১. পাল বংশ (আনুমানিক ৭৫০ - ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দ)
১.১. সূচনা ও প্রতিষ্ঠা:
* মাৎস্যন্যায়: সপ্তম শতকের মাঝামাঝি থেকে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় এক শতাব্দী ধরে বাংলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অরাজকতা বিরাজ করছিল, যা 'মাৎস্যন্যায়' নামে পরিচিত। এই সময়ে কোনো শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন না থাকায় ছোট ছোট আঞ্চলিক শক্তিগুলি নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত ছিল।
* প্রতিষ্ঠা: এই অরাজকতা দূর করতে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি (আনুমানিক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে) বাংলার প্রকৃতিপুঞ্জ (সাধারণ জনগণ বা সামন্ত গোষ্ঠী) গোপাল নামক একজন যোগ্য নেতাকে রাজা নির্বাচন করেন। এভাবেই পাল বংশের সূচনা হয়, যা বাংলার ইতিহাসে প্রথম দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী রাজবংশ হিসেবে পরিচিত।
১.২. পাল বংশের প্রধান শাসকগণ ও তাঁদের অবদান:
* গোপাল (আনুমানিক ৭৫০-৭৭০ খ্রিস্টাব্দ):
* প্রতিষ্ঠাতা: পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা।
* নির্বাচিত রাজা: 'মাৎস্যন্যায়'-এর অবসান ঘটিয়ে প্রকৃতিপুঞ্জ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে বাংলার সিংহাসনে বসেন।
* ধর্ম: বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী ছিলেন। তিনি ওদন্তপুরী বিহার প্রতিষ্ঠা করেন বলে মনে করা হয়।
* ধর্মপাল (আনুমানিক ৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দ):
* পাল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা: গোপালের পুত্র ধর্মপাল পাল সাম্রাজ্যকে এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।
* ত্রিশক্তি সংগ্রাম: কান্যকুব্জ (কনৌজ) দখলের জন্য উত্তর ভারতের রাষ্ট্রকূট (দক্ষিণ), গুর্জর-প্রতিহার (পশ্চিম) এবং পালদের (পূর্ব) মধ্যে যে দীর্ঘস্থায়ী 'ত্রিশক্তি সংগ্রাম' চলেছিল, ধর্মপাল তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কিছু সময়ের জন্য কান্যকুব্জ দখল করেন এবং নিজের অনুগত চক্রায়ুধকে সেখানে স্থাপন করেন। তবে রাষ্ট্রকূট রাজা ধ্রুব ও প্রতিহার রাজা বৎসরাজের দ্বারা পরাজিত হন।
* উপাধি: তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারের কারণে তাঁকে 'উত্তরাপথস্বামী' উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
* ধর্ম ও সংস্কৃতি: তিনি বৌদ্ধধর্মের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
* বিক্রমশীলা মহাবিহার: তিনি ভাগলপুরের কাছে বিখ্যাত বিক্রমশীলা মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন, যা পাল আমলে বৌদ্ধধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়।
* সোমপুর মহাবিহার: নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে (বর্তমানে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) সোমপুর মহাবিহার (পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার) প্রতিষ্ঠা করেন।
* নালন্দা মহাবিহারের উন্নতি সাধন করেন।
* দেবপাল (আনুমানিক ৮১০-৮৫০ খ্রিস্টাব্দ):
* পাল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক: ধর্মপালের পুত্র ও উত্তরসূরি দেবপাল পাল সাম্রাজ্যের গৌরব শিখরে পৌঁছে দেন।
* সাম্রাজ্য বিস্তার: তিনি প্রাগজ্যোতিষপুর (আসাম), উৎকল (উড়িষ্যা), এবং কম্বোজ (তিব্বত/নেপাল)-এর কিছু অংশ জয় করেন।
* বিদেশী সম্পর্ক: সুমাত্রা ও জাভার শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজা বালাপুত্রদেবের অনুরোধে নালন্দায় একটি বৌদ্ধবিহার নির্মাণের অনুমতি দেন এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকটি গ্রামের রাজস্ব দান করেন।
