ব্রিটিশ সম্প্রসারণ: মহীশূর ও মহারাষ্ট্র, অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি, স্বত্ববিলোপ নীতি, পাঞ্জাব দখল (British expansion: Mysore and Maharashtra, subsidiary alliance, doctrine of lapse, annexation of the Punjab)

ইতিহাস সিলেবাসের "ব্রিটিশ সম্প্রসারণ: মহীশূর ও মহারাষ্ট্র, অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি, স্বত্ববিলোপ নীতি, পাঞ্জাব দখল" অংশটির উপর বিস্তারিত নোট দেওয়া হল।

ব্রিটিশ সম্প্রসারণ: মহীশূর ও মহারাষ্ট্র, অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি, স্বত্ববিলোপ নীতি, পাঞ্জাব দখল পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে নিজেদের রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য বিস্তারে সচেষ্ট হয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা ভারতের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং কূটনীতি ও আগ্রাসী নীতির মাধ্যমে নিজেদের সাম্রাজ্য সুপ্রতিষ্ঠিত করে। মহীশূর, মারাঠা শক্তি, পাঞ্জাব সাম্রাজ্য এবং অধীনতামূলক মিত্রতা ও স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ ছিল এই সম্প্রসারণের প্রধান স্তম্ভ।


### ১. ব্রিটিশ সম্প্রসারণ: মহীশূর (Mysore)

মহীশূর ছিল দক্ষিণ ভারতের একটি শক্তিশালী রাজ্য, যা ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য প্রসারে তীব্র বাধা সৃষ্টি করে। হায়দার আলি এবং তাঁর পুত্র টিপু সুলতান ছিলেন ব্রিটিশদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।


* শাসক:

    * হায়দার আলি (১৭৬১-১৭৮২): মহীশূরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। অত্যন্ত যোগ্য শাসক ও সেনাপতি ছিলেন।

    * টিপু সুলতান (১৭৮২-১৭৯৯): 'মহীশূরের বাঘ' নামে পরিচিত। ফরাসিদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে ব্রিটিশদের মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন। আধুনিক সেনাবাহিনী গঠন ও নৌবাহিনী তৈরি করেন।


* ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধসমূহ:

    * প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৬৭-১৭৬৯ খ্রি.):

        * কারণ: হায়দার আলির ক্রমবর্ধমান শক্তি, ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা।

        * ফলাফল: হায়দার আলির জয়। মাদ্রাজ চুক্তি (Treaty of Madras) স্বাক্ষরিত হয় (১৭৬৯)। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উভয় পক্ষ একে অপরের অধিকৃত অঞ্চল ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয় এবং ব্রিটিশরা হায়দার আলিকে প্রয়োজনে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।

    * দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৮০-১৭৮৪ খ্রি.):

        * কারণ: ব্রিটিশরা মাদ্রাজ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে হায়দার আলিকে সাহায্য করেনি। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ফরাসিদের পক্ষ নেওয়া।

        * ঘটনা: যুদ্ধ চলাকালীন হায়দার আলি মারা যান (১৭৮২)। তাঁর পুত্র টিপু সুলতান যুদ্ধ চালিয়ে যান।

        * ফলাফল: ম্যাঙ্গালোর চুক্তি (Treaty of Mangalore) স্বাক্ষরিত হয় (১৭৮৪)। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় পক্ষ পরস্পরের অধিকৃত অঞ্চলগুলি ফিরিয়ে দেয়।

    * তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৯০-১৭৯২ খ্রি.):

        * কারণ: টিপু সুলতানের ফরাসি সংযোগ এবং ব্রিটিশ মিত্র ত্রিবাঙ্কুরের উপর আক্রমণ।

        * ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল: লর্ড কর্নওয়ালিস।

        * ফলাফল: টিপু সুলতান পরাজিত হন। শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি (Treaty of Srirangapatnam) স্বাক্ষরিত হয় (১৭৯২)। টিপুকে তাঁর রাজ্যের প্রায় অর্ধেক অংশ (মালাবার, কূর্গ, বারামহল সহ) ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয় এবং ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তাঁর দুই পুত্রকে জিম্মি হিসেবে রাখা হয়।

    * চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৯৯ খ্রি.):

        * কারণ: টিপুর ফরাসিদের সাথে সম্পর্ক পুনস্থাপন, লর্ড ওয়েলেসলির সাম্রাজ্যবাদী নীতি।

        * ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল: লর্ড ওয়েলেসলি।

        * ফলাফল: ব্রিটিশরা শ্রীরঙ্গপত্তমের দুর্গ দখল করে। টিপু সুলতান যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে নিহত হন (৪ মে ১৭৯৯)। মহীশূর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। নামমাত্র ওয়াদেয়ার রাজবংশকে সিংহাসনে বসিয়ে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়।


* তাৎপর্য: মহীশূরের পতন ছিল ভারতে ব্রিটিশদের চূড়ান্ত আধিপত্য বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। টিপুর প্রতিরোধের অবসান দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।


### ২. ব্রিটিশ সম্প্রসারণ: মারাঠা শক্তি (Maharashtra / Marathas)

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর মারাঠারা ছিল ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশীয় শক্তি। পেশোয়াদের নেতৃত্বে সিন্ধিয়া, হোলকার, ভোঁসলে ও গায়কোয়াড়দের নিয়ে একটি শক্তিশালী মারাঠা কনফেডারেশন বা সংঘ তৈরি হয়েছিল।


* ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধসমূহ:

    * প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৭৭৫-১৭৮২ খ্রি.):

        * কারণ: মারাঠা পেশোয়া পদে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব (নারায়ণ রাও ও রঘুনাথ রাও)। ব্রিটিশরা রঘুনাথ রাওকে সমর্থন করে।

        * ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল: ওয়ারেন হেস্টিংস।

        * ফলাফল: কোনো পক্ষই decisive জয় লাভ করতে পারেনি। সালবাই-এর সন্ধি (Treaty of Salbai) স্বাক্ষরিত হয় (১৭৮২)। এই চুক্তি প্রায় ২০ বছর ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি বজায় রাখে।

    * দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৮০৩-১৮০৫ খ্রি.):

        * কারণ: মারাঠা সর্দারদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। হোলকার ও সিন্ধিয়াদের বিরোধ। পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ব্রিটিশদের সাহায্য চান।

        * ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল: লর্ড ওয়েলেসলি।

        * ফলাফল: ১৮০২ সালে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ব্রিটিশদের সঙ্গে বেসিনের চুক্তি (Treaty of Bassein) স্বাক্ষর করে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেন। এটি মারাঠা সর্দারদের ক্ষুব্ধ করে। ব্রিটিশরা ভোঁসলে (দেওগাঁও-এর চুক্তি), সিন্ধিয়া (সুর্জি অর্জুনগাঁও-এর চুক্তি) ও হোলকারদের পরাজিত করে। মারাঠাদের প্রভাব হ্রাস পায় এবং ব্রিটিশরা পশ্চিম ভারতের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

    * তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৮১৭-১৮১৮ খ্রি.):

        * কারণ: পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-এর অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা এবং মারাঠাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা।

        * ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল: লর্ড হেস্টিংস।

        * ফলাফল: পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও পরাজিত ও পদচ্যুত হন। পেশোয়া পদ চিরতরে বিলুপ্ত করা হয়। তাঁকে কানপুরের কাছে বিঠুরে পেনশন দিয়ে পাঠানো হয়। মারাঠা সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। নাগপুরের ভোঁসলে এবং ইন্দোরের হোলকারদের রাজ্যও ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে আসে।


* তাৎপর্য: মারাঠাদের পতন ভারতে ব্রিটিশদের একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করে। এরপর ভারতে ব্রিটিশদের আর কোনো উল্লেখযোগ্য দেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।


### ৩. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (Subsidiary Alliance)

এটি ছিল ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কৌশল, যা সামরিক শক্তির ব্যবহার ছাড়াই রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে আনত।


