মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব (শাসনকাল: ১৬৫৮-১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য সম্রাট, যার রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য ভৌগোলিকভাবে তার চরম শিখরে পৌঁছেছিল। তবে তার সাম্রাজ্যবাদী নীতি, বিশেষত দাক্ষিণাত্য বিজয় এবং মারাঠাদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পথ প্রশস্ত করেছিল। তার দাক্ষিণাত্য নীতি ছিল মূলত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফল।
১. ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বৈশিষ্ট্য:
ঔরঙ্গজেব ছিলেন একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও দৃঢ়চেতা শাসক। তার সাম্রাজ্যবাদী নীতির প্রধান দিকগুলি ছিল:
* দাক্ষিণাত্য বিজয়: দাক্ষিণাত্যের স্বাধীন সুলতানি রাজ্য বিজাপুর ও গোলকোন্ডা দখল এবং মারাঠা শক্তিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে সমগ্র দক্ষিণ ভারতকে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা তার প্রধান লক্ষ্য ছিল।
* উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি: আফগান উপজাতিগুলির বিদ্রোহ দমন ও পারস্যের সাফাভিদ সাম্রাজ্যের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলা করা।
* উত্তর-পূর্ব সীমান্ত নীতি: কোচবিহার ও আসামের আহোম রাজ্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা।
* রাজপুতদের সাথে সম্পর্ক: আকবরের উদার রাজপুত নীতির বিপরীতে ঔরঙ্গজেব রাজপুতদের প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করেন, যা যোধপুর ও মেবারের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে পরিণত হয়।
* শিখদের সাথে সংঘাত: শিখ গুরু তেগ বাহাদুরকে মৃত্যুদণ্ড (১৬৭৫ খ্রিষ্টাব্দ) প্রদানের পর শিখদের সাথে মুঘলদের সম্পর্ক চরম শত্রুতাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
২. ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির গুরুত্ব:
দাক্ষিণাত্য বিজয় ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্যবাদী নীতির প্রধান স্তম্ভ ছিল। এর পেছনে একাধিক কারণ ছিল:
* রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য: দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গোলকোন্ডার স্বাধীন সুলতানি রাজ্যগুলি মুঘল সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করত। এছাড়া মারাঠা শক্তির উত্থান মুঘলদের জন্য নতুন হুমকি সৃষ্টি করেছিল। এই শক্তিগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করাই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য।
* অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য: দাক্ষিণাত্যের উর্বর ভূমি, হীরা খনি (গোলকোন্ডা) এবং বাণিজ্য পথগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি করা।
* ধর্মীয় উদ্দেশ্য (বিতর্কিত): কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, শিয়া অধ্যুষিত বিজাপুর ও গোলকোন্ডা রাজ্যগুলি দখল করে সুন্নি ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করাও তার একটি উদ্দেশ্য ছিল।
৩. মারাঠা শক্তির উত্থান:
সপ্তদশ শতাব্দীতে শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠা শক্তির উত্থান ছিল দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ভূচিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
* ভৌগোলিক কারণ: মারাঠা অঞ্চল (মহারাষ্ট্র) ছিল পর্বতসঙ্কুল ও দুর্গবেষ্টিত, যা ছোট ও দ্রুতগামী গেরিলা বাহিনীর জন্য উপযুক্ত ছিল এবং বৃহৎ মুঘল বাহিনীর জন্য প্রতিকূল ছিল।
* ধর্মীয় ও সামাজিক কারণ: ভক্তি আন্দোলনের প্রবক্তা সন্ত নামদেব, তুকারাম, একনাথ, রামদাস প্রমুখ ধর্মপ্রচারকদের বাণী মারাঠা জনগণের মধ্যে একতা ও আত্মমর্যাদার বোধ জাগিয়েছিল।
* শিবাজীর প্রাথমিক জীবন ও উত্থান:
* জন্ম: ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে (মতান্তরে ১৬৩০) পুনের শিবনেরি দুর্গে।
* পিতা: শাহাজী ভোঁসলে (বিজাপুরের একজন জায়গিরদার)।
* মাতা: জিজাবাই (ধর্মপ্রাণ ও চরিত্রবান মহিলা, যিনি শিবাজীর চরিত্র গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন)।
* অভিভাবক: দাদাজি কোন্ডদেব (সামরিক ও প্রশাসনিক শিক্ষা দেন)।
* প্রাথমিক কার্যকলাপ: কিশোর বয়স থেকেই শিবাজী তার অনুগত মাওয়ালী সৈন্যদের সাহায্যে স্থানীয় দুর্গগুলি দখল করতে শুরু করেন (যেমন তোরণা, রায়গড়)। তার লক্ষ্য ছিল 'স্বরাজ' বা নিজস্ব স্বাধীন মারাঠা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।
