Dog 🐶 2048 Brainstorming Game চরৈবেতি - বাংলা ব্লগ Bangla Age Calculator

মুঘল-আফগান দ্বন্দ্ব এবং শের শাহ সুরি (Mughal-Afghan contest and Sher Shah Suri)

ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করলেও আফগান শক্তি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়নি। বাবরের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হুমায়ুন এক দুর্বল সাম্রাজ্য ও শক্তিশালী আফগান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, যার ফলস্বরূপ ১৫ বছরের জন্য মুঘল শাসনের অবসান ঘটে এবং শের শাহ সুরির নেতৃত্বে এক শক্তিশালী আফগান সাম্রাজ্যের উত্থান হয়। এই সময়কালটিই মুঘল-আফগান দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।


### ১. আফগান শক্তির পুনরুত্থান ও শের শাহের আগমন

* হুমায়ুনের প্রাথমিক দুর্বলতা: বাবর আফগানদের বিরুদ্ধে কিছু বিজয় অর্জন করলেও (যেমন ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে ঘরঘরার যুদ্ধ), তাদের শক্তি সম্পূর্ণভাবে দমন করতে পারেননি। হুমায়ুন তাঁর পিতার কাছ থেকে যে সাম্রাজ্য পেয়েছিলেন, তা ছিল দুর্বল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। গুজরাটের শাসক বাহাদুর শাহ এবং পূর্বাঞ্চলে আফগান শক্তি হুমায়ুনের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

* শের শাহের উত্থান:

    * প্রারম্ভিক জীবন: শের শাহের আসল নাম ছিল ফরিদ খান। তাঁর জন্ম আনুমানিক ১৪৭২ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে। তাঁর পিতা হাসান খান সুরি ছিলেন বিহারের সাসারামের জায়গিরদার।

    * ‘শের খান’ উপাধি: ফরিদ খান বিহারের শাসক বাহার খান লোহানীর অধীনে কাজ করতেন। একটি বাঘ (শের) হত্যা করার কারণে বাহার খান তাঁকে ‘শের খান’ উপাধি দেন।

    * ক্ষমতা সংহতকরণ: ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে বাহার খানের মৃত্যুর পর শের খান স্বাধীনভাবে বিহারের শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় আফগান সর্দারদের একত্রিত করে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকেন। ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি লোহানি আফগানদের পরাজিত করে বিহারের সর্বময় কর্তা হন।


### ২. মুঘল-আফগান সংঘাতের চূড়ান্ত পর্যায়

* চুনার দুর্গ অবরোধ (১৫৩২ খ্রিস্টাব্দ): হুমায়ুন শের খানের ক্রমবর্ধমান শক্তি দেখে চুনার দুর্গ অবরোধ করেন। যদিও তিনি দুর্গ দখল করতে পারেননি, তবে শের খান হুমায়ুনের বশ্যতা স্বীকার করে তাঁর পুত্র কুতুব খানকে মুঘল দরবারে পাঠান। এটি ছিল শের খানের কূটনৈতিক কৌশল।

* চৌসার যুদ্ধ (১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ):

    * হুমায়ুন যখন গুজরাট ও বাংলার বিরুদ্ধে অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন, তখন শের খান নিজের শক্তি আরও বৃদ্ধি করেন। তিনি বাংলাকে সম্পূর্ণভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেন।

    * ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জুন, চৌসায় (বক্সারের কাছে) হুমায়ুন ও শের খানের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়।

    * ফলাফল: এই যুদ্ধে শের খান চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেন এবং হুমায়ুন পরাজিত হয়ে কোনোমতে প্রাণরক্ষা করেন। এই বিজয়ের পর শের খান ‘শের শাহ’ উপাধি ধারণ করেন এবং নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন ও খুতবা পাঠ করান, যা তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতীক ছিল।

* কনৌজের যুদ্ধ / বিলগ্রামের যুদ্ধ (১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ):

    * চৌসার পরাজয়ের পর হুমায়ুন নিজের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের শেষ চেষ্টা করেন। তিনি নিজের ভাইদের সমর্থন নিয়ে কনৌজের কাছে বিলগ্রাম নামক স্থানে শের শাহের মুখোমুখি হন।

    * ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

    * ফলাফল: এটি ছিল মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত পর্যায়। এই যুদ্ধেও শের শাহের বাহিনী হুমায়ুনকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে। হুমায়ুন ভারত থেকে নির্বাসিত হয়ে পারস্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী ১৫ বছর তিনি ভারতে প্রবেশ করতে পারেননি।

    * এই বিজয়ের মাধ্যমে শের শাহ ভারতে সুর বংশের প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ওপর ১৫ বছরের জন্য যবনিকাপাত ঘটে।