* শিল্পকলা ও শিক্ষা: তাঁর সময়েই পাল শিল্পকলা (বিশেষ করে ব্রোঞ্জ ও পাথরের মূর্তি) চরম উৎকর্ষ লাভ করে। নালন্দা মহাবিহারের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
এ বিষয়ে ২০১ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
* প্রথম মহীপাল (আনুমানিক ৯৮৮-১০৩৮ খ্রিস্টাব্দ):
* পাল বংশের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা: প্রায় এক শতাব্দী ধরে পাল বংশের দুর্বল শাসনের পর প্রথম মহীপাল পাল সাম্রাজ্যের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করেন, তাই তাঁকে 'দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা' বলা হয়।
* সামরিক বিজয়: তিনি উত্তরবঙ্গ ও মধ্যবঙ্গ পুনরুদ্ধার করেন এবং তাঁর সাম্রাজ্য বারাণসী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
* চোল আক্রমণ: তাঁর রাজত্বকালে চোল রাজা রাজেন্দ্র চোল বাংলা আক্রমণ করেন, যদিও এই আক্রমণের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী ছিল না।
* ধর্ম ও সংস্কৃতি: বৌদ্ধধর্মের পুনরুত্থান এবং বেশ কিছু মন্দির ও বিহার সংস্কার করেন।
* রামপাল (আনুমানিক ১০৭৭-১১২০ খ্রিস্টাব্দ):
* পাল বংশের শেষ শক্তিশালী শাসক: পাল বংশের পতনের ঠিক আগে রামপাল শেষ চেষ্টা করেন পালদের শক্তি পুনরুদ্ধারের।
* কৈবর্ত বিদ্রোহ দমন: তাঁর রাজত্বকালে দিব্য, রুদোক ও ভীম-এর নেতৃত্বে বরেন্দ্রভূমিতে (উত্তরবঙ্গ) একটি শক্তিশালী কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল। ভীমের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ তীব্র আকার ধারণ করে। রামপাল তাঁর সামন্তদের সাহায্যে এই বিদ্রোহ দমন করে বরেন্দ্রভূমি পুনরুদ্ধার করেন।
* রামচরিতম্: সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত 'রামচরিতম্' কাব্য রামপালের কৈবর্ত বিদ্রোহ দমনের কাহিনী, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সেই সময়ের সামাজিক অবস্থার একটি মূল্যবান উৎস। এই কাব্যটি দ্বি-অর্থবোধক – এক অর্থে রামায়নের রামের কাহিনী এবং অন্য অর্থে রাজা রামপালের কাহিনী।
* রামাবতী নগরী: তিনি বাংলার বরেন্দ্রভূমিতে 'রামাবতী' নামে একটি নতুন রাজধানী স্থাপন করেন।
১.৩. পাল আমলের প্রশাসন:
* রাজতন্ত্র: রাজারা ছিলেন পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ ও পরমেশ্বর উপাধিধারী। রাজপুত্ররা 'যুবরাজ' বা 'কুমার' উপাধি ধারণ করতেন।
* কেন্দ্রীয় শাসন:
* মন্ত্রীপরিষদ: রাজা একজন মন্ত্রীপরিষদের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
* গুরুত্বপূর্ণ পদ: মহাসন্ধিবিগ্রহিক (যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ক মন্ত্রী), মহাদণ্ডনায়ক (প্রধান সেনাপতি), কোষাধ্যক্ষ, মহাপ্রতিহার (প্রাসাদ রক্ষক), মহাক্ষপটলিক (ভূমি রেকর্ড ও রাজস্ব)।
* প্রাদেশিক শাসন: সাম্রাজ্যকে 'ভূক্তি' (প্রদেশ), 'বিষয়' (জেলা), 'মণ্ডল' ও 'গ্রাম'-এ ভাগ করা হয়েছিল।
* ভূমি রাজস্ব: সাধারণত উৎপাদিত ফসলের এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-ষষ্ঠাংশ পর্যন্ত ভূমি রাজস্ব আদায় করা হত।
* সামরিক শক্তি: পালদের একটি শক্তিশালী পদাতিক, অশ্বারোহী, হস্তি এবং নৌবাহিনী ছিল।
১.৪. পাল আমলের সমাজ ও অর্থনীতি:
* সমাজ:
* চতুর্বর্ণ প্রথা: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারটি বর্ণ বিদ্যমান ছিল, তবে পেশাগত গোষ্ঠীর উত্থান হয়।
* জাতিপ্রথা: জাতিভেদ প্রথার বিস্তার ঘটে।
* নারীর অবস্থান: নারীদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল, পর্দাপ্রথা ছিল না, সতীদাহ প্রথা বিরল ছিল।
* অর্থনীতি:
* কৃষি: অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক ছিল। ধান, পাট, ইক্ষু, সরিষা, শাকসবজি উৎপন্ন হত।
