:
* শ্রীকৃষ্ণদেবরায় (১৫০৯-১৫২৯ খ্রিস্টাব্দ): তুলুভ বংশের এবং বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তাঁর রাজত্বকাল বিজয়নগরের স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত।
* উপাধি: "অন্ধ্রভোজ", "অন্ধ্র পিতামহ", "অভিনবভোজ"।
* সামরিক বিজয়: তিনি উড়িষ্যার গজপতি প্রতাপরুদ্র দেব, বাহমনী সুলতান এবং বিজাপুরের শাসক ইউসুফ আদিল শাহকে পরাজিত করেন। পর্তুগিজদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন।
* সাহিত্য: তিনি নিজেই একজন মহান পণ্ডিত ও লেখক ছিলেন। তাঁর রচিত তেলুগু ভাষার মহাকাব্য 'অমুক্তমাল্যদা' (রাজ্যের নীতি ও শাসন সম্পর্কিত) এবং সংস্কৃত নাটক 'জাম্ববতী কল্যাণম' উল্লেখযোগ্য।
* "অষ্টদিগ্গজ" (Eight Poets): তাঁর রাজসভায় আটজন বিশিষ্ট তেলুগু কবি বা "অষ্টদিগ্গজ" ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আল্লাসানি পেদ্দানা (যিনি "অন্ধ্র কবিতা পিতামহ" নামে পরিচিত) এবং তেনালি রামা (বিখ্যাত বিদূষক)।
* স্থাপত্য: হাজারারাম মন্দির এবং বিঠঠলস্বামী মন্দিরের নির্মাণ তাঁর সময়ে শুরু হয়। তিনি নাগলাপুরম নামে একটি নতুন শহরও নির্মাণ করেন।
* বিদেশী পর্যটক: পর্তুগিজ পর্যটক দোমিঙ্গো পায়েস এবং ফার্নাও নুনীজ তাঁর রাজত্বকালে বিজয়নগর পরিদর্শন করেন এবং সাম্রাজ্যের বিশালতা ও সমৃদ্ধির বিস্তারিত বিবরণ দেন।
* অচ্যুতদেবরায় (১৫২৯-১৫৪২): কৃষ্ণদেবরায়ের উত্তরসূরি। পর্তুগিজ পর্যটক ফার্নাও নুনীজ তাঁর সময়ে এসেছিলেন।
* সদাশিবরায় (১৫৪২-১৫৭০): তিনি নামমাত্র শাসক ছিলেন। প্রকৃত ক্ষমতা তাঁর প্রধানমন্ত্রী রামরায়-এর হাতে ছিল।
#### ঘ) আরবিডু রাজবংশ (Aravidu Dynasty) – (১৫৭০-১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দ)
* প্রতিষ্ঠাতা: তিরুমল (রামরায়ের ভাই)।
* রাজধানী: পেল্লুকোন্ডা (Pellukonda) এবং পরে চন্দ্রগিরি (Chandragiri)।
* পতন: ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালুকোটার যুদ্ধে বিজয়নগরের পরাজয়ের পর এই রাজবংশ টিকে থাকলেও সাম্রাজ্য তার গৌরব হারায় এবং ধীরে ধীরে পতন ঘটে।
### ৪. প্রশাসনিক ব্যবস্থা (Administration)
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রশাসন ছিল কেন্দ্রীভূত, শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত।
* রাজা: রাজা ছিলেন প্রশাসনের সর্বেসর্বা এবং ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হতেন। তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারক, সেনাপতি ও আইনপ্রণেতা।
* কেন্দ্রীয় প্রশাসন: রাজা একটি মন্ত্রিপরিষদের সাহায্যে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন বিভাগ যেমন রাজস্ব, সামরিক, বিচার ইত্যাদি ছিল।
* প্রাদেশিক প্রশাসন: সাম্রাজ্যকে কয়েকটি রাজ্য বা মন্ডলমে বিভক্ত করা হয়েছিল। প্রতিটি মন্ডলম আবার নাড়ু, স্থলা ও গ্রাম-এ বিভক্ত ছিল।