### ৩. শের শাহের সাম্রাজ্য ও শাসনব্যবস্থা

শের শাহ সুরি মাত্র ৫ বছর (১৫৪০-১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব করলেও তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা, জনকল্যাণমূলক কাজ এবং সুদূরপ্রসারী সংস্কারগুলি তাঁকে ভারতীয় ইতিহাসে এক কিংবদন্তী শাসকে পরিণত করেছে। ঐতিহাসিকদের অনেকেই তাঁকে আকবরের অগ্রদূত বা পথপ্রদর্শক (Forerunner of Akbar) বলে অভিহিত করেন।


#### ক. কেন্দ্রীয় প্রশাসন:

শের শাহ ছিলেন এক স্বৈরাচারী শাসক, তবে তিনি প্রজা কল্যাণে বিশ্বাসী ছিলেন।

* রাজা: তিনিই ছিলেন প্রশাসনের সর্বময় কর্তা, সকল ক্ষমতা তাঁর হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল।

* মন্ত্রী পরিষদ: তাঁকে সহায়তা করার জন্য কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন:

    * দিওয়ান-ই-উজিরাত (Diwan-i-Wizarat): রাজস্ব ও অর্থ বিভাগ (প্রধান – উজির)।

    * দিওয়ান-ই-আরিজ (Diwan-i-Ariz): সামরিক বিভাগ (প্রধান – আরিজ-ই-মামালিক)।

    * দিওয়ান-ই-ইনশা (Diwan-i-Insha): রাজকীয় চিঠিপত্র ও ফরমান বিভাগ।

    * দিওয়ান-ই-রিসালাত (Diwan-i-Risalat): পররাষ্ট্র ও ধর্মীয় বিষয় বিভাগ।

    * দিওয়ান-ই-কাজাই (Diwan-i-Qazai): বিচার বিভাগ (প্রধান – প্রধান কাজি)।


#### খ. প্রাদেশিক ও স্থানীয় প্রশাসন:

* প্রদেশ: সাম্রাজ্যকে ছোট ছোট প্রদেশে (প্রশাসনিক সুবিধার জন্য) ভাগ করা হয়, যদিও এর সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয়।

* সরকার (Sarkar): প্রদেশগুলি 'সরকার' নামক জেলায় বিভক্ত ছিল। প্রতিটি সরকারের প্রধান ছিলেন শিকদার-ই-শিকদারান (Shikdar-i-Shikdaran) (আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক) এবং মুন্সিফ-ই-মুন্সিফান (Munsif-i-Munsifan) (বিচার ও রাজস্ব)।

* পরগনা (Pargana): প্রতিটি সরকার আবার 'পরগনা' নামক উপ-জেলায় বিভক্ত ছিল। প্রতিটি পরগনার প্রধান ছিলেন শিকদার (Shikdar) (আইনশৃঙ্খলা) এবং আমিন (Amin) (রাজস্ব)।

* গ্রাম (Gram): প্রশাসনের সর্বনিম্ন একক ছিল গ্রাম। গ্রামের শাসনভার মোকাদ্দম (Muqaddam), পাটোয়ারি (Patwari) ও চৌকিদার (Chowkidar)দের হাতে ছিল। শের শাহ গ্রাম পঞ্চায়েতকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছিলেন।


#### গ. ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা: (শের শাহের প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক)

* ভূমি জরিপ: শের শাহ সমস্ত কৃষিজমির বিস্তারিত জরিপ করিয়েছিলেন।

* জমির শ্রেণীবিভাগ: উর্বরতার ভিত্তিতে জমিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় – ভালো, মাঝারি ও খারাপ।

* রাজস্ব নির্ধারণ: গড় উৎপাদনের ভিত্তিতে রাজস্ব ধার্য করা হয় এবং উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ (১/৩ অংশ) রাজস্ব হিসেবে আদায় করা হতো। নগদ বা শস্য – উভয় প্রকারেই রাজস্ব দেওয়া যেত।

* রায় (Ray): প্রতিটি ফসলের গড় উৎপাদন তালিকা বা 'রায়' তৈরি করা হয়।

* পট্টা ও কবুলিয়ত: কৃষকদের পট্টা (Patta) বা জমির দলিল দেওয়া হতো, যেখানে তাদের জমির পরিমাণ ও রাজস্বের পরিমাণ উল্লেখ থাকত। এর বিনিময়ে কৃষকরা কবুলিয়ত (Kabuliyat) বা স্বীকৃতিপত্র দিত, যেখানে তারা রাজস্ব প্রদানের অঙ্গীকার করত। এই ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত যুগান্তকারী।