* বাণিজ্য: অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় প্রকার বাণিজ্যই প্রচলিত ছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, তিব্বত, নেপাল ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাংলার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।
* নৌবাণিজ্য: তাম্রলিপ্তি ও সপ্তগ্রাম ছিল প্রধান বন্দর।
* শিল্প ও কারুশিল্প: বস্ত্রবয়ন, ধাতুশিল্প (বিশেষত কাঁসা ও ব্রোঞ্জের কাজ), মৃৎশিল্প, অলংকার নির্মাণ উন্নত ছিল।
* মুদ্রা: পাল আমলে সোনার মুদ্রার প্রচলন কমে যাওয়ায় কড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, তবে কিছু রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রার প্রচলনও ছিল।
১.৫. পাল আমলের ধর্ম, সংস্কৃতি ও শিল্পকলা:
* ধর্ম:
* বৌদ্ধধর্ম: পাল রাজারা মূলত বৌদ্ধধর্মের (মহাযান ও বজ্রযান শাখা) পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাদের সময়ে বজ্রযানী তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
* হিন্দুধর্ম: হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাখা (শৈব, বৈষ্ণব, শাক্ত) বৌদ্ধধর্মের পাশাপাশি সহাবস্থান করছিল এবং তাদেরও যথেষ্ট প্রভাব ছিল। পাল রাজাদের অনেকে পরমেশ্বর, পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ উপাধি ধারণ করলেও ধর্মপাল 'পরম সৌগত' (বৌদ্ধ ধর্মানুরাগী) উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।
* শিক্ষা ও সাহিত্য:
* শিক্ষাকেন্দ্র: নালন্দা, বিক্রমশীলা, ওদন্তপুরী, সোমপুর মহাবিহারগুলি ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষা কেন্দ্র।
* বিখ্যাত পণ্ডিত: দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ (বিক্রমশীলা মহাবিহারের প্রধান আচার্য, তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন), শান্তরক্ষিত, বিরোচন, অদ্বয়বজ্র, অভয়াকর গুপ্ত প্রমুখ।
* সাহিত্য:
* সন্ধ্যাকর নন্দীর 'রামচরিতম্' (রামপাল সম্পর্কে) – একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কাব্য।
* চিকিৎসাবিজ্ঞানে চক্রপাণি দত্তের 'চক্রদত্তসংগ্রহ'।
* বৌদ্ধ সহজিয়া গান 'চর্যাপদ' পাল আমলের সৃষ্টি।
* শিল্পকলা (পাল শিল্পকলা):
* শৈলী: পাল শিল্পকলা ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পকলার এক স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ধারা।
* শিল্পী: ধীমান ও তাঁর পুত্র বীতপাল ছিলেন পাল যুগের প্রধান শিল্পী, যাদের নাম তিব্বতী বিবরণীতে পাওয়া যায়।
* ধাতুমূর্তি: ব্রোঞ্জের তৈরি বুদ্ধ, অবলোকিতেশ্বর, তারা, বিষ্ণু, সূর্য ইত্যাদির মূর্তি অত্যন্ত উন্নত মানের ছিল। এই মূর্তিগুলি ভাস্কর্য ও ছাঁচনির্মাণে পাল শিল্পীদের দক্ষতার পরিচায়ক।
* ভাস্কর্য: পাথর ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য স্থাপত্যের অলংকরণে ব্যবহৃত হত।
* চিত্রকলা: মূলত পুঁথিচিত্র (পান্ডুলিপির চিত্র) এবং কিছু ফ্রেস্কো বা দেয়াল চিত্র (যেমন, সোমপুর মহাবিহার) পাওয়া যায়। 'অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা' পুঁথির চিত্রগুলি উল্লেখযোগ্য।
* স্থাপত্য: স্তূপ ও বিহার স্থাপত্যের প্রধান উদাহরণ। সোমপুর মহাবিহারের স্থাপত্য এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
১.৬. পাল বংশের পতন:
* দুর্বল উত্তরাধিকারী, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, সামন্ত রাজাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির সাথে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ এবং বহিরাগত আক্রমণ (যেমন চোল ও কলচুরিদের আক্রমণ) পাল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হয়।
* কৈবর্ত বিদ্রোহ পালদের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
* একাদশ শতকের শেষদিকে কর্ণাটক থেকে আসা সেন বংশ বাংলায় নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে পালদের স্থান দখল করে নেয়।
### ২. সেন বংশ (আনুমানিক ১০৯৭ - ১২৩০ খ্রিস্টাব্দ)
২.১. সূচনা ও প্রতিষ্ঠা:
* উৎস: সেন বংশের আদি পুরুষরা ছিলেন কর্ণাটকের 'ব্রহ্মক্ষত্রিয়' উপাধিধারী। তারা দক্ষিণ ভারতের চালুক্যদের অধীনে সামন্ত হিসেবে কাজ করতেন এবং পরে বাংলায় এসে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেন।
* প্রতিষ্ঠা: পাল সাম্রাজ্যের পতনের সুযোগে সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা সামন্ত সেন বাংলায় তাদের অবস্থান তৈরি করেন। তাঁর পুত্র হেমন্ত সেন স্বাধীন সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন (আনুমানিক ১০৫০ খ্রিস্টাব্দ)।
২.২. সেন বংশের প্রধান শাসকগণ ও তাঁদের অবদান:
* বিজয় সেন (আনুমানিক ১০৯৭-১১৫৮ খ্রিস্টাব্দ):
* সেন বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ও সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক: হেমন্ত সেনের পুত্র বিজয় সেন ছিলেন সেন বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা এবং এই বংশের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক।
* সাম্রাজ্য বিস্তার: তিনি পালদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে বাংলা ও বিহারের বিশাল অংশ নিজের দখলে আনেন। গৌড়, কলিঙ্গ (উড়িষ্যা), কামরূপ (আসাম) এবং মিথিলার কিছু অংশ জয় করেন।
* উপাধি: 'অরিরাজ-বৃষভ-শঙ্কর' উপাধি গ্রহণ করেন।
* রাজধানী: তিনি বিজয়পুর (পূর্ববঙ্গ) ও বিক্রমপুর (মুন্সিগঞ্জ) নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেন।
* ধর্ম: তিনি শৈব ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং একাধিক শিবমন্দির নির্মাণ করেন।
* তাঁর রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন ঘটে এবং সেন বংশের শক্তিশালী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
* বল্লাল সেন (আনুমানিক ১১৫৮-১১৭৯ খ্রিস্টাব্দ):
* শিক্ষিত ও ধর্মপ্রাণ শাসক: বিজয় সেনের পুত্র বল্লাল সেন ছিলেন একজন বিদ্যোৎসাহী ও ধর্মপ্রাণ শাসক।
* কুলীন প্রথার প্রবর্তন: বাংলার সামাজিক ইতিহাসে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো 'কুলীন প্রথা' প্রবর্তন। সমাজে কুলীন ব্রাহ্মণ, কুলীন কায়স্থ ও কুলীন বৈদ্যদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই প্রথা প্রবর্তন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক শৃঙ্খলা ও বর্ণের বিশুদ্ধতা বজায় রাখা, কিন্তু কালক্রমে এটি জটিলতা ও সমস্যার সৃষ্টি করে।
* সাহিত্যকর্ম: তিনি নিজে একজন সুপণ্ডিত ছিলেন এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন:
* 'দানসাগর': বিভিন্ন দানের তালিকা ও পদ্ধতি নিয়ে রচিত।
* 'অদ্ভুতসাগর': জ্যোতির্বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচিত। এই বইটি তিনি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি, যা তাঁর পুত্র লক্ষণ সেন পরে শেষ করেন।
* লক্ষণ সেন (আনুমানিক ১১৭৯-১২০৬ খ্রিস্টাব্দ):
* সেন বংশের শেষ শক্তিশালী শাসক: বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষণ সেন ছিলেন সেন বংশের শেষ শক্তিশালী রাজা।
* সাম্রাজ্য বিস্তার: তিনি তাঁর পিতা ও পিতামহের অর্জিত সাম্রাজ্য ধরে রাখেন এবং সম্ভবত কিছুটা বিস্তারও করেন। তিনি 'গৌড়েশ্বর' উপাধি ধারণ করেন।
* সাহিত্য ও সংস্কৃতি: লক্ষণ সেন নিজেও একজন বিদ্যোৎসাহী রাজা ছিলেন। তাঁর রাজসভায় পঞ্চরত্ন বা পাঁচজন বিখ্যাত কবি ও পণ্ডিত ছিলেন:
* জয়দেব: 'গীতগোবিন্দম্' কাব্য রচনা করেন, যা বৈষ্ণব ভক্তি সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি।
* ধোয়ী: 'পবনদূত' কাব্য রচনা করেন।
* গোবর্ধন আচার্য: 'আর্যাসপ্তশতী' কাব্য রচনা করেন।
* শরণ: একটি অমুক কাব্য রচনা করেন।
* উমাপতি ধর: 'দেওপাড়া প্রশস্তি' রচনা করেন।
* ন্যায় ও স্মৃতিশাস্ত্রের চর্চা: তাঁর প্রধান অমাত্য হলায়ুধ 'ব্রাহ্মণসর্বস্ব' ও 'মৎস্যসূক্ত' গ্রন্থ রচনা করেন।