৪. শিবাজী ও মুঘল সংঘাত:
শিবাজী মারাঠা শক্তিকে একত্রিত করতে শুরু করলে মুঘলদের সঙ্গে তার সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
* আফজল খানের হত্যা (১৬৫৯ খ্রিষ্টাব্দ): বিজাপুরের সেনাপতি আফজল খান শিবাজীকে আলোচনার ছলে হত্যার পরিকল্পনা করলে শিবাজী কৌশলে তাকে হত্যা করেন। এই ঘটনা শিবাজীর সাহস ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়।
* শায়েস্তা খানের অভিযান (১৬৬০-১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দ): ঔরঙ্গজেব তার মাতুল শায়েস্তা খানকে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার নিযুক্ত করে শিবাজীকে দমনের নির্দেশ দেন। শায়েস্তা খান পুনে দখল করে লাল মহলে আশ্রয় নেন। ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে শিবাজী আকস্মিকভাবে লাল মহলে আক্রমণ করে শায়েস্তা খানের আঙুল কেটে দেন এবং তার পুত্রকে হত্যা করেন। শায়েস্তা খান লজ্জিত হয়ে দাক্ষিণাত্য ত্যাগ করেন।
* সুরাট লুণ্ঠন (প্রথম, ১৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দ): মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম ধনী বন্দর সুরাটকে শিবাজী লুণ্ঠন করেন। এর ফলে মুঘলদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় এবং ঔরঙ্গজেবের সম্মানহানি ঘটে।
* জয় সিংহ ও পুরন্দরের সন্ধি (১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দ): ঔরঙ্গজেব এরপর অম্বরের কুশলী রাজপুত রাজা মির্জা রাজা জয় সিংহকে শিবাজীকে দমনের দায়িত্ব দেন। জয় সিংহ বিচক্ষণ সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেন। তিনি পুরন্দর দুর্গ অবরোধ করেন এবং শিবাজীকে ১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।
* শর্তাবলি: শিবাজী ২৩টি দুর্গ মুঘলদের হাতে তুলে দিতে সম্মত হন এবং তার অবশিষ্ট ১২টি দুর্গ নিজের অধীনে রাখেন। তার পুত্র শম্ভাজীকে মুঘল মনসবদার নিযুক্ত করা হয় এবং বিজাপুরের বিরুদ্ধে মুঘলদের সহায়তা করতে সম্মত হন।
* আগ্রায় শিবাজীর বন্দীত্ব ও পলায়ন (১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দ): জয় সিংহের আশ্বাসে শিবাজী ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রায় যান। কিন্তু ঔরঙ্গজেব তাকে উপযুক্ত মর্যাদা না দিয়ে সাধারণ মনসবদারদের পাশে স্থান দেন। শিবাজী এতে অপমানিত বোধ করে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করলে তাকে নজরবন্দী করা হয়। কিন্তু শিবাজী ফল ও মিষ্টির ঝুড়িতে লুকিয়ে নাটকীয়ভাবে আগ্রা থেকে পালিয়ে যান। এই ঘটনা শিবাজীর অসামান্য বুদ্ধিমত্তা এবং ঔরঙ্গজেবের কূটনৈতিক ব্যর্থতার প্রতীক।
* পুনরায় মুঘল সংঘাত ও সুরাট লুণ্ঠন (দ্বিতীয়, ১৬৭০ খ্রিষ্টাব্দ): আগ্রা থেকে ফেরার পর শিবাজী তার হারানো দুর্গগুলি পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে পুনরায় আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করেন। ১৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য সুরাট লুণ্ঠন করেন।
* রাজ্যাভিষেক (১৬৭৪ খ্রিষ্টাব্দ): শিবাজী রায়গড় দুর্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ছত্রপতি উপাধি গ্রহণ করে নিজেকে এক স্বাধীন সার্বভৌম মারাঠা রাজ্যের শাসক ঘোষণা করেন। এই ঘটনা মারাঠা জাতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মুহূর্ত ছিল।
৫. শিবাজীর মারাঠা শাসন ব্যবস্থা:
শিবাজী শুধু একজন যোদ্ধা ছিলেন না, একজন সুদক্ষ প্রশাসকও ছিলেন।
* অষ্টপ্রধান: শিবাজী তার প্রশাসনকে আটজন মন্ত্রী বা প্রধানের সমন্বয়ে গঠিত 'অষ্টপ্রধান' দ্বারা পরিচালনা করতেন: পেশওয়া (প্রধানমন্ত্রী), আমাত্য বা মজমুয়াদার (অর্থ ও রাজস্ব), সচীব (সচিব), মন্ত্রী বা ওয়াকিয়ানিভি (নথি ও গোয়েন্দা), সেনাপতি বা সার-ই-নওবত (সামরিক প্রধান), সুমন্ত বা ডবির (পররাষ্ট্র), ন্যায়ধীশ (বিচারপতি), পণ্ডিত রাও (ধর্মীয় বিষয়)। এই পদগুলি বংশানুক্রমিক ছিল না।
* রাজস্ব ব্যবস্থা: রায়তওয়ারি ব্যবস্থার মতো সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা হত। ভূমির উর্বরতা অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারণ করা হত। তিনি দুটি বিশেষ কর প্রবর্তন করেন:
* চৌথ: বিজিত বা সুরক্ষিত অঞ্চলগুলির আয়ের এক-চতুর্থাংশ।
* সরদেশমুখী: নিজস্ব এলাকা বা প্রভাবাধীন অঞ্চল থেকে অতিরিক্ত এক-দশমাংশ, যা নিজের বংশানুক্রমিক অধিকার হিসেবে দাবি করতেন।