* নায়ঙ্কার ব্যবস্থা (Nayankara System): এটি ছিল এক প্রকার সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা। সামরিক প্রধানদের "নায়ক" বা "পালায়েগার" বলা হত। তারা রাজার কাছ থেকে 'আমারাম' (ভূমি) অনুদান পেতেন এবং এর বিনিময়ে রাজাকে সৈন্য, রাজস্ব ও সামরিক সহায়তা প্রদান করতেন।
* আইয়ঙ্গার ব্যবস্থা (Ayangar System): এটি ছিল গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের একটি ব্যবস্থা। প্রতিটি গ্রামে ১২ জন বংশানুক্রমিক কর্মকর্তা (আইয়ঙ্গার) ছিলেন, যারা গ্রামীণ প্রশাসন পরিচালনা করতেন।
### ৫. অর্থনৈতিক অবস্থা (Economic Condition)
বিজয়নগর ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি সাম্রাজ্য।
* কৃষি: প্রধান শস্য ছিল ধান, বাজরা, ডাল, তুলো। উন্নত সেচ ব্যবস্থার জন্য খাল, জলাধার ও বাঁধ নির্মিত হয়েছিল।
* শিল্প: বস্ত্রশিল্প (বিশেষত রেশম ও তুলা), ধাতু শিল্প, খনিজ শিল্প, সুগন্ধি দ্রব্য, রত্নশিল্প উন্নত ছিল।
* বাণিজ্য: অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় বাণিজ্যই সুসংগঠিত ছিল।
* বন্দর: কালিকট, ক্যানানোর, ম্যাঙ্গালোর, কোঁচি ছিল প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র।
* বাণিজ্যিক দ্রব্য: মসলা, কাপড়, চাল, লোহা, লবণ রপ্তানি হত। ঘোড়া, মুক্তা, পারস্য ও চীন থেকে সিল্ক আমদানি করা হত।
* মুদ্রা: সাম্রাজ্যের স্বর্ণমুদ্রাগুলি "বরাহ" বা "প্যাগোডা" নামে পরিচিত ছিল। এটি বাণিজ্য ও লেনদেনের প্রধান মাধ্যম ছিল।
### ৬. সামাজিক অবস্থা (Social Condition)
* বর্ণপ্রথা: চতুর্বর্ণ প্রথা বিদ্যমান ছিল। ব্রাহ্মণদের বিশেষ সম্মান দেওয়া হত।
* নারীদের অবস্থা: নারীরা সমাজে তুলনামূলকভাবে উচ্চ স্থান লাভ করত। তারা শিক্ষা, সাহিত্য, সংগীত, কুস্তি এবং এমনকি প্রশাসনিক ও সামরিক ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করত। সতীদাহ প্রথা এবং দেবদাসী প্রথাও প্রচলিত ছিল।
* খাদ্যাভ্যাস: ভাত, ডাল, সবজি, ফল, এবং মাংস (গরু ব্যতীত) খাওয়া হত।
* উৎসব: নবরাত্রি (মহানবমী), হোলি, দীপাবলী, শস্য উৎসবগুলি খুব জাঁকজমকের সাথে পালিত হত।
### ৭. ধর্মীয় অবস্থা (Religious Condition)
* বিজয়নগর ছিল একটি হিন্দু রাষ্ট্র, এবং বৈষ্ণব ধর্ম ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত।
* রাজারা ব্যক্তিগতভাবে বৈষ্ণব হলেও শৈব, জৈন, বৌদ্ধ, মুসলমান এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখতেন। বিভিন্ন ধর্মের মন্দির ও মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।
### ৮. শিল্পকলা ও স্থাপত্য (Art & Architecture)
বিজয়নগরের স্থাপত্য ছিল দ্রাবিড়ীয় শৈলীর এক চূড়ান্ত রূপ।
* মন্দির স্থাপত্য:
* বৈশিষ্ট্য: বিশাল মন্দির প্রাঙ্গণ, উঁচু প্রবেশদ্বার (গোপুরম), সুসজ্জিত মন্ডপ (কল্যাণ মন্ডপ, নাট্য মন্ডপ, হাজার স্তম্ভযুক্ত মন্ডপ), বিশাল তোরণ, অলঙ্কৃত স্তম্ভ, পাথরের রথ (বিঠঠলস্বামী মন্দিরে)।
* উল্লেখযোগ্য মন্দির:
* বিরূপাক্ষ মন্দির (হাম্পি) - বিজয়নগরের পৃষ্ঠপোষক দেবতা।