* ইসলামী আক্রমণ ও পতন: ১২০২-১২০৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজী অতর্কিতে লক্ষণ সেনের রাজধানী নদীয়া (বা নবদ্বীপ) আক্রমণ করেন। লক্ষণ সেন বৃদ্ধ বয়সে ভীত হয়ে বিক্রমপুরে আশ্রয় নেন। এই আক্রমণের ফলে সেন শাসনের অবসান হয় এবং বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। যদিও তাঁর পুত্র বিশ্বরূপ সেন এবং কেশব সেন কিছুকাল পূর্ববঙ্গে (বিক্রমপুরে) শাসন বজায় রাখেন, কিন্তু স্বাধীন সেন শাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে।
২.৩. সেন আমলের প্রশাসন:
* পালদের অনুকরণ: সেনদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা মূলত পালদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার অনুকরণে গড়ে উঠেছিল।
* উপাধি: রাজারা 'মহারাজাধিরাজ' উপাধি ব্যবহার করতেন।
* প্রধান অমাত্যগণ: রাজার অধীনে বিভিন্ন অমাত্য (মন্ত্রী) ও কর্মচারী ছিলেন, যেমন মহাধর্মাধ্যক্ষ (প্রধান বিচারক), মহাসন্ধিবিগ্রহিক, মহাধক্ষপটলিক ইত্যাদি।
* সামন্ততন্ত্র: সেন আমলে সামন্ততন্ত্রের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
* ভূমি রাজস্ব: উৎপাদিত ফসলের এক-ষষ্ঠাংশ ভূমি রাজস্ব হিসেবে আদায় করা হত।
২.৪. সেন আমলের সমাজ ও অর্থনীতি:
* সমাজ:
* ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য: সেন আমলে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়।
* জাতিভেদ প্রথা: জাতিভেদ প্রথা অত্যন্ত কঠোর আকার ধারণ করে। বল্লাল সেনের কুলীন প্রথা সমাজের স্তরবিন্যাসকে আরও জটিল করে তোলে। কায়স্থদের সামাজিক অবস্থান উঁচুতে ওঠে।
* নারীর অবস্থান: নারীদের অধিকার সীমিত ছিল এবং সতীদাহ প্রথার প্রচলন বাড়তে থাকে।
* অর্থনীতি:
* কৃষি: প্রধানত কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ছিল।
* বাণিজ্য: বৈদেশিক বাণিজ্য পাল আমলের তুলনায় হ্রাস পায়। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যই ছিল প্রধান।
* মুদ্রা: সেন আমলে সোনার মুদ্রার ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কড়ি ও ছোট তামার মুদ্রা ব্যবহৃত হত। এটি অর্থনৈতিক স্থবিরতার একটি ইঙ্গিত দেয়।
২.৫. সেন আমলের ধর্ম, সংস্কৃতি ও শিল্পকলা:
* ধর্ম:
* ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের পুনরুত্থান: সেন রাজারা ছিলেন গোঁড়া হিন্দু (শৈব ও বৈষ্ণব)। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্মের প্রভাব হ্রাস পায় এবং ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাখা (বিশেষ করে শৈব, বৈষ্ণব, শাক্ত) পুনরায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
* স্মৃতি ও পুরাণ চর্চা: স্মৃতিশাস্ত্র, পুরাণ এবং ধর্মীয় আচারের ওপর জোর দেওয়া হয়।
* শিক্ষা ও সাহিত্য:
* সংস্কৃত ভাষা: সেন রাজারা সংস্কৃত ভাষার একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁদের রাজসভা ছিল সংস্কৃতি সাহিত্যের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র।
* বিখ্যাত গ্রন্থ ও রচয়িতা:
* জয়দেবের 'গীতগোবিন্দম্'।
* ধোয়ীর 'পবনদূত'।
* বল্লাল সেনের 'দানসাগর' ও 'অদ্ভুতসাগর'।
* শ্রীধর ভট্টের 'ন্যায়কন্দলী'।
* হলায়ুধের 'ব্রাহ্মণ সর্বস্ব' ও 'মীমাংসা সর্বস্ব'।
* লক্ষ্মণ সেনের সভাসদগণ কর্তৃক রচিত অন্যান্য কাব্য।
* শিল্পকলা:
* পাল শিল্পের অনুকরণ: সেন শিল্পকলা মূলত পাল শিল্পের অনুকরণেই গড়ে উঠেছিল।
* ধাতুমূর্তি: ব্রোঞ্জ ও পাথরের মূর্তি তৈরি হত, তবে পাল শিল্পের মতো ততটা সূক্ষ্ম ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল না। বিষ্ণু, সূর্য ও অন্যান্য হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি বেশি তৈরি হত।
* স্থাপত্য: মূলত ইঁটের মন্দির তৈরি হত। বিখ্যাত 'দিয়োর দেউল' (দিনাজপুর) সেন আমলের স্থাপত্যের একটি নিদর্শন। শিখরযুক্ত মন্দির নির্মাণের প্রবণতা দেখা যায়।