* জাবতি (Zabti) প্রথা: রাজস্ব নির্ধারণের এই পদ্ধতি ‘জাবতি’ প্রথা নামে পরিচিত।


#### ঘ. সামরিক ব্যবস্থা:

* সরাসরি নিয়োগ: শের শাহ সেনাপতিদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে সরাসরি সৈন্যদের নিয়োগ করতেন।

* ঘোড়ার দাগ ও সৈন্যদের হুলিয়া: সেনাবাহিনীর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে আলাউদ্দিন খলজির 'দাগ' (ঘোড়ার গায়ে চিহ্ন) ও 'হুলিয়া' (সৈন্যদের বিবরণী) প্রথার পুনঃপ্রবর্তন করেন।

* সুসংগঠিত সেনাবাহিনী: তাঁর সেনাবাহিনীতে ২ লক্ষ ৫০ হাজার পদাতিক, ৫০ হাজার অশ্বারোহী এবং বিরাট সংখ্যক গোলন্দাজ বাহিনী ছিল।


#### ঙ. বিচার ব্যবস্থা:

* শের শাহ ন্যায়বিচারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বলতেন, "ন্যায়বিচারই শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উপাসনা।"

* গ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় স্তর পর্যন্ত বিচারালয়ের ব্যবস্থা ছিল। প্রধান কাজি ও মুন্সিফ-ই-মুন্সিফানরা বিচার করতেন। তাঁর দণ্ড নিরপেক্ষ ছিল।


#### চ. অর্থনৈতিক সংস্কার:

* মুদ্রা ব্যবস্থা: তিনি পুরনো, ভেজাল মিশ্রিত মুদ্রা বাতিল করে সুষম ওজন ও বিশুদ্ধতার নতুন মুদ্রা চালু করেন।

    * রুপিয়া (Rupia): ১৭৮ গ্রেন ওজনের রূপার মুদ্রা। এটিই আধুনিক ভারতীয় মুদ্রার পূর্বসূরি।

    * দাম (Dam): তামার মুদ্রা। ১ রুপিয়া = ৪০ দাম।

* যোগাযোগ ব্যবস্থা:

    * সড়ক-ই-আজম (Sarak-i-Azam): তিনি গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড (Grand Trunk Road) নির্মাণ করেন, যা সোনারগাঁও (বাংলাদেশ) থেকে সিন্ধু নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক রাস্তা।

    * অন্যান্য সড়ক: আগ্রা থেকে বুরহানপুর, যোধপুর থেকে চিতোর, লাহোর থেকে মুলতান পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করেন।

* সরাইখানা (Saraikhana): প্রতিটি ২ কিলোমিটার অন্তর যাত্রীদের জন্য সরাইখানা তৈরি করেন। এই সরাইখানাগুলি কেবল বিশ্রামাগারই ছিল না, ডাকঘর হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।

* বাণিজ্য ও শুল্ক: তিনি বাণিজ্যিক শুল্ক সহজ ও সুনির্দিষ্ট করেন, যা বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক হয়।


#### ছ. গুপ্তচর ব্যবস্থা:

* একটি সুসংগঠিত গুপ্তচর ব্যবস্থা ছিল, যা শের শাহকে সাম্রাজ্যের প্রতিটি কোণায় ঘটে যাওয়া ঘটনার খবর দিত এবং তাঁর শাসনকে আরও শক্তিশালী করে তুলত।


#### জ. জনকল্যাণমূলক কাজ:

* সড়ক ও সরাইখানা নির্মাণ ছাড়াও তিনি দাতব্য প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল নির্মাণ, দরিদ্রদের সাহায্য এবং শিক্ষা প্রসারেও উদ্যোগী হয়েছিলেন।


### ৪. শের শাহের কৃতিত্ব ও অবদান

* মহান প্রশাসক: মাত্র ৫ বছরের শাসনকালে শের শাহ যে প্রশাসনিক দক্ষতা দেখিয়েছেন, তা অভূতপূর্ব। তাঁর ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা, মুদ্রা সংস্কার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ভারতীয় ইতিহাসে মাইলফলক।

* আকবরের অগ্রদূত: ঐতিহাসিক ভি. এ. স্মিথসহ অনেকেই তাঁকে আকবরের প্রশাসনিক সংস্কারের পথপ্রদর্শক বলে মনে করেন। আকবর শের শাহের ভূমি রাজস্ব ও সামরিক ব্যবস্থার বহু দিক অনুসরণ করেছিলেন।

* জাতীয়তাবাদী শাসক: যদিও তিনি আফগান ছিলেন, তিনি ধর্মীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সকলের জন্য ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেননি।

* স্থাপত্য: বিহারের সাসারামে তাঁর নিজস্ব সমাধি মন্দির ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের এক সুন্দর উদাহরণ।