* হাজারারাম মন্দির (কৃষ্ণদেবরায় নির্মিত)।
* বিঠঠলস্বামী মন্দির (হাম্পি) - এর সঙ্গীত স্তম্ভগুলি বিখ্যাত।
* ধর্মনিরপেক্ষ স্থাপত্য: লোটাস মহল, রানী মহল, হাতির আস্তাবল, পাবলিক স্নানাগার।
* ভাস্কর্য: রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন দৃশ্যাবলি মন্দিরের দেওয়ালে খোদিত আছে। অশ্বারোহী মূর্তিগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
### ৯. সাহিত্য (Literature)
বিজয়নগর সাম্রাজ্য সাহিত্যচর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। চারটি প্রধান ভাষা (সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড়, তামিল) বিকাশ লাভ করে।
* সংস্কৃত: মাধবাচার্য, সায়ন (বেদের ভাষ্যকার) এবং গঙ্গাদেবী (মধুরা বিজয়ম-এর রচয়িতা) উল্লেখযোগ্য। কৃষ্ণদেবরায় নিজেও সংস্কৃত ভাষায় 'জাম্ববতী কল্যাণম' রচনা করেন।
* তেলুগু: কৃষ্ণদেবরায় রচিত 'অমুক্তমাল্যদা' এবং আল্লাসানি পেদ্দানা, নন্দী তিম্মানা, তেনালি রামা প্রমুখ অষ্টদিগ্গজ তেলুগু সাহিত্যের উন্নতি সাধন করেন।
* কন্নড়: কুমার ব্যাস (মহাভারতের কন্নড় অনুবাদ) এবং লক্ষ্মিশা উল্লেখযোগ্য।
* তামিল: বিভিন্ন ভক্তিমূলক সাহিত্য রচিত হয়।
### ১০. বিদেশী পর্যটকদের বিবরণ (Accounts of Foreign Travellers)
বিজয়নগরের সমৃদ্ধি ও প্রশাসন সম্পর্কে জানতে বিদেশী পর্যটকদের বিবরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
* নিকোলো কন্টি (Nicolo Conti): ইতালীয় পর্যটক, দেবারায় প্রথমের সময়।
* আবদুর রাজ্জাক (Abdur Razzaq): পারসিক রাষ্ট্রদূত, দেবারায় দ্বিতীয়ের সময়।
* দোমিঙ্গো পায়েস (Domingo Paes): পর্তুগিজ পর্যটক, কৃষ্ণদেবরায়ের সময়।
* ফার্নাও নুনীজ (Fernao Nuniz): পর্তুগিজ ঘোড়া ব্যবসায়ী, অচ্যুতদেবরায়ের সময়।
### ১১. পতন (Decline)
* তালুকোটার যুদ্ধ (Battle of Talikota) – ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ:
* এটি বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের প্রধান কারণ ছিল।
* সংঘর্ষ: বিজয়নগরের প্রধানমন্ত্রী রামরায় এবং দাক্ষিণাত্যের চারটি সুলতানি রাজ্যের (আহমেদনগরের নিজামশাহী, বিজাপুরের আদিলশাহী, গোলকোন্ডার কুতুবশাহী, এবং বিদরের বারিদশাহী) জোটের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বেরারের বারিদশাহী এই জোটে অংশ নেয়নি।
* ফলাফল: এই যুদ্ধে রামরায় পরাজিত ও নিহত হন এবং বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী হাম্পি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে বিজয়নগরের রাজনৈতিক শক্তি চূর্ণ হয়ে যায়।
* অন্যান্য কারণ:
* রাজ্যগুলির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কলহ ও ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা।
* নায়কদের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা।
* বাহমনী ও তার উত্তরাধিকারী রাজ্যগুলির সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ, যা সাম্রাজ্যের সম্পদ নষ্ট করে।