২.৬. সেন বংশের পতন:
* বখতিয়ার খলজীর আক্রমণ: ১২০২-১২০৩ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর নদীয়া আক্রমণ সেন বংশের পতনের চূড়ান্ত কারণ হয়।
* অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা: সেন রাজতন্ত্রের গোঁড়ামি, জনসাধারণের (বিশেষ করে নিম্নবর্গের) উপর সামাজিক চাপ, এবং সামন্তদের ক্ষমতা বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা সৃষ্টি করেছিল।
* জনগণের সমর্থন হ্রাস: কঠোর জাতিভেদ প্রথা ও কুলীন প্রথার কারণে জনসাধারণের একটি বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ ছিল, যা মুসলিম আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধা দেয়।
* সামরিক দুর্বলতা: তুর্কিদের অতর্কিত আক্রমণের মোকাবিলায় সেন সেনাবাহিনী প্রস্তুত ছিল না।
উপসংহার:
পাল ও সেন যুগ বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পালরা যেখানে বৌদ্ধধর্ম, শিল্পকলা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলার খ্যাতি বাড়িয়েছিলেন, সেনরা সেখানে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্ম, সংস্কৃত সাহিত্য ও সামাজিক কাঠামোর পুনর্গঠনে অবদান রাখেন। বখতিয়ার খলজীর আক্রমণের মাধ্যমে এই দুই শক্তিশালী রাজবংশের পতন ঘটে এবং বাংলার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়, যা মুসলিম শাসনের আগমনকে চিহ্নিত করে। এই দুই রাজবংশের অবদান আজও বাংলার সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও সাহিত্যের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।
FAQ Questions Answers 100
1. পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
গোপাল।
2. ধর্মপাল কোন বিহার স্থাপন করেন?
বিক্রমশীলা মহাবিহার।
3. ত্রিশক্তির সংগ্রাম কাদের মধ্যে হয়েছিল?
পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট।
4. পাল সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?
পাটলিপুত্র (পরে মুঙ্গের, রামাবতী)।
5. দেবপালের রাজত্বকালে কোন আরব পর্যটক বাংলায় এসেছিলেন?
সুলেমান।
6. পাল বংশের শেষ শক্তিশালী রাজা কে ছিলেন?
রামপাল।
7. রামপাল যে নগরী স্থাপন করেন তার নাম কী?
রামাবতী।
8. পাল যুগে বাংলায় কোন ধর্ম প্রধান ছিল?
বৌদ্ধধর্ম।
9. সোমপুর মহাবিহার কে নির্মাণ করেন?
ধর্মপাল।
10. কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?
দিব্য।
11. কৈবর্ত বিদ্রোহ কার সময়ে হয়েছিল?
দ্বিতীয় মহীপাল।
12. পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর কোন বংশ ক্ষমতা লাভ করে?
সেন বংশ।
13. সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
সামন্ত সেন।
14. সেন বংশের প্রথম স্বাধীন রাজা কে ছিলেন?
বিজয় সেন।
15. বিজয় সেনের রাজধানী কোথায় ছিল?
বিজয়পুর।
16. বল্লাল সেনের দুটি বিখ্যাত গ্রন্থের নাম কী?
দানসাগর ও অদ্ভুতসাগর।
17. কৌলীন্য প্রথার প্রবর্তন কে করেন?
বল্লাল সেন।
18. লক্ষণ সেনের সভাকবি কে ছিলেন?
জয়দেব।
19. লক্ষণ সেনের দরবারের পঞ্চরত্ন কারা ছিলেন?
জয়দেব, ধোয়ী, শরণ, উমাপতি ধর, গোবর্ধন।
20. লক্ষণ সেনের রাজধানী কোথায় ছিল?
নবদ্বীপ ও বিক্রমপুর।
21. বাংলার শেষ হিন্দু রাজা কে ছিলেন?
লক্ষণ সেন।
22. লক্ষণ সেনের সময় বাংলা কে আক্রমণ করেন?
বখতিয়ার খলজি।
23. বখতিয়ার খলজি কবে নবদ্বীপ আক্রমণ করেন?
১২০৩ খ্রিস্টাব্দে।
24. সেন বংশের আদি নিবাস কোথায় ছিল?
কর্ণাটক।
25. পাল বংশের রাজারা কোন ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন?
বৌদ্ধধর্ম।
26. সেন বংশের রাজারা কোন ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন?
হিন্দুধর্ম (শৈব ও বৈষ্ণব)।
27. পাল যুগে নির্মিত একটি বিখ্যাত স্থাপত্যের নাম বলুন।
সোমপুর মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষ।
28. রামপালের পিতা কে ছিলেন?