### ৫. সুর সাম্রাজ্যের পতন ও মুঘলদের প্রত্যাবর্তন

* শের শাহের মৃত্যু: ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে কালিঞ্জর দুর্গ অবরোধকালে একটি বারুদের বিস্ফোরণে শের শাহের আকস্মিক মৃত্যু হয়। এটি সুর সাম্রাজ্যের জন্য এক বিরাট ধাক্কা ছিল।

* দুর্বল উত্তরাধিকারী: শের শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ইসলাম শাহ সুরি সিংহাসনে বসেন। তিনিও কিছুটা যোগ্য শাসক ছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সুর বংশে একের পর এক দুর্বল শাসকরা আসেন, যারা সাম্রাজ্য পরিচালনা এবং আফগান সর্দারদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন।

* ক্ষমতার দ্বন্দ্ব: সুর বংশের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আফগান সর্দারদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দেয়।

* হুমায়ুনের প্রত্যাবর্তন: এই সুযোগে পারস্যের শাহের সহায়তায় হুমায়ুন শক্তি সঞ্চয় করে ভারতে ফিরে আসেন।

    * মচ্ছিওয়াড়ার যুদ্ধ (১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ): হুমায়ুন আফগানদের পরাজিত করেন।

    * সিরহিন্দের যুদ্ধ (১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ): ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জুন সিরহিন্দের যুদ্ধে হুমায়ুন সুর বংশের শেষ শক্তিশালী শাসক সিকন্দর শাহ সুরিকে পরাজিত করেন এবং ১৫ বছরের নির্বাসন শেষে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।


### ৬. মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের তাৎপর্য

* পরিবর্তনের সময়কাল: এই দ্বন্দ্ব ভারতীয় ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করে। এটি কেবল শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন ছিল না, বরং প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

* শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা: হুমায়ুনের পরাজয় মুঘলদের (বিশেষত আকবরকে) প্রশাসনিক দুর্বলতা সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছিল। শের শাহের সুসংগঠিত প্রশাসনিক মডেল পরবর্তী মুঘল সম্রাটদের, বিশেষ করে আকবরের জন্য এক শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

* অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কন্টিনিউটি: শের শাহের প্রবর্তিত বহু সংস্কার পরবর্তীকালে মুঘলদের দ্বারা গৃহীত হওয়ায় ভারতীয় প্রশাসনিক ইতিহাসে এক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা, মুদ্রা ও সড়ক ব্যবস্থা।

* শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনের প্রয়োজনীয়তা: এই দ্বন্দ্ব দেখিয়েছিল যে কেবল সামরিক শক্তিই যথেষ্ট নয়, একটি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত কেন্দ্রীয় প্রশাসনই সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের জন্য অপরিহার্য।


### গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা মনে রাখতে হবে (WBSSC পরীক্ষার জন্য)

* শের শাহের আসল নাম: ফরিদ খান।

* ‘শের খান’ উপাধি: বাঘ শিকারের জন্য (বিহারের শাসক বাহার খান লোহানী কর্তৃক প্রদত্ত)।

* চৌসার যুদ্ধ (১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ): হুমায়ুন পরাজিত, শের খান ‘শের শাহ’ উপাধি ধারণ করেন।

* কনৌজের যুদ্ধ / বিলগ্রামের যুদ্ধ (১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ): হুমায়ুন চূড়ান্তভাবে পরাজিত ও নির্বাসিত। সুর বংশের প্রতিষ্ঠা।

* শের শাহের রাজত্বকাল: ১৫৪০-১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দ।

* ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা: পট্টা (জমির দলিল), কবুলিয়ত (স্বীকৃতিপত্র), জাবতি প্রথা, ১/৩ অংশ রাজস্ব।

* মুদ্রা ব্যবস্থা: রুপিয়া (রৌপ্য মুদ্রা – ১৭৮ গ্রেন), দাম (তাম্র মুদ্রা)।

* সড়ক: সড়ক-ই-আজম (গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড)।

* সরাইখানা: যাত্রীদের বিশ্রাম ও ডাক ব্যবস্থার কেন্দ্র।

* সামরিক সংস্কার: দাগ ও হুলিয়া প্রথার পুনঃপ্রবর্তন।

* মৃত্যু: ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে কালিঞ্জর দুর্গ অবরোধকালে।

* সমাধি: বিহারের সাসারামে অবস্থিত।

* আকবরের অগ্রদূত/পথপ্রদর্শক: শের শাহ।

* সুর সাম্রাজ্যের পতন ও মুঘলদের প্রত্যাবর্তন: ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে সিরহিন্দের যুদ্ধ।

Tags:
Next Post Previous Post