### ১২. গুরুত্ব ও অবদান (Significance & Contribution)
* হিন্দু সংস্কৃতির রক্ষাকর্তা: দক্ষিণ ভারতে ইসলামি শাসনের বিস্তার রোধ করে বিজয়নগর সাম্রাজ্য প্রায় তিন শতাব্দী ধরে হিন্দু ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করে।
* শিল্প ও স্থাপত্যের বিকাশ: দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। হাম্পির ধ্বংসাবশেষ আজও এর গৌরবময় অতীতকে তুলে ধরে।
* সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা: চারটি আঞ্চলিক ভাষার (তেলুগু, কন্নড়, তামিল ও সংস্কৃত) অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে।
* অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: বাণিজ্য, কৃষি ও শিল্পের উন্নতি ঘটিয়ে বিজয়নগর দক্ষিণ ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
* এক অনন্য প্রশাসনিক কাঠামো: নায়ঙ্কার ও আইয়ঙ্গার ব্যবস্থার মাধ্যমে এক সুসংহত প্রশাসন গড়ে তোলা হয়।
FAQ Questions Answers 100
1. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
হরিহর ও বুক্কা।
2. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?
হাম্পি।
3. বিজয়নগর সাম্রাজ্য কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৩৩৬ সালে।
4. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শেষ শাসক কে ছিলেন?
শ্রীরাঙ্গা তৃতীয়।
5. তালিকোটার যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়?
১৫৬৫ সালে।
6. তালিকোটার যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির জোট।
7. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কোন রাজা 'কৃষ্ণদেব রায়' নামে সুপরিচিত?
তুলুভ বংশের রাজা।
8. কৃষ্ণদেব রায় কোন ভাষায় তেলেগু সাহিত্যকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন?
তেলেগু।
9. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের মুদ্রার নাম কী ছিল?
বরাহ।
10. বিজয়নগরের বিখ্যাত হাম্পি শহর কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
তুঙ্গভদ্রা নদী।
11. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সময়কালে ভারতে আসা একজন বিখ্যাত বিদেশি পর্যটকের নাম বলুন।
নিকোলো কন্টি।
12. কোন বিজয়নগর রাজা 'অন্ধ্র ভোজ' উপাধি গ্রহণ করেন?
কৃষ্ণদেব রায়।
13. বিজয়নগরের কোন বিখ্যাত মন্দির আজও বিদ্যমান?
বিরুপাক্ষ মন্দির।
14. বিজয়নগর সাম্রাজ্য কোন চারটি প্রধান রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছিল?
সঙ্গম, সালুভ, তুলুভ ও আরাভিদু।
15. সঙ্গম বংশের প্রথম শাসক কে ছিলেন?
হরিহর প্রথম।
16. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক কে ছিলেন?
কৃষ্ণদেব রায়।
17. বিজয়নগরের কোন স্থাপত্য শৈলী বিখ্যাত?
দ্রাবিড় শৈলী।
18. বিজয়নগর সাম্রাজ্য কত বছর স্থায়ী হয়েছিল?
প্রায় ৩০০ বছর।
19. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের প্রধান কারণ কী ছিল?