* সামরিক ব্যবস্থা: শিবাজীর সামরিক ব্যবস্থা ছিল সুসংগঠিত। তিনি গেরিলা যুদ্ধ (গনিমী কাভা) কৌশলে পারদর্শী ছিলেন। তার সেনাবাহিনীতে অশ্বারোহী, পদাতিক এবং গোলন্দাজ বাহিনী ছিল। কঠোর শৃঙ্খলা বজায় রাখা হত এবং সেনাদের মধ্যে লুণ্ঠন নিষিদ্ধ ছিল।
৬. ঔরঙ্গজেব ও মারাঠা সংঘাতের দ্বিতীয় পর্যায় (শিবাজীর পর):
শিবাজীর মৃত্যুর (১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ) পর ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য জয়ের জন্য সরাসরি দাক্ষিণাত্য অভিযান শুরু করেন (১৬৮১ খ্রিষ্টাব্দে)। এই অভিযান তার জীবনের শেষ ২৬ বছর (১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত) ধরে চলে এবং মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
* বিজাপুর ও গোলকোন্ডা দখল: ঔরঙ্গজেব প্রথমে বিজাপুর (১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দ) এবং তারপর গোলকোন্ডা (১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) দখল করেন। এই রাজ্যগুলি মারাঠা ও মুঘলদের মধ্যে একটি বাফার স্টেট হিসেবে কাজ করত। এগুলি দখলের ফলে মুঘলরা সরাসরি মারাঠাদের মুখোমুখি হয়।
* শম্ভাজীর পতন ও হত্যা: শিবাজীর পুত্র শম্ভাজী (শাসনকাল: ১৬৮০-১৬৮৯ খ্রিষ্টাব্দ) পিতার অসমাপ্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঔরঙ্গজেব তাকে ১৬৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বন্দী করে নির্মমভাবে হত্যা করেন।
* রাজারাম ও তারাবাইয়ের প্রতিরোধ: শম্ভাজীর মৃত্যুর পর শিবাজীর দ্বিতীয় পুত্র রাজারাম (শাসনকাল: ১৬৮৯-১৭০০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং তার মৃত্যুর পর রাজারামের পত্নী তারাবাই (শাসনকাল: ১৭০০-১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ) অসাধারণ সাহস ও রণকৌশল নিয়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে মারাঠা প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে যান। তারাবাই তার শিশুপুত্র দ্বিতীয় শিবাজীকে সিংহাসনে বসিয়ে নিজে মারাঠা রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে ঔরঙ্গজেবকে নাস্তানাবুদ করেন। মারাঠারা 'গণযুদ্ধ' বা 'জাতীয় যুদ্ধ'-এর রূপ ধারণ করে।
৭. ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ফলাফল:
ঔরঙ্গজেবের দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয়বহুল দাক্ষিণাত্য অভিযান মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে।
* মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতা: দাক্ষিণাত্যে ঔরঙ্গজেবের অনুপস্থিতি এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণে উত্তর ভারতের প্রদেশগুলিতে মুঘল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে। জায়গিরদারি সংকট দেখা দেয় এবং স্থানীয় শাসকরা স্বায়ত্তশাসন লাভ করে।
* আর্থিক ক্ষতি: টানা ২৬ বছরের যুদ্ধ মুঘল কোষাগারকে নিঃশেষ করে দেয়। নিয়মিত রাজস্ব আদায় ব্যাহত হয় এবং সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
* সামরিক ক্ষতি: মুঘল সেনাবাহিনীর মনোবল হ্রাস পায়। অসংখ্য সৈন্য ও সেরা সেনাপতিরা এই যুদ্ধে প্রাণ হারান। নতুন করে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
* প্রশাসনিক জটিলতা: সম্রাটের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি কেন্দ্রীয় প্রশাসনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। প্রাদেশিক সুবাদার ও জায়গিরদাররা নিজেদের স্বাধীন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন।
* মারাঠা শক্তির বৃদ্ধি: ঔরঙ্গজেবের দমননীতি সত্ত্বেও মারাঠারা ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তারা ঔরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের "ফাঁদ" বা "কবর"-এ (দক্ষিণের ফান্দা/কবর) আটকে দেয়, যার ফলে মারাঠারা অচিরেই উত্তর ভারতেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
* সাম্রাজ্যের পতন: ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে দাক্ষিণাত্যের ঔরঙ্গাবাদে মারা যান।
উপসংহার:
ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্যবাদী নীতি, বিশেষত দাক্ষিণাত্য ও মারাঠাদের সাথে তার সংঘাত, মুঘল সাম্রাজ্যকে ভৌগোলিক উচ্চতায় নিয়ে গেলেও এর ভিত্তি দুর্বল করে দেয়। শিবাজীর মতো একজন প্রতিভাবান নেতা মারাঠা জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য অভিযান মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে এবং ভারতে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির (মারাঠা) উত্থানের পথ প্রশস্ত করে।