দ্বিতীয় মহীপাল।
29. পাল বংশের স্বর্ণযুগ কার সময়ে ছিল?
ধর্মপাল ও দেবপাল।
30. জগদ্দল মহাবিহার কে প্রতিষ্ঠা করেন?
রামপাল।
31. সন্ধ্যাাকর নন্দী রচিত পাল যুগের কাব্য কোনটি?
রামচরিত।
32. পাল যুগে কোন শিল্পকলা প্রসিদ্ধি লাভ করে?
ব্রোঞ্জের মূর্তি ও চিত্রশিল্প।
33. বল্লাল সেনের পিতার নাম কী?
বিজয় সেন।
34. ধোয়ী রচিত বিখ্যাত কাব্য কোনটি?
পবনদূত।
35. জয়দেব রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ কোনটি?
গীতগোবিন্দ।
36. সেন বংশের শেষ শাসক কে ছিলেন?
বিশ্বরূপ সেন বা কেশব সেন।
37. পাল রাজাদের প্রধান উপাধি কী ছিল?
পরমেশ্বর পরমভট্টারক মহারাজাধিরাজ।
38. সেন রাজাদের প্রথম দিককার রাজধানী কোনটি ছিল?
বিজয়পুর।
39. পাল সাম্রাজ্য কত বছর রাজত্ব করেছিল?
প্রায় ৪ শতাব্দী।
40. সেন সাম্রাজ্য কত বছর রাজত্ব করেছিল?
প্রায় ১ শতাব্দী।
41. বিক্রমশীলা মহাবিহার কোন নদীর তীরে অবস্থিত ছিল?
গঙ্গা।
42. নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনরুজ্জীবনে পাল রাজাদের ভূমিকা কী ছিল?
পৃষ্ঠপোষকতা।
43. বল্লাল সেন কোন উপাধি গ্রহণ করেন?
নিহশঙ্কশঙ্কর।
44. লক্ষণ সেন কি উপাধি গ্রহণ করেন?
অরিরাজ-মদনশঙ্কর।
45. পাল যুগে কোন ভাষা রাজভাষা ছিল?
সংস্কৃত।
46. সেন যুগে বাংলার সমাজব্যবস্থা কেমন ছিল?
বর্ণপ্রথা কঠোর ছিল।
47. রামচরিত কাব্যে কোন বিদ্রোহের বর্ণনা আছে?
কৈবর্ত বিদ্রোহ।
48. বিজয় সেনের উপাধি কী ছিল?
অরিরাজ-বৃষভ-শঙ্কর।
49. পাল সাম্রাজ্যের পতনের একটি কারণ কী?
সামন্ত রাজাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি।
50. সেন সাম্রাজ্যের পতনের প্রধান কারণ কী ছিল?
বখতিয়ার খলজির আক্রমণ।
51. পাল বংশের কোন রাজা নিজেকে 'পরমসৌগত' উপাধিতে ভূষিত করেন?
ধর্মপাল
52. পাল যুগে বাংলার অর্থনীতির প্রধান উৎস কী ছিল?
কৃষি
53. পাল রাজারা কোন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতেন?
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
54. প্রথম মহীপালের শাসনকালকে কী বলা হয়?
পাল বংশের দ্বিতীয় উত্থান
55. বিক্রমশীলা মহাবিহারের প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য কী ছিল?
বৌদ্ধধর্মের অধ্যয়ন ও প্রচার
56. পাল স্থাপত্যের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য কী?
পোড়ামাটির ফলকের ব্যবহার
57. রামপালের শাসনকালে সংঘটিত একটি বড় বিদ্রোহের নাম কী?
কৈবর্ত বিদ্রোহ
58. পাল রাজবংশের সামাজিক উৎস সম্পর্কে একটি মতবাদ কী?
মৎস্যজীবী সম্প্রদায়
59. পাল আমলে বাংলার একটি প্রধান অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কেন্দ্র কোনটি ছিল?
তাম্রলিপ্ত
60. পাল বংশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাসক ধর্মপাল কী উপাধি ধারণ করেছিলেন?
পরমেশ্বর পরমভট্টারক মহারাজাধিরাজ
61. রামপালের পুত্র কে ছিলেন যিনি পরে সিংহাসনে বসেন?
কুমারপাল
62. পাল সাম্রাজ্যে ব্যবহৃত মুদ্রাব্যবস্থা কী নামে পরিচিত ছিল?
রূপক বা পুরাণ
63. পাল আমলে কোন ধরনের ভাস্কর্য বিশেষ খ্যাতি লাভ করে?