তালিকোটার যুদ্ধে পরাজয়।
20. আব্দুর রাজ্জাক কোন রাজার শাসনামলে বিজয়নগরে এসেছিলেন?
দেব রায় দ্বিতীয়।
21. কৃষ্ণদেব রায়ের লেখা একটি বিখ্যাত গ্রন্থের নাম কী?
আমুক্তমাল্যদা।
22. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সামরিক বাহিনীর প্রধানদের উপাধি কী ছিল?
নায়ক।
23. তালিকোটার যুদ্ধের সময় বিজয়নগরের সেনাপতি কে ছিলেন?
আলিয়া রাম রায়।
24. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে কোন শতকে?
ষোড়শ শতকে।
25. বিজয়নগরের কোন রাজা 'আন্ধ্র পিতামহ' নামে পরিচিত?
কৃষ্ণদেব রায়।
26. বিজয়নগর সাম্রাজ্য কোন মালভূমি অঞ্চলে অবস্থিত ছিল?
দাক্ষিণাত্য মালভূমি।
27. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সরকারি ভাষাগুলি কী কী ছিল?
কন্নড়, তেলেগু ও সংস্কৃত।
28. বিজয়নগরের মন্দিরগুলি প্রধানত কোন দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ছিল?
শিব ও বিষ্ণু।
29. বিজয়নগরের কোন রাজা 'যবনরাজ্য সংস্থাপনাচার্য' উপাধি ধারণ করেন?
কৃষ্ণদেব রায়।
30. বিজয়নগরের হাম্পি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত হয় কবে?
১৯৮৬ সালে।
31. সঙ্গম বংশের শেষ শাসক কে ছিলেন?
দ্বিতীয় বিরুপাক্ষ রায়।
32. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনী কোন শাসকের আমলে ছিল?
দেব রায় দ্বিতীয়।
33. পর্তুগিজ পর্যটক ডোমিঙ্গো পায়েস কোন রাজার আমলে বিজয়নগরে এসেছিলেন?
কৃষ্ণদেব রায়।
34. বিজয়নগরে কোন ইউরোপীয় জাতি বাণিজ্য করত?
পর্তুগিজরা।
35. কৃষ্ণদেব রায় কোন মুঘল সম্রাটের সমসাময়িক ছিলেন?
বাবর।
36. বিজয়নগরের কোন শাসক 'গজবেটকার' উপাধি ধারণ করেন?
দেব রায় প্রথম।
37. বিজয়নগরের প্রতিষ্ঠাতা হরিহর ও বুক্কা কোন বংশের ছিলেন?
সঙ্গম বংশ।
38. বিজয়নগরের পতনের পর সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কেন্দ্র কোথায় স্থানান্তরিত হয়?
পেনুকোন্ডা।
39. বিজয়নগরের অর্থনীতি মূলত কিসের উপর নির্ভরশীল ছিল?
কৃষি ও বাণিজ্য।
40. কৃষ্ণদেব রায়ের সভাকবিদের সমষ্টিগত নাম কী ছিল?
অষ্টদিগ্গজ।
41. বিজয়নগরে কোন বিখ্যাত জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল?
তুঙ্গভদ্রা খাল ব্যবস্থা।
42. বিজয়নগরের প্রশাসনিক ইউনিট 'নাড়ু' কীসের সমতুল্য ছিল?
জেলা।
43. বিজয়নগরে ভূমি রাজস্বের স্বাভাবিক হার কত ছিল?
মোট ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ।
44. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের পর কোন বংশ শেষ পর্যন্ত শাসন চালিয়েছিল?
আরাভিদু বংশ।
45. বিজয়নগরে ধর্মীয় সহনশীলতার মাত্রা কেমন ছিল?
উচ্চ ছিল।
46. বিজয়নগরের শিল্পকলা প্রধানত কীসের জন্য বিখ্যাত?
দ্রাবিড় মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য।
47. কোন বিদেশি পর্যটকের বিবরণ বিজয়নগরকে বিশ্বের অন্যতম ধনী ও বৃহৎ শহর হিসাবে বর্ণনা করে?