* প্রবর্তক: লর্ড ওয়েলেসলি (১৭৯৮-১৮০৫ খ্রি.)।

* উদ্দেশ্য:

    * দেশীয় রাজ্যগুলিকে পরোক্ষভাবে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে আনা।

    * ব্রিটিশদের ব্যয় ছাড়াই তাদের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা।

    * ফরাসি প্রভাব বিস্তার রোধ করা।

    * ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করা।

* বৈশিষ্ট্য/শর্তাবলী:

    1. যে দেশীয় রাজ্য এই নীতি গ্রহণ করবে, তাকে নিজ ব্যয়ে একটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী স্থায়ীভাবে নিজ রাজ্যে রাখতে হবে।

    2. রাজ্য অন্য কোনো ইউরোপীয় বা বিদেশী শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না এবং তাদের কোনো কর্মচারীকে নিয়োগ করতে পারবে না।

    3. রাজ্যের রাজধানীতে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট (প্রতিনিধি) স্থায়ীভাবে অবস্থান করবেন।

    4. ব্রিটিশদের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ বা সন্ধি করা যাবে না।

    5. ব্রিটিশরা রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রায়শই তা ভঙ্গ করত।

* গ্রহণকারী রাজ্যসমূহ (ক্রম অনুযায়ী):

    * হায়দ্রাবাদের নিজাম (১৭৯৮ খ্রি.) – প্রথম গ্রহণকারী।

    * মহীশূর (১৭৯৯ খ্রি.)

    * তঞ্জোর (১৭৯৯ খ্রি.)

    * অযোধ্যা (১৮০১ খ্রি.)

    * পেশোয়া (বেসিনের চুক্তি, ১৮০২ খ্রি.)

    * ভেরাডের ভোঁসলে (১৮০৩ খ্রি.)

    * সিন্ধিয়া (১৮০৪ খ্রি.)

    * যোধপুর, জয়পুর, মাচেরি, বুন্দি, ভরতপুর (১৮১৮ খ্রি. নাগাদ)

* তাৎপর্য: এই নীতির মাধ্যমে ব্রিটিশরা অল্প খরচায় তাদের সাম্রাজ্য দ্রুত বিস্তার করতে সক্ষম হয়। দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতা খর্ব হয় এবং তারা ক্রমশ ব্রিটিশদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে ভারতীয় রাজাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।


### ৪. স্বত্ববিলোপ নীতি (Doctrine of Lapse)

এটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি কর্তৃক (১৮৪৮-১৮৫৬ খ্রি.) প্রবর্তিত একটি আগ্রাসী সংযোজন নীতি।


* প্রবর্তক: লর্ড ডালহৌসি (১৮৪৮-১৮৫৬ খ্রি.)।

* নীতি: যদি কোনো দেশীয় রাজ্যের শাসক অপুত্রক অবস্থায় মারা যান এবং তাঁর কোনো বৈধ দত্তক পুত্র না থাকে বা ব্রিটিশরা দত্তক পুত্রের স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে সেই রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। ডালহৌসি দত্তক গ্রহণের অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিলেন।

* দখলকৃত রাজ্যসমূহ (কালানুক্রমিক):

    * সাতারা (Satara) - ১৮৪৮ খ্রি. (প্রথম রাজ্য)

    * সম্বলপুর (Sambalpur) - ১৮৪৯ খ্রি.

    * জৈতপুর (Jaitpur) - ১৮৪৯ খ্রি.

    * ভাগত (Bhagat) - ১৮৫০ খ্রি.

    * উদয়পুর (Udaipur) - ১৮৫২ খ্রি. (যদিও পরে এটি স্থানীয়দের অসন্তোষের কারণে ফিরিয়ে দেওয়া হয়)।

    * ঝাঁসি (Jhansi) - ১৮৫৪ খ্রি. (রানি লক্ষ্মীবাঈ এর রাজ্য)

    * নাগপুর (Nagpur) - ১৮৫৩ খ্রি.