ব্রোঞ্জ ও কষ্টিপাথরের ভাস্কর্য
64. ধর্মপালের পর পাল সিংহাসনে কে বসেন?
দেবপাল
65. পাল বংশের রাজকীয় লিপি কোনটি ছিল?
আদি নাগরী লিপি
66. পাল যুগের একটি বিখ্যাত বন্দর কী ছিল?
তাম্রলিপ্ত
67. পাল শিল্পকলা কোন অঞ্চলের বিশেষত্ব ছিল?
মগধ ও বাংলা
68. পাল যুগে কোন দুটি মহাবিহার আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে?
নালন্দা ও বিক্রমশীলা
69. মহীপালকে প্রায়ই কোন বিশেষণে ভূষিত করা হয়?
পাল বংশের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা
70. পাল আমলে বাংলার একটি প্রধান রপ্তানি পণ্য কী ছিল?
বস্ত্র
71. পাল রাজারা বৌদ্ধধর্মের কোন শাখাগুলির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন?
মহাযান ও বজ্রযান
72. পাল সাম্রাজ্যে প্রদেশগুলিকে কী বলা হত?
ভুক্তি
73. পাল বংশের প্রথম শাসক যিনি উত্তর ভারতে সাম্রাজ্য প্রসারিত করেন?
ধর্মপাল
74. কৈবর্ত বিদ্রোহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি কী ছিল?
রামপালের দ্বারা বরেন্দ্র অঞ্চল পুনরুদ্ধার
75. পাল যুগে কোন বাঙালি পণ্ডিত তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন?
অতীশ দীপঙ্কর
76. পাল স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কী ছিল?
বিহার ও স্তূপ নির্মাণ
77. পাল রাজারা সাধারণত কোন দেবীর পূজা করতেন?
প্রজ্ঞাপারমিতা
78. ধর্মপালের শিক্ষা গুরু কে ছিলেন?
বুদ্ধরক্ষিত
79. পাল সাম্রাজ্যের পতনে অভ্যন্তরীণ কারণগুলির মধ্যে একটি কী ছিল?
দুর্বল উত্তরাধিকারী এবং সামন্তদের ক্ষমতা বৃদ্ধি
80. পাল আমলে বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অবদান কী ছিল?
বৌদ্ধ তান্ত্রিক শিল্পকলার বিকাশ
81. সেন রাজাদের সরকারি উপাধি কী ছিল?
মহারাজাধিরাজ
82. সেন রাজারা নিজেদের কোন বংশের বলে পরিচয় দিতেন?
ব্রহ্মক্ষত্রিয়
83. বল্লাল সেনের 'দানসাগর' গ্রন্থটির মূল বিষয়বস্তু কী?
স্মৃতিশাস্ত্র
84. সেন যুগে কোন ভাষায় রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পায়?
সংস্কৃত
85. লক্ষণ সেনের সভার একজন বিখ্যাত কবি কে ছিলেন?
শরণ
86. লক্ষণ সেনের একটি পরিচিত উপাধি কী ছিল?
অরিরাজ মাধব
87. সেন যুগে বাংলার সমাজ ব্যবস্থায় কোন প্রথা জনপ্রিয়তা লাভ করে?
কৌলীন্য প্রথা
88. সেন রাজাদের প্রধান উপাস্য দেবতা কারা ছিলেন?
শিব ও বিষ্ণু
89. বিজয় সেনের শাসনামলে নির্মিত একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা কী?
বিজয়েশ্বর মন্দির
90. বল্লাল সেনের স্ত্রীর নাম কী ছিল?
রামদেবী
91. সেন বংশের পতনের প্রধান সামরিক কারণ কী ছিল?
বখতিয়ার খলজির আক্রমণ
92. সেন রাজাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গ্রামের প্রধানকে কী বলা হত?
গ্রামিক
93. লক্ষণ সেনের মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হন?
বিশ্বরূপ সেন
94. সেন রাজারা কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেন?
হিন্দুধর্ম
95. সেন যুগে বাংলার কারুশিল্পের একটি উদাহরণ দিন।
পোড়ামাটির শিল্প
96. বল্লাল সেনের 'অদ্ভুতসাগর' কোন বিষয়ে লেখা?
জ্যোতিষশাস্ত্র
97. সেন রাজাদের সময়ে বাংলার অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি কী ছিল?
কৃষি
98. সেন রাজবংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদ কী ছিল?
মহাসেনাপতি
99. লক্ষণ সেন কোন মুসলিম আক্রমণকারীর কাছে পরাজিত হন?
ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি
100. সেন যুগে বাংলার আইন ও শাসন ব্যবস্থা কোন শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে ছিল?
স্মৃতিশাস্ত্র