আব্দুর রাজ্জাক ও ডোমিঙ্গো পায়েসের।
48. বিজয়নগরের শাসকরা কোন সালতানাতের সাথে প্রায়শই যুদ্ধ করতেন?
বাহমনি সালতানাত।
49. কৃষ্ণদেব রায় কোন দুটি ভাষার একজন প্রসিদ্ধ কবি ও পণ্ডিত ছিলেন?
তেলেগু ও সংস্কৃত।
50. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নামটির অর্থ কী?
বিজয়ের শহর।
51. বিজয়নগর সাম্রাজ্য কোন দুটি প্রধান নদী অববাহিকার মধ্যে অবস্থিত ছিল?
তুঙ্গভদ্রা ও কৃষ্ণা
52. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের পর কে এটি পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছিলেন?
আলি রাম রায়
53. বিজয়নগরের দ্বিতীয় রাজধানী কোনটি ছিল?
পেনুকোন্ডা
54. সঙ্গম বংশের পরে কোন রাজবংশ বিজয়নগর শাসন করে?
সালুভ রাজবংশ
55. সালুভ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
সালুভ নরসিংহ দেব রায়
56. তুলুভ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
তুলুভ নরস নায়ক
57. আরাভিদু বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
তিরুমালা দেব রায়
58. বিজয়নগরের শাসকরা কোন দেবতা বা দেবীর অনুসারী ছিলেন?
বিরূপাক্ষ ও পম্পাদেবী
59. বিজয়নগরের প্রচলিত প্রধান স্বর্ণমুদ্রা কী নামে পরিচিত ছিল?
পেগোডা
60. বিজয়নগরের প্রশাসনে 'নায়ঙ্কার' ব্যবস্থা কী ছিল?
সামরিক প্রধানদের ভূমি অনুদান
61. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতন কোন যুদ্ধ দ্বারা চূড়ান্ত হয়?
তালিকোটার যুদ্ধ
62. বিজয়নগরের শাসকরা সাধারণত কোন উপাধি ব্যবহার করতেন?
রায়
63. বিজয়নগরের দরবারে কোন ভাষায় পণ্ডিতরা সম্মানিত হতেন?
সংস্কৃত, কন্নড়, তেলেগু ও তামিল
64. বিজয়নগরের গ্রামীণ প্রশাসনের মূল একক কী ছিল?
আয়গার ব্যবস্থা
65. বিজয়নগরের মন্দিরগুলিতে ব্যবহৃত এক স্তম্ভের নাম কী?
কল্যাণ মণ্ডপ
66. বিজয়নগরের রাজধানী হাম্পি কোন ধর্মীয় কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত?
বিরূপাক্ষ মন্দির
67. বিজয়নগর সাম্রাজ্যে কর ব্যবস্থার ভিত্তি কী ছিল?
ভূমিকর
68. বিজয়নগরের শাসকরা কোন হিন্দু উৎসব পালন করতেন?
মহানবমী বা নবরাত্রি
69. বিজয়নগরের বিখ্যাত হাতির আস্তাবল কে নির্মাণ করেন?
কৃষ্ণদেব রায়
70. বিজয়নগরের কোণার্কের মতো স্থাপত্যের অনুপ্রেরণা কোথা থেকে এসেছিল?
চালুক্য ও হোয়সালা শৈলী
71. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক বন্দরগুলি কোথায় অবস্থিত ছিল?
ম্যাঙ্গালোর, ভাটকাল, গোয়া
72. বিজয়নগরের বিখ্যাত দশাবতার মন্দিরের অবস্থান কোথায়?
হাম্পি
73. বিজয়নগরের মুদ্রা ব্যবস্থায় কোন ধাতুর ব্যবহার বেশি ছিল?
স্বর্ণ ও তামা
74. বিজয়নগরের শেষ স্বাধীন শাসক কে ছিলেন?