    * উল্লেখ্য: অযোধ্যা (Awadh) ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে কুনীতি বা অরাজকতার (misgovernance) অভিযোগে দখল করা হয়, স্বত্ববিলোপ নীতির মাধ্যমে নয়। তবে অনেক সময় এটিও ডালহৌসির সাম্রাজ্যবাদী নীতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।


* তাৎপর্য: এই নীতি দেশীয় রাজাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে, কারণ এটি তাদের বংশানুক্রমিক অধিকারকে অস্বীকার করে। ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ এর মতো অনেক শাসকের অসন্তোষ ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। এটি ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য প্রসারে প্রত্যক্ষভাবে সহায়ক হয়।


### ৫. পাঞ্জাব দখল (Annexation of the Punjab)

পাঞ্জাব ছিল শিখদের এক শক্তিশালী স্বাধীন রাজ্য, যা মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তিনি ছিলেন শেষ শক্তিশালী ভারতীয় শাসক যিনি ব্রিটিশদের সরাসরি প্রভাব থেকে নিজের রাজ্যকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন।


* মহারাজা রণজিৎ সিং (১৭৮০-১৮৩৯ খ্রি.):

    * 'শের-ই-পাঞ্জাব' বা 'পাঞ্জাবের সিংহ' নামে পরিচিত।

    * ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশদের সঙ্গে অমৃতসরের চুক্তি (Treaty of Amritsar) স্বাক্ষর করেন, যার ফলে সুতলজ নদী উভয়ের সীমানা হিসেবে নির্ধারিত হয়।

    * একটি শক্তিশালী ও আধুনিক শিখ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন।

    * তার জীবদ্দশায় ব্রিটিশরা পাঞ্জাবে প্রবেশ করতে পারেনি।


* ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধসমূহ: রণজিৎ সিংয়ের মৃত্যুর (১৮৩৯ খ্রি.) পর শিখ সাম্রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যা ব্রিটিশদের পাঞ্জাব দখলের পথ প্রশস্ত করে।


    * প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ (১৮৪৫-১৮৪৬ খ্রি.):

        * কারণ: পাঞ্জাবের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, শিখ সেনাবাহিনীর বাড়বাড়ন্ত, ব্রিটিশদের আগ্রাসী নীতি।

        * ফলাফল: শিখরা পরাজিত হয়। লাহোর চুক্তি (Treaty of Lahore, ১৮৪৬) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে শিখদের কিছু অঞ্চল ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়, শিখ সেনাবাহিনী হ্রাস করা হয়, এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১.৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়। পরে ভায়রোয়াল চুক্তি (Treaty of Bhairowal, ১৮৪৬) স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট পাঞ্জাবে নিযুক্ত হন এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সেখানে স্থায়ীভাবে মোতায়েন হয়।

    * দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ (১৮৪৮-১৮৪৯ খ্রি.):

        * কারণ: মুলতানের শিখ গভর্নর মূলরাজ-এর বিদ্রোহ, শিখদের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব ও স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা।

        * ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল: লর্ড ডালহৌসি।

        * গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ: রামনগর, চিলিয়ানওয়ালা ও গুজরাটের যুদ্ধে (১৮৪৯ খ্রি.) শিখরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়।

        * ফলাফল: ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড ডালহৌসি পাঞ্জাবকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। শিখ সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হয়। মহারাজা দুলীপ সিংকে পেনশন দিয়ে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। বিখ্যাত কোহিনূর হীরা ব্রিটিশদের হস্তগত হয়।


* তাৎপর্য: পাঞ্জাব দখলের পর ব্রিটিশরা ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত নিজেদের আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করে। এর মাধ্যমে ভারতের প্রায় সমস্ত প্রধান দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শাসনাধীন হয় এবং ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমানা চূড়ান্তভাবে প্রসারিত হয়।


উপসংহার: সামরিক বিজয়, কূটনীতি এবং আগ্রাসী নীতি (যেমন অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীতি) সম্মিলিতভাবে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারতে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে এবং একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল। এই প্রক্রিয়াগুলি ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রকে চিরতরে পরিবর্তন করে দেয় এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ভিত্তি সুদৃঢ় করে।