শ্রী রঙ্গ তৃতীয়
75. বিজয়নগরের রাজকীয় প্রতীক কী ছিল?
বরাহ বা বুনো শুয়োর
76. বিজয়নগরের সামরিক সাফল্যের কারণ কী ছিল?
অশ্বারোহী বাহিনী ও কামানের ব্যবহার
77. বিজয়নগরের প্রশাসনকে কয়টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়েছিল?
৯টি প্রদেশ
78. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনকালে ডেকানের সুলতানরা কোন জোট গঠন করেন?
ডেকান সালতানাত জোট
79. কৃষ্ণদেব রায়ের পর কোন শাসক সিংহাসনে আরোহণ করেন?
অচ্যুত দেব রায়
80. বিজয়নগরের সামরিক কর্মকর্তাদের সাধারণ নাম কী ছিল?
নায়ক
81. বিজয়নগরের প্রধান রপ্তানি পণ্য কী ছিল?
চাল, তুলা, লোহা, মসলা
82. বিজয়নগরের বিচার ব্যবস্থার প্রধান কে ছিলেন?
রাজা নিজেই
83. বিজয়নগরের কোন নদী পারাপারের জন্য বিখ্যাত সেতু ছিল?
তুঙ্গভদ্রা
84. বিজয়নগরের পতনকে কীসের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়?
দক্ষিণ ভারতের হিন্দু সাম্রাজ্যের শেষ
85. বিজয়নগরে কোন ধরনের ক্রীড়া জনপ্রিয় ছিল?
কুস্তি, শিকার
86. বিজয়নগরের শাসকরা কোন ভাষায় নিজেদের আদেশ জারি করতেন?
সংস্কৃত, কন্নড়, তেলেগু
87. বিজয়নগরের অর্থনীতিতে কোন বিদেশী পণ্যের আমদানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
ঘোড়া
88. বিজয়নগরের পতনের পর কোন শহরগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে?
পেনুকোন্ডা, ভেলোর
89. বিজয়নগরের স্বর্ণমুদ্রার উপর কোন দেব-দেবীর চিত্র ছিল?
দেবী লক্ষ্মী ও বিষ্ণু
90. বিজয়নগরের স্থাপত্যে কোন বিদেশী প্রভাব দেখা যায়?
ইসলামিক প্রভাব, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষ ভবনগুলিতে
91. বিজয়নগরের শাসকদের 'রায়' উপাধি কী নির্দেশ করে?
রাজকীয় ক্ষমতা
92. বিজয়নগরে নির্মিত বিখ্যাত 'ভিত্থালা মন্দির' কোন দেবতাকে উৎসর্গীকৃত?
ভগবান বিষ্ণু
93. বিজয়নগরের সেনাবাহিনীতে কোন বিশেষ মহিলা ইউনিট ছিল?
মহিলা দেহরক্ষী
94. বিজয়নগরের শিক্ষা কেন্দ্রগুলি কী নামে পরিচিত ছিল?
অগ্রহর
95. বিজয়নগরে ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য কোন কর্মচারীরা নিযুক্ত ছিলেন?
আয়গার
96. বিজয়নগরের সমাজে বর্ণপ্রথা কেমন ছিল?
ব্রাহ্মণরা উচ্চ পদে আসীন ছিলেন
97. বিজয়নগরের শহরগুলিতে জলের সরবরাহ কীভাবে নিশ্চিত করা হত?
ক্যানাল ও ট্যাঙ্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে
98. বিজয়নগরে কোন ধরণের পোশাক জনপ্রিয় ছিল?
সূতি ও রেশমের পোশাক
99. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সময়কালে কৃষির প্রধান ফসল কী ছিল?
ধান, জোয়ার, বাজরা
100. বিজয়নগরের পতনের কারণগুলির মধ্যে একটি ছিল অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, এর একটি উদাহরণ দিন।
আলি রাম রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